০৭:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ২৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রাজু আলীম :

গণতান্ত্রিক নগরায়ণ ও ঢাকার রূপান্তরের নতুন রূপকার – মোহাম্মদ এজাজ প্রশাসক , ঢাকা নর্থ সিটি কর্পরেশন

  • প্রকাশিত ০৪:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে

ঢাকা শহর, যাকে অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ নগরী হিসেবে জানেন, সেই শহর আজ নানা সংকট, অসমতা ও অব্যবস্থাপনার এক জটিল বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই শহরের মধ্যেই পরিবর্তনের একটি নতুন ধারা সূচিত হয়েছে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন মোহাম্মদ এজাজ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আসেন ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি ও রূপরেখা নিয়ে, যার মূলে ছিল “গণতান্ত্রিক নগরায়ণ”। অর্থাৎ, এমন এক শহর গঠনের প্রয়াস, যেখানে নাগরিকদের অধিকার, নিরাপত্তা, অংশগ্রহণ এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে—অবকাঠামোর পাশাপাশি গড়ে উঠবে এক মানবিক, বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর।
মোহাম্মদ এজাজ দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের সমস্যা চিহ্নিত করতে খুব বেশি সময় নেননি। জলাবদ্ধতা, খাল দখল, ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তার ভাঙাচোরা অবস্থা, ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ, পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনুপস্থিতি, নগরের সবুজ হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ—এই সবই ছিল তার পরিকল্পনার কেন্দ্রে। কিন্তু তিনি সমস্যাগুলো কেবল একটি প্রশাসনিক তালিকার ভেতর আবদ্ধ রাখেননি, বরং নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেগুলোর সমাধানে নেমে পড়েন।
প্রথম যে উদ্যোগটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়, সেটি হলো খাল উদ্ধার ও খনন। ঢাকা শহরের দীর্ঘদিনের সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা, যার মূলে রয়েছে খাল ও জলধারার উপর অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। মোহাম্মদ এজাজ এই সমস্যা চিহ্নিত করে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন করে, যা শহরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি শুধু খাল পরিষ্কার বা পুনঃখনন করেই থেমে থাকেননি, বরং ঐতিহাসিক কনাই ও শীতলক্ষ্যা নদী পুনরুদ্ধারের জন্যও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার প্রকোপ যেমন কমবে, তেমনি শহরের হারিয়ে যাওয়া নদী ও জলপথও ফিরে আসবে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা রাখবে।
একইসাথে তিনি খালপাড়ে সবুজায়ন, বৃক্ষরোপণ, পার্ক গড়ে তোলা ও খালঘেঁষা এলাকা জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া এই প্রকল্পে নতুন মাত্রা যোগ করে। খালপাড়ে হাঁটার পথ, সাইকেল লেন ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে, যা শহরের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পরিচ্ছন্ন নগরের প্রত্যয়ে মোহাম্মদ এজাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ দিয়েছেন। কোরবানির ঈদের সময় তিন দিনে ১৫ হাজার ৮৬৪ টন পশুর বর্জ্য অপসারণ তার প্রশাসনের দক্ষতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন, আলাদা বাজেট বরাদ্দ, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো এবং ল্যান্ডফিল ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব কার্যক্রম এমনভাবে সম্পন্ন হয়, যেন একটি মডেল শহরের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
শহরের রাস্তাঘাট উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নতুন ধারা চালু করেন। তিনি শহরের রাস্তাঘাট, ফুটপাত ও নর্দমাগুলো মেরামতের জন্য রাতভর কর্মী নিয়োজিত করেন, যাতে দিনের বেলায় যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, উত্তরখান, আগারগাঁও, খিলক্ষেতসহ বহু এলাকায় রাস্তা পুনর্নির্মাণ, এলইডি লাইট স্থাপন, ড্রেন পরিষ্কার ও ফুটপাতের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। ৬৩ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৭ কিলোমিটার নর্দমা ও ২২ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকার যানজট নিরসনে তিনি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গাবতলী বাস টার্মিনালে নতুন লেন ও ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ, মহাখালী টার্মিনালে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, স্কুল শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক সিগন্যাল ও জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে সচেতন করা এবং অটোমেটেড ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালুর উদ্যোগ তার প্রশাসনের ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
স্বাস্থ্য খাতেও মোহাম্মদ এজাজ একাধারে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মশক নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গু টেস্ট ও প্রতিরোধে অভূতপূর্ব কার্যক্রম শুরু করেন। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ, বাড়ির পানির ট্যাংকে ক্লোরিন সরবরাহ, ফগার মেশিন ব্যবহারের হার দ্বিগুণ করা—এসব উদ্যোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সাহায্য করেছে।
শহরের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে তিনি গুরুত্ব দেন সবুজায়ন, মাঠ রক্ষা ও সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ওপর। পরিত্যক্ত জমি, পার্ক ও সরকারি স্থাপনায় বৃক্ষরোপণ, খেলার মাঠ উদ্ধার, স্কুলে ছাদ বাগানের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সে ৫% ছাড় এবং শিশুরা যেন নির্বিঘ্নে খেলতে পারে সে লক্ষ্যে মাঠে কেয়ারগিভার নিয়োগের মতো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন।
নগরজীবনে সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য মোহাম্মদ এজাজ অসাধারণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, ওয়ানগালা—সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর উৎসব পালনে সমান গুরুত্ব দেন তিনি। শহরের দেয়ালে আলপনা, বৈশাখী মেলা, ঈদের আনন্দ মিছিল, পথশিশুদের জন্য ঈদ উদযাপন, মসজিদে হিট সেন্টার চালু, প্রবীণদের জন্য জনপরিসর তৈরি—এসবই একটি মানবিক শহরের ভিত্তি স্থাপন করছে।
মোহাম্মদ এজাজ কেবল প্রশাসক হিসেবে নয়, বরং একজন দূরদর্শী নগর পরিকল্পক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি নিজেই নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, গণশুনানি করছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি প্রকাশ করছেন। ‘ন্যায্য ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপ চালুর মাধ্যমে নাগরিক সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে তুলে ধরেন দক্ষতার সাথে। UNDP-এর সঙ্গে ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা, চীনের বেইজিংয়ে এশিয়ান মেয়রস ফোরামে অংশগ্রহণ, তুরস্কে নগর উদ্ভাবনের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন, এবং Partnership for Healthy Cities সামিটে যোগদান করে তিনি দেখিয়েছেন যে ঢাকা একটি বৈশ্বিক শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তার প্রশাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো—প্রতিটি কার্যক্রমেই নাগরিক অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিফলন। তিনি কখনো প্রশাসনকে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে দেখেননি, বরং নাগরিকদের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
চার মাসের এই অভিযাত্রায় মোহাম্মদ এজাজ প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছা থাকলে, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলে, একটি শহর বদলে যেতে পারে। তিনি শহরের খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে বড় চিত্রে নজর দিয়েছেন—সেখানে রয়েছে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নগর পরিকল্পনা, শিশু, প্রবীণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। তার এই দর্শনই “গণতান্ত্রিক নগরায়ণ”-এর বাস্তব রূপ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এখন আর একটি দপ্তর নয়, এটি হয়ে উঠেছে নতুন ঢাকা গড়ার এক প্রাণবন্ত পরীক্ষাগার। যেখানে নেতৃত্ব শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক ও আদর্শিক। মোহাম্মদ এজাজ এখন একটি নাম নয়, একটি দর্শনের প্রতীক—যিনি দেখিয়েছেন, শহরকে ভালোবাসলে শহর বদলানো যায়।

Tag :
জনপ্রিয়

দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা ও সাপ্তাহিক কালধারার চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস উদ্ধোধন।

রাজু আলীম :

গণতান্ত্রিক নগরায়ণ ও ঢাকার রূপান্তরের নতুন রূপকার – মোহাম্মদ এজাজ প্রশাসক , ঢাকা নর্থ সিটি কর্পরেশন

প্রকাশিত ০৪:৫৮:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ৭ জুলাই ২০২৫

ঢাকা শহর, যাকে অনেকেই দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ নগরী হিসেবে জানেন, সেই শহর আজ নানা সংকট, অসমতা ও অব্যবস্থাপনার এক জটিল বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এই শহরের মধ্যেই পরিবর্তনের একটি নতুন ধারা সূচিত হয়েছে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে, যখন মোহাম্মদ এজাজ ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি আসেন ভিন্ন এক দৃষ্টিভঙ্গি ও রূপরেখা নিয়ে, যার মূলে ছিল “গণতান্ত্রিক নগরায়ণ”। অর্থাৎ, এমন এক শহর গঠনের প্রয়াস, যেখানে নাগরিকদের অধিকার, নিরাপত্তা, অংশগ্রহণ এবং ন্যায্যতা নিশ্চিত হবে—অবকাঠামোর পাশাপাশি গড়ে উঠবে এক মানবিক, বাসযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নগর।
মোহাম্মদ এজাজ দায়িত্ব নেওয়ার পর শহরের সমস্যা চিহ্নিত করতে খুব বেশি সময় নেননি। জলাবদ্ধতা, খাল দখল, ট্রাফিক জ্যাম, রাস্তার ভাঙাচোরা অবস্থা, ডেঙ্গু ও মশাবাহিত রোগের প্রকোপ, পরিচ্ছন্নতার ঘাটতি, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের অনুপস্থিতি, নগরের সবুজ হারিয়ে যাওয়া পরিবেশ—এই সবই ছিল তার পরিকল্পনার কেন্দ্রে। কিন্তু তিনি সমস্যাগুলো কেবল একটি প্রশাসনিক তালিকার ভেতর আবদ্ধ রাখেননি, বরং নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেগুলোর সমাধানে নেমে পড়েন।
প্রথম যে উদ্যোগটি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়, সেটি হলো খাল উদ্ধার ও খনন। ঢাকা শহরের দীর্ঘদিনের সমস্যার অন্যতম প্রধান কারণ জলাবদ্ধতা, যার মূলে রয়েছে খাল ও জলধারার উপর অবৈধ দখল ও অপরিকল্পিত নগরায়ণ। মোহাম্মদ এজাজ এই সমস্যা চিহ্নিত করে অত্যন্ত সুস্পষ্ট ও কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তার নেতৃত্বে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ১০৮ কিলোমিটার খাল খনন সম্পন্ন করে, যা শহরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। তিনি শুধু খাল পরিষ্কার বা পুনঃখনন করেই থেমে থাকেননি, বরং ঐতিহাসিক কনাই ও শীতলক্ষ্যা নদী পুনরুদ্ধারের জন্যও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে জলাবদ্ধতার প্রকোপ যেমন কমবে, তেমনি শহরের হারিয়ে যাওয়া নদী ও জলপথও ফিরে আসবে, যা পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বিরাট ভূমিকা রাখবে।
একইসাথে তিনি খালপাড়ে সবুজায়ন, বৃক্ষরোপণ, পার্ক গড়ে তোলা ও খালঘেঁষা এলাকা জীববৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। নাগরিকদের কাছ থেকে পাওয়া সহযোগিতা ও স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া এই প্রকল্পে নতুন মাত্রা যোগ করে। খালপাড়ে হাঁটার পথ, সাইকেল লেন ও বিনোদন কেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনাও এর সাথে সংযুক্ত রয়েছে, যা শহরের জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
পরিচ্ছন্ন নগরের প্রত্যয়ে মোহাম্মদ এজাজ বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকেও আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ দিয়েছেন। কোরবানির ঈদের সময় তিন দিনে ১৫ হাজার ৮৬৪ টন পশুর বর্জ্য অপসারণ তার প্রশাসনের দক্ষতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। ওয়ার্ডভিত্তিক কমিটি গঠন, আলাদা বাজেট বরাদ্দ, রাস্তায় জীবাণুনাশক ছিটানো এবং ল্যান্ডফিল ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সব কার্যক্রম এমনভাবে সম্পন্ন হয়, যেন একটি মডেল শহরের পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
শহরের রাস্তাঘাট উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ নতুন ধারা চালু করেন। তিনি শহরের রাস্তাঘাট, ফুটপাত ও নর্দমাগুলো মেরামতের জন্য রাতভর কর্মী নিয়োজিত করেন, যাতে দিনের বেলায় যান চলাচলে বিঘ্ন না ঘটে। মিরপুর, উত্তরা, মহাখালী, উত্তরখান, আগারগাঁও, খিলক্ষেতসহ বহু এলাকায় রাস্তা পুনর্নির্মাণ, এলইডি লাইট স্থাপন, ড্রেন পরিষ্কার ও ফুটপাতের উন্নয়ন সম্পন্ন হয়েছে। ৬৩ কিলোমিটার রাস্তা, ৬৭ কিলোমিটার নর্দমা ও ২২ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে।
ঢাকার যানজট নিরসনে তিনি বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। গাবতলী বাস টার্মিনালে নতুন লেন ও ডাইভারশন সড়ক নির্মাণ, মহাখালী টার্মিনালে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, স্কুল শিক্ষার্থীদের ট্রাফিক সিগন্যাল ও জেব্রা ক্রসিং সম্পর্কে সচেতন করা এবং অটোমেটেড ডিজিটাল ট্রাফিক সিস্টেম চালুর উদ্যোগ তার প্রশাসনের ব্যতিক্রমধর্মী দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন।
স্বাস্থ্য খাতেও মোহাম্মদ এজাজ একাধারে নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্র, মশক নিয়ন্ত্রণ, ডেঙ্গু টেস্ট ও প্রতিরোধে অভূতপূর্ব কার্যক্রম শুরু করেন। নগর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বিনামূল্যে ডেঙ্গু পরীক্ষা, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ, বাড়ির পানির ট্যাংকে ক্লোরিন সরবরাহ, ফগার মেশিন ব্যবহারের হার দ্বিগুণ করা—এসব উদ্যোগ ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে সাহায্য করেছে।
শহরের পরিবেশবান্ধব উন্নয়নে তিনি গুরুত্ব দেন সবুজায়ন, মাঠ রক্ষা ও সম্প্রদায়ের সম্পৃক্ততার ওপর। পরিত্যক্ত জমি, পার্ক ও সরকারি স্থাপনায় বৃক্ষরোপণ, খেলার মাঠ উদ্ধার, স্কুলে ছাদ বাগানের জন্য হোল্ডিং ট্যাক্সে ৫% ছাড় এবং শিশুরা যেন নির্বিঘ্নে খেলতে পারে সে লক্ষ্যে মাঠে কেয়ারগিভার নিয়োগের মতো সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেন।
নগরজীবনে সংস্কৃতি ও মানবিক মূল্যবোধ ফিরিয়ে আনার জন্য মোহাম্মদ এজাজ অসাধারণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। ঈদ, পহেলা বৈশাখ, দুর্গাপূজা, বড়দিন, ওয়ানগালা—সব ধর্ম ও জাতিগোষ্ঠীর উৎসব পালনে সমান গুরুত্ব দেন তিনি। শহরের দেয়ালে আলপনা, বৈশাখী মেলা, ঈদের আনন্দ মিছিল, পথশিশুদের জন্য ঈদ উদযাপন, মসজিদে হিট সেন্টার চালু, প্রবীণদের জন্য জনপরিসর তৈরি—এসবই একটি মানবিক শহরের ভিত্তি স্থাপন করছে।
মোহাম্মদ এজাজ কেবল প্রশাসক হিসেবে নয়, বরং একজন দূরদর্শী নগর পরিকল্পক হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন। তিনি নিজেই নাগরিকদের প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন, গণশুনানি করছেন, পরামর্শ নিচ্ছেন এবং প্রতিবেদন অনুযায়ী কাজের অগ্রগতি প্রকাশ করছেন। ‘ন্যায্য ঢাকা’ মোবাইল অ্যাপ চালুর মাধ্যমে নাগরিক সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছেন।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে তুলে ধরেন দক্ষতার সাথে। UNDP-এর সঙ্গে ইনোভেশন ল্যাব প্রতিষ্ঠা, চীনের বেইজিংয়ে এশিয়ান মেয়রস ফোরামে অংশগ্রহণ, তুরস্কে নগর উদ্ভাবনের অভিজ্ঞতা উপস্থাপন, এবং Partnership for Healthy Cities সামিটে যোগদান করে তিনি দেখিয়েছেন যে ঢাকা একটি বৈশ্বিক শহরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তার প্রশাসনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো—প্রতিটি কার্যক্রমেই নাগরিক অংশগ্রহণ ও গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতিফলন। তিনি কখনো প্রশাসনকে একক সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী হিসেবে দেখেননি, বরং নাগরিকদের অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করেছেন।
চার মাসের এই অভিযাত্রায় মোহাম্মদ এজাজ প্রমাণ করেছেন যে ইচ্ছা থাকলে, দূরদর্শী পরিকল্পনা ও নাগরিক সম্পৃক্ততা থাকলে, একটি শহর বদলে যেতে পারে। তিনি শহরের খুঁটিনাটি সমস্যার সমাধানের সঙ্গে সঙ্গে বড় চিত্রে নজর দিয়েছেন—সেখানে রয়েছে পরিবেশ, জনস্বাস্থ্য, সংস্কৃতি, নগর পরিকল্পনা, শিশু, প্রবীণ, নারী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণ। তার এই দর্শনই “গণতান্ত্রিক নগরায়ণ”-এর বাস্তব রূপ।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এখন আর একটি দপ্তর নয়, এটি হয়ে উঠেছে নতুন ঢাকা গড়ার এক প্রাণবন্ত পরীক্ষাগার। যেখানে নেতৃত্ব শুধুমাত্র প্রশাসনিক নয়, বরং নৈতিক ও আদর্শিক। মোহাম্মদ এজাজ এখন একটি নাম নয়, একটি দর্শনের প্রতীক—যিনি দেখিয়েছেন, শহরকে ভালোবাসলে শহর বদলানো যায়।