স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : কালের আবর্তে প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী কুমারের নিপুণ হাতে মাটির তৈরি তৈজসপত্র বর্তমানে বিলিনের পথে। একসময় গ্রামীণ গৃহস্থালীর নানা কাজে অত্যাবশ্যকীয় উপকরণ ছিল এটি। এতে মাটির জিনিসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ও কদর ছিল। একে কেন্দ্র করে নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়া নামে একটি গ্রামে গড়ে ওঠে সুপ্রসিদ্ধ মৃৎশিল্প। আগেকার দিনে মৃৎশিল্পের প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন: এঁটেল মাটি, রঙ, যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি ছিল সহজলভ্য। কিন্তু বর্তমানে এসব প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। পূর্বে যেখানে বিনামূল্যে মাটি সংগ্রহ করা যেত, বর্তমানে এ মাটিও অগ্রিম টাকায় কিনতে হচ্ছে।
এ শিল্পের উপর নির্ভর করে নীলফামারী জেলার অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করতো। তারা ওই গ্রাম থেকে বিভিন্ন ধরনের মাটির জিনিসপত্র পাইকারি কিনে এনে বিভিন্ন গ্রাম, পাড়া-মহল্লায় ফেরি করে বিক্রি করত। হাট-বাজারেও পসরা সাজিয়ে বসত। যা বিক্রিবাট্টা করে তারা ভালো আয়-রোজগার করতেন।
কিন্তু আধুকিতার ছোঁয়ায় মাটির জিনিসপত্রের চাহিদা না থাকায় স্থান দখল করে নিয়েছে অ্যালুমেনিয়াম ও প্লাস্টিকের তৈজসপত্র। এতে এ পেশায় রসদ খুঁজে না পাওয়ায় হাট-বাজার ও মেঠোপথের ফেরিওয়ালারা পেশা বদল করে ভিড়েছেন অন্য পেশায়। পূর্বপুরুষের কাছ থেকে পাওয়া এই পেশা অনেকেই ছেড়ে দিয়েছেন। তবু শখ, বংশগত ঐতিহ্য বা জীবিকার তাগিদে সৈয়দপুরের কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়ায় প্রায় ৫০০পরিবার এই ক্ষুদ্র শিল্পকে ধরে রেখেছেন।
পরিবেশবিদদের মতে, মাটির জিনিসপত্র পরিবেশবান্ধব ও স্বাস্থ্যসম্মত। বিশেষ করে মাটির চুলায় হাঁড়ি-পাতিলে ভাত-তরকারি রান্নার স্বাদ ও পুষ্টিগুণ অটুট থাকে। অপরদিকে অপচনশীল প্লাস্টিকের জিনিসপত্র যত্রতত্র ফেলে দেয়ায় পরিবেশ প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়ছে। তাই মাটির জিনিসকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসা দরকার।
মৃৎশিল্পী সুবিত চন্দ্র পাল বলেন, সৈয়দপুরের কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়নের চওড়া পালপাড়ায় এক সময় হাজারও মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত ছিল। এ পেশার অনেকেই এখন পৈতৃক পেশা ছেড়ে দিয়েছেন।
সৈয়দপুর উপজেলার কাশিরাম বেলপুকুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লানছু হাসান চৌধুরী বলেন, বর্তমানে এসকল মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করে পেট চলে না মৃৎশিল্পীদের। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই বাপ-দাদার পুরনো এ পেশা বদলাচ্ছেন অনেকেই। তবে সরকারি সহযোগিতা পেলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৃৎশিল্পের সোনালি অতীত ফিরে পাবে তারা। ’
নীলফামারী মশিউর রহমান ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম বলেন, মৃৎশিল্প আবহমান গ্রাম-বাংলার প্রাচীন ঐতিহ্য। মৃৎশিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে এর বাজার সৃষ্টিসহ সরকারি-বেসরকারিভাবে প্রয়োজনীয় পৃষ্ঠপোষকতা খুবই জরুরি।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর