ফেনীতে হাসির রাজা কৌতুক অভিনেতা হিসাবে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছেন” সেলিম চাচা। তিনি এখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে রীতিমতো হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। ফেসবুকে ব্যাপক কন্টেন্ট কিয়েটর তৈরি করে দেশ – বিদেশে সাড়া ফেলে দিয়েছেন।
সেলিম চাচা ওরপে আবু তালেব মাসুদ এখন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উদ্ধোধন করেন। তাকে দেখতে হাজারো নারী – পুরুষ ভীড় জমান। হাসির খোরাক দিতে বিনোদনের জগতে এক উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠেছেন আবু তালেব মাসুদ, যিনি ‘সেলিম চাচা’ নামে জনপ্রিয় হলেও ‘কুক্কুরত সেলিম’ হিসেবেই ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তাঁর ব্যতিক্রমী কমেডি, প্রাণবন্ত সংলাপ এবং সমাজের অসঙ্গতির বিরুদ্ধে তীক্ষ্ণ হাস্যরসের মাধ্যমে তিনি হয়ে উঠেছেন একটি ভিন্নধর্মী ধারার পথপ্রদর্শক।
“হাসির রাজা”
ফেনীর ছনুয়া ইউনিয়নের পূর্ব সিলোনিয়া গ্রামে ১৯৯৯ সালের ১৭ জুলাই জন্ম নেওয়া সেলিম চাচা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন দুষ্টু, প্রাণবন্ত ও মঞ্চে ওঠার স্বপ্নবাজ। সপ্তম শ্রেণিতে পড়াকালীন স্বাধীনতা দিবসের নাটকে ‘ডিম বিক্রেতা’ চরিত্রে তাঁর প্রথম অভিনয় মঞ্চে কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে হলেও দর্শকদের হাসির উৎসে পরিণত হয়েছিল। সেই থেকেই শুরু হয় এক অসাধারণ যাত্রা।
নিজেই লেখক, নিজেই পরিচালক:
সেলিম চাচার ভিডিওগুলোর পেছনে নেই কোনো পেশাদার স্ক্রিপ্টরাইটার বা পরিচালক। নিজেই লেখেন স্ক্রিপ্ট, নিজেই পরিচালনা করেন অভিনয়। বাস্তব অভিজ্ঞতা ও সমাজের নানা অসংগতির প্রতিফলন তাঁর অভিনয়ে। নিজের লেখা সংলাপ আর প্রাণবন্ত অভিব্যক্তিতে তিনি আজ সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিশাল ভক্তগোষ্ঠী গড়ে তুলেছেন। তাঁর কোন কোন ভিডিওতে ভিউ হয় ৬/৭ মিলিয়ন।
“কমেডিতে সমাজচিত্র”
সেলিম চাচার “কুক্কুরত সেলিম” নামটি একদিকে যেমন মজার, অন্যদিকে সমাজের তীব্র ব্যঙ্গচিত্রও। কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি ও সামাজিক বৈষম্য নিয়ে তিনি হাসির মোড়কে উপস্থাপন করেন গভীর বার্তা। এটি শুধুই বিনোদন নয়—একটি সামাজিক আন্দোলনের মতো।
“সোশ্যাল মিডিয়ার আসা”
২০১৯ সালে বন্ধু জাহিদের সঙ্গে ‘টেলস ড্রামা প্রো’ নামে ফেসবুক পেজ খুলে শুরু হয় সেলিম চাচার ডিজিটাল যাত্রা। ৪ লাখ ৩১ হাজার ফলোয়ারসহ চলছিল দুর্দান্ত। পরে হ্যাক হওয়ায় নতুনভাবে শুরু করতে হয়। ‘ফ্যামিলি ড্রামা প্রো’ নামে আরেকটি পেজ চালু হলেও তা আবার বন্ধ হয়ে যায় জাহিদের বিদেশযাত্রার পর। এরপর তিনি ‘আবু তালেব’ নামে একটি ব্যক্তিগত পেজ খুলে আবারও জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছান—যেখানে বর্তমানে ফলোয়ার সংখ্যা ৫ লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি।
“ছোট দোকান থেকে বড় মঞ্চে”
শিক্ষাজীবন আর্থিক সংকটে থেমে গেলেও থেমে থাকেননি সেলিম চাচা। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ই মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ শুরু করেন। পরে নিজেই খুলেন ‘মোবাইল হাসপাতাল’ নামে দোকান। কিন্তু তাঁর মনের ভিতরে সবসময়ই বাসা বেঁধেছিল অভিনয়। সেই তাগিদেই ফিরে এসেছেন কমেডির মঞ্চে।
নাটকে ও বড়পর্দার পথে”
বর্তমানে সেলিম চাচা অভিনয় করছেন দুটি নাটকে—মহিন খান পরিচালিত ‘কিফটা ফ্যামিলি’ ও রাশেদ রাজুর ‘নাসা বিল্ডিং’ নাটকে। অভিনয় প্রস্তাব পাচ্ছেন আরও, তবে বেছে নিচ্ছেন মানসম্মত ও নিজস্ব চরিত্রের নাটক। মঞ্চনাটক ও চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগ্রহও রয়েছে তাঁর।
কমেডির সোনালী অতীত ও নতুন আশার আলো:
বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের ইতিহাসে কৌতুক অভিনেতাদের ছিল স্বর্ণালী সময়। দিলদার, আনিস, টেলি সামাদ, এটিএম শামসুজ্জামান, সাইফুদ্দিন, হাসমত, ব্ল্যাক আনোয়ারসহ আরও অনেকেই দর্শকদের একসময় হাসির স্রোতে ভাসিয়েছেন। সেই ঐতিহ্য যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু সেলিম চাচা যেন সেই শূন্যতা পূরণ করতে এগিয়ে এসেছেন এক নতুন যুগের কৌতুকধারী হিসেবে।
চার্লি চ্যাপলিন একবার বলেছিলেন, “আমার জীবনে আমি অনেক কষ্ট পেয়েছি, কিন্তু আমি চাই মানুষ আমার কষ্টের বদলে হেসে উঠুক।” সেলিম চাচার জীবনও যেন তারই প্রতিচ্ছবি—হাসির আড়ালে থাকা সংগ্রামের গল্প, আর হাসির মাধ্যমে সমাজকে বদলে দেওয়ার এক অনবদ্য প্রয়াস।
সেলিম চাচার কথা:-
“আমি কখনোই ভাবিনি, আমার মজা করার অভ্যাসটা একদিন এত মানুষের ভালো লাগার কারণ হবে। ছোটবেলা থেকে শুধু একটা জিনিসই মনে প্রাণে চেয়েছি—মানুষকে হাসাতে চাই, ওদের কষ্ট একটু হলেও ভুলিয়ে দিতে চাই। জীবনে অনেক কঠিন সময় গেছে, কিন্তু অভিনয় আর মানুষের ভালোবাসাই আমাকে টিকিয়ে রেখেছে। আমি বিশ্বাস করি, হাসির মধ্যেও বড় শক্তি আছে—এটা মানুষকে বদলাতে পারে, সমাজকে ও বদলাতে পারে।