০৬:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মোঃ আবুল খায়ের - কুমিল্লা প্রতিনিধি :

চান্দিনায় বিএনপি নেতার পাওনা টাকা আদায়ের চাপে, কৃষকদলের নেতার আত্মহত্যা

  • প্রকাশিত ১২:২২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫
  • ৩৩ বার দেখা হয়েছে

কুমিল্লার জেলার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বিএনপি নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার।
রবিবার ২৯ শে জুন ভোরে আত্মহত্যার প্ররোচনা ধারায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫ জনকে আসামি করে মামলা গ্রহণ করেন চান্দিনা থানা পুলিশ।
মামলায় চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, একই ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামের মৃত গাজী খলিলুর রহমানের ছেলে গাজী হাসান মাহমুদ হানিফকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামীরা হলেন তারই দুই ভাই শরিফুর রহমান ও আরিফুল রহমান এবং কামারখলা গ্রামের মৃত জংশন আলী ভুঁইয়ার ছেলে ফরিদ ভূঁইয়া।

শনিবার (২৮ জুন) বিকালে (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাহবুব আলম রুবেল (৪৫) উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কৃষকদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই কৃষকদল নেতা বিষপানের আগে তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে ঘটনার বিস্তারিত প্রমান রেখে যান।

নিহত রুবেলের স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান- আমার ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) মফিজের সঙ্গে আমার স্বামী পৃথক হন ২০০১ সালে। মফিজ ভাইয়ের সঙ্গে হানিফ ২০১৬ সালে মাছের খাদ্যের টাকা লেনদেন হয়। হানিফ পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে মফিজ ভাই বাড়ি ছেড়ে বরগুনা জেলায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এর পর মফিজ ভাই বরগুনাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে হানিফ টাকা আদায় করতে আমার স্বামীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি, হয়রানি অপমান অপদস্থ করে আসছিল।

গত ১৫ দিন ধরে হানিফ আমার স্বামীকে চাপ সৃষ্টি করে এবং আরও একটি মামলা করার হুমকি দেন। হানিফের ভয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকেও বের হতে পারেনি। কয়েকদিন ধরে আমাদের ঘরে বাজার খরচও নেই। তার এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি আত্মহত্যার আগে তার মোবাইল ফোনে হানিফের নির্যাতনের সব কথা রেকর্ড করে রেখে যান।

এদিকে, নিহতের কল রেকর্ডে বলতে শোনা যায়- ‘হানিফ আমার ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকার জন্য আমাকে মামলা দেয়। গত কয়েকদিন যাবৎ হানিফ আমাকে ফোন করে এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজনের নামে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করে, না হয় আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে। যেভাবেই হোক আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সভাপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। ফরিদ হলো এসবের নাটের গুরু। এসব ঘটনায় আমি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই ভালো থাকবেন। পুলিশ যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে।’

স্থানীয়রা জানায়, মফিজের কাছে টাকা পাবে হানিফ। মফিজ মারা যাওয়ায় হানিফ টাকা আদায় করতে রুবেলকে চাপ সৃষ্টি করে বলে ‘তোর ভাইয়ের কাছে টাকা পাই, তুই আমার টাকা দিবি’। রুবেল অনেকের কাছে বিচার চেয়েছে, কারও কাছে বিচার পায়নি। ২৮শে জুন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে বিষপান করে রুবেল। তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।

চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ-উল ইসলাম জানান, নিহতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা মামলা গ্রহণ করি ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গতঃ বড় ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে ছোট ভাইয়ের নামে মামলা সহ টাকা আদায় করতে বিএনপি নেতার হুমকি ধামকি অপমান অপদস্থ ও চাপের মুখে শনিবার ২৮ শে জুন সকালে মাহবুব আলম রুবেল (৪৫) নামে এক কৃষক দলের নেতা বিষপান করে। বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। ২৯ শে জুন রবিবার বিকাল ৪ ঘটিকার সময় রুবেলের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী।

Tag :
জনপ্রিয়

দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা সম্পাদক ও প্রকাশক কবি অশোক ধর কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মঞ্জুর হোসেন ঈসা

মোঃ আবুল খায়ের - কুমিল্লা প্রতিনিধি :

চান্দিনায় বিএনপি নেতার পাওনা টাকা আদায়ের চাপে, কৃষকদলের নেতার আত্মহত্যা

প্রকাশিত ১২:২২:৩৩ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫

কুমিল্লার জেলার চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বিএনপি নেতাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন নিহতের স্ত্রী রেহানা আক্তার।
রবিবার ২৯ শে জুন ভোরে আত্মহত্যার প্ররোচনা ধারায় ৪ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরো ৫ জনকে আসামি করে মামলা গ্রহণ করেন চান্দিনা থানা পুলিশ।
মামলায় চান্দিনা উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক, একই ইউনিয়নের পানিপাড়া গ্রামের মৃত গাজী খলিলুর রহমানের ছেলে গাজী হাসান মাহমুদ হানিফকে প্রধান আসামি করা হয়। মামলার অন্য আসামীরা হলেন তারই দুই ভাই শরিফুর রহমান ও আরিফুল রহমান এবং কামারখলা গ্রামের মৃত জংশন আলী ভুঁইয়ার ছেলে ফরিদ ভূঁইয়া।

শনিবার (২৮ জুন) বিকালে (কুমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
নিহত মাহবুব আলম রুবেল (৪৫) উপজেলার মাইজখার ইউনিয়নের কামারখোলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে। তিনি ওই ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড কৃষকদলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। ওই কৃষকদল নেতা বিষপানের আগে তার মোবাইল ফোনে রেকর্ড করে ঘটনার বিস্তারিত প্রমান রেখে যান।

নিহত রুবেলের স্ত্রী রেহেনা আক্তার জানান- আমার ভাশুর (স্বামীর বড় ভাই) মফিজের সঙ্গে আমার স্বামী পৃথক হন ২০০১ সালে। মফিজ ভাইয়ের সঙ্গে হানিফ ২০১৬ সালে মাছের খাদ্যের টাকা লেনদেন হয়। হানিফ পাওনা টাকার জন্য চাপ দিলে মফিজ ভাই বাড়ি ছেড়ে বরগুনা জেলায় তার আত্মীয়ের বাড়িতে চলে যায়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এর পর মফিজ ভাই বরগুনাতেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। পরে হানিফ টাকা আদায় করতে আমার স্বামীকে আসামি করে আদালতে মামলা করেন। বিভিন্নভাবে চাপ সৃষ্টি, হয়রানি অপমান অপদস্থ করে আসছিল।

গত ১৫ দিন ধরে হানিফ আমার স্বামীকে চাপ সৃষ্টি করে এবং আরও একটি মামলা করার হুমকি দেন। হানিফের ভয়ে আমার স্বামী বাড়ি থেকেও বের হতে পারেনি। কয়েকদিন ধরে আমাদের ঘরে বাজার খরচও নেই। তার এই চাপ সহ্য করতে না পেরে আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি আত্মহত্যার আগে তার মোবাইল ফোনে হানিফের নির্যাতনের সব কথা রেকর্ড করে রেখে যান।

এদিকে, নিহতের কল রেকর্ডে বলতে শোনা যায়- ‘হানিফ আমার ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকার জন্য আমাকে মামলা দেয়। গত কয়েকদিন যাবৎ হানিফ আমাকে ফোন করে এলাকার আওয়ামী লীগের লোকজনের নামে মামলা দিতে চাপ সৃষ্টি করে, না হয় আমাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যাবে। যেভাবেই হোক আমার কাছ থেকে টাকা আদায় করবে বলে হুমকি দেয়। বিষয়টি আমি চান্দিনা উপজেলা বিএনপি সভাপতিসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। ফরিদ হলো এসবের নাটের গুরু। এসব ঘটনায় আমি চাপ সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সবাই ভালো থাকবেন। পুলিশ যেন ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে।’

স্থানীয়রা জানায়, মফিজের কাছে টাকা পাবে হানিফ। মফিজ মারা যাওয়ায় হানিফ টাকা আদায় করতে রুবেলকে চাপ সৃষ্টি করে বলে ‘তোর ভাইয়ের কাছে টাকা পাই, তুই আমার টাকা দিবি’। রুবেল অনেকের কাছে বিচার চেয়েছে, কারও কাছে বিচার পায়নি। ২৮শে জুন শনিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নিজ বাড়িতে বিষপান করে রুবেল। তাকে চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু ঘটে।

চান্দিনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) জাবেদ-উল ইসলাম জানান, নিহতের স্ত্রীর লিখিত অভিযোগ পেয়ে আমরা মামলা গ্রহণ করি ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
প্রসঙ্গতঃ বড় ভাইয়ের কাছে পাওনা টাকা না পেয়ে ছোট ভাইয়ের নামে মামলা সহ টাকা আদায় করতে বিএনপি নেতার হুমকি ধামকি অপমান অপদস্থ ও চাপের মুখে শনিবার ২৮ শে জুন সকালে মাহবুব আলম রুবেল (৪৫) নামে এক কৃষক দলের নেতা বিষপান করে। বিকালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে। ২৯ শে জুন রবিবার বিকাল ৪ ঘটিকার সময় রুবেলের জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে এলাকাবাসী।