০৪:২৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বিশেষ প্রতিনিধি :

বমু কাঠকাণ্ডে আসছেন উপদেষ্টা—‘অপরাধ ঢাকতে দেব না

  • প্রকাশিত ১১:৫৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ৫৪ বার দেখা হয়েছে

দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত বমু রিজার্ভের কাঠ পাচার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও, প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় দিন দিন তা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি, লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একে এম আতা ই এলাহি দুর্নীতির দায়ে (এফসিসিও) বদলি হলে, আতা ই এলাহির জায়গায় দায়িত্বে এসেছেন অভিযুক্ত লামা বন বিভাগের আওতাধীন বমু বিটের বন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনকে সদর রেঞ্জ অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে,যে সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সৎ বনজ সম্পদ রক্ষায় সচেতন মহল।

সূত্র মতে, লামা বন চৌকি স্টেশনের একেবারে চোখের সামনে জোত মালিক সমিতির সভাপতি সেলিমের বাড়ির আঙিনায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা কাঠের ডিপো থেকে বমু-রিজার্ভ,তৈন রিজার্ভ ও মাতামুহুরি রিজার্ভের সংরক্ষিত কাঠ পাচার করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। প্রশ্ন উঠেছে—বন স্টেশন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন এতদিন কী দেখেছিলেন?

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লামা বন বিভাগের ডিএফও মুস্তাফিজুর রহমান ও তৎকালীন সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহি ও বমু বিট অফিসার আলতাফ হোসেনের ম্যানেজমেন্টে সেলিমের অবৈধ ডিপোতে রিজার্ভের কাঠ জমা করে পাচার করা হতো। তবে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আগমন বার্তা পেয়ে নিজেদের দায় মুক্ত করতে তড়িঘড়ি করে গত ১৫ জুন (রবিবার) রাতে সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। যা লামা কয়েকজন সংবাদকর্মী প্রকাশ করেন।

তবে কাঠ জব্দের বদলে, গোপন সূত্রে জানা গেছে, কিছু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কাঠ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে চলে আসেন ডিএফও ও আলতাফ হোসেন।

পরদিন ১৬ জুন (সোমবার) সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওই অবৈধ ডিপো থেকে সংরক্ষিত কাঠগুলো উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সিএফ এর নির্দেশে বমু বিটের আওতাধীন সাপমারা ঝিরি গেট অতিক্রম করে পাচারের সময় বমু রিজার্ভের সংরক্ষিত (মাদার ট্রি) চাম্পা ফুল, চাপা পালিশ ও গর্জন কাঠ জব্দ করে লামা বন বিভাগের কার্যালয় নিয়ে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিজ্ঞ কাঠ ব্যবসায়ী জানান, দুর্নীতির দায় কাঁধে নিয়ে সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহি বদলি হয় (এফসিসিও) চকরিয়ায় কোর্টে, সদ্য সদর রেঞ্জ অফিসার পদে পদায়ন পাওয়া আলতাফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রিজার্ভ খেকু, লামা জোত মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম ও সেক্রেটারি হারুন—এ দুজনের পালিত মূল হোতা আওয়ামী দুসর খোকন সিন্ডিকেটদের কাঠ পাচারে সহায়তা করে আসছিলেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন, এমন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? এখন দেখার বিষয়, বন বিভাগ কি সত্যিই ব্যবস্থা নেবে, নাকি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় সব চাপা পড়ে যাবে?

চট্টগ্রাম অঞ্চলের লামা বন বিভাগের লামা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জনাব একে,এম আতা এলাহি অবৈধভাবে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লামা রেঞ্জের ফ্রি-লাইসেন্স নং ০২/২৩-২৪, ০৩/২৩-২৪, ০৪/২৩-২৪, ০৫/২৩-২৪, ০৬/২৩-২৪, ০৮/২৩-২৪, ০৯/২৩-২৪, ২০/২৩-২৪ ও ২১/২৩-২৪ এর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিটি জোত ভূমিতে ২০০০-২৫০০ টি গাছ = ২০০০০ – ২১০০০ ঘনফুট সেগুন কাঠ বিদ্যমান আছে মর্মে রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব মোঃ আরিফুল হক বেলাল আতা এলাহির মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে উক্ত জোত পারমিটগুলি ইস্যু করেছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন জোত ভূমিতেই ৫০০-৬০০ গাছের মতার বেশি নেই। স্থানীয় জোত ব্যবসায়ীদের নিকট হতে জানা যায়, আতা এলাহির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা কোন জোত ভূমিতেই ৫০০০-৬০০০ ঘনফুটের বেশি কাঠ পাওয়া যায়নি।

ফ্রি লাইসেন্স নং ২০/২০২৩-২৪ জোত মালিক জনাব এক্যচিং মার্মার জোত ভূমির অবস্থান লামা রেঞ্জের বমু বিটের চড়ই বিল বমু খালের পশ্চিম পাশে—বমু বিট কর্তৃক ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে সৃজিত সেগুন বাগানের পাশে। ফ্রি লাইসেন্স বিধি অনুযায়ী জোত ভূমির ১.০ কি:মি: এর মধ্যে কোন সরকারি বন থাকলে ঐ জোত ভূমির ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। অথচ ফ্রি লাইসেন্স নং ২০/২০২৩-২৪ এর ১০০ গজের মধ্যে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকার পরেও আইনের তোয়াক্কা না করে আতা এলাহি ও তৎকালীন ডিএফও বেলাল মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে লাইসেন্সটি ইস্যু করেন।

উক্ত বাগানে গাছ কম থাকায় ভূয়া মার্কিং এর মাধ্যমে বমু বিটের ২০০২-০৩ অর্থবছরের সরকারি সেগুন বাগানের ৫০০-৬০০ গাছ কেটে আতা এলাহির স্বাক্ষরিত টি,পি এর মাধ্যমে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়েছে।

এছাড়াও আতা এলাহি ঘুষের বিনিময়ে ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় বমু বিটের সংরক্ষিত বন এলাকায় মাটির রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেন, যার মধ্যে রয়েছে—ভিলেজার পাড়া হতে ছোট বমু পর্যন্ত, মুরিঙ্গা ঝিরির কাদেরের ঘর হতে পূর্ব দিকে ২০০৭-২০০৮ সনের বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তা, ঠান্ডা ঝিরির ফাদু খালের দক্ষিণে রাস্তা, ফকির ঝিরি হতে ফাদুখোলা পর্যন্ত ইটের রাস্তা, এবং পাহাড় কেটে আইদ্যা ঘোনা হতে সৈয়দ আলমের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা।

ফলাফল হিসেবে এইসব এলাকায় শতশত ঘরবাড়ি নির্মিত হয়েছে, যার প্রতিটি পাকা দালান নির্মাণের জন্য লক্ষাধিক টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সুবিধা গ্রহণে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ডিএফও আরিফুল হক বেলাল ও সাবেক সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহী।

নিয়মের তোয়াক্কা না করে, লামা বন বিভাগের সাঙ্গু রেঞ্জের টি,পি চালান ব্যবহার করে লামা সদর রেঞ্জের ডিপোগুলোতে বমু রিজার্ভের কাঠ দীর্ঘদিন পাচার করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ০২/০৬/২০২৫ তারিখে স্থানীয়রা বমু রিজার্ভের কাঠ বোঝাই নোয়াখালী ট-১১০০২২ নম্বরের ট্রাক ধাওয়া করে বন বিভাগ অতিক্রম করার পর খুবই সন্নিকটে আটক করে। জনতার তোপের মুখে পড়ে সদর রেঞ্জার আতা এলাহি ও স্পেশালের ওসি আলতাফ হোসেন ট্রাকটি জব্দ করতে বাধ্য হন।

নীতিমালায় বলা আছে, রিজার্ভের ৫ কি:মি: এর মধ্যে ডিপো বা জোত পারমিট দেওয়া নিষিদ্ধ। অথচ ১ কি:মি: দূরত্বে গড়ে উঠেছে লামা বন বিভাগের অনুমোদনে আবু মুসার ডিপো, যা পুরোপুরি অবৈধ।

ডিএফও মোস্তাফিজুর রহমানের অনৈতিক কাজের অংশ হিসেবে আতা এলাহি ও আলতাফ হোসেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০টি নতুন এফএল জোত পারমিট অনুমোদন দিয়েছেন। এসব জোতের প্রতিটিতে ২০-২১ হাজার ঘনফুট কাঠ অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রকৃত চিত্রে তদন্ত করলে দেখা যাবে ৪-৫ হাজার ঘনফুটের বেশি কাঠ দৃশ্যমান নয়। প্রতিটির পেছনে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে।

সাধারণত দেখা যায়, বন বিভাগের তদন্ত কমিটি আসলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপরাধ ঢাকতেই কাজ করে। যেমন—তৈন রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত লামা বন বিভাগের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে।

পরিবেশবান্ধব সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল আমিন বলেছেন, এসব ঘটনার তদন্ত বন বিভাগের হাতে নয়, বরং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে দিয়ে করা উচিত।

তাঁর দাবি, গত ২৪/০৫/২০২৫ তারিখে বমু রিজার্ভ কাঠ পাচারের অভিযোগের নাটকীয় ভাবে তদন্ত শেষ করে ফেলতে চেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাই পরিবেশ বন উপদেষ্টা সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ৭ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।

এমন অবস্থায় উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, প্রতিবেদক কে বলেন—
“হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক না কেন, কেউ ছাড় পাবে না।

বিশেষ প্রতিনিধি

Tag :
জনপ্রিয়

নাঙ্গলকোটের বক্সগঞ্জে জামায়াতের ইসলামী’র কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত

বিশেষ প্রতিনিধি :

বমু কাঠকাণ্ডে আসছেন উপদেষ্টা—‘অপরাধ ঢাকতে দেব না

প্রকাশিত ১১:৫৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

দীর্ঘদিন ধরে সংরক্ষিত বমু রিজার্ভের কাঠ পাচার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও, প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় দিন দিন তা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি, লামা বন বিভাগের সদর রেঞ্জ কর্মকর্তা একে এম আতা ই এলাহি দুর্নীতির দায়ে (এফসিসিও) বদলি হলে, আতা ই এলাহির জায়গায় দায়িত্বে এসেছেন অভিযুক্ত লামা বন বিভাগের আওতাধীন বমু বিটের বন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেনকে সদর রেঞ্জ অফিসার হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে,যে সিদ্ধান্তে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন সৎ বনজ সম্পদ রক্ষায় সচেতন মহল।

সূত্র মতে, লামা বন চৌকি স্টেশনের একেবারে চোখের সামনে জোত মালিক সমিতির সভাপতি সেলিমের বাড়ির আঙিনায় অবৈধভাবে গড়ে তোলা কাঠের ডিপো থেকে বমু-রিজার্ভ,তৈন রিজার্ভ ও মাতামুহুরি রিজার্ভের সংরক্ষিত কাঠ পাচার করা হচ্ছিল দীর্ঘদিন ধরে। প্রশ্ন উঠেছে—বন স্টেশন কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন এতদিন কী দেখেছিলেন?

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লামা বন বিভাগের ডিএফও মুস্তাফিজুর রহমান ও তৎকালীন সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহি ও বমু বিট অফিসার আলতাফ হোসেনের ম্যানেজমেন্টে সেলিমের অবৈধ ডিপোতে রিজার্ভের কাঠ জমা করে পাচার করা হতো। তবে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার আগমন বার্তা পেয়ে নিজেদের দায় মুক্ত করতে তড়িঘড়ি করে গত ১৫ জুন (রবিবার) রাতে সেলিমের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। যা লামা কয়েকজন সংবাদকর্মী প্রকাশ করেন।

তবে কাঠ জব্দের বদলে, গোপন সূত্রে জানা গেছে, কিছু আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে কাঠ সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে চলে আসেন ডিএফও ও আলতাফ হোসেন।

পরদিন ১৬ জুন (সোমবার) সকালে সেনাবাহিনীর সহায়তায় ওই অবৈধ ডিপো থেকে সংরক্ষিত কাঠগুলো উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সিএফ এর নির্দেশে বমু বিটের আওতাধীন সাপমারা ঝিরি গেট অতিক্রম করে পাচারের সময় বমু রিজার্ভের সংরক্ষিত (মাদার ট্রি) চাম্পা ফুল, চাপা পালিশ ও গর্জন কাঠ জব্দ করে লামা বন বিভাগের কার্যালয় নিয়ে আসে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক অভিজ্ঞ কাঠ ব্যবসায়ী জানান, দুর্নীতির দায় কাঁধে নিয়ে সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহি বদলি হয় (এফসিসিও) চকরিয়ায় কোর্টে, সদ্য সদর রেঞ্জ অফিসার পদে পদায়ন পাওয়া আলতাফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রিজার্ভ খেকু, লামা জোত মালিক সমিতির সভাপতি সেলিম ও সেক্রেটারি হারুন—এ দুজনের পালিত মূল হোতা আওয়ামী দুসর খোকন সিন্ডিকেটদের কাঠ পাচারে সহায়তা করে আসছিলেন।

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সচেতন মহলের প্রশ্ন, এমন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দিয়ে কী বার্তা দেওয়া হচ্ছে? এখন দেখার বিষয়, বন বিভাগ কি সত্যিই ব্যবস্থা নেবে, নাকি সিন্ডিকেটের ছত্রছায়ায় সব চাপা পড়ে যাবে?

চট্টগ্রাম অঞ্চলের লামা বন বিভাগের লামা রেঞ্জের রেঞ্জ কর্মকর্তা জনাব একে,এম আতা এলাহি অবৈধভাবে মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লামা রেঞ্জের ফ্রি-লাইসেন্স নং ০২/২৩-২৪, ০৩/২৩-২৪, ০৪/২৩-২৪, ০৫/২৩-২৪, ০৬/২৩-২৪, ০৮/২৩-২৪, ০৯/২৩-২৪, ২০/২৩-২৪ ও ২১/২৩-২৪ এর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিটি জোত ভূমিতে ২০০০-২৫০০ টি গাছ = ২০০০০ – ২১০০০ ঘনফুট সেগুন কাঠ বিদ্যমান আছে মর্মে রেঞ্জ কর্মকর্তা আতা এলাহি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছিলেন। রেঞ্জ কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী তৎকালীন বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জনাব মোঃ আরিফুল হক বেলাল আতা এলাহির মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে উক্ত জোত পারমিটগুলি ইস্যু করেছেন।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কোন জোত ভূমিতেই ৫০০-৬০০ গাছের মতার বেশি নেই। স্থানীয় জোত ব্যবসায়ীদের নিকট হতে জানা যায়, আতা এলাহির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা কোন জোত ভূমিতেই ৫০০০-৬০০০ ঘনফুটের বেশি কাঠ পাওয়া যায়নি।

ফ্রি লাইসেন্স নং ২০/২০২৩-২৪ জোত মালিক জনাব এক্যচিং মার্মার জোত ভূমির অবস্থান লামা রেঞ্জের বমু বিটের চড়ই বিল বমু খালের পশ্চিম পাশে—বমু বিট কর্তৃক ২০০২-২০০৩ অর্থবছরে সৃজিত সেগুন বাগানের পাশে। ফ্রি লাইসেন্স বিধি অনুযায়ী জোত ভূমির ১.০ কি:মি: এর মধ্যে কোন সরকারি বন থাকলে ঐ জোত ভূমির ফ্রি লাইসেন্স দেওয়া যাবে না। অথচ ফ্রি লাইসেন্স নং ২০/২০২৩-২৪ এর ১০০ গজের মধ্যে সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল থাকার পরেও আইনের তোয়াক্কা না করে আতা এলাহি ও তৎকালীন ডিএফও বেলাল মোটা অংকের ঘুষের বিনিময়ে লাইসেন্সটি ইস্যু করেন।

উক্ত বাগানে গাছ কম থাকায় ভূয়া মার্কিং এর মাধ্যমে বমু বিটের ২০০২-০৩ অর্থবছরের সরকারি সেগুন বাগানের ৫০০-৬০০ গাছ কেটে আতা এলাহির স্বাক্ষরিত টি,পি এর মাধ্যমে ঢাকা সহ বিভিন্ন জায়গায় পাচার করা হয়েছে।

এছাড়াও আতা এলাহি ঘুষের বিনিময়ে ইউপি সদস্যদের সহযোগিতায় বমু বিটের সংরক্ষিত বন এলাকায় মাটির রাস্তা নির্মাণের অনুমতি দেন, যার মধ্যে রয়েছে—ভিলেজার পাড়া হতে ছোট বমু পর্যন্ত, মুরিঙ্গা ঝিরির কাদেরের ঘর হতে পূর্ব দিকে ২০০৭-২০০৮ সনের বাগানের মধ্য দিয়ে রাস্তা, ঠান্ডা ঝিরির ফাদু খালের দক্ষিণে রাস্তা, ফকির ঝিরি হতে ফাদুখোলা পর্যন্ত ইটের রাস্তা, এবং পাহাড় কেটে আইদ্যা ঘোনা হতে সৈয়দ আলমের বাড়ি পর্যন্ত মাটির রাস্তা।

ফলাফল হিসেবে এইসব এলাকায় শতশত ঘরবাড়ি নির্মিত হয়েছে, যার প্রতিটি পাকা দালান নির্মাণের জন্য লক্ষাধিক টাকা অনৈতিকভাবে আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব সুবিধা গ্রহণে জড়িত ছিলেন তৎকালীন ডিএফও আরিফুল হক বেলাল ও সাবেক সদর রেঞ্জার আতা ই এলাহী।

নিয়মের তোয়াক্কা না করে, লামা বন বিভাগের সাঙ্গু রেঞ্জের টি,পি চালান ব্যবহার করে লামা সদর রেঞ্জের ডিপোগুলোতে বমু রিজার্ভের কাঠ দীর্ঘদিন পাচার করা হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় ০২/০৬/২০২৫ তারিখে স্থানীয়রা বমু রিজার্ভের কাঠ বোঝাই নোয়াখালী ট-১১০০২২ নম্বরের ট্রাক ধাওয়া করে বন বিভাগ অতিক্রম করার পর খুবই সন্নিকটে আটক করে। জনতার তোপের মুখে পড়ে সদর রেঞ্জার আতা এলাহি ও স্পেশালের ওসি আলতাফ হোসেন ট্রাকটি জব্দ করতে বাধ্য হন।

নীতিমালায় বলা আছে, রিজার্ভের ৫ কি:মি: এর মধ্যে ডিপো বা জোত পারমিট দেওয়া নিষিদ্ধ। অথচ ১ কি:মি: দূরত্বে গড়ে উঠেছে লামা বন বিভাগের অনুমোদনে আবু মুসার ডিপো, যা পুরোপুরি অবৈধ।

ডিএফও মোস্তাফিজুর রহমানের অনৈতিক কাজের অংশ হিসেবে আতা এলাহি ও আলতাফ হোসেন ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১০টি নতুন এফএল জোত পারমিট অনুমোদন দিয়েছেন। এসব জোতের প্রতিটিতে ২০-২১ হাজার ঘনফুট কাঠ অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রকৃত চিত্রে তদন্ত করলে দেখা যাবে ৪-৫ হাজার ঘনফুটের বেশি কাঠ দৃশ্যমান নয়। প্রতিটির পেছনে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন হয়েছে।

সাধারণত দেখা যায়, বন বিভাগের তদন্ত কমিটি আসলে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপরাধ ঢাকতেই কাজ করে। যেমন—তৈন রিজার্ভ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচারিত লামা বন বিভাগের মনগড়া তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়টি এখনো প্রশ্নবিদ্ধ রয়ে গেছে।

পরিবেশবান্ধব সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল আমিন বলেছেন, এসব ঘটনার তদন্ত বন বিভাগের হাতে নয়, বরং পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে দিয়ে করা উচিত।

তাঁর দাবি, গত ২৪/০৫/২০২৫ তারিখে বমু রিজার্ভ কাঠ পাচারের অভিযোগের নাটকীয় ভাবে তদন্ত শেষ করে ফেলতে চেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাই পরিবেশ বন উপদেষ্টা সরাসরি হস্তক্ষেপ করে ৭ সদস্যের নতুন কমিটি গঠন করলে প্রকৃত সত্য বের হয়ে আসবে।

এমন অবস্থায় উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, প্রতিবেদক কে বলেন—
“হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই। অপরাধী যেই হোক না কেন, কেউ ছাড় পাবে না।

বিশেষ প্রতিনিধি