১২:২৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মো: জাকির হোসেন, (স্টাফ রিপোর্টার) :

মানবিক সমাজ গঠনে যুব শক্তির অগ্রণী ভূমিকা: মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যতের প্রত্যয়

  • প্রকাশিত ০৬:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
  • ১২৬ বার দেখা হয়েছে

যুগে যুগে সমাজের গতিপথ নির্ধারণে নেতৃত্ব দিয়েছে তারুণ্য। বিশ্ব ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের পেছনে ছিল একদল সাহসী, উদ্যমী ও চিন্তাশীল যুবক-যুবতী, যারা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজকে মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নয়নমুখী পথে পরিচালিত করেছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম বড় দুটি সামাজিক ব্যাধি—মাদকাসক্তি ও দুর্নীতি—যুব সমাজের সামনে এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা শুধু একটি প্রজন্ম নয়, গোটা জাতির ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলছে।
এই প্রেক্ষাপটে আজ সময় এসেছে, যখন যুব সমাজকে নিজ দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। আত্মনির্ভরশীল, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এক তরুণ সমাজই পারে একটি মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
মাদকের ছোবলে ধ্বংসের পথে প্রজন্ম বর্তমানে আমাদের সমাজে মাদক এক ভয়ঙ্কর ব্যাধির রূপ নিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গলির মোড়—সব জায়গায় মাদকের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি এই ভয়াল ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন—নানান নামের অন্তরালে আজ তরুণদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে মাদক।
একজন যুবক যখন মাদকের নেশায় আক্রান্ত হয়, তখন তার মধ্যে থেকে হারিয়ে যায় স্বপ্ন, সাহস ও দায়িত্ববোধ। সে হয়ে পড়ে আত্মকেন্দ্রিক, অলস, এবং সমাজবিচ্ছিন্ন। মাদকের কারণে যেমন বাড়ছে মানসিক অসুস্থতা, অপরাধ প্রবণতা, পারিবারিক কলহ ও আত্মহত্যা, তেমনি দেশের কর্মক্ষম শক্তির একটি বিশাল অংশ হারাচ্ছে উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা।

দুর্নীতি: নৈতিকতাবিরোধী এক মরীচিকা

দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে—প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা—দুর্নীতি বাসা বাঁধে, তখন ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিকতা বিপন্ন হয়। দুর্নীতি শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে অন্যায় সুবিধা নেওয়াই নয়, বরং এটি একটি নৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ।
আজ যুব সমাজকে বুঝতে হবে, দুর্নীতিতে অংশ নেওয়া মানেই নিজের ভবিষ্যৎকে দুর্বিষহ করে তোলা। একজন তরুণ যদি চাকরির জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হন, যদি সরকারি সেবাগুলো পেতে হয় ‘মালিশের’ মাধ্যমে, তবে তার মধ্যে অসন্তোষ, হতাশা ও বিদ্রোহের মনোভাব জন্ম নেয়। অথচ এই যুবকরাই হতে পারতো উদ্ভাবনী চিন্তার চালিকাশক্তি।

যুব সমাজের ভূমিকা: দায়িত্ব নয়, এটি একটি নৈতিক আহ্বান
বর্তমান প্রজন্ম যদি চায় একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ, তবে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে—সচেতনতা তৈরির সৈনিক হয়ে, সাহসী প্রতিবাদীর ভূমিকায়।
১. সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার:
প্রথম পদক্ষেপ হলো—আত্মসচেতনতা। যুবক-যুবতীদের মধ্যে মাদক ও দুর্নীতির ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুব সংগঠন—এই সব প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে হবে গঠনমূলক বার্তা ছড়াতে।
২. ইতিবাচক নেতৃত্ব গড়ে তোলা:
নেতৃত্বের আসনে উঠে আসতে হবে তরুণদের—কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রেও। যেখানে তারা অন্য যুবকদের জন্য একটি আদর্শ উপস্থাপন করবে।
৩. মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে গড়ে উঠা:
যুবদের মধ্যে নৈতিকতা, মানবতা, সততা, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ—এই মূল্যবোধগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে। একমাত্র আদর্শ চরিত্রের মানুষই পারে দুর্নীতির প্রতি ‘না’ বলতে।
৪. প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার:
আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজেই গঠনমূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে যুবকরা মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করতে পারে।
৫. সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ:
একক বা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, যুব সমাজকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ‘মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ি’ শীর্ষক প্ল্যাটফর্ম, ক্যাম্পেইন, সভা, মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

সর্বপরি বলতে পারি,

যদি একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে হয়, তবে তার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো—একটি সুশৃঙ্খল, মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা। আর তা গড়ে তোলার কাণ্ডারী হতে হবে বর্তমানের যুব সমাজকে। সময় এসেছে ভাঙনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির জন্য কাজ করার।
আজকের তরুণেরা যদি স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও মানবিক বাংলাদেশের; তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তাদেরই হাল ধরতে হবে, কলম ধরতে হবে, কণ্ঠ তুলতে হবে।
কারণ—”যুবরাই জাতির ভবিষ্যৎ নয়, তারা জাতির বর্তমানও।” এই বর্তমান যদি সঠিক পথে চলে, ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে হবে গর্বিত ও গৌরবময়।

Tag :
জনপ্রিয়

মেঘনা নদীতে জেলের জালে আবারো ধরা পরলো ২৯ কেজি ওজনের বিগহেড মাছ

মো: জাকির হোসেন, (স্টাফ রিপোর্টার) :

মানবিক সমাজ গঠনে যুব শক্তির অগ্রণী ভূমিকা: মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত ভবিষ্যতের প্রত্যয়

প্রকাশিত ০৬:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

যুগে যুগে সমাজের গতিপথ নির্ধারণে নেতৃত্ব দিয়েছে তারুণ্য। বিশ্ব ইতিহাসের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের পেছনে ছিল একদল সাহসী, উদ্যমী ও চিন্তাশীল যুবক-যুবতী, যারা অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে সমাজকে মানবিক, ন্যায়ভিত্তিক ও উন্নয়নমুখী পথে পরিচালিত করেছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের অন্যতম বড় দুটি সামাজিক ব্যাধি—মাদকাসক্তি ও দুর্নীতি—যুব সমাজের সামনে এক ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব সমস্যা শুধু একটি প্রজন্ম নয়, গোটা জাতির ভবিষ্যৎকেই হুমকির মুখে ফেলছে।
এই প্রেক্ষাপটে আজ সময় এসেছে, যখন যুব সমাজকে নিজ দায়িত্ব বুঝে নিতে হবে। আত্মনির্ভরশীল, নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন এক তরুণ সমাজই পারে একটি মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে।
মাদকের ছোবলে ধ্বংসের পথে প্রজন্ম বর্তমানে আমাদের সমাজে মাদক এক ভয়ঙ্কর ব্যাধির রূপ নিয়েছে। শহর থেকে গ্রাম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে গলির মোড়—সব জায়গায় মাদকের প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি এই ভয়াল ছোবলে আক্রান্ত হচ্ছে। ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন—নানান নামের অন্তরালে আজ তরুণদের স্বপ্নকে চুরমার করে দিচ্ছে মাদক।
একজন যুবক যখন মাদকের নেশায় আক্রান্ত হয়, তখন তার মধ্যে থেকে হারিয়ে যায় স্বপ্ন, সাহস ও দায়িত্ববোধ। সে হয়ে পড়ে আত্মকেন্দ্রিক, অলস, এবং সমাজবিচ্ছিন্ন। মাদকের কারণে যেমন বাড়ছে মানসিক অসুস্থতা, অপরাধ প্রবণতা, পারিবারিক কলহ ও আত্মহত্যা, তেমনি দেশের কর্মক্ষম শক্তির একটি বিশাল অংশ হারাচ্ছে উৎপাদনশীলতা ও সৃজনশীলতা।

দুর্নীতি: নৈতিকতাবিরোধী এক মরীচিকা

দুর্নীতি একটি রাষ্ট্রের অগ্রগতিকে ব্যাহত করে। যখন সমাজের প্রতিটি স্তরে—প্রশাসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আইন-শৃঙ্খলা—দুর্নীতি বাসা বাঁধে, তখন ন্যায়বিচার, সাম্য ও মানবিকতা বিপন্ন হয়। দুর্নীতি শুধুমাত্র টাকার বিনিময়ে অন্যায় সুবিধা নেওয়াই নয়, বরং এটি একটি নৈতিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ।
আজ যুব সমাজকে বুঝতে হবে, দুর্নীতিতে অংশ নেওয়া মানেই নিজের ভবিষ্যৎকে দুর্বিষহ করে তোলা। একজন তরুণ যদি চাকরির জন্য ঘুষ দিতে বাধ্য হন, যদি সরকারি সেবাগুলো পেতে হয় ‘মালিশের’ মাধ্যমে, তবে তার মধ্যে অসন্তোষ, হতাশা ও বিদ্রোহের মনোভাব জন্ম নেয়। অথচ এই যুবকরাই হতে পারতো উদ্ভাবনী চিন্তার চালিকাশক্তি।

যুব সমাজের ভূমিকা: দায়িত্ব নয়, এটি একটি নৈতিক আহ্বান
বর্তমান প্রজন্ম যদি চায় একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক সমাজ, তবে তাদেরকেই এগিয়ে আসতে হবে—সচেতনতা তৈরির সৈনিক হয়ে, সাহসী প্রতিবাদীর ভূমিকায়।
১. সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার:
প্রথম পদক্ষেপ হলো—আত্মসচেতনতা। যুবক-যুবতীদের মধ্যে মাদক ও দুর্নীতির ক্ষতিকর দিকগুলো সম্পর্কে ব্যাপকভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, যুব সংগঠন—এই সব প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে হবে গঠনমূলক বার্তা ছড়াতে।
২. ইতিবাচক নেতৃত্ব গড়ে তোলা:
নেতৃত্বের আসনে উঠে আসতে হবে তরুণদের—কেবল রাজনৈতিক নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও শিক্ষাক্ষেত্রেও। যেখানে তারা অন্য যুবকদের জন্য একটি আদর্শ উপস্থাপন করবে।
৩. মানবিক ও নৈতিক মূল্যবোধে গড়ে উঠা:
যুবদের মধ্যে নৈতিকতা, মানবতা, সততা, সহনশীলতা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ—এই মূল্যবোধগুলোকে জাগিয়ে তুলতে হবে। একমাত্র আদর্শ চরিত্রের মানুষই পারে দুর্নীতির প্রতি ‘না’ বলতে।
৪. প্রযুক্তির ইতিবাচক ব্যবহার:
আজকের ডিজিটাল যুগে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে সহজেই গঠনমূলক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়া সম্ভব। এই মাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে যুবকরা মাদক ও দুর্নীতিবিরোধী সচেতনতামূলক কনটেন্ট তৈরি ও প্রচার করতে পারে।
৫. সংগঠিত ও ঐক্যবদ্ধ উদ্যোগ:
একক বা বিচ্ছিন্নভাবে নয়, যুব সমাজকে সংঘবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ‘মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গড়ি’ শীর্ষক প্ল্যাটফর্ম, ক্যাম্পেইন, সভা, মানববন্ধন ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা যেতে পারে।

সর্বপরি বলতে পারি,

যদি একটি জাতিকে এগিয়ে নিতে হয়, তবে তার প্রথম ও প্রধান শর্ত হলো—একটি সুশৃঙ্খল, মানবিক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা। আর তা গড়ে তোলার কাণ্ডারী হতে হবে বর্তমানের যুব সমাজকে। সময় এসেছে ভাঙনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির জন্য কাজ করার।
আজকের তরুণেরা যদি স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর, স্বচ্ছ ও মানবিক বাংলাদেশের; তবে এই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে তাদেরই হাল ধরতে হবে, কলম ধরতে হবে, কণ্ঠ তুলতে হবে।
কারণ—”যুবরাই জাতির ভবিষ্যৎ নয়, তারা জাতির বর্তমানও।” এই বর্তমান যদি সঠিক পথে চলে, ভবিষ্যৎ নিশ্চিতভাবে হবে গর্বিত ও গৌরবময়।