১০:১৩ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পরিবেশ দূষণ ও মানুষের জনদুর্ভোগের কারণ অবৈধ ইটভাটা

আর কে রুবেল; দেশের অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ। দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে মোট ৭ হাজার ৭৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইটভাটায় বছরে ১৫ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে।

দেশের অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও খুব বেশি সুফল মিলছে না; বরং অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলো আবার চালু হয়ে গেছে। দেশে চালু অর্ধেকের বেশি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, তারপরেও দেশের প্রচলিত আইন কে অমান্য করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।

চলতি মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ অবৈধ ইটভাটা বেড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলোর আবার চালু হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী, বৃহত্তর ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস ইটভাটা। ঢাকায় রান্নার চুলায় ব্যবহৃত জৈবসামগ্রী যেমন কাঠ, পাতা, গোবর ও জ্বালানি থেকে আসে বায়ুদূষণের ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪ শতাংশ, ইটভাটা থেকে ১৩ শতাংশ, রাস্তার ধুলা থেকে ১৩ শতাংশ, শহরের বর্জ্য পোড়ানো থেকে ১১ শতাংশ এবং যানবাহন থেকে ৫ শতাংশ দূষণ হয়। বাকি ৬ শতাংশ দূষণ অন্যান্য উৎস থেকে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ইটভাটা দেশের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে তা কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে। আমরা পর্যায়ক্রমে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করব। এ ছাড়া মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা নেব। ইটভাটা এমনভাবে বন্ধ করব, যাতে ভবিষ্যতে আর চালু করতে না পারে।

তিনি আরো বলেন ব্লক ইটে পোড়া ইটের বিকল্প পণ্যের ব্যাপারে সরকার উৎসাহ দিচ্ছে। চিমনিতে পোড়ানো ইটের বদলে ব্লক ইট বানাতে সরকারি-বেসরকারি কারখানার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ২০১৫ সালে সরকারি সব নির্মাণকাজে (সড়ক ছাড়া) শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়নের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোন অগ্রগতি নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মাত্র ১৫১টি ব্লক ইটের কারখানা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হয়েছে ৮৮টি কারখানা। এসব কারখানা দেশের ইটের চাহিদার ৫ শতাংশও মেটাতে পারছে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুবিষয়ক গবেষক আব্দুস সালাম বলেন, বায়ুদূষণ কমাতে শুধু ইটভাটা বন্ধ করলে হবে না। নির্মাণকাজের ধুলা ও যানবাহনের ধোঁয়া দূষণের বড় উৎস। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল থেকে ভবিষ্যতে দূষণ বাড়বে। এসব খাতে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। আর বিকল্প ব্লক ইটসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব ইটের কারখানা ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।

এই অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে কালিয়াকৈর, গাজীপুর, মির্জাপুর, সাভার মানিকগঞ্জ, সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়। এসব এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এবং সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর কি করছে তাদের কি কিছু করার ক্ষমতা নেই যদি নাই থাকে তাহলে দপ্তর আছে কেন। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি চায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ জানিয়েছে।

Tag :

পরিবেশ দূষণ ও মানুষের জনদুর্ভোগের কারণ অবৈধ ইটভাটা

প্রকাশিত ১০:৪৯:১৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আর কে রুবেল; দেশের অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ। দেশের পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে মোট ৭ হাজার ৭৬টি ইটভাটা চালু আছে। এর মধ্যে ৪ হাজার ৫০৫ ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব ইটভাটায় বছরে প্রায় ৫ কোটি ৫০ লাখ ইট তৈরি হচ্ছে। এসব ইটভাটায় বছরে ১৫ কোটি মেট্রিক টন মাটি লাগে।

দেশের অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েও খুব বেশি সুফল মিলছে না; বরং অবৈধ ইটভাটার সংখ্যা বেড়েই চলেছে। পরিবেশ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলো আবার চালু হয়ে গেছে। দেশে চালু অর্ধেকের বেশি ইটভাটার পরিবেশ ছাড়পত্র নেই, তারপরেও দেশের প্রচলিত আইন কে অমান্য করে অবৈধভাবে ইটভাটা চালিয়ে যাচ্ছে।

চলতি মাসে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত তিন বছরে প্রায় ১ হাজার ৫০০ অবৈধ ইটভাটা বেড়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে প্রায় ১ হাজার অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করলেও সেগুলোর আবার চালু হয়ে গেছে।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশের পরিবেশ সমীক্ষা প্রতিবেদন ২০২৩ অনুযায়ী, বৃহত্তর ঢাকার বায়ুদূষণের অন্যতম উৎস ইটভাটা। ঢাকায় রান্নার চুলায় ব্যবহৃত জৈবসামগ্রী যেমন কাঠ, পাতা, গোবর ও জ্বালানি থেকে আসে বায়ুদূষণের ২৮ শতাংশ। এ ছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ২৪ শতাংশ, ইটভাটা থেকে ১৩ শতাংশ, রাস্তার ধুলা থেকে ১৩ শতাংশ, শহরের বর্জ্য পোড়ানো থেকে ১১ শতাংশ এবং যানবাহন থেকে ৫ শতাংশ দূষণ হয়। বাকি ৬ শতাংশ দূষণ অন্যান্য উৎস থেকে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী বলেছেন, ইটভাটা দেশের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ। একই সঙ্গে তা কৃষি, জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতির ক্ষতি করছে। আমরা পর্যায়ক্রমে অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করব। এ ছাড়া মালিকদের বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও জরিমানার ব্যবস্থা নেব। ইটভাটা এমনভাবে বন্ধ করব, যাতে ভবিষ্যতে আর চালু করতে না পারে।

তিনি আরো বলেন ব্লক ইটে পোড়া ইটের বিকল্প পণ্যের ব্যাপারে সরকার উৎসাহ দিচ্ছে। চিমনিতে পোড়ানো ইটের বদলে ব্লক ইট বানাতে সরকারি-বেসরকারি কারখানার প্রতি আহ্বান জানানো হয়। ২০১৫ সালে সরকারি সব নির্মাণকাজে (সড়ক ছাড়া) শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করা হয়। ২০২৫ সালের মধ্যে তা বাস্তবায়নের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু তার কোন অগ্রগতি নেই।

পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবমতে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত দেশে মাত্র ১৫১টি ব্লক ইটের কারখানা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে হয়েছে ৮৮টি কারখানা। এসব কারখানা দেশের ইটের চাহিদার ৫ শতাংশও মেটাতে পারছে না।

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুবিষয়ক গবেষক আব্দুস সালাম বলেন, বায়ুদূষণ কমাতে শুধু ইটভাটা বন্ধ করলে হবে না। নির্মাণকাজের ধুলা ও যানবাহনের ধোঁয়া দূষণের বড় উৎস। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেল থেকে ভবিষ্যতে দূষণ বাড়বে। এসব খাতে সরকারকে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি বাড়াতে হবে। আর বিকল্প ব্লক ইটসহ অন্যান্য পরিবেশবান্ধব ইটের কারখানা ও উৎপাদন বাড়াতে হবে।

এই অবৈধ ইট ভাটা নিয়ে কালিয়াকৈর, গাজীপুর, মির্জাপুর, সাভার মানিকগঞ্জ, সহ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়। এসব এলাকায় অবৈধ ইটভাটার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এবং সাধারণ মানুষের জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর কি করছে তাদের কি কিছু করার ক্ষমতা নেই যদি নাই থাকে তাহলে দপ্তর আছে কেন। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ পরিবেশ দূষণ থেকে মুক্তি চায় এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট দৃষ্টি আকর্ষণ জানিয়েছে।