০৭:৪৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সালাম মাহমুদ :

পর্যটনই হতে পারে জাতীয় আয়ের বিশাল খাত

  • প্রকাশিত ০৭:২৭:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫
  • ১০ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাময় খাত উঠে আসতে পারে পর্যটন শিল্প। অর্থনীতির প্রধান খাত হিসেবে গড়ে ওঠার সকল সম্ভাবনাই এ শিল্পের রয়েছে। পর্যটন অর্থনীতির জন্যে যে ধরনের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক নৈসর্গ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আদিবাসীদের বর্ণিল সংস্কৃতি দরকার এর সবকিছুই বাংলাদেশে রয়েছে। প্রকৃতি তার অপার মহিমা দিয়ে বাংলাদেশকে সাজালেও আমরা রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দেশপ্রেম, শিল্পবোধের অভাবে তা কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশের মানুষও নিজের দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না। বিদেশীরাতো এমনিই আসছে না। বাংলাদেশের চেয়েও যাদের প্রাকৃতিক নৈসর্গ কম তারা দেশের পুরো অর্থনীতি চালাচ্ছে পর্যটনের আয় দিয়ে। বিশ্ববাসীর কাছে যেখানে বাংলাদেশ হতে পারতো প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সেখানে এখনও কোন অবস্থানই তৈরি হয়নি। গ্রামবাংলার কৃষিজীবন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সৌন্দর্য, আদিবাসীদের বর্ণিল সংস্কৃতি, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের প্রাকৃতিক দৃশ্য, রাম-সীতা পাহাড়, বুদ্ধদের কেয়াং মন্দির, সীতাকুণ্ড হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, উপজাতিদের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপন, সিলেটের চা বাগান, মাধবকুণ্ড, জাফলং, হযরত শাহজালাল র. মাজার, শিল্পীর রঙতুলি দিয়ে সাজানো ছবির মতো দেশটির পর্যটন শিল্পের বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরতে পারছি না। যার কারণে পর্যটন শিল্প থেকে দেশ তেমন কিছু আয় করতে পারছে না। এখন সময় এসেছে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো তুলে ধরার। নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের নাম আসায় মানুষ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নতুনভাবে দেখার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের এই ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্যে বিদেশীরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। দেশের মানুষও সাগর দেখতে যাচ্ছে। নতুন করে আবিষ্কার করছে বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্যকে। সরকার এগিয়ে আসুক বা না আসুক মানুষ বসে নেই। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখার জন্যে মানুষ উৎসবমুখর হয়ে আছে। কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা এখন যে কোন জাতীয় উৎসব আয়োজন এবং উপভোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দুই ঈদের ছুটিতে হোটেলগুলোতে কোন সিট খালি পাওয়া যায় না। উৎসুক মানুষ বাধ্য হয়ে দিনে ঘুরে রাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দেশী পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে যান্ত্রিক নগর জীবনের কোলাহল থেকে বেরিয়ে কক্সবাজার-কুয়াকাটা ছুটে যাচ্ছে মানুষ। দুই-তিন বছর আগে শুধু সিজনে বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের আনা-গোনা বেশি ছিল। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যটকদের আসা-যাওয়া অনেক কম ছিল। গত দু’বছর ধরে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসেও পর্যটকরা ব্যাপকভাবে ঘুরতে যাচ্ছে। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্যে সিজন আর অফ জিন নেই। সারা বছরই মানুষ ঘুরতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত এখন ১৫ কোটি মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সেভেন ওয়ান্ডার্সে নাম আসার পর বিদেশী পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটা ঘিরে দেশে-বিদেশে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় আয় দিয়েই জিডিপিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্যে কক্সবাজার ও কুয়াকাটাকে দেশী-বিদেশী এ পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য, আনন্দ-বিনোদনের উপযোগী করে সাজাতে হবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটকে ঘিরে বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সবুজ পাহাড় ঘেরা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। কক্সবাজার পর্যটন নগরীকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের পাহাড়-প্রকৃতি, উপজাতিদের বর্ণিল সংস্কৃতি আরেক নতুন সম্ভাবনার দিক। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, প্রাকৃতিক রূপ-রহস্যে ঘেরা সিলেট দেশের পর্যটন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে সময়ের প্রয়োজনে অর্থনীতির স্বার্থে যারা প্রকৃতির এ বিশাল ঐশ্বর্যকে কাজে লাগাতে পারবে তারাই এগিয়ে যেতে পারবেন।

বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প
পর্যটনকে বলা হয় একটি বহুমাত্রিক শিল্প। কারণ এ শিল্পের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। শিল্পের আন্তঃসংযোগের কারণে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে অন্য শিল্পেরও বিকাশ হয়। যার কারণে পর্যটনকে ধরা হয় শিল্পোন্নয়নের সংযোগ শিল্প হিসেবে। পৃথিবীর অনেক দেশ যাদের অন্য কোন আয় নেই শুধু পর্যটনের আয় দিয়েই দেশ চালাচ্ছে। মেক্সিকোর অর্থনীতির ৬০ ভাগই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপের রাজস্ব আয়ের ৮০ ভাগ আসছে পর্যটন শিল্প থেকে। পর্যটন শিল্পের কারণে অন্যান্য শিল্পের বিকাশ হয়েছে থাইল্যান্ডে। পর্যটনের আয় ছাড়া কোন দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে না। যারা পর্যটন অর্থনীতিতে শক্তিশালী তারাই প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির দেশ হিসেবেই পরিচিত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পর্যটন শিল্প। বিশ্ব মানুষের মিলনমেলা হচ্ছে পর্যটন। পর্যটন হচ্ছে এখন বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি। পর্যটকরা খরচ করলেই এ শিল্পের আয় বৃদ্ধি পায়।

পর্যটন শিল্পে সাগরকনা কুয়াকাটার সম্ভাবনা
সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। গরিবের ঘরে অপরূপ সুন্দরী কন্যা হিসেবে জন্ম নিয়েছে প্রাকৃতিক কন্যা কুয়াকাটা। প্রকৃতির যে এতো রূপরহস্য তা কুয়াকাটাকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টিকলার নাম হচ্ছে সুন্দরী কুয়াকাটা- যার মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সাগরের লোনা জলে গড়ে ওঠা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সকল সুন্দরের উপমা দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে রয়েছে। সাগর প্রকৃতির এক বিশাল রূপকথার গল্প হচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করা যায়। প্রকৃতির সকল সৃষ্টিকলা যেখান থেকে উপভোগ করা যায়। প্রকৃতির এক বিশাল রহস্য সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত কুয়াকাটা গঙ্গামতির লেক থেকে সরাসরি উপভোগ করা যায়। বিশ্বের কোনো সী-বীচে এমন দুটি বিরল দৃশ্য দেখা যায় না। প্রকৃতির সন্তান প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা এবং প্রাকৃতিক বন সুন্দরবনের মধ্যে তা খুঁজে পাবে। প্রকৃতির যে নিখুঁত কারিগরি নৈপুণ্যতা তা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র সৈকত, দ্বীপগুলোতে দেখা যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত। পুরো সৈকতে চিক চিক করছে রুপালি বালি, সৈকতের কোথাও কাদা মাটির চিহ্ন পাওয়া যাবে না। সাগরলোনা জলে সুশোভিত বৃক্ষমালার সারি দেখা যাবে সৈকতের তীর ঘেঁষে। কোথাও নারিকেল জিঞ্জি, কোথাও ঝাউবন। রয়েছে কেওড়া, গড়ান, সুন্দরী, গোলপাতা, সবুজ প্রকৃতি সাগরের নীল ঢেউ, চিকচিক রুপালি বালুকা ভূমি, রাখাইনদের বর্ণিল সংস্কৃতি, আদিম তাঁত, বৌদ্ধ মন্দির, গঙ্গামতির চরে লাল কাঁকড়া প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যবোধ। স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। সাগরের সঙ্গে জীবন-জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করা মানুষগুলো নিত্যদিনে কাজকর্ম একজন পর্যটককে করে তুলতে পারে বাস্তববাদী মানুষরূপে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাসমেলা, পানি খেলা পর্যটকদের আনন্দ-বিনোদনের আলাদা রসদ যোগাতে পারে। কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের রূপরহস্য বলে কিংবা লিখে উপস্থাপন করা যাবে। না। স্বচক্ষে দেখে প্রকৃতির এই রূপরহস্যকে অবগাহন করে চিত্তের প্রশান্তি আনতে হবে। কুয়াকাটা নামকরণের ঐতিহাসিক কুয়াটি দেখা যাবে সীমা বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন। সাগর তীর থেকে পায়ে হেঁটে কুয়াটির কাছে যাওয়া যায়। গঙ্গামতি লেকের অপরূপ দৃশ্যতো পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে। নৌকা চড়ে গঙ্গামতির লেক পেরিয়ে গঙ্গামতির চরে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দ্রুত চলাচল দেখে পর্যটকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবেন সুন্দরবন দেখার সুযোগ সময়ের অভাবে না হলেও কুয়াকাটা থেকে নিকট দূরত্বে দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত ফাতরার বন ঘুরে আসা যাবে। কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন বোটে করে পর্যটকরা ফাতরার বন ভ্রমণে যাচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে লেবুর চর। এখানে রয়েছে ১০০ একর বিশিষ্ট কেওড়া, কড়াই, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাকৃতিক বন।
কুয়াকাটা থেকে সাইট ট্যুর করা যায় সীত্রুজিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, মহেশখালীসহ আরো ছোট ছোট দ্বীপে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করা এবং প্রকৃতিকে উপভোগ করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটা। কুয়াকাটার রূপের অহংকার এবং গর্ব শুধু কুয়াকাটার। এর সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। প্রকৃতির এই বিশাল ঐশ্বর্য কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মানুষের অর্থনৈতিক পথ-রচনা করা যাবে। এতো বিশাল প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও কুয়াকাটার সৌন্দর্য পর্যটকরা উপভোগ করতে পারছে না।

কুয়াকাটা শুধুই সমুদ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত চিত্রপট, বিশাল ঝাউবন, লবণাক্ত বালিয়াড়ি, নারিকেল গাছের সারি, শুটকি পল্লীর কর্মমুখর দৃশ্য, রাখাইন পল্লীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, গঙ্গামতির জঙ্গল, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর। সবকিছু মিলিয়ে কুয়াকাটা হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন গন্তব্য।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরের তীরে জেগে ওঠা একটি চর পর্যটন মানচিত্রে নতুন সংযোজন হিসেবে উঠে আসে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল ‘হাইরের চর’ নামে, তবে বিজয়ের মাসে আবিষ্কৃত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’।
হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ, ফাঁকা নির্জনতা, গর্জনহীন নীল সাগর আর আকাশের মিতালি পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম, গঙ্গামতির দক্ষিণে জেগে ওঠা এক নীরব স্বর্গ, বর্ষায় কিছুটা ডুবে থাকলেও শীত মৌসুমে চর বিজয় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এখানে ইতোমধ্যে ঝাউ ও কেওড়াসহ নানা গাছ লাগানো হয়েছে।
চর বিজয়কে ঘিরে স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা নতুন ভ্রমণপথ তৈরি করেছেন। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন,“চর বিজয় একটি অপার সম্ভাবনার দ্বীপ। পরিবেশ সংরক্ষণ সাপেক্ষে এটি দেশের অন্যতম প্রধান ইকো-ট্যুরিজম সাইট হতে পারে।” জল তরণী ট্যুরিজম, আন্ধারমানিক ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চর বিজয়ে নৌবিহার, সানরাইজ ট্যুর ও জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
প্রকৃতি আমাদের উপহার, কিন্তু এই উপহার ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা। পর্যটকদের যথাসম্ভব প্লাস্টিক বর্জন এড়িয়ে চলা, গাছের ক্ষতি না করা, পাখি বা প্রাণীদের বিরক্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পর্যটনই হতে পারে জাতীয় আয়ের বিশাল খাত
পর্যটন শিল্পের কারণে বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ বলা হয়। আসলে বাংলাদেশের মতো পর্যটন শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা পৃথিবীর কোথাও নেই। এতো রূপ-বৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বর্ণিল সংস্কৃতি পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখে অনেক প্রবাসী হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ এবং রিসোর্ট অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। আরো অনেক প্রবাসী বিনিয়োগকারী কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয়ে আছে। দেশের প্রতিটি পর্যটন এলাকার প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে শুধু বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে। সরকারি সহায়তা পেলে পর্যটন শিল্প অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এই নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারবে। এ বিশ্বাস পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল মানুষের। আমরাও আশাবাদী বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একদিন বদলে যাবে।

Tag :
জনপ্রিয়

ঢাকা চট্টগ্রামে ৯০০০ হাজার সিএনজি-অটোরিক্সা বরাদ্দ সহ মামলার হয়রানি বন্ধ করতে হবে

সালাম মাহমুদ :

পর্যটনই হতে পারে জাতীয় আয়ের বিশাল খাত

প্রকাশিত ০৭:২৭:১৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশের অর্থনীতির বিশাল সম্ভাবনাময় খাত উঠে আসতে পারে পর্যটন শিল্প। অর্থনীতির প্রধান খাত হিসেবে গড়ে ওঠার সকল সম্ভাবনাই এ শিল্পের রয়েছে। পর্যটন অর্থনীতির জন্যে যে ধরনের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক নৈসর্গ, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, আদিবাসীদের বর্ণিল সংস্কৃতি দরকার এর সবকিছুই বাংলাদেশে রয়েছে। প্রকৃতি তার অপার মহিমা দিয়ে বাংলাদেশকে সাজালেও আমরা রাজনৈতিক সদিচ্ছা, দেশপ্রেম, শিল্পবোধের অভাবে তা কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশের মানুষও নিজের দেশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারছে না। বিদেশীরাতো এমনিই আসছে না। বাংলাদেশের চেয়েও যাদের প্রাকৃতিক নৈসর্গ কম তারা দেশের পুরো অর্থনীতি চালাচ্ছে পর্যটনের আয় দিয়ে। বিশ্ববাসীর কাছে যেখানে বাংলাদেশ হতে পারতো প্রধান পর্যটন কেন্দ্র সেখানে এখনও কোন অবস্থানই তৈরি হয়নি। গ্রামবাংলার কৃষিজীবন, নদীমাতৃক বাংলাদেশের সৌন্দর্য, আদিবাসীদের বর্ণিল সংস্কৃতি, পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত, ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট, একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের প্রাকৃতিক দৃশ্য, রাম-সীতা পাহাড়, বুদ্ধদের কেয়াং মন্দির, সীতাকুণ্ড হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান, মহেশখালী আদিনাথ মন্দির, উপজাতিদের বৈচিত্র্যময় জীবন-যাপন, সিলেটের চা বাগান, মাধবকুণ্ড, জাফলং, হযরত শাহজালাল র. মাজার, শিল্পীর রঙতুলি দিয়ে সাজানো ছবির মতো দেশটির পর্যটন শিল্পের বৈচিত্র্যময় বিষয়গুলো আমরা তুলে ধরতে পারছি না। যার কারণে পর্যটন শিল্প থেকে দেশ তেমন কিছু আয় করতে পারছে না। এখন সময় এসেছে সারা বিশ্বের পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যগুলো তুলে ধরার। নিউ সেভেন ওয়ান্ডার্সে বাংলাদেশের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার এবং ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবনের নাম আসায় মানুষ দেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে নতুনভাবে দেখার আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে এসেছে। বিশ্বজুড়ে আলোচিত হচ্ছে বাংলাদেশে রয়েছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। বিশ্বের এই ঐতিহ্য ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার জন্যে বিদেশীরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। দেশের মানুষও সাগর দেখতে যাচ্ছে। নতুন করে আবিষ্কার করছে বাংলাদেশের অপার সৌন্দর্যকে। সরকার এগিয়ে আসুক বা না আসুক মানুষ বসে নেই। দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত দেখার জন্যে মানুষ উৎসবমুখর হয়ে আছে। কক্সবাজার এবং কুয়াকাটা এখন যে কোন জাতীয় উৎসব আয়োজন এবং উপভোগের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। দুই ঈদের ছুটিতে হোটেলগুলোতে কোন সিট খালি পাওয়া যায় না। উৎসুক মানুষ বাধ্য হয়ে দিনে ঘুরে রাতে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সরকারি ছুটির দিনগুলোতে দেশী পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় থাকে। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন নিয়ে যান্ত্রিক নগর জীবনের কোলাহল থেকে বেরিয়ে কক্সবাজার-কুয়াকাটা ছুটে যাচ্ছে মানুষ। দুই-তিন বছর আগে শুধু সিজনে বিশেষ করে সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে পর্যটকদের আনা-গোনা বেশি ছিল। এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস পর্যটকদের আসা-যাওয়া অনেক কম ছিল। গত দু’বছর ধরে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাসেও পর্যটকরা ব্যাপকভাবে ঘুরতে যাচ্ছে। কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্যে সিজন আর অফ জিন নেই। সারা বছরই মানুষ ঘুরতে যাচ্ছে। দীর্ঘ এই সমুদ্র সৈকত এখন ১৫ কোটি মানুষের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। সেভেন ওয়ান্ডার্সে নাম আসার পর বিদেশী পর্যটকদের কাছেও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে কক্সবাজার। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটা ঘিরে দেশে-বিদেশে যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে তা সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় আয় দিয়েই জিডিপিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। এ জন্যে কক্সবাজার ও কুয়াকাটাকে দেশী-বিদেশী এ পর্যটকদের কাছে উপভোগ্য, আনন্দ-বিনোদনের উপযোগী করে সাজাতে হবে। পর্যটন নগরী কক্সবাজার ও কুয়াকাটকে ঘিরে বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। সেন্টমার্টিন দ্বীপ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর এবং ১২০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকত আর সবুজ পাহাড় ঘেরা অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পর্যটন নগরী কক্সবাজার অর্থনৈতিক সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। কক্সবাজার পর্যটন নগরীকে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটি, বান্দরবানের পাহাড়-প্রকৃতি, উপজাতিদের বর্ণিল সংস্কৃতি আরেক নতুন সম্ভাবনার দিক। ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন, প্রাকৃতিক রূপ-রহস্যে ঘেরা সিলেট দেশের পর্যটন অর্থনীতিকে সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে নিতে হবে। তবে সময়ের প্রয়োজনে অর্থনীতির স্বার্থে যারা প্রকৃতির এ বিশাল ঐশ্বর্যকে কাজে লাগাতে পারবে তারাই এগিয়ে যেতে পারবেন।

বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্প
পর্যটনকে বলা হয় একটি বহুমাত্রিক শিল্প। কারণ এ শিল্পের উপর ভিত্তি করে অন্যান্য শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালিত হয়। শিল্পের আন্তঃসংযোগের কারণে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে অন্য শিল্পেরও বিকাশ হয়। যার কারণে পর্যটনকে ধরা হয় শিল্পোন্নয়নের সংযোগ শিল্প হিসেবে। পৃথিবীর অনেক দেশ যাদের অন্য কোন আয় নেই শুধু পর্যটনের আয় দিয়েই দেশ চালাচ্ছে। মেক্সিকোর অর্থনীতির ৬০ ভাগই পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল। দক্ষিণ এশিয়ার মালদ্বীপের রাজস্ব আয়ের ৮০ ভাগ আসছে পর্যটন শিল্প থেকে। পর্যটন শিল্পের কারণে অন্যান্য শিল্পের বিকাশ হয়েছে থাইল্যান্ডে। পর্যটনের আয় ছাড়া কোন দেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে পারে না। যারা পর্যটন অর্থনীতিতে শক্তিশালী তারাই প্রাচুর্য ও সমৃদ্ধির দেশ হিসেবেই পরিচিত। শুধু তাই নয়, বিশ্বের মানুষের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে পর্যটন শিল্প। বিশ্ব মানুষের মিলনমেলা হচ্ছে পর্যটন। পর্যটন হচ্ছে এখন বিশাল অর্থনৈতিক শক্তি। পর্যটকরা খরচ করলেই এ শিল্পের আয় বৃদ্ধি পায়।

পর্যটন শিল্পে সাগরকনা কুয়াকাটার সম্ভাবনা
সাগরকন্যা খ্যাত পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। গরিবের ঘরে অপরূপ সুন্দরী কন্যা হিসেবে জন্ম নিয়েছে প্রাকৃতিক কন্যা কুয়াকাটা। প্রকৃতির যে এতো রূপরহস্য তা কুয়াকাটাকে না দেখলে বোঝা যাবে না।
প্রকৃতির এক অপরূপ সৃষ্টিকলার নাম হচ্ছে সুন্দরী কুয়াকাটা- যার মাত্র ৩৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে সাগরের লোনা জলে গড়ে ওঠা বিশ্বের একমাত্র ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। সকল সুন্দরের উপমা দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে রয়েছে। সাগর প্রকৃতির এক বিশাল রূপকথার গল্প হচ্ছে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা। যেখানে প্রকৃতির সঙ্গে সহাবস্থান করা যায়। প্রকৃতির সকল সৃষ্টিকলা যেখান থেকে উপভোগ করা যায়। প্রকৃতির এক বিশাল রহস্য সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত কুয়াকাটা গঙ্গামতির লেক থেকে সরাসরি উপভোগ করা যায়। বিশ্বের কোনো সী-বীচে এমন দুটি বিরল দৃশ্য দেখা যায় না। প্রকৃতির সন্তান প্রকৃতিকে উপভোগ করতে চাইলে সাগরকন্যা কুয়াকাটা এবং প্রাকৃতিক বন সুন্দরবনের মধ্যে তা খুঁজে পাবে। প্রকৃতির যে নিখুঁত কারিগরি নৈপুণ্যতা তা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে সমুদ্র সৈকত, দ্বীপগুলোতে দেখা যাবে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত কিলোমিটার দীর্ঘ এবং দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত। পুরো সৈকতে চিক চিক করছে রুপালি বালি, সৈকতের কোথাও কাদা মাটির চিহ্ন পাওয়া যাবে না। সাগরলোনা জলে সুশোভিত বৃক্ষমালার সারি দেখা যাবে সৈকতের তীর ঘেঁষে। কোথাও নারিকেল জিঞ্জি, কোথাও ঝাউবন। রয়েছে কেওড়া, গড়ান, সুন্দরী, গোলপাতা, সবুজ প্রকৃতি সাগরের নীল ঢেউ, চিকচিক রুপালি বালুকা ভূমি, রাখাইনদের বর্ণিল সংস্কৃতি, আদিম তাঁত, বৌদ্ধ মন্দির, গঙ্গামতির চরে লাল কাঁকড়া প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্যবোধ। স্বচক্ষে না দেখলে বোঝা যাবে না। সাগরের সঙ্গে জীবন-জীবিকার তাগিদে সংগ্রাম করা মানুষগুলো নিত্যদিনে কাজকর্ম একজন পর্যটককে করে তুলতে পারে বাস্তববাদী মানুষরূপে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের রাসমেলা, পানি খেলা পর্যটকদের আনন্দ-বিনোদনের আলাদা রসদ যোগাতে পারে। কুয়াকাটাসহ দক্ষিণ বাংলার উপকূলীয় অঞ্চলের রূপরহস্য বলে কিংবা লিখে উপস্থাপন করা যাবে। না। স্বচক্ষে দেখে প্রকৃতির এই রূপরহস্যকে অবগাহন করে চিত্তের প্রশান্তি আনতে হবে। কুয়াকাটা নামকরণের ঐতিহাসিক কুয়াটি দেখা যাবে সীমা বৌদ্ধ মন্দির সংলগ্ন। সাগর তীর থেকে পায়ে হেঁটে কুয়াটির কাছে যাওয়া যায়। গঙ্গামতি লেকের অপরূপ দৃশ্যতো পর্যটকদের মন কেড়ে নেবে। নৌকা চড়ে গঙ্গামতির লেক পেরিয়ে গঙ্গামতির চরে ঝাঁকে ঝাঁকে লাল কাঁকড়ার দ্রুত চলাচল দেখে পর্যটকরা আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠবেন সুন্দরবন দেখার সুযোগ সময়ের অভাবে না হলেও কুয়াকাটা থেকে নিকট দূরত্বে দ্বিতীয় সুন্দরবন হিসেবে পরিচিত ফাতরার বন ঘুরে আসা যাবে। কুয়াকাটা থেকে প্রতিদিন বোটে করে পর্যটকরা ফাতরার বন ভ্রমণে যাচ্ছে। কুয়াকাটা সৈকত থেকে পশ্চিম দিকে ৭ কিলোমিটার দূরত্বে রয়েছে লেবুর চর। এখানে রয়েছে ১০০ একর বিশিষ্ট কেওড়া, কড়াই, গেওয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাকৃতিক বন।
কুয়াকাটা থেকে সাইট ট্যুর করা যায় সীত্রুজিংয়ের মাধ্যমে সুন্দরবন, সেন্টমার্টিন, ছেঁড়াদ্বীপ, নিঝুম দ্বীপ, মহেশখালীসহ আরো ছোট ছোট দ্বীপে। প্রকৃতির সঙ্গে মিতালী করা এবং প্রকৃতিকে উপভোগ করার একমাত্র জায়গা হচ্ছে কুয়াকাটা। কুয়াকাটার রূপের অহংকার এবং গর্ব শুধু কুয়াকাটার। এর সঙ্গে আর কারো তুলনা হয় না। প্রকৃতির এই বিশাল ঐশ্বর্য কাজে লাগাতে পারলে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা দিয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় মানুষের অর্থনৈতিক পথ-রচনা করা যাবে। এতো বিশাল প্রাকৃতিক নৈসর্গ ও ঐশ্বর্যের অধিকারী হয়েও কুয়াকাটার সৌন্দর্য পর্যটকরা উপভোগ করতে পারছে না।

কুয়াকাটা শুধুই সমুদ্র নয়, এটি প্রকৃতির এক জীবন্ত চিত্রপট, বিশাল ঝাউবন, লবণাক্ত বালিয়াড়ি, নারিকেল গাছের সারি, শুটকি পল্লীর কর্মমুখর দৃশ্য, রাখাইন পল্লীর সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য, গঙ্গামতির জঙ্গল, তিন নদীর মোহনা, লেবুর চর। সবকিছু মিলিয়ে কুয়াকাটা হয়ে উঠেছে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ পর্যটন গন্তব্য।
২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরের তীরে জেগে ওঠা একটি চর পর্যটন মানচিত্রে নতুন সংযোজন হিসেবে উঠে আসে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত ছিল ‘হাইরের চর’ নামে, তবে বিজয়ের মাসে আবিষ্কৃত হওয়ায় এর নামকরণ করা হয় ‘চর বিজয়’।
হাজার হাজার লাল কাঁকড়ার অবাধ বিচরণ, ফাঁকা নির্জনতা, গর্জনহীন নীল সাগর আর আকাশের মিতালি পরিযায়ী পাখির অভয়াশ্রম, গঙ্গামতির দক্ষিণে জেগে ওঠা এক নীরব স্বর্গ, বর্ষায় কিছুটা ডুবে থাকলেও শীত মৌসুমে চর বিজয় পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে এখানে ইতোমধ্যে ঝাউ ও কেওড়াসহ নানা গাছ লাগানো হয়েছে।
চর বিজয়কে ঘিরে স্থানীয় ট্যুর অপারেটররা নতুন ভ্রমণপথ তৈরি করেছেন। ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন অব কুয়াকাটার সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার বলেন,“চর বিজয় একটি অপার সম্ভাবনার দ্বীপ। পরিবেশ সংরক্ষণ সাপেক্ষে এটি দেশের অন্যতম প্রধান ইকো-ট্যুরিজম সাইট হতে পারে।” জল তরণী ট্যুরিজম, আন্ধারমানিক ট্যুরিজমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান চর বিজয়ে নৌবিহার, সানরাইজ ট্যুর ও জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।
প্রকৃতি আমাদের উপহার, কিন্তু এই উপহার ধরে রাখতে হলে প্রয়োজন সচেতনতা। পর্যটকদের যথাসম্ভব প্লাস্টিক বর্জন এড়িয়ে চলা, গাছের ক্ষতি না করা, পাখি বা প্রাণীদের বিরক্ত না করার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

পর্যটনই হতে পারে জাতীয় আয়ের বিশাল খাত
পর্যটন শিল্পের কারণে বাংলাদেশকে অমিত সম্ভাবনার দেশ বলা হয়। আসলে বাংলাদেশের মতো পর্যটন শিল্পের বিশাল সম্ভাবনা পৃথিবীর কোথাও নেই। এতো রূপ-বৈচিত্র্যের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য বর্ণিল সংস্কৃতি পৃথিবীর কোথাও পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের পর্যটন অর্থনীতির সম্ভাবনা দেখে অনেক প্রবাসী হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ এবং রিসোর্ট অ্যাপার্টমেন্টে বিনিয়োগ করতে এগিয়ে এসেছে। আরো অনেক প্রবাসী বিনিয়োগকারী কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটায় বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হয়ে আছে। দেশের প্রতিটি পর্যটন এলাকার প্রাইভেট সেক্টর বিনিয়োগ করতে প্রস্তুত রয়েছে শুধু বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কারণে। সরকারি সহায়তা পেলে পর্যটন শিল্প অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এই নতুন দ্বার উন্মোচন করতে পারবে। এ বিশ্বাস পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল মানুষের। আমরাও আশাবাদী বিশাল অর্থনৈতিক সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ একদিন বদলে যাবে।