০৪:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, কর্মী অভিবাসন নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা:

  • প্রকাশিত ০২:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫
  • ৯ বার দেখা হয়েছে

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং আশা করা যায় শিগগির স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গমন করবেন। এবারের আলোচনায় কর্মীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে দুই দেশের সরকার প্রধান একমত হয়েছেন।

ইতিমধ্যে দুই দেশের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বিদ্যমান আইন মেনে মালয়েশিয়ায় কর্মী গমন করলেও উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের প্রেক্ষিতে প্রক্রিয়াটি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বিগত সরকার অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সিকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করায় অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। তবে কর্মীরা মালয়েশিয়া গমনের পর প্রায় সকলেই লাভজনক কর্মে নিযুক্ত হতে পারায় তাদের কোন অভিযোগ নেই।

উল্লেখ্য মালয়েশিয়ায় কর্মীদের নূন্যতম বেতন ১৭০০ রিঙ্গিত এবং বেতন-ভাতা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় মালয়েশিয়া গমনে বাংলাদেশী কর্মীদের আগ্রহ অনেক বেশি।

২০১৭-১৮ এবং ২০২২-২৪ মেয়াদে অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম FWCMS মাধ্যমে সাড়ে ৭ লক্ষ কর্মী মালয়েশিয়ায় গমন করেছেন। এদের সকলেই নিয়মিত কাজ ও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কর্মীদের কোন অভিযোগ না থাকলেও কিছু এজেন্সির মালিক বৈধ ও আইনসঙ্গতভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণকারী সকল এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মিথ্যা মামলা দাযের করেন। তবে মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়ায় নিয়ম বহির্ভূত কোন কার্যকলাপ হয়নি বলে জানিয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা দীর্ঘ তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে রিপোর্ট পেশ করেছে বলে জানা গেছে।

দেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচার, মামলা ও আন্দোলনের কারণে মালয়েশিয়া সরকার বিব্রত হওয়ায় বাংলাদেশ হতে নতুন করে কর্মী নিতে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল। তবে দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকটি আশার আলো জাগিয়েছে।

এবারের আলোচনায় কর্মী এবং দেশের স্বার্থে নিরাপদ এবং স্বল্প ব্যয়ে লাভজনক কর্মে নিয়োগের বিষয়ের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে যখনই দু’দেশের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় গমনের সম্ভাবনা দেখা দেয়- তখনই দেশের অভ্যন্তরে জনশক্তি ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত এজেন্সিসমূহ আন্দোলন, মানববন্ধন, মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দু’দেশের সরকার প্রধান অভিবাসন প্রক্রিয়াটিকে কর্মীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক অভিবাসন বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত হয়েছেন।

সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ১০ লাখেরও অধিক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মরত আছেন। তথাপি দেশের অভ্যন্তরে এজেন্সিসমূহ এবং প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশ ও তাদের স্বার্থে কাজ করা মিডিয়া দেশের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষাসহ শ্রমিকদের কল্যাণ প্রসঙ্গে যখন গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু মহল এবং মিডিয়া আলোচনাটি বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণ এবং নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে রয়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে।

তবে মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কর্মরত এক মিলিয়ন কর্মীর জন্য দেশে এক মিলিয়ন পরিবার সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। এক মিলিয়ন বেকার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বছরে গড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসছে। সমালোচনাকারীরা এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের বিকল্প কোন ব্যবস্থা বা অসচ্ছল পরিবারবর্গের জন্য কোন সুব্যবস্থা করতে কখনোই সমর্থ হবেন না। এই শীর্ষ বৈঠকে নতুন কর্মীদের সম্মানজনক ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে এবং নতুন করে বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভিসাপ্রাপ্ত প্রায় আট হাজার কর্মী, যারা নির্ধারিত সময়ে মালেয়েশিয়ায় গমন করতে পারেননি তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।

Tag :
জনপ্রিয়

বান্দরবান জেলার লামায় ২ টি ইটভাটা আজ ধ্বংস করা হয়

খুলছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার, কর্মী অভিবাসন নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা:

প্রকাশিত ০২:০৬:৪৬ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫

মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বৈঠকে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারকের পাশাপাশি বাংলাদেশ হতে কর্মী নিয়োগের বিষয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে এবং আশা করা যায় শিগগির স্বল্প অভিবাসন ব্যয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা মালয়েশিয়ায় গমন করবেন। এবারের আলোচনায় কর্মীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অভিবাসন প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে দুই দেশের সরকার প্রধান একমত হয়েছেন।

ইতিমধ্যে দুই দেশের স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের ভিত্তিতে বিদ্যমান আইন মেনে মালয়েশিয়ায় কর্মী গমন করলেও উচ্চ অভিবাসন ব্যয়ের প্রেক্ষিতে প্রক্রিয়াটি সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। মালয়েশিয়ার সিদ্ধান্ত মোতাবেক নির্দিষ্ট সংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বিগত সরকার অধিকাংশ রিক্রুটিং এজেন্সিকে এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করায় অভিবাসন ব্যয় বৃদ্ধি পায়। তবে কর্মীরা মালয়েশিয়া গমনের পর প্রায় সকলেই লাভজনক কর্মে নিযুক্ত হতে পারায় তাদের কোন অভিযোগ নেই।

উল্লেখ্য মালয়েশিয়ায় কর্মীদের নূন্যতম বেতন ১৭০০ রিঙ্গিত এবং বেতন-ভাতা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় মালয়েশিয়া গমনে বাংলাদেশী কর্মীদের আগ্রহ অনেক বেশি।

২০১৭-১৮ এবং ২০২২-২৪ মেয়াদে অনলাইনভিত্তিক ডিজিটাল প্লাটফর্ম FWCMS মাধ্যমে সাড়ে ৭ লক্ষ কর্মী মালয়েশিয়ায় গমন করেছেন। এদের সকলেই নিয়মিত কাজ ও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। কর্মীদের কোন অভিযোগ না থাকলেও কিছু এজেন্সির মালিক বৈধ ও আইনসঙ্গতভাবে মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণকারী সকল এজেন্সির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগে মিথ্যা মামলা দাযের করেন। তবে মালয়েশিয়া সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়ায় নিয়ম বহির্ভূত কোন কার্যকলাপ হয়নি বলে জানিয়েছে এবং দেশের অভ্যন্তরে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংশ্লিষ্ট তদন্ত সংস্থা দীর্ঘ তদন্তের পর অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি মর্মে আদালতে রিপোর্ট পেশ করেছে বলে জানা গেছে।

দেশের অভ্যন্তরে এ ধরনের নেতিবাচক প্রচার, মামলা ও আন্দোলনের কারণে মালয়েশিয়া সরকার বিব্রত হওয়ায় বাংলাদেশ হতে নতুন করে কর্মী নিতে কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল। তবে দুই দেশের সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠকটি আশার আলো জাগিয়েছে।

এবারের আলোচনায় কর্মী এবং দেশের স্বার্থে নিরাপদ এবং স্বল্প ব্যয়ে লাভজনক কর্মে নিয়োগের বিষয়ের দিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। অতীতে দেখা গেছে যখনই দু’দেশের মধ্যে আলোচনায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়ায় গমনের সম্ভাবনা দেখা দেয়- তখনই দেশের অভ্যন্তরে জনশক্তি ব্যবসায়ের সাথে সম্পৃক্ত এজেন্সিসমূহ আন্দোলন, মানববন্ধন, মিডিয়ায় অপপ্রচারের মাধ্যমে সম্ভাবনাময় অভিবাসন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করে। এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখে দু’দেশের সরকার প্রধান অভিবাসন প্রক্রিয়াটিকে কর্মীদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তাসহ সামগ্রিক অভিবাসন বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়ে বাস্তবায়নের বিষয়ে একমত হয়েছেন।

সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম শ্রমবাজার মালয়েশিয়া বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ১০ লাখেরও অধিক বাংলাদেশি কর্মী মালয়েশিয়ায় কর্মরত আছেন। তথাপি দেশের অভ্যন্তরে এজেন্সিসমূহ এবং প্রতিবেশী প্রতিযোগী দেশ ও তাদের স্বার্থে কাজ করা মিডিয়া দেশের স্বার্থের পরিপন্থি কাজ করে চলেছে।

বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, প্রতিরক্ষাসহ শ্রমিকদের কল্যাণ প্রসঙ্গে যখন গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে, ঠিক সেই মুহূর্তে কিছু মহল এবং মিডিয়া আলোচনাটি বাংলাদেশি শ্রমিকদের শোষণ এবং নির্যাতনের মাধ্যম হিসেবে রয়ে যেতে পারে বলে জানাচ্ছে।

তবে মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কর্মরত এক মিলিয়ন কর্মীর জন্য দেশে এক মিলিয়ন পরিবার সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। এক মিলিয়ন বেকার কর্মীর কর্মসংস্থান হয়েছে এবং বছরে গড়ে তিন বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসছে। সমালোচনাকারীরা এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের বিকল্প কোন ব্যবস্থা বা অসচ্ছল পরিবারবর্গের জন্য কোন সুব্যবস্থা করতে কখনোই সমর্থ হবেন না। এই শীর্ষ বৈঠকে নতুন কর্মীদের সম্মানজনক ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং তাদের সামাজিক নিরাপত্তার প্রতি নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে এবং নতুন করে বিপুল সংখ্যক কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যেই ভিসাপ্রাপ্ত প্রায় আট হাজার কর্মী, যারা নির্ধারিত সময়ে মালেয়েশিয়ায় গমন করতে পারেননি তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।