১০:২৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

টানা বৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলে সারাদেশে বন্যার থাবা

  • প্রকাশিত ০৬:৪৩:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫
  • ২ বার দেখা হয়েছে

দৈনিক স্বদেশবিচিত্রা প্রতিবেদক : দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। টানা বৃষ্টির ফলে কোথাও বাঁধ ভাঙছে, কোথাও পাহাড় ধসে পড়ছে, আবার কোথাও পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত ও সমন্বিত উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা না চালালে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারেবলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবিদরা।

সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদগুলো থেকে জানা গেছে, গত দুইদিন নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পাহাড়ী এলাকাগুলোতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে ফেনী, কক্সবাজার, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও চট্টগ্রামে। ফেনীতে রেকর্ড ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে মুহুরী, খাহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গিয়ে ৩০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, রাস্তা ও কৃষিজমি, বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থা।

ঢাকায়ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে রাজধানীবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। Flood Forecasting and Warning Centre (FFWC) জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা বা ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও মহেশখালী এলাকায় পাহাড়ি ঢলে এবং অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন অংশে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও পানি ঢুকে পড়েছে কর্ণফুলী, পাহাড়তলী ও বাঁশখালী এলাকার নিচু অংশে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় স্থানীয়দের সরে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় পটুয়াখালী ও বরগুনার নদীবাঁধগুলোর উপর তীব্র চাপ তৈরি হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফিশিং ট্রলার ও নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী, বাউফল, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও গলাচিপায় গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে সাবস্টেশন ডুবে যাওয়ায়। ফেনীতে চালু হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এই বন্যা শুধু মুহূর্তের দুর্যোগ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের এক সরাসরি প্রভাব। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় শহরগুলোতে বন্যার পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার মজুত রাখতে এবং প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ৩০টির বেশি জেলা কোনো না কোনোভাবে জলাবদ্ধতা বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা লাখের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। প্রশাসন বলছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে এবং প্রয়োজন হলে সেনা বা নৌবাহিনীকে মাঠে নামানো হবে।
দৈনিক স্বদেশবিচিত্রা/এআর

Tag :
জনপ্রিয়

ফেনীতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে বিজিবি

টানা বৃষ্টি, নদীর পানি বৃদ্ধি ও পাহাড়ি ঢলে সারাদেশে বন্যার থাবা

প্রকাশিত ০৬:৪৩:০১ অপরাহ্ন, বুধবার, ৯ জুলাই ২০২৫

দৈনিক স্বদেশবিচিত্রা প্রতিবেদক : দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল রূপ নিচ্ছে। টানা বৃষ্টির ফলে কোথাও বাঁধ ভাঙছে, কোথাও পাহাড় ধসে পড়ছে, আবার কোথাও পুরোপুরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় দ্রুত ও সমন্বিত উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা না চালালে ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা আরও ভয়াবহ রূপ নিতে পারেবলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ ও পরিবেশবিদরা।

সারাদেশের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদগুলো থেকে জানা গেছে, গত দুইদিন নিরবচ্ছিন্ন বৃষ্টিপাতের কারণে নদ-নদীর পানি অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। এর ফলে দেশের উপকূলীয় অঞ্চল ও পাহাড়ী এলাকাগুলোতে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা তৈরি হয়েছে ফেনী, কক্সবাজার, খুলনা, পটুয়াখালী, বরগুনা ও চট্টগ্রামে। ফেনীতে রেকর্ড ৪৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতে মুহুরী, খাহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর অন্তত ১৫টি পয়েন্টে বাঁধ ভেঙে গিয়ে ৩০টিরও বেশি গ্রাম পানির নিচে চলে গেছে। প্লাবিত হয়েছে বাড়িঘর, রাস্তা ও কৃষিজমি, বন্ধ হয়ে গেছে বিদ্যুৎ সংযোগ ও যোগাযোগব্যবস্থা।

ঢাকায়ও টানা বৃষ্টিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, মিরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় সড়ক ও অলিগলি পানিতে তলিয়ে যায়, ফলে রাজধানীবাসীকে পড়তে হয় চরম দুর্ভোগে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দেশের মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ আরও দুই দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এতে পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা রয়েছে। Flood Forecasting and Warning Centre (FFWC) জানিয়েছে, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা বা ফ্ল্যাশ ফ্লাডের আশঙ্কা রয়েছে।

কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামু ও মহেশখালী এলাকায় পাহাড়ি ঢলে এবং অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি ও বিদ্যালয়। নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় আশঙ্কাজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিছু এলাকা থেকে বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জেলার বিভিন্ন অংশে আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামেও পানি ঢুকে পড়েছে কর্ণফুলী, পাহাড়তলী ও বাঁশখালী এলাকার নিচু অংশে। পাহাড় ধসের আশঙ্কায় স্থানীয়দের সরে যেতে বলা হয়েছে।

উপকূলীয় পটুয়াখালী ও বরগুনার নদীবাঁধগুলোর উপর তীব্র চাপ তৈরি হয়েছে। পূর্বাভাস অনুযায়ী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। এসব অঞ্চলে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। ফিশিং ট্রলার ও নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। পটুয়াখালী, বাউফল, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়া ও গলাচিপায় গত ২৪ ঘণ্টায় গড়ে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, রেড ক্রিসেন্ট ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে। সেনাবাহিনী ও নৌবাহিনীকেও প্রস্তুত রাখা হয়েছে বলে প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে। অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে সাবস্টেশন ডুবে যাওয়ায়। ফেনীতে চালু হয়েছে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প, বিশুদ্ধ পানির সরবরাহ ও শুকনো খাবারের প্যাকেট বিতরণ।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, এই বন্যা শুধু মুহূর্তের দুর্যোগ নয়, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের এক সরাসরি প্রভাব। পর্যাপ্ত পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় শহরগুলোতে বন্যার পরিণতি আরও ভয়াবহ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় সাধারণ মানুষকে পানি থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার মজুত রাখতে এবং প্রশাসনের দেওয়া নির্দেশনা অনুসরণ করতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে দেশের প্রায় ৩০টির বেশি জেলা কোনো না কোনোভাবে জলাবদ্ধতা বা বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষতিগ্রস্তদের সংখ্যা লাখের ঘর ছুঁইছুঁই করছে। প্রশাসন বলছে, পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত আছে এবং প্রয়োজন হলে সেনা বা নৌবাহিনীকে মাঠে নামানো হবে।
দৈনিক স্বদেশবিচিত্রা/এআর