০৮:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
খাইরুল আলম বিপ্লব, জেলা প্রতিনিধি:

সাংবাদিকের উপর হামলা, অধ্যক্ষকে প্রধান আসামী করে মামলা

  • প্রকাশিত ০৭:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫
  • ১৩ বার দেখা হয়েছে

কাউনিয়ায় মীরবাগ ডিগ্রি কলেজে পরিক্ষার হলে নকলে সহযোগিতার ভিডিও ধারণ করায় ৫ সাংবাদিকের উপর হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে।

সোমবার (১২ মে) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ শাহ। রোববার ১১ মে মামলাটি দায়ের করা হয়। কাউনিয়া থানায় মামলা নং ৫। ভুক্তভোগি আহত সাংবাদিক হামিদুর রহমান বাদি হয়ে অত্র কলেজের অধ্যক্ষসহ ৭জনের নাম উল্লেখ্য আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলাটি করেছেন। মামলায় আসামীরা হলেন, অত্র কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন (৫৫), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তুহিন মিয়া (৪৫), ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক ময়নুল, প্রভাষক আলাউদ্দিন, সাইদুল ইসলাম ওরফে বাংলা সাইফুল, তারিকুল ইসলামসহ আরো আরো অজ্ঞাত ২০-২৫ জন।

মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ৭ মে মীরবাগ ডিগ্রি কলেজ সেন্টারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরিক্ষায় টাকার বিনিময়ে পরিক্ষার্থীদের কাছে নকল সরবরাহ করা হচ্ছে, এমন তথ্য পেয়ে বিজয় টেলিভিশন রংপুরের ব্যুরো প্রধান হামিদুল সহ ৫ জন সাংবাদিক সেখানে যান। যাওয়ার আগে ওসি ও ইউএনও কে অবহিত করেন তারা। সেন্টারে পৌছে কেন্দ্র সচিব হিসেবে অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে পরিক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে নকলের সরবরাহে সত্যতা পান। নকল সরবরাহের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন তারা। পরে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি কক্ষের মধ্যে বসিয়ে রেখে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে সাংবাদিকদের কয়েকদফা মারধর করে এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করে। শুধু তাই নয়, মারধরের পাশাপাশি নকলের কেন নিউজ করতে এসেছে এজন্য তাদের কানধরে উঠবস করায়। সবশেষে তারা এ বিষয়ে যাতে কোন প্রকার নিউজ না করে এজন্য তাদের কাছে জোরপূর্বক তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেন অধ্যক্ষ। পরে সিটি প্রেসক্লাব রংপুরের সভাপতি স্বপন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরবর্তিতে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকরা হলেন, বিজয় টিভির ক্যামেরাম্যান শাহীন আলম সাবু, প্লাস টিভি ২৪ অনলাইনের রিপোর্টার মেহেদী হাসান, প্লাস টিভি ক্যামেরাম্যান মশিউর রহমান, ক্যামেরাম্যান আল আমিন।

এদিকে নকল সরবরাহের ঘটনা ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের উপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় রংপুরের সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। “এই হামলা শুধুমাত্র সাংবাদিকদের উপর নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত বলে জানান। তারা মামলার প্রধান আসামীসহ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি করেছেন করেছেন তারা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি আহত সাংবাদিক হামিদুর রহমান বলেন, নকল সরবরাহের বিষয়টি আমাদের কয়েকজন পরিক্ষার্থী জানান এবং সেই প্রেক্ষিত্রে আমরা সেখানে যাই। পরিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে ওসি ও ইউএনও কে অবহিত করি। সেন্টারে পৌছে কেন্দ্র সচিব হিসেবে অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে পরিক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে নকল সরবরাহের সত্যতা পাই এবং ভিডিও ধারণ করি। অধ্যক্ষ আমাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা বলে কক্ষে বসিয়ে রেখে পরিকল্পনা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছি। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিকের পক্ষ থেকে রংপুর কাউনিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশশের কাছে বলেছি, অনতিবিলম্বে দোষিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য।

মামলা ও হামলার বিষয়ে একাধিক ফোন দিলেও মীরবাগ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন ফোন রিসিভ করেননি। যার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

খেলাধুলা যেন স্রষ্টার গোলামিকে ভুলিয়ে না দেয় : শামসুজ্জামান হেলালী

খাইরুল আলম বিপ্লব, জেলা প্রতিনিধি:

সাংবাদিকের উপর হামলা, অধ্যক্ষকে প্রধান আসামী করে মামলা

প্রকাশিত ০৭:১৩:২৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫

কাউনিয়ায় মীরবাগ ডিগ্রি কলেজে পরিক্ষার হলে নকলে সহযোগিতার ভিডিও ধারণ করায় ৫ সাংবাদিকের উপর হামলা ও ক্যামেরা ভাংচুরের ঘটনায় মামলা হয়েছে।

সোমবার (১২ মে) মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ শাহ। রোববার ১১ মে মামলাটি দায়ের করা হয়। কাউনিয়া থানায় মামলা নং ৫। ভুক্তভোগি আহত সাংবাদিক হামিদুর রহমান বাদি হয়ে অত্র কলেজের অধ্যক্ষসহ ৭জনের নাম উল্লেখ্য আরো ২০-২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে মামলাটি করেছেন। মামলায় আসামীরা হলেন, অত্র কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন (৫৫), রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক তুহিন মিয়া (৪৫), ইতিহাস বিভাগের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম, প্রভাষক ময়নুল, প্রভাষক আলাউদ্দিন, সাইদুল ইসলাম ওরফে বাংলা সাইফুল, তারিকুল ইসলামসহ আরো আরো অজ্ঞাত ২০-২৫ জন।

মামলা সুত্রে জানা যায়, গত ৭ মে মীরবাগ ডিগ্রি কলেজ সেন্টারে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে অনার্স তৃতীয় বর্ষের পরিক্ষায় টাকার বিনিময়ে পরিক্ষার্থীদের কাছে নকল সরবরাহ করা হচ্ছে, এমন তথ্য পেয়ে বিজয় টেলিভিশন রংপুরের ব্যুরো প্রধান হামিদুল সহ ৫ জন সাংবাদিক সেখানে যান। যাওয়ার আগে ওসি ও ইউএনও কে অবহিত করেন তারা। সেন্টারে পৌছে কেন্দ্র সচিব হিসেবে অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে পরিক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে নকলের সরবরাহে সত্যতা পান। নকল সরবরাহের ভিডিও চিত্র ধারণ করেন তারা। পরে অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীনের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে তিনি কক্ষের মধ্যে বসিয়ে রেখে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে সাংবাদিকদের কয়েকদফা মারধর করে এবং ক্যামেরা ভাঙচুর করে। শুধু তাই নয়, মারধরের পাশাপাশি নকলের কেন নিউজ করতে এসেছে এজন্য তাদের কানধরে উঠবস করায়। সবশেষে তারা এ বিষয়ে যাতে কোন প্রকার নিউজ না করে এজন্য তাদের কাছে জোরপূর্বক তিনশত টাকার স্ট্যাম্পে সাক্ষর নেন অধ্যক্ষ। পরে সিটি প্রেসক্লাব রংপুরের সভাপতি স্বপন চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবীর তাদের সেখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরবর্তিতে তাদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় আহত সাংবাদিকরা হলেন, বিজয় টিভির ক্যামেরাম্যান শাহীন আলম সাবু, প্লাস টিভি ২৪ অনলাইনের রিপোর্টার মেহেদী হাসান, প্লাস টিভি ক্যামেরাম্যান মশিউর রহমান, ক্যামেরাম্যান আল আমিন।

এদিকে নকল সরবরাহের ঘটনা ভিডিও ধারণ করায় সাংবাদিকদের উপর এমন ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় রংপুরের সাংবাদিক সমাজ তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। “এই হামলা শুধুমাত্র সাংবাদিকদের উপর নয়, এটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর সরাসরি আঘাত বলে জানান। তারা মামলার প্রধান আসামীসহ দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে বিচারের দাবি করেছেন করেছেন তারা।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগি আহত সাংবাদিক হামিদুর রহমান বলেন, নকল সরবরাহের বিষয়টি আমাদের কয়েকজন পরিক্ষার্থী জানান এবং সেই প্রেক্ষিত্রে আমরা সেখানে যাই। পরিক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে ওসি ও ইউএনও কে অবহিত করি। সেন্টারে পৌছে কেন্দ্র সচিব হিসেবে অধ্যক্ষের অনুমতি নিয়ে ট্যাগ অফিসারের সাথে পরিক্ষার কক্ষে প্রবেশ করে নকল সরবরাহের সত্যতা পাই এবং ভিডিও ধারণ করি। অধ্যক্ষ আমাদের বক্তব্য দেওয়ার কথা বলে কক্ষে বসিয়ে রেখে পরিকল্পনা করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে মারধর করেন। এ ঘটনায় আমি মানসিক ভাবে ভেঙ্গে পরেছি। আমি এর উপযুক্ত বিচার চাই।

রংপুর সিটি প্রেসক্লাবের সভাপতি স্বপন চৌধুরী বলেন, ভুক্তভোগী সাংবাদিকের পক্ষ থেকে রংপুর কাউনিয়া থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। সেই মামলায় সাতজনের নাম উল্লেখসহ আরো অজ্ঞাত ২০-২৫ জনকে আসামী করা হয়েছে। পুলিশশের কাছে বলেছি, অনতিবিলম্বে দোষিদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার জন্য।

মামলা ও হামলার বিষয়ে একাধিক ফোন দিলেও মীরবাগ ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ জয়নাল আবেদীন ফোন রিসিভ করেননি। যার কারনে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কাউনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্তকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ শাহ বলেন, থানায় এ সংক্রান্ত একটি মামলা দায়ের হয়েছে। মামলার বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।