তারেক আহামেদ বোখারী
বিশেষ প্রতিনিধি চট্রগ্রাম।
বান্দরবানের অন্যতম প্রবেশদ্বার লামা–চকরিয়া আঞ্চলিক সড়ক আজ দুর্ঘটনা, অনিয়ম আর অপরাধের হটস্পটে পরিণত হয়েছে।
ফিটনেসবিহীন ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান আর লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল প্রতিদিন নির্দ্বিধায় চলছে।
চালকেরা নিয়মিত মাসোয়ারা (অবৈধ অর্থপ্রদান) দিয়ে ট্রাফিক আইনকে কাগুজে করে ফেলেছে।
সড়কে প্রতিদিন দুর্ঘটনা
এই সড়কে ছোট–বড় দুর্ঘটনা প্রতিদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, অতিরিক্ত বোঝাই ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যান রাস্তার বাঁকে আটকে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে।
কোনো ফিটনেস নেই, নেই ব্রেক টেস্ট—তবুও চলাচল অব্যাহত। এ অবস্থায় পথচারী ও যাত্রীদের প্রাণহানি ঝুঁকি বহুগুণ বেড়েছে।
চালকের মুখে সত্য
সম্প্রতি এক দুর্ঘটনার পর আটকানো ট্রাকচালক সাংবাদিকদের সামনে অকপটে বলেন—“আমরা মাসে এক হাজার টাকা করে দিই। তাই গাড়ি আটকায় না।”
চালকের এ বক্তব্য শুধু চাঞ্চল্যকরই নয়, বরং পুরো ব্যবস্থার দুর্নীতি ও অনিয়মকে প্রকাশ করে দিয়েছে।
মোটরসাইকেলের দৌরাত্ম্য
ট্রাক–ভ্যানের পাশাপাশি সড়কে বিপুলসংখ্যক লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল চলাচল করছে। অনেকগুলোর কোনো কাগজপত্র নেই, এমনকি চোরাই মোটরসাইকেলও এখানে চলে। মাসোয়ারা প্রদানের কারণে পুলিশ এসব দেখতে পেলেও কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয় না।
অপরাধে ব্যবহার হচ্ছে বাইক
স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব অবৈধ মোটরসাইকেল রাতের অন্ধকারে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির প্রধান বাহন হয়ে উঠেছে। ফলে এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বেড়েই চলছে।
নারী ও সাধারণ যাত্রীরা আতঙ্কে ভুগছেন।
পর্যটন শিল্প হুমকিতে
লামা–চকরিয়া সড়ক শুধু স্থানীয়দের জীবনরেখা নয়, এটি বান্দরবানের অন্যতম পর্যটন রুট। প্রতিদিন শত শত পর্যটক এই পথে যাতায়াত করেন। কিন্তু দুর্ঘটনা, ছিনতাই ও অপরাধের কারণে পর্যটকরা শঙ্কিত। ব্যবসায়ীরা বলছেন—“এই ধারা চলতে থাকলে বান্দরবানের পর্যটন শিল্প ভেঙে পড়বে।”
জনমতের দাবি
সুশীল সমাজ ও স্থানীয়রা দাবি করেছেন—
ফিটনেসবিহীন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো।
লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল আটক ও আইনি ব্যবস্থা।
মাসোয়ারা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়া।
সড়কে স্থায়ী চেকপোস্ট ও আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।
উপসংহার
লামা–চকরিয়া সড়ক এখন শুধু যানবাহনের চলাচল নয়, বরং প্রশাসনের দায়সারা মনোভাব, দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার প্রতিচ্ছবি। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই সড়ক মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হওয়ার পাশাপাশি বান্দরবানের পর্যটন শিল্পে ধস নামবে—এমন আশঙ্কাই এখন সর্বত্র।













