৫ আগষ্টের পর দিন যতই গড়াচ্ছে ততই আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি চরম অবনতি হচ্ছে জায়লস্করে। চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, শালিস বানিজ্য সহ সাধারণ মানুষের উপর নানা অত্যাচার-অনাচার দিন দিন বেড়েই চলেছে। সন্ত্রাসীরা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সাধারণ মানুষের সাথে দূর্ব্যবহার করে আসছে। এতে সাধারণ মানুষ বড়ই বিপাকে। জায়লস্কর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে সারারাত চোরেরা ঘুরঘুর করছে। গ্রামবাসীর মোবাইল সহ নিত্যব্যবহার্য জিনিসপত্র চুরি হচ্ছে অনবরত। এতে সাধারণ মানুষের ধারণা স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের গোপন যোগসাজসে অপরাধী চরিত্রের কর্মীদের দিয়ে এসব অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এছাড়াও চাঁদাবাজি, শালিসবানিজ্য সহ নানা অপরাধ হচ্ছে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে।
এরা সুবর্ণচর থেকে আগত তরমুজ চাষীদের কাছে ৫০ হাজার টাকা দাবী করেছে। দালানবাড়ি নির্মাণের ঠিকাদার নয়নের কাছে ২ লাখ টাকা দাবী করেছে। রামচন্দ্রপুর গ্রামের (লেঙ্গার টেকের) রাজমিস্ত্রী জসিম উদ্দিনকে সিলোনীয়া বাজার সংলগ্ন নদীর পাড়ে জোরপূর্বক নিয়ে গিয়ে চাঁদার দাবীতে বেধড়ক মারধর করেছে দলীয় সন্ত্রাসীরা। এতে ফেনী সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয় ভূক্তভোগী জসিম উদ্দিনকে। তাছাড়া ৫ আগস্টের পরবর্তী সময়ে শুধু জায়লস্কর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতেই গৃহস্থের ৮০টিরও বেশি গরু চুরি হয়েছে। এতে গরুর মালিক দরিদ্র কৃষকেরা আতঙ্কে দিন যাপন করছে। তাছাড়া ১৯ মার্চ ২০২৫ ইং গভীর রাতে ৮নং ওয়ার্ডের চানপুর মাঠে পূর্বধর্মপুর গ্রামের ২৫/৩০ জন সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তরমুজ চাষীদের উপর চাঁদার দাবীতে শসস্ত্র হামলা চালায় ও তাদের প্রাণনাশের হুমকি দেয়। এতে অসহায় তরমুজ চাষীরা মাঠ ছাড়া ও এলাকা ছাড়া হয়ে গেছে। এ সুযোগে সন্ত্রাসীরা তরমুজ ক্ষেতের দখল নিয়েছে। এরপর ২০ মার্চ সকাল ৮টা থেকে আশ-পাশের গ্রাম ধর্মপুর-চানপুর গ্রাম থেকে হাজার হাজার নরনারী এসে তরমুজ লুট করতে থাকে। ২০ মার্চ দুপুর ২টায় সরেজমিনে তরমুজ ক্ষেতে গিয়ে দেখা গেছে সন্ত্রাসীরা তরমুজ বিক্রি করছে। সন্ত্রাসীরা দাবী করছে তারা তরমুজ ক্ষেত কিনে নিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী একজন গ্রামবাসী জানালেন, ওইদিন সকালে লক্ষাধিক নারী-পুরুষ তরমুজ লুট করেছে। এরা বস্তা ভরে তরমুজ লুট করেছে। স্থানীয় কয়েকজন নারী ও শিশুকে বস্তা ভরে তরমুজ নিতে দেখা গেছে। সন্ত্রাসীরা তরমুজ ক্ষেত জবর দখল বা চাষীদের উপর হামলা ও তাদের তাড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ বেমালুম অস্বীকার করছে। এ ঘটনায় দাগনভূঞা থানার ওসির সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করার চেস্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এরপর ফেনীর পুলিশ সুপারকে ঘটনার ভয়াবহতা জানানোর চেষ্টা নিলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তিনি ভূক্তভোগীকে তার কাছে পাঠানোর পরামর্শ দেন। অথচ ভিন্ন জেলা থেকে আগত এ ভূক্তভোগী তরমুজ চাষীরা সন্ত্রাসীদের আক্রমনে এলাকা ছাড়া। গোপন সূত্রে জানা গেছে, প্রশাসনের সাথে যোগসাজস করে তরমুজ চাষীদের উপর এসব অত্যাচার হয়েছে।
এদিকে জায়লস্কর ইউনিয়নে মাটি দস্যুরা ফসলী জমির মাটি কেটে সাবাড় করলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। সারা রাতভর এস্কেভেটর মেশিন আর মাটির ট্রাকের দাবড়ানীতে জায়লস্করের গ্রামগুলো অতিষ্ট থাকলেও ইউএনও/ এসিল্যান্ড ব্যবস্থা নেয়নি। এ বিষয়ে ইউএনও/ এসিল্যান্ডকে মোবাইলে ফোন দিলে প্রায়ই ফোন রিসিভ করেননা। তবে একবার মাত্র এসিল্যান্ড মোবাইল রিসিভ করে ব্যবস্থা নেয়ার আশ^াস দিলেও বাস্তরে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা নেননি।
জায়লস্কর ইউনিয়নের ১,২,৩ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা আসনের মহিলা মেম্বার সেলিনা মমতাজ। আলামপুর গ্রামে স্থায়ী ঠিকানা। গত ৫ আগস্টের আগে থেকেই সে নিজে, তার স্বামী ও পুত্র সন্তান গুরুতর অসুস্থ্যতায় জরুরীভাবে পরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় অর্থাভাবে বহু টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে যায়। সেলিনা সিলোনীয়া বাজারের মেইন রোডের “সিলোনীয়া মটরস্” নামীয় একটি শো-রুমের মালিক জনৈক সাজ্জাদুল ইসলাম পলাশ থেকে তার স্বামী রফিকের সিএনজি বন্ধক রেখে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেয়। কিন্তু ঋণদাতা সুদখোর পলাশ এ ঋণ দেয়া-নেয়াকে তঞ্চকতা ও অপকৌশলের আশ্রয়ে বাকীতে সিএনজি বিক্রিতে রূপ দেয়। সে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ছাপানো প্যাডে ১২/১৪টা শর্ত জুড়িয়ে অঙ্গীকারনামা প্রস্তুত করে রাখে। ঋণ গ্রহীতাদের এই ছাপানো অঙ্গীকারনামা স্বাক্ষর নিয়ে এবং সিএনজির কাগজপত্র জমা নিয়ে ঋণ দেয়। এতে বন্ধক দেয়া সিএনজি অঙ্গীকারনামা শর্ত মোতাবেক কিস্তিতে বিক্রির সিএনজি হয়ে যায়। এ ভয়াবহ সুদখোর পলাশ জায়লস্কর ইউনিয়নের চানপুর গ্রামের মৃত: শাহাব উদ্দিন মেস্ত্রীর ছেলে এবং বিএনপি’র স্থানীয় যুবদলের সক্রিয় নেতা। সে সরকারি কোন অনুমোদন ছাড়াই বেআইনিভাবে এ ধরণের ন্যাক্কারজনক সুদের ব্যবসা দেদারসে চালিয়ে যাচ্ছে।
মেম্বার সেলিনা মমতাজ তার মূল ঋণের টাকা ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও সুদের টাকা পরিশোধের বিলম্বের অপরাধে বিগত অক্টোবর/ নভেম্বর ২০২৪ইং মাসের কোন এক তারিখে সন্ধ্যা ৭.৩০ মিনিটের সময় আলামপুর গ্রামের বটতলা নামক স্থান হইতে উত্তর আলামপুর গ্রামের আব্দুল ওহাবের ছেলে মিজান, উত্তর আলামপুরের শামীম ও মধ্যম আলামপুর গ্রামে আলু মেস্তরীর ছেলে নুরুল আমিন সহ অজ্ঞাতনামা কয়েকজন সন্ত্রাসীরা মেম্বার সেলিনার স্বামী রফিককের সিএনজির অটোরিক্সাটি অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সন্ত্রাসীরা সকলেই বিএনপি’র সক্রিয় কর্মী বলে জানা যায়। পরবর্তীতে অপহরণকৃত এ সিএনজিটি পলাশের শো-রুমে আটকে রাখা হয়। সেলিনা মেম্বার ও তার স্বামী রফিক কিছু টাকা জোগাড় করে তাদের সিএনজি উদ্ধার করে আনার চেস্টা নিলে তারা বুঝতে পারে পরিস্থিতির এক ভিন্ন চিত্র। আলু মেস্তরীর ছেলে নুরুল আমিন, বুচিপুরের কেফায়েত উল্যাহ ও পলাশ মিলে ৩ ভয়াবহ সুদখোরের সোগসাজসে এ সিএনজি অপহরনের কান্ড সংঘটিত হয়েছে। এরা মেম্বার সেলিনার কাছ থেকে সুদ ও জরিমানা সহ মোটা অংকের টাকা দাবী করেছে। এরা মেম্বার সেলিনাকে নানাভাবে হেনস্তা ও দূর্ব্যবহার করতে থাকে। এতে সেলিনা বাধ্য হয়ে বিগত ৩ ডিসেম্বর ২০২৪ইং সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে সিএনজি উদ্ধার করার সময় পলাশের নের্তৃত্বে মিজান, নুরুল আমিন, শামীম, কেফায়েত উল্যাহ সহ ২০/২৫ জন সন্ত্রাসীর দল সেলিনাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে এবং অত্র প্রতিবেদকের উপস্থিতিতে সাংবাদিকদের প্রতি দূর্ব্যবহার করতে থাকে।
জানাগেছে, কেফায়েত উল্যাহ ও নুরুল আমিন দৈনিক ১৫০ টাকা সুদের উপর সেলিনাকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ দিয়েছে। এ সুদখোরদের সুদের ব্যবসায়ে আইনগত কোন ভিত্তি নাই। আবার ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে সন্ধ্যা ৭টায় সেলিনা অত্র প্রতিবেদক সাংবাদিক মসিউর রহমান মিলনের মাধ্যমে ৫ হাজার টাকা বকেয়া সুদ পরিশোধ করতে গেলে সুদখোর পলাশ মসিউর রহমান মিলনকে দূর্ব্যবহার ও হুমকি দিতে থাকে। এভাবে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বেআইনী সুদখোর পলাশ ও তার সন্ত্রাসের দলবল সংবাদকর্মীদের ও সেলিনা মেম্বারের পরিবারকে দূর্ব্যবহারসহ হেনস্তা করে আসছে।
অত্যন্ত বিশ^স্ত ও গোপন সূত্রে জানা গেছে, পলাশ তার সিএনজি শো-রুমে শুধুমাত্র বেআইনী সুদের ব্যবসা করছে না। সে তার শো-রুমে চুরি হয়ে যাওয়া সিএনজি এনে কালার, ডেন্টিং, পেন্টিং, পার্টস সব রাতের মধ্যে পাল্টিয়ে পরে বিক্রি করে দেয়। এ পলাশের সাথে বৃহত্তর নোয়াখালী সিএনজি চোর চক্রের ও সন্ত্রাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।
৫ আগস্টের পর এ পলাশের দৌরাত্ব অত্যাধিক পরিমানে বেড়ে যায়। সে সিএনজি চুরি থেকে শুরু করে ফসলি জমির মাটি কাটা, গরু চুরি, ছাগল চুরি থেকে শুরু করে সকল রকমের জোর জুলুমের গডফাদারে রূপ নিয়েছে। বিগত ৬ মাসে সে বেআইনী উপার্জনে কোটিপতি বনে গেছে বলে বিশ^স্ত সূত্রে জানা গেছে। জানা গেছে, সে স্থানীয় আম্বর মিয়ার পরিবার থেকে সম্প্রতি ৩৪ লক্ষ টাকার জমি কিনেছে। জায়লস্কর ইউনিয়নের প্রভাবশালী বিএনপি নেতাদের আনুকুল্য সমর্থনে এসব করে আসছে।
এ বিষয়ে সাজ্জাদুল ইসলাম পলাশের সাথে কথা বললে সে তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে। এবং অত্র প্রতিবেদকে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য হুমকি দেয়। এ বিষয়ে নুরুল আমিনের সাথে মোবাইলে কথা বললে, সে সেলিনা মেম্বার ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ করেন।
০৬:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
এম.মসিউর রহমান মিলন :
জায়লস্করে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি বেআইনী সুদখোরদের সীমাহীন উৎপাত
Tag :
জনপ্রিয়