০৩:৩৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৫ জুলাই ২০২৫, ২১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ইউনূসের জাপান সফর: রাষ্ট্রীয় কূটনীতি না ব্যক্তিগত ভূ-রাজনৈতিক মিশন

  • প্রকাশিত ০২:০৭:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫
  • ২২ বার দেখা হয়েছে

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যখন এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মেরামতের কাজে লিপ্ত, তখন তাঁর জাপান সফর ঘিরে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এ সফর রাষ্ট্রীয় না ব্যক্তিগত, নাকি উভয়ের জটিল সমন্বয়—এ নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন এখন সময়ের দাবি।

অবশ্যই সফরটি কাগজে-কলমে রাষ্ট্রীয়। সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সম্ভাব্য অর্থায়ন এসব রাষ্ট্রের কূটনৈতিক পরিসরের অংশ। কিন্তু এই রাষ্ট্রীয় ছাতার আড়ালে আরও কিছু নিরব বাস্তবতা কাজ করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত ইউনূস সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে জাপানের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পে যুক্ত। “Grameen-Yunus Social Business Fund Japan”, “Grameen Solar Japan” প্রভৃতি উদ্যোগ এবং কিউশু ও সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই সফরের আরেকটি স্তর উন্মোচন করে।

এমনকি এই সফরে Nikkei Future of Asia সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ ও সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট গ্রহণ—ব্যক্তি ইউনূসের জন্য আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পুনঃস্থাপনের পদক্ষেপও বটে। তাই, সফরটি কূটনৈতিক হলেও এর ব্যাকরণ মূলত ব্যক্তিগত এজেন্ডা নির্ভর।

বিশ্ব রাজনীতিতে জাপান আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত মিত্র। বাংলাদেশে ইউনূসের আগমন এবং তাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিকীকরণ প্রকল্প আসলে কি একটি নতুন গ্লোবাল এলিট দ্বারা “নির্বাচনহীন শাসন কাঠামো” তৈরির সূচনা নয়? প্রশ্ন উঠছে, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আরও বিদেশী প্রভাবের কাছে উৎসর্গ করছে?

ড. ইউনূস যে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের “সোশ্যাল সংস্করণ” প্রচার করছেন, তার সুফল-ক্ষতি দুটোই খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। এমন একটি সময়ে, যখন বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার, জীবিকার নিশ্চয়তা এবং আইনের শাসনের প্রশ্নে বিপর্যস্ত—তখন রাষ্ট্রীয় সফরের আড়ালে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নির্মাণ একধরনের রাজনৈতিক কৌশল বৈ কিছু নয়।

আমরা চাই, বাংলাদেশ সত্যিকারের কূটনীতিক সম্পর্ক গড়ুক—নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে। কিন্তু ইউনূসের এই সফর রাষ্ট্রের স্বার্থে না ব্যক্তির, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

Tag :
জনপ্রিয়

বিএনপির সামনে ৫ মহাচ্যালেঞ্জ, জোট রাজনীতি নিয়ে প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে

ইউনূসের জাপান সফর: রাষ্ট্রীয় কূটনীতি না ব্যক্তিগত ভূ-রাজনৈতিক মিশন

প্রকাশিত ০২:০৭:১৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ মে ২০২৫

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার যখন এক অনিশ্চিত রাজনৈতিক বাস্তবতার মধ্যে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক মেরামতের কাজে লিপ্ত, তখন তাঁর জাপান সফর ঘিরে নানা প্রশ্ন ও সন্দেহ ঘনীভূত হচ্ছে। এ সফর রাষ্ট্রীয় না ব্যক্তিগত, নাকি উভয়ের জটিল সমন্বয়—এ নিয়ে বিশ্লেষণের প্রয়োজন এখন সময়ের দাবি।

অবশ্যই সফরটি কাগজে-কলমে রাষ্ট্রীয়। সাতটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক, জ্বালানি ও অবকাঠামো খাতে সম্ভাব্য অর্থায়ন এসব রাষ্ট্রের কূটনৈতিক পরিসরের অংশ। কিন্তু এই রাষ্ট্রীয় ছাতার আড়ালে আরও কিছু নিরব বাস্তবতা কাজ করছে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বে পরিচালিত ইউনূস সেন্টার দীর্ঘদিন ধরে জাপানের সঙ্গে বিভিন্ন সামাজিক ব্যবসা প্রকল্পে যুক্ত। “Grameen-Yunus Social Business Fund Japan”, “Grameen Solar Japan” প্রভৃতি উদ্যোগ এবং কিউশু ও সোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এই সফরের আরেকটি স্তর উন্মোচন করে।

এমনকি এই সফরে Nikkei Future of Asia সম্মেলনে তাঁর অংশগ্রহণ ও সোকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট গ্রহণ—ব্যক্তি ইউনূসের জন্য আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা পুনঃস্থাপনের পদক্ষেপও বটে। তাই, সফরটি কূটনৈতিক হলেও এর ব্যাকরণ মূলত ব্যক্তিগত এজেন্ডা নির্ভর।

বিশ্ব রাজনীতিতে জাপান আজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কৌশলগত মিত্র। বাংলাদেশে ইউনূসের আগমন এবং তাকে কেন্দ্র করে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিকীকরণ প্রকল্প আসলে কি একটি নতুন গ্লোবাল এলিট দ্বারা “নির্বাচনহীন শাসন কাঠামো” তৈরির সূচনা নয়? প্রশ্ন উঠছে, এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ কি সার্বভৌম সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আরও বিদেশী প্রভাবের কাছে উৎসর্গ করছে?

ড. ইউনূস যে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের “সোশ্যাল সংস্করণ” প্রচার করছেন, তার সুফল-ক্ষতি দুটোই খতিয়ে দেখার সময় এসেছে। এমন একটি সময়ে, যখন বাংলাদেশের জনগণ ভোটাধিকার, জীবিকার নিশ্চয়তা এবং আইনের শাসনের প্রশ্নে বিপর্যস্ত—তখন রাষ্ট্রীয় সফরের আড়ালে ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি নির্মাণ একধরনের রাজনৈতিক কৌশল বৈ কিছু নয়।

আমরা চাই, বাংলাদেশ সত্যিকারের কূটনীতিক সম্পর্ক গড়ুক—নিজস্ব স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়ে। কিন্তু ইউনূসের এই সফর রাষ্ট্রের স্বার্থে না ব্যক্তির, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।