০৬:৫৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সুব্রত ঘোষ, ব্যুরো প্রধান, বগুড়াঃ

দুই লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ! বগুড়া শেরপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ক্লোসড

  • প্রকাশিত ০৮:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
  • ৩৩ বার দেখা হয়েছে

বগুড়ার শেরপুরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে ঘুষ ও অনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পেরে এক বছর আগে মৃত্যুবরণকারীর ভাইকে প্রলুব্ধ করে মামলা সাজানো হয়। তবে মামলা না করার শর্তে আসামীপক্ষদের সাথে এসআই জাহাঙ্গীর আলমের ঘুষ চাওয়া নিয়ে একটি অডিও প্রকাশ পায়। এ ছাড়াও নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে থানা থেকে ওই মামলা আসামীকে ছেড়েও দেয়। এসব নিয়ে ওই দারোগার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার আসামি মোবারক হোসেন। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওই এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে বগুড়া পুলিশ লাইনে ক্লোসড করা হয়েছে।
২১ এপ্রিল দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করায় পুলিশ সুপার কার্যালয় ২০ এপ্রিল তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করে একটি আদেশ দেয়। বর্তমানে তিনি পুলিশে লাইনে রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
মামলা আসামী মোবারক হোসেন দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা কে জানান, ২০২৪ সালের ১২ মে তার ভাগ্নে আলমগীর হোসেন ও স্ত্রী আখি খাতুনের দাম্পত্য কলহের জেরে আখি আত্মহত্যা করেন। এঘটনায় উভয় পরিবারের মাঝে আপোষ মীমাংসাও হয়, যেখানে থানা পুলিশের মধ্যস্থতা ছিল। এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আপোষনামা গ্রহণ করেন এবং “পরবর্তীতে কারেকশন করবেন” বলে একটি সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে রাখেন।
কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিলে আকস্মিকভাবে আখির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে মোবারকসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মোবারকের অভিযোগ, এসআই জাহাঙ্গীর আলম টাকা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে এই মামলায় তাদের নাম যুক্ত করেন।
মামলার আগেই এসআই জাহাঙ্গীর আলম ভাগ্নে আলমগীর হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, বিষয়টি ম্যানেজ করতে হলে তাকে উপর মহলকে টাকা দিতে হবে। শুরুতে দুই লাখ টাকা দাবি করা হলেও পরে তা এক লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকির মুখে মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। “আমাদের কাছে এ ঘটনার ২৫ মিনিটের বেশি সময়ের অডিও রেকর্ডিংও রয়েছে।”
এদিকে “১৬ এপ্রিল ওই মামলা ৫নং আসামী মোবাকর হোসেনের স্ত্রীর গর্ভের জমজ সন্তান ফলস অ্যাবর্শনে মারা যায়। তারপরেও আমি ১৭ এপ্রিল সকালে তার থানায় গ্রেফতারকৃত ভাগ্নে আলমগীর থানায় গেলে এসআই আমাকে জানান আমি মামলার আসামি। একই সঙ্গে তিনি আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন, পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দুইটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে থানার বাইরে পাঠিয়ে দেন।” এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই দারোগার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করে গত ১৮ এপ্রিল শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) সজীব শাহরীন দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা কে জানান,“বিষয়টি জেনেছি, ওই এসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সুব্রত ঘোষ
বগুড়া

Tag :
জনপ্রিয়

দুই লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ! বগুড়া শেরপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ক্লোসড

সুব্রত ঘোষ, ব্যুরো প্রধান, বগুড়াঃ

দুই লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ! বগুড়া শেরপুর থানার এসআই জাহাঙ্গীর ক্লোসড

প্রকাশিত ০৮:২৯:০০ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫

বগুড়ার শেরপুরে দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন ভাবে ঘুষ ও অনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতে না পেরে এক বছর আগে মৃত্যুবরণকারীর ভাইকে প্রলুব্ধ করে মামলা সাজানো হয়। তবে মামলা না করার শর্তে আসামীপক্ষদের সাথে এসআই জাহাঙ্গীর আলমের ঘুষ চাওয়া নিয়ে একটি অডিও প্রকাশ পায়। এ ছাড়াও নগদ বিশ হাজার টাকা নিয়ে থানা থেকে ওই মামলা আসামীকে ছেড়েও দেয়। এসব নিয়ে ওই দারোগার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ সংবাদ সম্মেলন করেন মামলার আসামি মোবারক হোসেন। এর প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত ওই এসআই জাহাঙ্গীর আলমকে বগুড়া পুলিশ লাইনে ক্লোসড করা হয়েছে।
২১ এপ্রিল দুপুরে এমন তথ্য নিশ্চিত করেছেন শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শফিকুল ইসলাম।
তিনি বলেন, উপ-পুলিশ পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করায় পুলিশ সুপার কার্যালয় ২০ এপ্রিল তাকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করে একটি আদেশ দেয়। বর্তমানে তিনি পুলিশে লাইনে রয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ।
মামলা আসামী মোবারক হোসেন দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা কে জানান, ২০২৪ সালের ১২ মে তার ভাগ্নে আলমগীর হোসেন ও স্ত্রী আখি খাতুনের দাম্পত্য কলহের জেরে আখি আত্মহত্যা করেন। এঘটনায় উভয় পরিবারের মাঝে আপোষ মীমাংসাও হয়, যেখানে থানা পুলিশের মধ্যস্থতা ছিল। এসআই মোঃ জাহাঙ্গীর আলম আপোষনামা গ্রহণ করেন এবং “পরবর্তীতে কারেকশন করবেন” বলে একটি সাদা কাগজে সাক্ষর নিয়ে রাখেন।
কিন্তু প্রায় ১০ মাস পর, ২০২৫ সালের ১৩ এপ্রিলে আকস্মিকভাবে আখির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে একটি মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে মোবারকসহ মোট পাঁচজনকে আসামি করা হয়। মোবারকের অভিযোগ, এসআই জাহাঙ্গীর আলম টাকা দাবি করে ব্যর্থ হয়ে এই মামলায় তাদের নাম যুক্ত করেন।
মামলার আগেই এসআই জাহাঙ্গীর আলম ভাগ্নে আলমগীর হোসেনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে বলেন, বিষয়টি ম্যানেজ করতে হলে তাকে উপর মহলকে টাকা দিতে হবে। শুরুতে দুই লাখ টাকা দাবি করা হলেও পরে তা এক লাখ টাকায় নামিয়ে আনা হয়। কিন্তু ভুক্তভোগীরা টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে হুমকির মুখে মামলা দিয়ে হয়রানি শুরু হয়। “আমাদের কাছে এ ঘটনার ২৫ মিনিটের বেশি সময়ের অডিও রেকর্ডিংও রয়েছে।”
এদিকে “১৬ এপ্রিল ওই মামলা ৫নং আসামী মোবাকর হোসেনের স্ত্রীর গর্ভের জমজ সন্তান ফলস অ্যাবর্শনে মারা যায়। তারপরেও আমি ১৭ এপ্রিল সকালে তার থানায় গ্রেফতারকৃত ভাগ্নে আলমগীর থানায় গেলে এসআই আমাকে জানান আমি মামলার আসামি। একই সঙ্গে তিনি আমার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন, পরবর্তীতে ২০ হাজার টাকা নিয়ে দুইটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে আমাকে থানার বাইরে পাঠিয়ে দেন।” এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই দারোগার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী করে গত ১৮ এপ্রিল শেরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
এ বিষয়ে বগুড়ার অতিরিক্তি পুলিশ সুপার (শেরপুর সার্কেল) সজীব শাহরীন দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা কে জানান,“বিষয়টি জেনেছি, ওই এসআইকে পুলিশ লাইনে ক্লোসড করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যথাযথভাবে যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
সুব্রত ঘোষ
বগুড়া