পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলাধীন বকুলবাড়িয়া ইউনিয়নের গুয়াবাড়িয়া এ.বি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মালিকানাধীন জমি দখল করে প্রায় ১৫ বছর যাবত জোরপূর্বক দোকান ঘর উঠিয়ে ব্যবসা চালানো অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কৃষক লীগের সভাপতি মো. শাহাবুদ্দিন মোল্লার বিরুদ্ধে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তোয়াক্কা না করে তার দোকানের পার্শে আবু বক্কর সরদার নামক আরেকজনকে দিয়ে আরো একটি দোকান বসিয়ে দিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছে। স্কুল কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ জানিয়েও জমি উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রায় দেড় দশক আগে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন কৃষক লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন মোল্লা বিদ্যালয়ের জমির একটি অংশ দখল করে সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করেন। দোকানটিতে চা, পান, সিগারেটসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করে আসছেন তিনি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় জনসাধারণ বহুবার তাকে দোকান সরিয়ে নিতে অনুরোধ করলেও সে নানা অজুহাত ও প্রভাব খাটিয়ে বিদ্যালয়ের জমি তার দখলে রেখেছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের স্মারক নং ২১৭৭/৫ তারিখ ২৫/০৬/২৫ এক চিঠিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও অধিদপ্তরের আওতাধীন যেসকল দপ্তর/শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানের দখলে ও দলিলাদি সংরক্ষণে নেই সেসকল প্রতিষ্ঠানসমূহে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবের কারণে অত্র বিদ্যালয়ের জমি উদ্ধার করতে পারছেন না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোশাররফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের খতিয়ানভুক্ত জমি- মৌজা: গুয়াবাড়িয়া, জেএল নং- ৫৭, খতিয়ান নং-৪৪৮, দাগ নং-২৫৪৩, ২৫৫৪, ২৫৫৫, ২৫৫৭, ২৫৫৮, মোট জমির পরিমাণ : ১.৪৫ একর-এর মধ্যে ওই দোকানঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করে আসছেন। পাকা সড়ক ঘেঁষে বিদ্যালয়ের অবস্থান হলেও দখলের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। ফলে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জমির মালিকানার সকল কাগজপত্র বিদ্যালয়ের নামে রয়েছে তারপরও অবৈধভাবে দখল করে রেখেছেন শাহাবুদ্দিন মোল্লা ও আবুবক্কর সরদার।
তিনি আরও জানান, বিদ্যালয়ের আশপাশে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি, আড্ডাবাজি, ও বখাটেপনার মতো ঘটনা বেড়ে গেছে যা শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি করছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাকা সড়কের পাশে বিদ্যালয়ের পুকুর। পুকুরের পাড় ঘেঁষে জমির ওপর গড়ে উঠেছে দোকান, যেখানে চা, পান, বিড়ি-সিগারেটসহ খাদ্যসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে। যা শিক্ষার্থীদের জন্য অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করছে। বিদ্যালয়ের কিছু অংশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হলেও দোকানের কারণে সম্পূর্ণ করতে পারছে না কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন মোল্লার ছেলে সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাবা-দাদার নামের সম্পত্তি আমরা ব্যবহার করতেছি। আমরা কোনো জমি দখল করিনি। এখন আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান হবে।
অভিযুক্ত শাহাবুদ্দিন মোল্লার শ্যালক মো. জাহিদুল ইসলাম দাবি করেন, জমিটি তারা ক্রয়সূত্রে পেয়েছেন এবং বিষয়টি বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা স্বার্থে আইনি প্রক্রিয়ায় অবিলম্বে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে বিদ্যালয়ের প্রকৃত জমি উদ্ধার করতে হবে। তারা মনে করেন, প্রশাসনের কঠোর হস্তক্ষেপ ছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মানসম্মত পরিবেশ বজায় রাখা সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বকুলবাড়িয়া ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মো. ওহাব মিয়া জানান, কিছুদিন আগে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। যেহেতু বিষয়টি দখল উচ্ছেদ পর্যায়ে, তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন রয়েছে।
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, বিদ্যালয়ের জমি দখল সংক্রান্ত অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় ভূমি কর্মকর্তাকে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।