০১:০৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
ড. মোহাম্মদ আবু তাহের :

অনলাইন লিটারেচারের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ও একজন উচ্চ পদস্থ মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা

  • প্রকাশিত ০৭:৪২:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫
  • ৩০ বার দেখা হয়েছে

গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ৩ মে পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করার সুবাদে দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা অফিসে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মহোদয় মিঃ অশোক ধর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সহ একাধিক সাহিত্যনুষ্ঠানে উদ্ধোধক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেছি। অনলাইন লিটারেচারের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত থাকায় জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে না পারায় জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের কর্ণধার ও চেয়ারম্যান জনাব শিহাব রিফাত আলম আইয়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। অনলাইন লিটারেচারের অনুষ্ঠানটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও উপভোগ্য অনুষ্ঠান ছিল। বর্ণিল আয়োজনে অনলাইন লিটারেচার ও সম্মাননা অনুষ্ঠানটি ২মে ২০২৫ শুক্রবার ঢাকাস্থ নয়াপল্টন কালভার্ট রোডের ওয়েইন চায়নিজ রেস্টুরেন্টের হল রুমের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে, পুলিশের এডিশনাল আইজিপি, সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির পরিচালক সাংবাদিক ও গবেষক লুৎফর রহমান জয়। সভাপতিত্ব করেন কবি ও সংগঠক ডাঃ আব্দুল হাকিম। কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক আমিনুল ইসলাম এবং শিক্ষাবীদ নাসরীন আক্তার এর যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধক, আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ও বিশেষ বক্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি সকলের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শিল্পীদের সুন্দর সুন্দর গান পরিবেশন ও বর্ষাকাল নিয়ে কবিতা লিখার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অন্য রকম এক বাঞ্ছনা তৈরী হয়। মনোমুগ্ধকর আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরী হয়। অতিরিক্ত আইজিপি জনাব সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ এর প্রধান অতিথিয় আসন অলংকৃত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে আমি মনে করি, এর কারন হলো তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে এটি প্রমানিত হয়েছে মানবিক গুনসম্পন্ন উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তী তিনি। নিজস্ব উদ্যোগে সকলকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে কেউ কোন অন্যায় অবিচার নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হলে তাঁর সহযোগিতা সওয়া হলে তিনি সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মহামূল্যবান উক্তি প্রণিধান যোগ্য, রবীন্দনাথ বলেছিলেন “I do not have faith in any Institutions, but in the People who think Properly, feel nobly and act rightly” অর্থৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই, তবে আস্থা আছে সেই মানুষদের ওপর, যাদের আছে যথার্থ চিন্তা, মহান অনুভব এবং সঠিক কর্ম। এ সমস্ত মানুষই দেশ ও জাতির সম্পদ। প্রধান অতিথিকে সেরকম একজন মানুষই আমি মনে করি, তিনি এতটাই বিনয়ী নিরহংকারী মানুষ, আয়োজক কমিটির অনুরোধ উপেক্ষা করে তিনি তার স্ত্রীকে মঞ্চে না এনে দর্শক সাড়িতে বসিয়েছেন। আওয়ামী ফ্যাসিষ্ঠ সরকার পুলিশ এবং সরকারের মধ্যে পার্থক্য রাখেনি। পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ভাষায় কথা বলতেন।

পুলিশ কতটা নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারতো পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে দেখা হতো। বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে ধারাবাহিক ভাবে পুলিশ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের মানুষ এখন কল্যানমূলক পুলিশ দেখতে চায়, জনতার পুলিশ দেখতে চায়, মানবিক পুলিশ দেখতে চায়, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হতে চায়। পুলিশ জনবান্ধব না হলে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পুলিশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২. মে শুক্রবার তিন দিন ব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের শেষদিনে পুলিশের মহা পরিদর্শক বলেছেন জনতার পুলিশ মানে শুধু একটি পরিচয় নয়, এটি একটি দর্শন, যা নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে জনমনে আস্থা, শ্রদ্ধাও সম্মান গড়ে তোলে। প্রধান অতিথি এডিশনাল আইজিপি সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ এর বক্তবে সেই আস্থার পরিবেশই ওঠে এসেছে বলে মনে করি। প্রধান আলোচক প্রফেসর লুৎফর রহমান একজন মহৎ ব্যক্তি। আসলে মানুষ খুব বেশী বিখ্যাত হওয়ার চেয়ে মহৎ হওয়াই বেশী জরুরী, মার্টিন লুথার কিং বলেছেন সবাই বিখ্যাত হতে পারেনা কিন্তু সবার পথেই মহৎ হওয়া সম্ভব। লুৎফুন ভাই একজন নিরহংকার ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একজন অদ্র মানুষ। নিজের কৃতিত্ব নিয়ে অহংকারী মনোভাব পোষণ করেন না বলেই মনে হলো। দেশ বদলাবে, সমাজ বদলাবে, মানুষ বদলাবে এটাই চিরন্তন এটাই নিয়ম। মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই শুরু হয়েছে এই বদলে যাওয়ার যাত্রা। সেই যাত্রায় মানুষ থামেনি থামবেও না। সেই জন্যই হয়তো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সংকল্প কবিতায়

বলেছেন, থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগতটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। বিগত তিন দশক এর বেশি সময় ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসভতা বিকশিত হচ্ছে, মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্য চর্যার যে ধারা তার বিকল্প হলো অনলাইন মাধ্যম। এই বিকল্পকে কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের মেনে নিয়ে হবে। অনলাইন সাহিত্য চর্চায় কিছুটা বাড়তি সুবিধাও আছে। (১) প্রত্যেক পাঠক যে কোন লেখা পাঠ করার পর সাথে সাথে মতামত জানাতে পারেন, এতে লেখক ও পাঠক খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে পারেন। (২) অনলাইনসাহিতো পাঠকের কোনো ভৌগোলিক সীমানা থাকেনা। (৫) যে কোন পাঠক একই খরচে অনেক সাহিত্য, প্রবন্ধ ও কবিতা পাঠ করতে পারেন, অনলাইন সাহিত্য চর্চা বর্তমান সময়ের চাহিদা, অনলাইন লিটারেচার গ্রুপের পরিচালক জিয়া উদ্দিন জেইন ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। তিনি প্রবাসে থেকে এত সফলতার সাথে সংগঠন পরিচালনার দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। তানজীম বীন তাজ প্রত্যয় এক উদীয়মান শিল্পী, গানের জগতে অবিষ্যতে এক কিংবদন্তী শিল্পী হবে প্রতায় আমি তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তার গান শুনে আমি মুদ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের সংগীত ভূবন এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রত্যয় এর মত ক্ষুদে শিল্পীরা। প্রত্যয় গানগুলো ভাবটি কিভাবে এবয়সে আয়ত্ব করলো এটি আমার কাছে আশ্চর্য লাগে। সে সবগুলো গান পুরো আবেগ দিয়ে গাইতে পারে। অনুষ্ঠানে সবাইকে সে মুগ্ধ করেছে গান গেয়ে। এত অল্প বয়সে কিভাবে একেবারে গানের ভেতরে ঢুকে যায় তা আমাকে বিস্মিত করেছে। অনলাইন লিটারেচার গ্রুপের সভাপতি শুল আফরোজ আহমেদ এর মৃতু্যু আমাকে খুবই ব্যহিত করেছে। তার সভাপতিত্বে আমি একাধিত সাহিত্যানুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছি। অসাধারন বিনয়ী এক মহিয়সী নীরী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় এইচ এম মুন্না, ডা. আব্দুল হাকিম ও হানিজ রাজা সম্পাদনায় অনলাইন লিটারেচারের কাব্য মোয়া বইটি আমার হৃদয় ছুয়েছে এটি নিঃসন্দেহে একটি সৃষ্টিশীল উদ্যোগ এ ধরনের সৃষ্টিশীল উদ্যোগই মানুষকে যুগযুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখে। সৃষ্টিশীলতা মানুষকে অমরত্ব

দান করে। মৃত্যু সম্পর্কে মাওসেতুং এর একটি অমর বানী হলো কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাখির পালকের মতো হালকা আবার কিছু কিছু মৃত্যু আছে পবর্তের চেয়েও ভারী। গুন আফরোজ অনেকটা অপরিণত বয়সেই চলে গেলেন। তিনি অপরিনত বয়সে চলেগেলেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ অন্যান্য সৃষ্টিশীলতা যুগযুগ ধরে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অনলাইন লিটারেচারের কাব্য ছোঁয়া গ্রন্থে যেসব কবিদের কবিতা স্থান পেয়েছে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন অনলাইন লিটারেচারে সভাপতি এল আফরোজ এর প্রচেষ্ঠায় রচিত কাব্য ছোঁয়া গ্রন্থটিকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন সেই দেয়া করছি। মৃত্যুই সবার জন্য চির সত্য, আমরা সবাই একি পথের পথিক। চৌরঙ্গী ১৯৬২ সালে শংকর রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস চৌরঙ্গী উপন্যাসের এক জায়গায় বলা হয়েছে আমরা সবাই পৃথিবীর এই সরাইখানায় কিছুক্ষনের জন্য আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ্যাকফাষ্ট খেয়েই বিদায় নেবে কয়েকজন লাঞ্চ শেষ হওয়া মাত্রই বেরিয়ে পড়বে। রাত্রে যখন ডিনারের টেবিলে এসে জড়ো হবো তখন অনেক পরিচিত জনকেই আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। আমাদের মধ্যে অতি সামান্য জনই সেখানে হাজির থাকবে। কিন্তু দুঃখ করোনা যে যত আগে যাবে তাকে তত বিল কম দিতে হবে। সাহিত্য চড়া মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। বলা হয় সময় যত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা অতই বাড়ছে। আবার উল্টো করে যদি বলা যায় তাহলে বলা যেতে পারে সময় যত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা ততই কমছে। সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য সংগঠন যত বাড়বে ততই মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ও বাড়বে। অনলাইন লিটারেচারের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক বেলাল হাওলাদার সহ অনলাইন লিটারেচারের নতুন ভাবে নির্বাচিত সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিষেক মোড়ক উন্মোচন ও লিটারেচার সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার রচিত গ্রন্থ ‘যুক্তরাজ্যের ভ্রমনের দিনগুলোর’ জন্য আমাকে গুল আফরোজ সাহিত্য সম্মাননা ২০২৪ প্রদান করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো। সাহিত্য সম্মাননা পুরস্কার বা সংবর্ধনা মানুষের চলার গতিকে বাড়িয়ে দেয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে বিকশিত করতে সহায়তা করে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও আনন্দ যোগায় সম্মাননা স্মারক। ইংরেজ কবি জন কিটস এর একটি সুন্দর উক্তির মাধ্যমে আজকের লেখাটি শেষ করছি। “A Thing of Beauty is a Joy Forever” সৌন্দর্যের জিনিস চিরকালী আনন্দের

Tag :
জনপ্রিয়

মেঘনা নদীতে জেলের জালে আবারো ধরা পরলো ২৯ কেজি ওজনের বিগহেড মাছ

ড. মোহাম্মদ আবু তাহের :

অনলাইন লিটারেচারের ষষ্ঠ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান ও একজন উচ্চ পদস্থ মানবিক পুলিশ কর্মকর্তা

প্রকাশিত ০৭:৪২:২৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫

গত ৩০ এপ্রিল ২০২৫ থেকে ৩ মে পর্যন্ত ঢাকায় অবস্থান করার সুবাদে দৈনিক স্বদেশ বিচিত্রা অফিসে সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মহোদয় মিঃ অশোক ধর ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের সঙ্গে মতবিনিময় সহ একাধিক সাহিত্যনুষ্ঠানে উদ্ধোধক ও বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগদান করেছি। অনলাইন লিটারেচারের অনুষ্ঠানে যোগদানের বিষয়টি পূর্বনির্ধারিত থাকায় জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের একটি বড় ধরনের অনুষ্ঠানে যোগদান করতে না পারায় জাগ্রত সাহিত্য পরিষদের কর্ণধার ও চেয়ারম্যান জনাব শিহাব রিফাত আলম আইয়ের কাছে দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিলনা। অনলাইন লিটারেচারের অনুষ্ঠানটি একটি ব্যতিক্রমধর্মী ও উপভোগ্য অনুষ্ঠান ছিল। বর্ণিল আয়োজনে অনলাইন লিটারেচার ও সম্মাননা অনুষ্ঠানটি ২মে ২০২৫ শুক্রবার ঢাকাস্থ নয়াপল্টন কালভার্ট রোডের ওয়েইন চায়নিজ রেস্টুরেন্টের হল রুমের এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ে, পুলিশের এডিশনাল আইজিপি, সাহিত্যানুরাগী ব্যক্তিত্ব সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রাইম ইউনিভার্সিটির পরিচালক সাংবাদিক ও গবেষক লুৎফর রহমান জয়। সভাপতিত্ব করেন কবি ও সংগঠক ডাঃ আব্দুল হাকিম। কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠক আমিনুল ইসলাম এবং শিক্ষাবীদ নাসরীন আক্তার এর যৌথ সঞ্চালনায় উদ্বোধক, আমন্ত্রিত বিশেষ অতিথি ও বিশেষ বক্তাবৃন্দের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠানটি সকলের কাছে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। শিল্পীদের সুন্দর সুন্দর গান পরিবেশন ও বর্ষাকাল নিয়ে কবিতা লিখার প্রতিযোগিতার মাধ্যমে অনুষ্ঠানে অন্য রকম এক বাঞ্ছনা তৈরী হয়। মনোমুগ্ধকর আনন্দদায়ক পরিবেশ তৈরী হয়। অতিরিক্ত আইজিপি জনাব সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ এর প্রধান অতিথিয় আসন অলংকৃত করার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির অন্যরকম উচ্চতায় নিয়ে গেছে বলে আমি মনে করি, এর কারন হলো তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে এটি প্রমানিত হয়েছে মানবিক গুনসম্পন্ন উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তী তিনি। নিজস্ব উদ্যোগে সকলকে তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বারটি দিয়েছেন এবং প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে কেউ কোন অন্যায় অবিচার নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হলে তাঁর সহযোগিতা সওয়া হলে তিনি সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত রয়েছেন। এ প্রসঙ্গে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মহামূল্যবান উক্তি প্রণিধান যোগ্য, রবীন্দনাথ বলেছিলেন “I do not have faith in any Institutions, but in the People who think Properly, feel nobly and act rightly” অর্থৎ কোনো প্রতিষ্ঠানের ওপর আমার আস্থা নেই, তবে আস্থা আছে সেই মানুষদের ওপর, যাদের আছে যথার্থ চিন্তা, মহান অনুভব এবং সঠিক কর্ম। এ সমস্ত মানুষই দেশ ও জাতির সম্পদ। প্রধান অতিথিকে সেরকম একজন মানুষই আমি মনে করি, তিনি এতটাই বিনয়ী নিরহংকারী মানুষ, আয়োজক কমিটির অনুরোধ উপেক্ষা করে তিনি তার স্ত্রীকে মঞ্চে না এনে দর্শক সাড়িতে বসিয়েছেন। আওয়ামী ফ্যাসিষ্ঠ সরকার পুলিশ এবং সরকারের মধ্যে পার্থক্য রাখেনি। পুলিশের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগের ভাষায় কথা বলতেন।

পুলিশ কতটা নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা দেখাতে পারতো পদোন্নতির ক্ষেত্রে এটি একটি বড় বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে দেখা হতো। বাংলাদেশের অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে ধারাবাহিক ভাবে পুলিশ রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্রজনতার বিপ্লবের মাধ্যমে নতুন বাংলাদেশের মানুষ এখন কল্যানমূলক পুলিশ দেখতে চায়, জনতার পুলিশ দেখতে চায়, মানবিক পুলিশ দেখতে চায়, বৈষম্যহীন মানবিক বাংলাদেশের গর্বিত নাগরিক হতে চায়। পুলিশ জনবান্ধব না হলে বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব নয়। ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর পুলিশকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। হারানো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে অনেক পুলিশ কর্মকর্তা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। ২. মে শুক্রবার তিন দিন ব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠানের শেষদিনে পুলিশের মহা পরিদর্শক বলেছেন জনতার পুলিশ মানে শুধু একটি পরিচয় নয়, এটি একটি দর্শন, যা নিরাপত্তার সঙ্গে সঙ্গে জনমনে আস্থা, শ্রদ্ধাও সম্মান গড়ে তোলে। প্রধান অতিথি এডিশনাল আইজিপি সরদার তমিজ উদ্দীন আহমেদ এর বক্তবে সেই আস্থার পরিবেশই ওঠে এসেছে বলে মনে করি। প্রধান আলোচক প্রফেসর লুৎফর রহমান একজন মহৎ ব্যক্তি। আসলে মানুষ খুব বেশী বিখ্যাত হওয়ার চেয়ে মহৎ হওয়াই বেশী জরুরী, মার্টিন লুথার কিং বলেছেন সবাই বিখ্যাত হতে পারেনা কিন্তু সবার পথেই মহৎ হওয়া সম্ভব। লুৎফুন ভাই একজন নিরহংকার ও আত্মমর্যাদাসম্পন্ন একজন অদ্র মানুষ। নিজের কৃতিত্ব নিয়ে অহংকারী মনোভাব পোষণ করেন না বলেই মনে হলো। দেশ বদলাবে, সমাজ বদলাবে, মানুষ বদলাবে এটাই চিরন্তন এটাই নিয়ম। মানব সভ্যতার সূচনা থেকেই শুরু হয়েছে এই বদলে যাওয়ার যাত্রা। সেই যাত্রায় মানুষ থামেনি থামবেও না। সেই জন্যই হয়তো আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার সংকল্প কবিতায়

বলেছেন, থাকবো নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগতটাকে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে। বিগত তিন দশক এর বেশি সময় ধরে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মানবসভতা বিকশিত হচ্ছে, মুদ্রণ নির্ভর সাহিত্য চর্যার যে ধারা তার বিকল্প হলো অনলাইন মাধ্যম। এই বিকল্পকে কবি সাহিত্যিক ও লেখকদের মেনে নিয়ে হবে। অনলাইন সাহিত্য চর্চায় কিছুটা বাড়তি সুবিধাও আছে। (১) প্রত্যেক পাঠক যে কোন লেখা পাঠ করার পর সাথে সাথে মতামত জানাতে পারেন, এতে লেখক ও পাঠক খুব কাছাকাছি অবস্থান করতে পারেন। (২) অনলাইনসাহিতো পাঠকের কোনো ভৌগোলিক সীমানা থাকেনা। (৫) যে কোন পাঠক একই খরচে অনেক সাহিত্য, প্রবন্ধ ও কবিতা পাঠ করতে পারেন, অনলাইন সাহিত্য চর্চা বর্তমান সময়ের চাহিদা, অনলাইন লিটারেচার গ্রুপের পরিচালক জিয়া উদ্দিন জেইন ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। তিনি প্রবাসে থেকে এত সফলতার সাথে সংগঠন পরিচালনার দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। তানজীম বীন তাজ প্রত্যয় এক উদীয়মান শিল্পী, গানের জগতে অবিষ্যতে এক কিংবদন্তী শিল্পী হবে প্রতায় আমি তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। তার গান শুনে আমি মুদ্ধ হয়েছি। বাংলাদেশের সংগীত ভূবন এগিয়ে নিয়ে যাবে প্রত্যয় এর মত ক্ষুদে শিল্পীরা। প্রত্যয় গানগুলো ভাবটি কিভাবে এবয়সে আয়ত্ব করলো এটি আমার কাছে আশ্চর্য লাগে। সে সবগুলো গান পুরো আবেগ দিয়ে গাইতে পারে। অনুষ্ঠানে সবাইকে সে মুগ্ধ করেছে গান গেয়ে। এত অল্প বয়সে কিভাবে একেবারে গানের ভেতরে ঢুকে যায় তা আমাকে বিস্মিত করেছে। অনলাইন লিটারেচার গ্রুপের সভাপতি শুল আফরোজ আহমেদ এর মৃতু্যু আমাকে খুবই ব্যহিত করেছে। তার সভাপতিত্বে আমি একাধিত সাহিত্যানুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকেছি। অসাধারন বিনয়ী এক মহিয়সী নীরী ছিলেন তিনি। তাঁর প্রচেষ্টায় এইচ এম মুন্না, ডা. আব্দুল হাকিম ও হানিজ রাজা সম্পাদনায় অনলাইন লিটারেচারের কাব্য মোয়া বইটি আমার হৃদয় ছুয়েছে এটি নিঃসন্দেহে একটি সৃষ্টিশীল উদ্যোগ এ ধরনের সৃষ্টিশীল উদ্যোগই মানুষকে যুগযুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখে। সৃষ্টিশীলতা মানুষকে অমরত্ব

দান করে। মৃত্যু সম্পর্কে মাওসেতুং এর একটি অমর বানী হলো কিছু কিছু মৃত্যু আছে পাখির পালকের মতো হালকা আবার কিছু কিছু মৃত্যু আছে পবর্তের চেয়েও ভারী। গুন আফরোজ অনেকটা অপরিণত বয়সেই চলে গেলেন। তিনি অপরিনত বয়সে চলেগেলেও তার সাংগঠনিক কার্যক্রমসহ অন্যান্য সৃষ্টিশীলতা যুগযুগ ধরে তাকে বাঁচিয়ে রাখবে। অনলাইন লিটারেচারের কাব্য ছোঁয়া গ্রন্থে যেসব কবিদের কবিতা স্থান পেয়েছে তাদের আন্তরিক অভিনন্দন। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন অনলাইন লিটারেচারে সভাপতি এল আফরোজ এর প্রচেষ্ঠায় রচিত কাব্য ছোঁয়া গ্রন্থটিকে সদকায়ে জারিয়া হিসেবে কবুল করেন সেই দেয়া করছি। মৃত্যুই সবার জন্য চির সত্য, আমরা সবাই একি পথের পথিক। চৌরঙ্গী ১৯৬২ সালে শংকর রচিত একটি বিখ্যাত উপন্যাস চৌরঙ্গী উপন্যাসের এক জায়গায় বলা হয়েছে আমরা সবাই পৃথিবীর এই সরাইখানায় কিছুক্ষনের জন্য আশ্রয় নিয়েছি। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ এ্যাকফাষ্ট খেয়েই বিদায় নেবে কয়েকজন লাঞ্চ শেষ হওয়া মাত্রই বেরিয়ে পড়বে। রাত্রে যখন ডিনারের টেবিলে এসে জড়ো হবো তখন অনেক পরিচিত জনকেই আর খুঁজে পাওয়া যাবেনা। আমাদের মধ্যে অতি সামান্য জনই সেখানে হাজির থাকবে। কিন্তু দুঃখ করোনা যে যত আগে যাবে তাকে তত বিল কম দিতে হবে। সাহিত্য চড়া মূল্যবোধের অবক্ষয় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে পারে। বলা হয় সময় যত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা অতই বাড়ছে। আবার উল্টো করে যদি বলা যায় তাহলে বলা যেতে পারে সময় যত বাড়ছে মানুষের সংখ্যা ততই কমছে। সাহিত্যচর্চা ও সাহিত্য সংগঠন যত বাড়বে ততই মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষের সংখ্যা ও বাড়বে। অনলাইন লিটারেচারের প্রধান সমন্বয়ক সাংবাদিক বেলাল হাওলাদার সহ অনলাইন লিটারেচারের নতুন ভাবে নির্বাচিত সকলকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। অভিষেক মোড়ক উন্মোচন ও লিটারেচার সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজকদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমার রচিত গ্রন্থ ‘যুক্তরাজ্যের ভ্রমনের দিনগুলোর’ জন্য আমাকে গুল আফরোজ সাহিত্য সম্মাননা ২০২৪ প্রদান করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি কৃতজ্ঞতা রইলো। সাহিত্য সম্মাননা পুরস্কার বা সংবর্ধনা মানুষের চলার গতিকে বাড়িয়ে দেয়। মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে বিকশিত করতে সহায়তা করে। মানুষের এগিয়ে যাওয়ার শক্তি ও আনন্দ যোগায় সম্মাননা স্মারক। ইংরেজ কবি জন কিটস এর একটি সুন্দর উক্তির মাধ্যমে আজকের লেখাটি শেষ করছি। “A Thing of Beauty is a Joy Forever” সৌন্দর্যের জিনিস চিরকালী আনন্দের