০৬:৩০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ২৪ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কবি সাযযাদ কাদির বন্ধু অবন্ধু ও নক্ষত্রের ছায়া জামিল জাহাঙ্গীর

  • প্রকাশিত ১২:৩৮:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ১২ বার দেখা হয়েছে

ম্যাজিকলন্ঠনে তখন প্রতিদিন ম্যাজিক শো চলতো। রথীমহারথীদের কাজকারবার দেখতে কার না ভালো লাগে! আমাদের বয়স অল্প। চুপচাপ শুনতে মন্দ লাগতো না। একএকজন জ্ঞানের কারখানা নিয়ে বসতেন। বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি। রতনদাকে ঘিরে একটা ৩০০ মিটারের বৃত্ত নাট মণ্ডলের ঘাসচাতাল থেকে আজিজ মার্কেট। ২০১২ সালে এই বৃত্ত ৫০০ মিটারে উন্নীত হয়। ম্যাজিক মাটির উপর থেকে মাটির নিচে ঢুকে পড়ে।

প্রায়ান্ধকার সেই কবর প্রদেশ কনকর্ড এম্পরিয়াম মার্কেটে তখন কিছু গুদামঘর ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। এরপর দলবেঁধে আজিজের প্রকাশকগণ কনকর্ড মার্কেটে চলে আসতে শুরু করে। আলো জ্বলতে শুরু করে কবরের শুনশান নীরবতায়।

এই আলোকরশ্মির সঙ্গেই এখানে আসেন কবি সাযযাদ কাদির। রতন্দার শিক্ষক। বাগ্মী বিচক্ষণ ধারালো এক বিচিত্র প্রতিভা। জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। মনে রাখতে পারেন পৃথিবীর নানা প্রান্তরের এমন এমন তথ্য যা ভালো করে সাজিয়ে রাখলে কম্পিউটারও চমকে উঠবে।

যথেচ্ছ ধ্রুপদ নিয়ে তিনি আমাদের দলে যোগ দিলেন। কবিতা নিয়ে এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কাউকে আর পাইনি ইহজনমে। আমাদের ছোটদের সঙ্গে পায়ে পা মাড়িয়ে ঝগড়া করায়ও পটু এই অগ্রজ। বেজায় শিশু আর প্রকৃত পণ্ডিত এই কবিকে নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তাঁর চরিত্রের মতই বিচিত্র।

ভালো লাগলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসা করে যেমন ভাসিয়ে দিতেন তেমনি মন্দ লাগলে মুহূর্ত পরেই ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছেন অনেকবার। একবার আড্ডাশেষের গ্রুপছবিতে তাঁকে ইচ্ছা করে আউট অব ফ্রেমে রেখেছি এমন অভিযোগ তুললেন আমার দিকে। পরে আমার মনে পড়লো, তিনি আড্ডা শেষ হবার আগেই চলে গিয়েছিলেন। রাতে কল করলেন, বলেন তো কে আমি?
ডোনাল্ড ট্র্যাম্প?
সেও কল করে নাকি!
বারাক ওবামা টনি ব্লেয়ার ওরাও করে।
এই পর্যন্তই। কেটে দিলেন।

পরের সপ্তায় আবার কল করলেন। চমকে দিয়ে বললেন, আমি সাযযাদ কাদির বলছি, আপনার দুই মিনিট সময় হবে? বললাম, ৫ মিনিট পর আমিই আপনাকে কল করছি। আমি তখন ১১ বছরের একটা ভুল অংকের শেষ সমাধান করছিলাম। কলব্যাক করতে রাত হয়ে যায়। না অভিমানী বালকের মতো করে সে কল তিনি ধরেননি। এরপর সে বছর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি। না তিনি না আমি।

জানুয়ারির প্রথম দিনে এক কবির জন্ম উৎসবে আমাকে গান গাইতে হয়। মঞ্চে অনেকের সঙ্গে কবি সাযযাদ কাদির। উপস্থাপক আমার নাম ঘোষণা করার পর আমিও পুরো একটা নিজের গান গেয়ে নেমে এলাম। যেন এটাই স্বাভাবিক! রাতে কবি সাযযাদ কাদির আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন। আমার গান নিয়ে একটা স্ট্যাটাসও দিলেন।

এই মেঘ এই বৃষ্টি এই জল এই কাদা এই কালো এই সাদা এমন করেই তিনি এক পরম শ্রদ্ধেয় অগ্রজ। যার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি আর মান অভিমানে চলে গেছে অনেকটা সময়। গান নৃত্য অভিনয় আলোকচিত্র সিনেমা গ্লামার কিসে ছিলেন না তিনি। জগৎজোড়া তাঁর বিচরণ।

জাতীয় প্রেসক্লাবে একবার কবিতা দিবস উদযাপনের আয়োজক হলেন। সেবার সংগঠন হিসেবে ম্যাজিক লন্ঠনকে দিলেন সম্মাননা। এর আগেও ম্যাজিক লন্ঠন সম্মাননা পেয়েছে। সাযযাদ কাদির দিলেন অর্থবহ সম্মাননা। বিষয়টি ভালো লেগেছিল আমাদের।

গাজীপুর ছাড়িয়ে রাজেন্দ্রপুরে বনের ভেতর একবার কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আগের রাতে কল দিয়েছেন রিসিভ করিনি বলে, অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে কথাই বলেননি। সেদিন সবাই কবিতা পড়েছে কিন্তু আমার ডাক পড়েনি। তিনি এমনই। আমি আগেই তা জানতাম।

একটা সংকলন করবেন, আমার কাছে কবিতা চাইলেন! এমন জবরদস্ত কবির জন্য কবিতা বের করা আমার পক্ষে সহজ ছিলো না। তিনি বই থেকে বের করে চার লাইন ছেপে দিলেন।রিভিউতে সেই চার লাইনকে এমন বিসৃত করে দিলেন। আমার লজ্জা লাগছিলো খুব।

সহজ করে সহজ কথা বলার মধ্যে এক ধরণের আভিজাত্য আছে’ এই কথা বলে হাসতেন খুব। হাসির মধ্যে সারল্য ঝুলে থাকতো যেন এক শিশু হো হো করে হাসছেন। তাঁর বিড়াল প্রীতির কথা ভুলবার নয়। বাহাদুর নামের একটা বিড়াল একবার অসুস্থ হয়ে পড়লো। তিনি অনেক চেষ্টা করে পেট ডক্টরস খুঁজে পেলেন। ডক্টর বাহাদুরকে কোন পরীক্ষা না করেই ঔষধ দিলে তিনি খুব কষ্ট পান।

নিশিদলে যোগ দেবেন বলে কনফার্ম করলে বলেছি, এমন দূর্গম ও প্রতিকূল কন্ডিশনে আপনার না যাওয়াই ভালো। মন খারাপ হলো তাঁর। আবার আনফ্রেন্ড আবার কথা বলা বন্ধ। এমনতালে বিস্মিত হবার চেয়ে বেদনাহত হতাম খুব। পরক্ষণে মেনে নিতাম সে এমনই।

জীবনে অনেকের বই পড়ে রিভিউ লিখেছেন। তাঁর মনে কষ্ট ছিলো কেউ কৃতজ্ঞতাটুকুও প্রকাশ করেনি। আগাছা পরগাছা পরজীবি এককোষী দুইকোষী অন্ডকোষী এমন অনেক লেখককে সম্পাদনা করে তৈরি করতে চাইতেন। আমি বলতাম আমড়া গাছে আম ধরানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে র তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই ভালো। ব্যস আবার লেগে গেলো। আবার কথাবলা বন্ধ। ফেসবুকে আনফ্রেন্ড।

ঠোঁটকাটা স্বভাব আর অকুতোভয় বাগ্মী হবার কারণে বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কোন বড় পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে আসেনি। কবিতা প্রবন্ধ ইতিহাস উপকরণ ও সংকলন সব শাখাতেই কাজ করেছেন প্রায় ৫০ বছর। ১৯৭০ সালে প্রথম বইয়ের প্রকাশ থেকে ২০১৭ সাল অবধি ৪৮ বছরে ৬০ এর অধিক প্রকাশনা । সাদত কলেজের শিক্ষকতা কিংবা বিচিত্রা রেডিও বেইজিং দৈনিক সংবাদ তারকালোক দিনকাল পি আই বি মানবজমিন সবখানে আলো ঝলমল করা এই কবিকে নিভৃতচারী বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি কবিতার আবহেই ছিলেন কিন্তু সময় এবং প্রতিবেশ তাঁকে তাঁর ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

সতেরো সালের শুরুতে এই আনফ্রেন্ড হওয়ার পর আসে। রেডিও পেইচিং যেদিন তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচার করে সেদিন অনেকক্ষণ চুপ হয়ে ছিলাম। হাসোজ্জল কবির শিশুমুখ ভেসে উঠেছে বারবার। ২০১২ সালে কবির বৃষ্টিবিলীন কাব্য প্রকাশ পায়। ২০১৭ সালে শেষ কাব্য আমার ভুলবাসাই তাঁর শেষ কাব্য।

প্রকৃত কবির আত্ম উপলদ্ধির চেয়ে বড় প্রাপ্তিযোগ থাকতে নেই। হৃত অবহেলিত বঞ্চিত শিল্পীর গরল নিঃশ্বাস থেকে জন্ম নেয় অসংখ্য অনুকার ও শুভানুধ্যায়ী। এদের ভাষায় পরিভাষায় শিল্পী অমর হয়ে ঠাই করে নেন ভবিষ্যতের পৃষ্ঠায়।

সাযযাদ কাদির কবিদের কবি। তাই তাঁকে ভালোবাসা ছাড়া কোন পথ খোলা নেই। একজন পরিশুদ্ধ লেখকের কথা চিন্তা করলেই তাঁর অবয়ব ভেসে ওঠে চোখের পর্দায়। এমন নক্ষত্র আমাদের ভাষার আকাশে বিরল এবং প্রবল অপেক্ষার। তাঁর ছায়া থেকে যে বঞ্চিত সে হতভাগা।

২০১৭ সালের এইদিনে তিনি চিরকালের ঠিকানায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি

Tag :
জনপ্রিয়

ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হলে করণীয়

কবি সাযযাদ কাদির বন্ধু অবন্ধু ও নক্ষত্রের ছায়া জামিল জাহাঙ্গীর

প্রকাশিত ১২:৩৮:৩১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ এপ্রিল ২০২৫

ম্যাজিকলন্ঠনে তখন প্রতিদিন ম্যাজিক শো চলতো। রথীমহারথীদের কাজকারবার দেখতে কার না ভালো লাগে! আমাদের বয়স অল্প। চুপচাপ শুনতে মন্দ লাগতো না। একএকজন জ্ঞানের কারখানা নিয়ে বসতেন। বিকেল থেকে মধ্যরাত অবধি। রতনদাকে ঘিরে একটা ৩০০ মিটারের বৃত্ত নাট মণ্ডলের ঘাসচাতাল থেকে আজিজ মার্কেট। ২০১২ সালে এই বৃত্ত ৫০০ মিটারে উন্নীত হয়। ম্যাজিক মাটির উপর থেকে মাটির নিচে ঢুকে পড়ে।

প্রায়ান্ধকার সেই কবর প্রদেশ কনকর্ড এম্পরিয়াম মার্কেটে তখন কিছু গুদামঘর ছাড়া আর কিচ্ছু নেই। লোকজনের তেমন আনাগোনা নেই বললেই চলে। আমরা নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না। এরপর দলবেঁধে আজিজের প্রকাশকগণ কনকর্ড মার্কেটে চলে আসতে শুরু করে। আলো জ্বলতে শুরু করে কবরের শুনশান নীরবতায়।

এই আলোকরশ্মির সঙ্গেই এখানে আসেন কবি সাযযাদ কাদির। রতন্দার শিক্ষক। বাগ্মী বিচক্ষণ ধারালো এক বিচিত্র প্রতিভা। জীবন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া। মনে রাখতে পারেন পৃথিবীর নানা প্রান্তরের এমন এমন তথ্য যা ভালো করে সাজিয়ে রাখলে কম্পিউটারও চমকে উঠবে।

যথেচ্ছ ধ্রুপদ নিয়ে তিনি আমাদের দলে যোগ দিলেন। কবিতা নিয়ে এমন পরীক্ষা নিরীক্ষা করার কাউকে আর পাইনি ইহজনমে। আমাদের ছোটদের সঙ্গে পায়ে পা মাড়িয়ে ঝগড়া করায়ও পটু এই অগ্রজ। বেজায় শিশু আর প্রকৃত পণ্ডিত এই কবিকে নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা তাঁর চরিত্রের মতই বিচিত্র।

ভালো লাগলে সঙ্গে সঙ্গে প্রশংসা করে যেমন ভাসিয়ে দিতেন তেমনি মন্দ লাগলে মুহূর্ত পরেই ফেসবুকে আনফ্রেন্ড করে দিয়েছেন অনেকবার। একবার আড্ডাশেষের গ্রুপছবিতে তাঁকে ইচ্ছা করে আউট অব ফ্রেমে রেখেছি এমন অভিযোগ তুললেন আমার দিকে। পরে আমার মনে পড়লো, তিনি আড্ডা শেষ হবার আগেই চলে গিয়েছিলেন। রাতে কল করলেন, বলেন তো কে আমি?
ডোনাল্ড ট্র্যাম্প?
সেও কল করে নাকি!
বারাক ওবামা টনি ব্লেয়ার ওরাও করে।
এই পর্যন্তই। কেটে দিলেন।

পরের সপ্তায় আবার কল করলেন। চমকে দিয়ে বললেন, আমি সাযযাদ কাদির বলছি, আপনার দুই মিনিট সময় হবে? বললাম, ৫ মিনিট পর আমিই আপনাকে কল করছি। আমি তখন ১১ বছরের একটা ভুল অংকের শেষ সমাধান করছিলাম। কলব্যাক করতে রাত হয়ে যায়। না অভিমানী বালকের মতো করে সে কল তিনি ধরেননি। এরপর সে বছর বেশ কয়েকবার দেখা হয়েছে কিন্তু কথা হয়নি। না তিনি না আমি।

জানুয়ারির প্রথম দিনে এক কবির জন্ম উৎসবে আমাকে গান গাইতে হয়। মঞ্চে অনেকের সঙ্গে কবি সাযযাদ কাদির। উপস্থাপক আমার নাম ঘোষণা করার পর আমিও পুরো একটা নিজের গান গেয়ে নেমে এলাম। যেন এটাই স্বাভাবিক! রাতে কবি সাযযাদ কাদির আমাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালেন। আমার গান নিয়ে একটা স্ট্যাটাসও দিলেন।

এই মেঘ এই বৃষ্টি এই জল এই কাদা এই কালো এই সাদা এমন করেই তিনি এক পরম শ্রদ্ধেয় অগ্রজ। যার সঙ্গে ঝগড়াঝাটি আর মান অভিমানে চলে গেছে অনেকটা সময়। গান নৃত্য অভিনয় আলোকচিত্র সিনেমা গ্লামার কিসে ছিলেন না তিনি। জগৎজোড়া তাঁর বিচরণ।

জাতীয় প্রেসক্লাবে একবার কবিতা দিবস উদযাপনের আয়োজক হলেন। সেবার সংগঠন হিসেবে ম্যাজিক লন্ঠনকে দিলেন সম্মাননা। এর আগেও ম্যাজিক লন্ঠন সম্মাননা পেয়েছে। সাযযাদ কাদির দিলেন অর্থবহ সম্মাননা। বিষয়টি ভালো লেগেছিল আমাদের।

গাজীপুর ছাড়িয়ে রাজেন্দ্রপুরে বনের ভেতর একবার কবিতা দিবসের অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম। আগের রাতে কল দিয়েছেন রিসিভ করিনি বলে, অনুষ্ঠানে আমার সঙ্গে কথাই বলেননি। সেদিন সবাই কবিতা পড়েছে কিন্তু আমার ডাক পড়েনি। তিনি এমনই। আমি আগেই তা জানতাম।

একটা সংকলন করবেন, আমার কাছে কবিতা চাইলেন! এমন জবরদস্ত কবির জন্য কবিতা বের করা আমার পক্ষে সহজ ছিলো না। তিনি বই থেকে বের করে চার লাইন ছেপে দিলেন।রিভিউতে সেই চার লাইনকে এমন বিসৃত করে দিলেন। আমার লজ্জা লাগছিলো খুব।

সহজ করে সহজ কথা বলার মধ্যে এক ধরণের আভিজাত্য আছে’ এই কথা বলে হাসতেন খুব। হাসির মধ্যে সারল্য ঝুলে থাকতো যেন এক শিশু হো হো করে হাসছেন। তাঁর বিড়াল প্রীতির কথা ভুলবার নয়। বাহাদুর নামের একটা বিড়াল একবার অসুস্থ হয়ে পড়লো। তিনি অনেক চেষ্টা করে পেট ডক্টরস খুঁজে পেলেন। ডক্টর বাহাদুরকে কোন পরীক্ষা না করেই ঔষধ দিলে তিনি খুব কষ্ট পান।

নিশিদলে যোগ দেবেন বলে কনফার্ম করলে বলেছি, এমন দূর্গম ও প্রতিকূল কন্ডিশনে আপনার না যাওয়াই ভালো। মন খারাপ হলো তাঁর। আবার আনফ্রেন্ড আবার কথা বলা বন্ধ। এমনতালে বিস্মিত হবার চেয়ে বেদনাহত হতাম খুব। পরক্ষণে মেনে নিতাম সে এমনই।

জীবনে অনেকের বই পড়ে রিভিউ লিখেছেন। তাঁর মনে কষ্ট ছিলো কেউ কৃতজ্ঞতাটুকুও প্রকাশ করেনি। আগাছা পরগাছা পরজীবি এককোষী দুইকোষী অন্ডকোষী এমন অনেক লেখককে সম্পাদনা করে তৈরি করতে চাইতেন। আমি বলতাম আমড়া গাছে আম ধরানোর চেষ্টা বাদ দিয়ে র তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরই ভালো। ব্যস আবার লেগে গেলো। আবার কথাবলা বন্ধ। ফেসবুকে আনফ্রেন্ড।

ঠোঁটকাটা স্বভাব আর অকুতোভয় বাগ্মী হবার কারণে বাংলা ভাষার উল্লেখযোগ্য কোন বড় পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে আসেনি। কবিতা প্রবন্ধ ইতিহাস উপকরণ ও সংকলন সব শাখাতেই কাজ করেছেন প্রায় ৫০ বছর। ১৯৭০ সালে প্রথম বইয়ের প্রকাশ থেকে ২০১৭ সাল অবধি ৪৮ বছরে ৬০ এর অধিক প্রকাশনা । সাদত কলেজের শিক্ষকতা কিংবা বিচিত্রা রেডিও বেইজিং দৈনিক সংবাদ তারকালোক দিনকাল পি আই বি মানবজমিন সবখানে আলো ঝলমল করা এই কবিকে নিভৃতচারী বলে পার পাওয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি কবিতার আবহেই ছিলেন কিন্তু সময় এবং প্রতিবেশ তাঁকে তাঁর ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত রেখেছে।

সতেরো সালের শুরুতে এই আনফ্রেন্ড হওয়ার পর আসে। রেডিও পেইচিং যেদিন তাঁর মৃত্যু সংবাদ প্রচার করে সেদিন অনেকক্ষণ চুপ হয়ে ছিলাম। হাসোজ্জল কবির শিশুমুখ ভেসে উঠেছে বারবার। ২০১২ সালে কবির বৃষ্টিবিলীন কাব্য প্রকাশ পায়। ২০১৭ সালে শেষ কাব্য আমার ভুলবাসাই তাঁর শেষ কাব্য।

প্রকৃত কবির আত্ম উপলদ্ধির চেয়ে বড় প্রাপ্তিযোগ থাকতে নেই। হৃত অবহেলিত বঞ্চিত শিল্পীর গরল নিঃশ্বাস থেকে জন্ম নেয় অসংখ্য অনুকার ও শুভানুধ্যায়ী। এদের ভাষায় পরিভাষায় শিল্পী অমর হয়ে ঠাই করে নেন ভবিষ্যতের পৃষ্ঠায়।

সাযযাদ কাদির কবিদের কবি। তাই তাঁকে ভালোবাসা ছাড়া কোন পথ খোলা নেই। একজন পরিশুদ্ধ লেখকের কথা চিন্তা করলেই তাঁর অবয়ব ভেসে ওঠে চোখের পর্দায়। এমন নক্ষত্র আমাদের ভাষার আকাশে বিরল এবং প্রবল অপেক্ষার। তাঁর ছায়া থেকে যে বঞ্চিত সে হতভাগা।

২০১৭ সালের এইদিনে তিনি চিরকালের ঠিকানায় আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি