১০:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০২ অগাস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মিজানুর রহমান মিলন :

অবিলম্বে মুছাপুর রেগুলেটর পূনঃনির্মাণের দাবি

  • প্রকাশিত ০১:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫
  • ১৮ বার দেখা হয়েছে

ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙন ও সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারে ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞা উপজেলার এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, মাছের পুকুর, রাস্তা ও গাছপালা- কোনোকিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ষাটের দশকে এই নদীর ভাঙন রোধ এবং লবণাক্ত জোয়ার প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজির হাটে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০০২ সালে সেটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৮ই মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বোধনে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কাজিরহাট থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ শুরু হয়। তবে নির্মাণকাজে দুর্নীতি, নিম্নমানের উপকরণ এবং স্থানীয় চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল প্রবল।

দুর্বল নির্মাণকাজ ও দুর্নীতির কারণে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট মুছাপুর রেগুলেটরটি সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পরপরই শুরু হয় নদীর ভয়াবহ ভাঙন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনাগাজীর চরদরবেশ, বগাদানা, চরসাহাভিকারী, চর মজলিশপুর; দাগনভূঁঞার ভাষা শহীদ সালাম নগর এবং নোয়াখালীর মুছাপুর, চরহাজারী ও চরপার্বতী ইউনিয়নের গ্রামগুলো। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে শতাধিক পাকা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারে বহু মাছের পুকুর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং নদীকূলের গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে।

২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরেজমিনে মুছাপুর রেগুলেটর-এর ভেসে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু গত একবছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় নদীতীরবর্তী জনগণ বারবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে চলেছেন।

এ পরিস্থিতিতে ‘সোনাগাজী সমিতি ঢাকা’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে- অবিলম্বে মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণ করতে হবে। শুধু পুন:নির্মাণই নয়, ভাঙনরোধে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ার প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণও অত্যাবশ্যক।

আজ, ২ আগস্ট ২০২৫, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সোনাগাজী সমিতি, ঢাকা আয়োজিত মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি- এই অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। একটি টেকসই ও শক্তিশালী রেগুলেটর নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটান।

আমাদের দাবি কোনো রাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় প্রতিরোধের দাবি। সরকার যদি এখনই উদ্যোগ না নেয়, তবে আগামীতে এর পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ। তাই আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে উচ্চারণ করছি।

“রেগুলেটর চাই- নদীভাঙন রুখি”
“জনগণের দাবি- জীবনের নিরাপত্তা”

Tag :
জনপ্রিয়

কর্মীসভা কালিয়াকৈর পৌর বিএনপি’র ৮ নং ওয়ার্ড মাজুখান,

মিজানুর রহমান মিলন :

অবিলম্বে মুছাপুর রেগুলেটর পূনঃনির্মাণের দাবি

প্রকাশিত ০১:৪৭:৫১ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ অগাস্ট ২০২৫

ছোট ফেনী নদীর অব্যাহত ভাঙন ও সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারে ফেনীর সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞা উপজেলার এবং নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা আজ চরম বিপর্যয়ের মুখে। নদীর তীরবর্তী অঞ্চলের বাড়ি-ঘর, ফসলি জমি, মাছের পুকুর, রাস্তা ও গাছপালা- কোনোকিছুই রক্ষা পাচ্ছে না। হাজার হাজার মানুষ তাদের বসতভিটা হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

ষাটের দশকে এই নদীর ভাঙন রোধ এবং লবণাক্ত জোয়ার প্রতিরোধের লক্ষ্যে কাজির হাটে একটি রেগুলেটর নির্মাণ করা হয়। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ২০০২ সালে সেটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। পরবর্তীতে ২০০৬ সালের ৮ই মার্চ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উদ্বোধনে, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধানে কাজিরহাট থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার ভাটিতে মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ শুরু হয়। তবে নির্মাণকাজে দুর্নীতি, নিম্নমানের উপকরণ এবং স্থানীয় চাঁদাবাজির অভিযোগ ছিল প্রবল।

দুর্বল নির্মাণকাজ ও দুর্নীতির কারণে ২০২৪ সালের ২৬ আগস্ট মুছাপুর রেগুলেটরটি সম্পূর্ণরূপে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এর পরপরই শুরু হয় নদীর ভয়াবহ ভাঙন। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে সোনাগাজীর চরদরবেশ, বগাদানা, চরসাহাভিকারী, চর মজলিশপুর; দাগনভূঁঞার ভাষা শহীদ সালাম নগর এবং নোয়াখালীর মুছাপুর, চরহাজারী ও চরপার্বতী ইউনিয়নের গ্রামগুলো। এসব এলাকায় ইতোমধ্যে শতাধিক পাকা ও আধাপাকা ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে, শত শত একর ফসলি জমি নদীগর্ভে চলে গেছে। সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ারে বহু মাছের পুকুর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং নদীকূলের গাছপালা শুকিয়ে যাচ্ছে।

২০২৪ সালে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সরেজমিনে মুছাপুর রেগুলেটর-এর ভেসে যাওয়া এলাকা পরিদর্শন করেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু গত একবছরেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় নদীতীরবর্তী জনগণ বারবার মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে চলেছেন।

এ পরিস্থিতিতে ‘সোনাগাজী সমিতি ঢাকা’ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছে এবং সরকারের প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছে- অবিলম্বে মুছাপুর রেগুলেটর পুন:নির্মাণ করতে হবে। শুধু পুন:নির্মাণই নয়, ভাঙনরোধে প্রতিরক্ষা বাঁধ নির্মাণ এবং সমুদ্রের লবণাক্ত জোয়ার প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণও অত্যাবশ্যক।

আজ, ২ আগস্ট ২০২৫, জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সোনাগাজী সমিতি, ঢাকা আয়োজিত মানববন্ধনের মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি- এই অঞ্চলের লাখো মানুষের জীবন ও জীবিকা রক্ষায় দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। একটি টেকসই ও শক্তিশালী রেগুলেটর নির্মাণের মাধ্যমে জনগণের দীর্ঘদিনের দুঃখ-কষ্টের অবসান ঘটান।

আমাদের দাবি কোনো রাজনৈতিক নয়, এটি একটি মানবিক ও পরিবেশগত বিপর্যয় প্রতিরোধের দাবি। সরকার যদি এখনই উদ্যোগ না নেয়, তবে আগামীতে এর পরিণতি হবে আরও ভয়াবহ। তাই আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে উচ্চারণ করছি।

“রেগুলেটর চাই- নদীভাঙন রুখি”
“জনগণের দাবি- জীবনের নিরাপত্তা”