গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বিতর্কিত সাবেক এসপি হারুনের নির্দেশে করা একাধিক মিথ্যা মামলার ছোবল থেকে রেহাই পাননি দৈনিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকার সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিম স্যার সহ চার সাংবাদিক।উপযুক্ত বিচার- বিশ্লেষণ দ্বারা অব্যাহতির আদেশ দেওয়ার জন্য সুদৃষ্টি কামনা করেছেন বিবাদীগন।
খবরে প্রকাশ,খুনি হাসিনার পালিত পা চাটা গোলাম এসপি হারুন বিগত ২০১৯ সালের (২রা মে) বৃহস্পতিবার হারুনের ব্যাপারে একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করেন।পরে উক্ত পত্রিকার সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিমসহ চার সাংবাদিককে তথ্য প্রদানের মিথ্যা আশ্বাসে ফোন করে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ভবনের প্রথম গেটে থাকতে বলেন। পরে ঐ ভবনের গেটের সামনে আনুমানিক দশটার দিকে সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিমসহ চার সাংবাদিক উপস্থিত হলে হারুনের নির্দেশে আগে থেকেই ওঁত পেতে থাকা কয়েকজন ইউনিফর্ম ছাড়া পুলিশ নাটকীয় কায়দায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দুইটি হাইয়েস ও একটি প্রাইভেট কারে তুলে নিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর নারায়ণগঞ্জে এসপি হারুনের অফিসে উপস্থিত করার পর হারুনের নির্দেশ মোতাবেক উক্ত পাঁচজনকে ডিবি অফিসের টর্চার সেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর অমানবিক নির্যাতন ও ব্যাপক লাঠিপেটা শুরু করে। এভাবে প্রায় দুই রাত দুইদিন ডিবি অফিসের আয়নাঘরে রেখে নির্যাতন চলে।
দুইদিন পর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে হারুন যোগাযোগ করে বলেন, সাংবাদিক পাঁচজনকে যা প্রয়োজন তার চেয়েও বেশি টর্চার করা হয়েছে। এখন ওদের নামে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দিয়ে কোর্টে চালান করে দিলাম। এমন কথা আটকৃতদের সামনে মুঠোফোনে হারুন আসাদুজ্জামান খান কামালকে বলেন।
এরপর হারুন একটি রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে এবং ডিবি অফিসে রেখেই আদালত থেকে দুই দিনের দেওয়া রিমান্ড নিয়ে নানান নাটকীয়তা করে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।
জানা যায়, কিছুদিন কারাগারে থাকার পর রমজানের ভিতর তাদেরকে আবারো ডিবি অফিস রিমান্ডে আনেন। দুইদিন কাটার পর আদালতে হাজির করে আরেকটি মামলায় পুলিশকে বাদী করে মোট তিনটি মামলা দেন।দীর্ঘদিন কারাভোগের পর ২০২০ সালে ঐ মিথ্যা মামলা গুলোর জামিন পান পত্রিকার সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিমসহ চার সাংবাদিক।জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর বোরহান হাওলাদার জসিম ও চার সাংবাদিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইনমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিপি বরাবরে একাধিকবার দরখাস্ত দিলেও এই মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের কোন অগ্রগতি হয়নি।
মিথ্যা মামলার আসামিরা হলেন, সম্পাদক বোরহান হাওলাদার জসিম, সাংবাদিক মোঃ সাইফুল ইসলাম, সাংবাদিক নাসির উদ্দিন গাজীপুর জেলা সহকারি আইনজীবী মোঃ আবুল কালাম এবং সাংবাদিক আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী।
মামলার ধরণ আসামিদের পক্ষে পৃথক পৃথক ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ২৬৫ (সি) ধারার বিধান মোতাবেক দাখিলী ডিসচার্জের দরখাস্তের বিষয়ে স্বত্ব আইনজীবীর বক্তব্য শ্রবন করলাম। আসামী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর পক্ষের আইনজীবী বলেন, আসামী কোন চাঁদাবাজ নন। তিনি গাজীপুর জেলা থেকে প্রকাশিত দৈনিক বাংলাভূমি পত্রিকার বার্তা সম্পাদক। আসামী তার পত্রিকায় তৎকালীন বিতর্কিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের দুর্নীতি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করার কারণে অত্র মামলার এজাহারকারী পুলিশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই আসামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করেছেন। তাই তিনি আসামী আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রার্থনা করেন।
আসামী নাসির উদ্দিনের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, এই আসামী নারায়ণগঞ্জের কোন স্থানীয় বাসিন্দা নয়। আসামী ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক ভোরের ধ্বনি পত্রিকার গাজীপুর জেলার স্টাফ রিপোর্টার। আসামীর ব্যবসায়িক ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে। আসামী তার পত্রিকায় তৎকালীন পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের দূর্নীতি বিষয়ক তথ্য প্রকাশ করার কারণে অত্র মামলার এজাহারকারী পুলিশ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এই আসামীর বিরুদ্ধে মামলাসহ আরো ২টি মামলা সম্পৃক্ত করা হয়েছে।তাই তিনি এই আসামীকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রার্থনা করেন।
আসামী মোঃ বোরহান হাওলাদার জসিম ও মোঃ সাইফুল ইসলামের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, আসামী বোরহান হাওলাদার ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় সাপ্তাহিক সময়ের কণ্ঠ ও দৈনিক ভোরের ধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক। যার পরিচয় ছারপত্র নং ৪৮২ ও দৈনিকের নং ৫০০৬। আসামী সাইফুল ইসলামও জাতীয় সাপ্তাহিক সময়ের কন্ঠ পত্রিকার একজন সাংবাদিক যার পরিচয় নং ৩৩১।
আসামীগণ গাজীপুর রিপোর্টাস ক্লাবের সদস্য। আসামীদ্বয় তাদের পত্রিকায় উর্ধ্বতন একজন পুলিশ কর্মকর্তার দুর্নীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় এই আসামীদ্বয়কে হয়রানী করার জন্য এমন মিথ্যা চাঁদাবাজীর মামলাসহ আরও দু’টি ফৌজদারী মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাই বিজ্ঞ আইনজীবী আসামীদ্বয়কে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রার্থনা করেন।
আসামী আবুল কালামের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী বলেন, আসামী বোরহান হাওলাদার জসিম ও সাইফুল ইসলাম একটি তথ্য লিখবেন বলে এই আসামীকে মোবাইল ফোনে ডেকে নিয়ে যান। তারপর উক্ত আসামীদের সাথে এই আসামীকেও সাংবাদিক মনে করে কিছু সাদা পোশাকে অস্ত্রধারী লোক এসে তাদের সাথে নিয়ে যান। আসামী আবুল কালাম প্রতিবাদ করলে, তাকেও এই মামলাগুলোতে আসামী হিসেবে সম্পৃক্ত করা হয়। আসামীকে নিয়ে যাওয়া হলে তার পরিবার থেকে গাজীপুর সদর থানায় জিডি নং ১১০/২০১৯ দায়ের করা হয়। এই আসামী গাজীপুর কোর্টে আইনজীবী সহকারী হিসেবে ১০/১১ বছর যাবৎ কাজ করেন এবং তার সদস্য আইডি কার্ড নং ৪৩৮। ঘটনার তারিখে তিনি গাজীপুরে উপস্থিত ছিলেন। তিনি কোন চাঁদাবাজী করেন নাই। তাই বিজ্ঞ আইনজীবী এই আসামীকে অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতির আদেশ প্রার্থনা করেন।অপরদিকে রাষ্ট্র পক্ষের বিজ্ঞ অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, আসামীদের বিরুদ্ধে প্রাথমিক সত্যতা প্রতীয়মান হয়েছে। তাই তিনি সংশ্লিষ্ট থাকায় চার্জ গঠনের আদেশ প্রার্থনা করেন।
উভয় পক্ষের বক্তব্য বিস্তারিত শুনানী অন্তে নথি পর্যালোচনা করা হলে উক্ত পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, আসামীগণ কর্তৃক আদালতে জামিনের আবেদনে প্রত্যেক আসামী তাদের স্ব স্ব পেশার সমর্থনে প্রয়োজনীয় কাগজাদী দাখিল করেছে যা মামলার রেকর্ডের সাথে সামিল আছে। তাছাড়াও পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সমাজের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের তথ্য সমৃদ্ধ ও বস্তুনিষ্ঠ প্রতিবেদনও নথির সামিলে আছে মর্মে প্রতীয়মান হয়। আসামীদের সংশ্লিষ্ট পত্রিকাগুলো গাজীপুর থেকে প্রচারিত হয় মর্মে প্রতীয়মান হয়েছে এবং আসামীগণ কেউই নারায়নগঞ্জের স্থানীয় বাসিন্দা নন কিংবা নারায়ণগঞ্জ থেকে প্রচারিত কোন পত্রিকার সম্পাদক, প্রকাশক কিংবা স্টাফ রিপোর্টার নন মর্মেও আদালতের নিকট প্রতীয়মান হয়েছে। তাছাড়া আসামীদের একজন গাজীপুর জেলার জজ কোর্টে প্রাকটিসিং একজন বিজ্ঞ আইনজীবী সহকারী মর্মে তার পরিচয়পত্র বয়েছে। আসামী আবুল কালামের পক্ষে দাখিলী কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, ০২/০৫/১৯ তারিখ থেকে আসামী আবুল কালাম নিখোঁজ রয়েছেন মর্মে জানিয়ে আসামীর ভাই ফারুক গাজীপুর সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী এন্ট্রি করেন।যার নম্বর ১১০, তারিখ ০৩/০৫/১৯। তাই আসামী নিখোঁজ থাকার অব্যাহতির পূর্বে ০১/০৫/১৯ তারিখে গাজীপুর জেলা থেকে নারায়ণগঞ্জ জেলায় এসে। এজাহারকারীর নিকট একলক্ষ টাকা চাঁদা দাবী করার বিষয়টি আদালতের নিকট বিশ্বাসযোগ্য বলে প্রতীয়মান হয় না। তাছাড়া ০১/০৫/১৯ তারিখের ঘটনায় কথিত চাঁদাবাজী করার অভিযোগ থাকলেও ০৭/০৫/১৯ তারিখে অর্থাৎ ০৬ দিন বিলম্বে এজাহার রুজু করার যৌক্তিক ও বিশ্বাসযোগ্য কোন ব্যাখ্যা এজাহারকারী তার এজাহারে উপস্থাপন করেন নাই।
তাই সার্বিক পর্যালোচনার আলোকে বিজ্ঞ আদালত মনে করে আসামীদের পেশাগত অবস্থান থেকে তাদের পক্ষে এজাহারকারীর নিকট চাঁদা দাবী করার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য নয়। আসামীগণের প্রত্যেকেই লাইসেন্সধারী সাংবাদিক, রিপোর্টার, প্রকাশক, বার্তা সম্পাদক কিংবা আইনজীবী সহকারী।এমতাবস্থায় তাদের বিরুদ্ধে অত্র মামলার অভিযোগ পত্রে বর্নিত দন্ডবিধির ৩৮৫/৫০৬/৩২৩ ধারার অপরাধের অভিযোগ গঠন করার মতো প্রাথমিক কোন উপাদান না থাকায়, আসামী পক্ষে দাখিলী ডিসচার্জের আবেদন মঞ্জুর পূর্বক তাদের প্রত্যেককেই অত্র মামলার দায় থেকে অব্যাহতি ও খালাস দেয়া হলো।
এই সংবাদ প্রকাশ ও প্রচারের মাধ্যমে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ও সকল উপদেষ্টা মহোদয়ের সুদৃষ্টি কামনা করে বিগত আওয়ামীলীগ সরকারের আমলের বিতর্কিত পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ করার কারণে এই মিথ্যা বানোয়াট মামলা প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন দৈনিক সময়ের কন্ঠ ও ভোরের ধ্বনি পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক বোরহান হাওলাদার জসিমসহ সংশ্লিষ্ট
চার সাংবাদিক।