০৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

উলিপুরে সালিশের নামে প্রহশন : মাতবররা কেটে দিলো ধর্ষিতার মাথার চুল

  • প্রকাশিত ০৪:৩০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫
  • ১০০ বার দেখা হয়েছে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় এক ধর্ষিতাকে শাস্তি দিতে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে স্থানীয় মাতবররা। সামাজিক সালিশের নামে ঘটেছে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটে উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যা রসুলপুর গ্রামে। অভিযোগ অনুযায়ী, উমেদ আলীর ছেলে সুরুজ্জামান তার ভাবীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে এবং তা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরে তার স্ত্রী মোবাইলে সেই ভিডিও দেখতে পেয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রকাশ করে।

স্থানীয় মাতবর খলিলুর রহমানের ছেলে মাইদুল ইসলাম বিষয়টি মীমাংসার নামে সালিশ ডাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে উভয় পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন।

গত ৬ মে রাতে গ্রামে অনুষ্ঠিত এক সালিশ বৈঠকে মাইদুল ইসলামসহ পাঁচ সদস্যের একটি ‘জুড়ি বোর্ড’ গঠন করা হয়। সালিশে ধর্ষিতা নারীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রকাশ্যে তার মাথার চুল কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপরদিকে ধর্ষক সুরুজ্জামানকে মাত্র ২০ বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই নারীর মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং সামাজিকভাবে চরম অপমানের শিকার হন।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। মাতবরদের এই সিদ্ধান্তে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি এর বিচার চাই।”

এ বিষয়ে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেই লাঞ্ছিত করা মধ্যযুগীয় বর্বরতার উদাহরণ। তারা দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

Tag :
জনপ্রিয়

কোটচাঁদপুরে মৎস্য হ্যাচরির ৩ গার্ডকে ব্যাপক মারধর

উলিপুরে সালিশের নামে প্রহশন : মাতবররা কেটে দিলো ধর্ষিতার মাথার চুল

প্রকাশিত ০৪:৩০:২৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলায় এক ধর্ষিতাকে শাস্তি দিতে তার মাথার চুল কেটে দিয়েছে স্থানীয় মাতবররা। সামাজিক সালিশের নামে ঘটেছে এ ন্যক্কারজনক ঘটনা। এতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে।

ঘটনাটি ঘটে উপজেলার তবকপুর ইউনিয়নের উত্তর সাদুল্যা রসুলপুর গ্রামে। অভিযোগ অনুযায়ী, উমেদ আলীর ছেলে সুরুজ্জামান তার ভাবীকে একা পেয়ে ধর্ষণ করে এবং তা মোবাইলে ভিডিও ধারণ করে রাখে। পরে তার স্ত্রী মোবাইলে সেই ভিডিও দেখতে পেয়ে বিষয়টি স্থানীয়ভাবে প্রকাশ করে।

স্থানীয় মাতবর খলিলুর রহমানের ছেলে মাইদুল ইসলাম বিষয়টি মীমাংসার নামে সালিশ ডাকেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি এই ঘটনার সুযোগ নিয়ে উভয় পক্ষের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ আদায় করেন।

গত ৬ মে রাতে গ্রামে অনুষ্ঠিত এক সালিশ বৈঠকে মাইদুল ইসলামসহ পাঁচ সদস্যের একটি ‘জুড়ি বোর্ড’ গঠন করা হয়। সালিশে ধর্ষিতা নারীর বিরুদ্ধে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা জরিমানা এবং প্রকাশ্যে তার মাথার চুল কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। অপরদিকে ধর্ষক সুরুজ্জামানকে মাত্র ২০ বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালিশের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই নারীর মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং সামাজিকভাবে চরম অপমানের শিকার হন।

ভুক্তভোগী নারী বলেন, “আমাকে অন্যায়ভাবে শাস্তি দেয়া হয়েছে। মাতবরদের এই সিদ্ধান্তে আমি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছি। আমি এর বিচার চাই।”

এ বিষয়ে উলিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিল্লুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীকেই লাঞ্ছিত করা মধ্যযুগীয় বর্বরতার উদাহরণ। তারা দ্রুত দোষীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের দাবি জানিয়েছেন।