মামলার বাদীর অভিযোগ, চাঁদাবাজির মামলার ১নং আসামী রেজাউল হক লিটন বাদী মোস্তাক আহামেদ চৌধুরীর পিতাকে নিজের পিতা পরিচয় দিয়ে নিজ পক্ষের উকিল দ্বারা জাতীয় পরিচয় পত্র সত্যায়িত করে চাঁদাবাজী ও বসতি ভেঙ্গে মালামাল লুটে নেয়ার ধারা ৩৮৫/৩৮০/৪২৭/৫০৬(২) দন্ড বিধির জিআর ১৫৬/৯৫ইং মামলায় জামিন নিয়ে বন্ধু মহলে অভিনব জালিয়াতির কৌশল ফাঁস করে এখন চরম বেকায়দায়। ঘটনাটি সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট ১নং আমলী আদালত সুধারাম নোয়াখালীতে।
ফৌজদারী কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ধারা ১৫৪ অনুসারে বিপি ফরম ২৭ পূরন করে সহি স্বাক্ষরে স্মারক নং ৩১৯২(৩)১ তারিখ ২৪/৪/২০২৫ ইং তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর (নিরস্ত্র) আইডি নং বিপি ১০১০১২৫২৯৩ ফখরুল ইসলাম এফআইআর এ ১ নং আসামীর নাম লিপিবদ্ধ করেছেন (E9UYH) রেজাউলহক (লিটন) , বয়স: ৫২ লিঙ্গ : পুরুষ পেশা (বিস্তারিত): অজ্ঞাত ,পিতার নাম: সিরাজুল হক, মাতার নাম: মাহিনুর বেগম (লাইলী) ২নং আসামীর নাম (E9UYX) শাহাদাত হোসেন (মিঠু), বয়স: ৫৪ লিঙ্গ : পুরুষ পেশা (বিস্তারিত): অজ্ঞাত ,পিতার নাম: সিরাজুল হক, মাতার নাম: মাহিনুর বেগম (লাইলী) ৩নং আসামীর নাম (E9UQK) মিজানুর রহমান (রাসেল) ,বয়স: ৪৬ লিঙ্গ : পুরুষ পেশা (বিস্তারিত): অজ্ঞাত , মাতার নাম: মাহিনুর বেগম (লাইলী)। এদিকে ম্যাজিষ্ট্রেট সম্মুক্ষে প্রাথমিক বিচারকালে নিবন্ধনপত্র ও জামিননামায় ১ নং আসামীর নাম লিপিবদ্ধ করা আছে রাষ্ট্র বাদী বনাম রেজাউল হক লিটন, পিতাঃ- সিরাজুল হক । অপর দিকে উক্ত মামলায় আসামীর অনুকুলে এডভোকেট অহিদ উদ্দিন মাহমুদ (মামুন) ২৯/৪/২৫ তারিখে সত্যায়িত লিখে নিজ নাম স্বাক্ষর করেছেন গনপ্রজাতস্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় পরিচয় পত্র নং ৬৪১ ৩০৮ ৬২৯৬ । অনুসন্ধানে জানা যায় ডিজিটাল এই এনআইডি টি ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ইস্যু করেছেন জনৈক রেজাউল হক, পিতাঃ- আলী আহাম্মদ চৌধুরী , সাথে মাতাঃ- মাহিনুর বেগম , Date of Birth 06 May 1972 । চাঁদাবাজী সংক্রান্ত উক্ত মামলার ১নং আসামী জামিন পাওয়ার জন্য নিজেকে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী প্রমান করতে সেরেস্তাদারের নিকট আরো একটি গুরুত্বপূর্ন সার্টিফিকেট জমা করেছেন । নোয়াখালী পৌরসভা কর্তৃপক্ষের সিলমোহরকৃত লেটারহেড প্যাডে টাইপ করা ০১৭৭৭, ০৮-০০৮-০১৭৭৫ স্মারকে অর্থবছর ২০২২-২০২৩ এর জন্য গত ০৭/০৯/২০২২ তারিখে ইস্যু করা ট্রেড/প্রফেশনাল লাইসেন্সটি বই ঘর ও কাগজ ঘর প্রতিষ্ঠানের নামে লাইব্রেরী এন্ড ষ্টেশনারী সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য জনৈক মোঃ রেজাউল হক লিটন, পিতা আলী আহাম্মদ চৌধুরী , মাতাঃ মাহিনুর বেগম । এই লাইসেন্সটি বর্তমানে মেয়াদ উত্তিন্ন । এদিকে ২ নং আসামী শাহাদাত হোসেন (মিঠু), বয়স: ৫৪ তার জাতীয় পরিচয় পত্র নং ২৩৭ ১৬৬ ৬৭৩২ তে সহোদর ছোট ভাই এর থেকেও ২ বছর ৮ মাস বয়স কম দেখিয়ে সিপাহী তে যোগদান করে অতিরিক্ত ৫ বছর সরকরী বেতন ভাতা ও সুবিধাদি নিয়ে পেনশানে আসে, এর জন্য মামলা হলে তাকে সরকারি টাকা ফেরৎ দিতে হবে। আমাদের প্রতিনিধি কথা বলেছেন বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ এর একজন ব্যারিষ্টার এর সাথে, তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিলো মেয়াদ উত্তিন্ন ট্রেড লাইসেন্স জমা দিয়ে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজী সংক্রান্ত মামলায় জামিন নেয়া কি কোন অপরাধ ? জবাবে তিনি বলেন “ মেয়াদ উত্তিন্ন ট্রেড লাইসেন্স জমা দিয়ে নিজেকে ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে চাঁদাবাজী সংক্রান্ত মামলায় জামিন নেওয়া একটি গুরুতর অপরাধ। এটি মূলত প্রতারনা ও জালিয়াতির শামিল। এর কারণ গুলো ধারাবাহিক বলছি (ক) মিথ্যা তথ্য প্রদান : মেয়াদ উত্তিন্ন ট্রেড লাইসেন্স জমা দেয়ার অর্থ হলো আপনি বিজ্ঞ আদালতকে মিথ্যা তথ্য দিচ্ছেন যে আপনি একজন বৈধ ব্যবসায়ী এবং আপনার ব্যবসা চলমান। এটি একটি সুষ্পষ্ঠ প্রতারনা। (খ) আদালতকে ভুল পথে চালিত করা : মিথ্যা তথ্য প্রদানের মাধ্যমে আপনি আদালতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন এবং জামিন পাওয়ার জন্য ভূল তথ্য ব্যবহার করেছেন। এটি ন্যায় বিচারকে ব্যাহত করার প্রচেষ্টা। (গ) সরকারী নথির অপব্যবহার: মেয়াদ উত্তিন্ন ট্রেড লাইসেন্স একটি সরকারী নথি । এর ভুল ব্যবহার বা মিথ্যা উপস্থাপনার মাধ্যমে আপনি সরকারী নথির অপব্যবহার করেছেন , যা একটি আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। (ঘ) চাঁদাবাজীর মতো গুরুতর অপরাধ: চাঁদাবাজী একটি গুরুতর অপরাধ। এই ধরনের মামলায় জামিন পাওয়ার জন্য মিথ্যা তথ্যের আশ্রয় নেওয়া অপরাধের গুরুত্ব আরো বাড়িয়ে তোলে ।(ঙ) বিশ্বাসাভঙ্গ: আদালতের প্রতি মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে আপনি আদালতের বিশ্বাসাভঙ্গ করেছেন। পরিশেষে বলবো এই ধরনের কর্মকান্ডের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি এবং মিথ্যা তথ্য প্রদানের দানের অভিযোগে আলাদা মামলা হতে পারে। চাঁদাবাজির মামলার পাশাপাশি এই নতুন অভিযোগ গুলো তার আইনি জটিলতা আরো বাড়িয়ে দেবে এবং জামিন বাতিল হবার সম্ভাবনাও তৈরী করবে। সুতরাং, মেয়াদ উত্তিন্ন ট্রেড লাইসেন্স ব্যবহার করে চাঁদাবাজির মামলায় জামিন নেওয়া কেবল অনৈতিক নয়, এটি একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জাতীয় পরিচয়পত্র রিবন্ধি আইন, ২০১০ (National Identity Registration Act, 2010): এই আইনের অধীনে জাতীয় পরচিয়পত্র পাওয়ার জন্য ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন মিথ্যা তথ্য বা বিকৃত তথ্য দিলে অথবা কোন তথ্য গোপন করলে এক বছর পর্যন্ত কারাদন্ড বা ২০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারেন। তিনি আরো বলেন“আইনজীবি একজন আদালতের কর্মকর্তা এবং তার দায়িত্ব হলো সত্য ও সঠিক তথ্য আদালতে উপস্থাপন করা । মিথ্যা তথ্য জেনেও যদি কোন আইনজীবি হলফনামা তৈরী করে আদালতে দাখিল করেন তবে তিনিও আদালতের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপনের দায়ে অভিযুক্ত হতে পারেন। আবেদনকারী কর্র্তৃক মিথ্যা তথ্য সরবরাহ এবং সেই তথ্যের ভিত্তিতে হলফনামা তৈরী ও আদালতে উপস্থাপন প্রতারণার শামিল। আদালতকে ভুল পথে চালিত করার অভিযোগে একাধিক মামলা হতে পারে। চাঁদাবাজির মামলার পাশাপাশি এই অভিযোগগুলো তার আইনি জটিলতাকে আরো কঠিন করে তুলবে এবং জামিন পাওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীন হয়ে যাবে।
০৫:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
স্টাফ রিপোর্টার, বৃহত্তর নোয়াখালী :
চাঁদাবাজীর মামলায় জামিন পেতে প্রধান আসামীর অভিনব কৌশল
Tag :
জনপ্রিয়