আগামী শনিবার ৭ জুন পবিত্র ঈদ উল আযহা। বগুড়ায় কোরবানির পশুর হাট জমতে শুরু করেছে। জেলায় এবার ৮৭টি হাটে কোরবানির পশু কেনা-বেচা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩২টি স্থায়ী ও ৫৫টি অস্থায়ী হাট। এবার জেলার ১২ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাটগুলোতে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৪২টি বিভিন্ন ধরনের পশু কেনা-বেচা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর মধ্যে অধিকাংশই গরু ও ছাগল। এছাড়া মহিষ, ভেড়াও রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলায় মোট ৫৭টি ভেটেরিনারী মেডিকেল টিম তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে। এ বছর কোরবানী ঈদের হাটগুলোতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হবে বলে আশা করছে জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের।
কোরবানির জন্য জেলার মোট ৫১ হাজারের অধিক খামারীরা এই পরিমাণ পশু কোরবারির জন প্রস্তুত করেছেন। মজুত পশুর মধ্যে ষাঁড় এক লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৯টি, বলদ গরু ৪২ হাজার ৭৪৬টি, গাভি ৮০ হাজার ৪২৬টি, মহিষ দুই হাজার ৩০৪টি, ছাগল তিন লাখ ৮০ হাজার ৬৩২টি ও ভেড়া ৪৭ হাজার ১৪০টি।
জেলা প্রাণি সম্পদ অফিস সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এ দিকে, হাটগুলোতে পশু কেনা-বেচা নিয়ে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্য জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। সেইসাথে গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় হাটগুলোতে বসানো হয়েছে জালটাকা শনাক্তকরণের মেশিন।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এবার বগুড়া সদরে ৮টি, শেরপুরে ৬টি, ধুনটে ৪টি, শাজাহানপুরে ১৪টি,শিবগঞ্জে ১৪টি, গাবতলীতে ৯টি, সোনাতলায় ৬টি, আদমদিঘীতে ৩টি, দুপচাঁচিয়ায় ৫টি, কাহালুতে ৫টি, নন্দীগ্রামে ৪টি ও সারিয়াকান্দিতে ৫টি কোরবারির পশুর হাট বসেছে। তবে জেলার গুরুত্বপূর্ণ বড় হাটগুলো হলো, বগুড়া সদরের সাবগ্রাম, ঘোড়াধাপ, নামুজা, শেরপুরের বারদুয়ারী, আদমদীঘির রাধাকান্তহাট সান্তাহার, আদমদীঘি, ধুনটের হাসখালি, মথুরাপুর, শাজাহানপুরের বনানী, দুবলাগাড়ী, রাণীরহাট, নয় মাইল, দুপচাঁচিয়ার ধাপেরহাট, কাহালুর জামগ্রাম বাজার, শিবগঞ্জের মহাস্থান, বুড়িগঞ্জ, সোনাতলার সৈয়দ আহমেদ কলেজ, কাঁচারীহাট, নন্দীগ্রামের রণবাঘা, গাবতলীর নারুয়ামালা, সারিয়াকান্দির মথুরাপাড়া, জোড়গাছা ও ফুলবাড়ী হাট। তবে অধিকাংশ হাটে সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত হাসিলের টাকা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সপ্তাহের প্রতিদিনই কোন না কোন হাটে কোরবানির পশু কেনা-বেচা চলছে।
কোরবানী পশুর হাটগুলেতে নেয়া হয়েছে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় হাটগুলোতে থাকছে পুলিশ কন্ট্রোল রুম। হাটে মোতায়েন থাকবে একজন করে পুলিশের এসআই বা এএসআই, ২ জন করে কনস্টেবল। এছাড়া সাদা পোশাকে নজরদারি করছে পুলিশের সদস্যরাও। হাটের ইজারদারদের পক্ষ থেকে বসানো হবে সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবস্থা। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছে সেচ্ছাসেবকদলও।
বগুড়া সদর উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রায়হান বলেন, এ উপজেলায় কোরবানী যোগ্য পশু প্রস্তুত রয়েছে ৭২ হাজার ৬৪টি,। ইতোমধ্যে হাটগুলোতে কোরবানির পশু বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতিদিনই কোনও না কোনও হাটে পশু কেনাবেচা চলছে। এ বছর ৪৮১ কোটি ৮ লাখ ১২ হাজার টাকারও বেশী লেনদেন হবে আশাবাদি। তবে উপজেলার ১০টি হাটে ১০টি মেডিক্যাল টিম কাজ করবে। হাটে আনার পর কোনও পশু অসুস্থ হলে ওই টিমের সদস্যরা চিকিৎসা দেবে। এ ছাড়া হাটে আনা পশু রোগাক্রান্ত কি না তা যাচাই করবে।’
শেরপুর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. নিয়ায কাযমীর রহমান জানান, উপজেলায় খামারি ও প্রান্তিক কৃষক মিলে এবার প্রায় ৭৫ হাজার ১৪২টি। উপজেলার স্থায়ী ও অস্থায়ী ৭টি হাটে প্রায় এইসব পশু প্রায় ৩শ ৬৫ কোটি টাকা লেনদেন হবে। এছাড়াও কোরবানি পশুর সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য সকল হাটে প্রাণিসম্পদ অফিসের ১১টি মেডিকেল টিম সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষন করছেন।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আনিছুর রহমান বলেন, ‘চাহিদার চেয়ে পশু বেশি থাকায় দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। খামারিরাও ভালো দাম পাবেন। এবার বিদেশ থেকে পশু আসছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর হাটে হেলথ চেকআপ বুথ স্থাপন করেছে। প্রতি হাটে ভেটেরিনারি অফিসার রয়েছে, যারা অস্বাভাবিক হাঁটা, চোখ-মুখের ফেনা বা ক্ষত দেখে অসুস্থ পশু শনাক্ত করছেন।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আনিছুর রহমান জানান, জেলায় ৮৭টি স্থায়ী ও অস্থায়ী পশুর হাট নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদের হাট ব্যবস্থাপনায় সক্রিয়ভাবে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
প্রতি বছর দেশীয় পদ্ধতিতে লালনপালন করা কোরবানির পশুর সংখ্যা বাড়ছে। চাহিদার চেয়ে পশু বেশি থাকায় দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকবে। খামারিরাও ভালো দাম পাবেন। এবছরও পশুর হাটগুলোতে ভেটেরিনারী মেডিকেল টিমগুলো কার্যক্রম শুরু করেছে। তাছাড়া খামারীরা যাতে তাদের মূল্যবান প্রাণি বিক্রি করে আর্থিকভাবে প্রতারিত না হয় বা জাল টাকার ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনের ব্যবহার নিশ্চিতকরণ করা হয়েছে।
বগুড়া জেলা পুলিশের মিডিয়া মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আতোয়ার রহমান দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা কে জানান, পশুর হাট গুলোতে জাল নোট শনাক্তকরণ, জালিয়াতি ও প্রতারণা রোধে পুলিশের টিম রয়েছে। রাতে পশু পরিবহনে নিয়োজিত যানবাহনের সুরক্ষায় পুলিশের টহল টিম মহাসড়কে রাতভর কাজ করছে। হাটে হাসিলের বিষয়টি জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, পৌর কর্তৃপক্ষ দেখছেন। যদি হাসিলের বিষয়ে কোন অভিযোগ আসে তবে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাটে হাটে অজ্ঞানপার্টি ও মলমপার্টির তৎপরতারোধেও পুলিশ সজাগ থাকবে। সেইসাথে হাটগুলোতে পশু কেনা-বেচার সময় ইজারাদারের লোকজন অতিরিক্ত হাসিল আদায় না করতে পারে সেজন্যও পুলিশের নজরদারি থাকবে বলে ওই পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন।