০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেই মালিকরা বিতাড়িত

অর্থ আত্মসাৎ করে কারখানা হাতিয়ে নিলেন আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের পরিচালক

  • প্রকাশিত ০৪:৪৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৪৮৬ বার দেখা হয়েছে

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ব্যবসায়ী থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে কারখানা হাতিয়ে নিয়েছেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি সিআইডির এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ জাহেদুল হক বোয়ালখালীর স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবদুল করিম তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। অত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এমনকি তদন্তকালে রফিকুল ইসলাম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তদন্তকাজে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

বাদী মোঃ জাহেদুল হকের অভিযোগ, একসাথে ব্যবসা পরিচালনার কথা থাকলে বিবাদী মোঃ রফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী সহযোগীদের উপেক্ষা করে এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং ব্যবসার মালামাল বিক্রয় করাসহ বেআইনিভাবে ব্যবসা থেকে টাকা উত্তোলন করে ছয়ত্রিশ লক্ষ চুয়াত্তর হাজার তিনশ পঞ্চাশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোঃ জাহেদুল হক, এস এম অলী উল্লাহসহ কয়েকজন মিলে স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে বেশ লাভজনক হলেও করোনাকালীন সময়ে দেশে স্থবিরতা সৃষ্টি হলে ব্যবসাটি বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। সে সময় মোঃ রফিকুল ইসলাম আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব রাখেন। অংশীদার হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের মালিকদ্বয় থেকে খালি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টের একক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে তার দূর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়লে সেই স্ট্যাম্প ব্যবহার করে মূল মালিকদ্বয়ের বিরুদ্ধে ৯০ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স শুরুতে ৩ জনের নামে থাকলেও রফিকুল ইসলাম পরবর্তীতে একক ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে মূল মালিকদের বিতাড়িত করেন। এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বাদীর বিরুদ্ধে নানা সময় মামলা-হামলা ও হুমকি প্রদান করে প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বিবাদী মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ায় বিচারের উদ্দ্যেশে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মোঃ জাহেদুল হক ও স্বাক্ষী এস. এম অলী উল্লাহদ্বয়কে তাদের কষ্টার্জিত টাকায় গড়া স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি থেকে জোড়পূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের প্রাণে হত্যাসহ যেকোন সময় বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে অত্র প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ও মামলার স্বাক্ষী অলী উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। সে কারণে রফিকুল ইসলামকে আমরা কোম্পানীর ৫০ শতাংশের মালিক করেছিলাম। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন। শুরু থেকেই রফিকুল ইসলাম ব্যবসার ব্যাংক হিসাব পরিচালনার একক ক্ষমতা হাতে নিয়ে ফেলেন। কিন্তু দেখা যায়, ব্যবসায় প্রচুর অর্থ অংশীদারদের বিনা অনুমতিতে উত্তোলন করে নেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা থেকেই সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।

তিনি জানান, অর্থ উত্তোলনে প্রতিবাদ করায় বাদী ও স্বাক্ষীকে নানা সময় নানা হুমকি প্রদান করা হয়। একাধিকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও বিবাদী ব্যবসা থেকে আমাদের বিতাড়িত করার জন্য হত্যার হুমকিসহ নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করতে থাকেন। রফিকুল ইসলাম ব্যবসায় আমাদের মূলধন ও মালামাল বিক্রয়ের লভ্যাংশসহ ৪০ লক্ষের অধিক টাকা আত্মসাৎ করেন।

তথ্যসূত্রঃ সিআইডি প্রতিবেদন, সিআর মামলা নং- ৪৫৬/২০২২

Tag :
জনপ্রিয়

সিটিসি মো. গোলাম রব্বানীর বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতি-লুটপাট আর নারী কেলেংকারীর অভিযোগ, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া জরুরী

নিজ প্রতিষ্ঠান থেকেই মালিকরা বিতাড়িত

অর্থ আত্মসাৎ করে কারখানা হাতিয়ে নিলেন আল-আরাফাহ্ ব্যাংকের পরিচালক

প্রকাশিত ০৪:৪৫:৫৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৮ জানুয়ারী ২০২৪

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে ব্যবসায়ী থেকে ৩৬ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে কারখানা হাতিয়ে নিয়েছেন আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের পরিচালক মোঃ রফিকুল ইসলাম। সম্প্রতি সিআইডির এক তদন্ত প্রতিবেদনে এই ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে।

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মোঃ জাহেদুল হক বোয়ালখালীর স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রির প্রতিষ্ঠাতা। তার অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি চট্টগ্রাম মেট্রো ও জেলার উপ-পুলিশ পরিদর্শক মোঃ আবদুল করিম তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। অত্র প্রতিবেদনে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। এমনকি তদন্তকালে রফিকুল ইসলাম তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে তদন্তকাজে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে।

বাদী মোঃ জাহেদুল হকের অভিযোগ, একসাথে ব্যবসা পরিচালনার কথা থাকলে বিবাদী মোঃ রফিকুল ইসলাম ব্যবসায়ী সহযোগীদের উপেক্ষা করে এককভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছেন এবং ব্যবসার মালামাল বিক্রয় করাসহ বেআইনিভাবে ব্যবসা থেকে টাকা উত্তোলন করে ছয়ত্রিশ লক্ষ চুয়াত্তর হাজার তিনশ পঞ্চাশ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়া প্রতিবাদ করায় তাকে হত্যার হুমকিও দেওয়া হয়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মোঃ জাহেদুল হক, এস এম অলী উল্লাহসহ কয়েকজন মিলে স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে বেশ লাভজনক হলেও করোনাকালীন সময়ে দেশে স্থবিরতা সৃষ্টি হলে ব্যবসাটি বন্ধ হওয়ার পর্যায়ে চলে যায়। সে সময় মোঃ রফিকুল ইসলাম আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হওয়ার প্রস্তাব রাখেন। অংশীদার হওয়ার পর রফিকুল ইসলাম প্রতিষ্ঠানের মালিকদ্বয় থেকে খালি স্ট্যাম্পে সই করিয়ে নেন এবং প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক একাউন্টের একক নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে তার দূর্নীতি ও অনিয়ম ধরা পড়লে সেই স্ট্যাম্প ব্যবহার করে মূল মালিকদ্বয়ের বিরুদ্ধে ৯০ লক্ষ টাকার মামলা দায়ের করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স শুরুতে ৩ জনের নামে থাকলেও রফিকুল ইসলাম পরবর্তীতে একক ট্রেড লাইসেন্স বানিয়ে প্রতিষ্ঠানের পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হাতে নিয়ে মূল মালিকদের বিতাড়িত করেন। এসকল অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় বাদীর বিরুদ্ধে নানা সময় মামলা-হামলা ও হুমকি প্রদান করে প্রতিনিয়ত হয়রানি করা হচ্ছে বলে জানা যায়।

বিবাদী মোঃ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ পাওয়ায় বিচারের উদ্দ্যেশে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, মোঃ জাহেদুল হক ও স্বাক্ষী এস. এম অলী উল্লাহদ্বয়কে তাদের কষ্টার্জিত টাকায় গড়া স্কাই ভিশন ফাইবার ইন্ডাষ্ট্রি থেকে জোড়পূর্বক বিতাড়িত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, তাদের প্রাণে হত্যাসহ যেকোন সময় বড় ধরণের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জানতে চাইলে অত্র প্রতিষ্ঠানের অংশীদার ও মামলার স্বাক্ষী অলী উল্লাহ গণমাধ্যমকে বলেন, ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। সে কারণে রফিকুল ইসলামকে আমরা কোম্পানীর ৫০ শতাংশের মালিক করেছিলাম। চুক্তি অনুযায়ী ২৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে তিনি কোম্পানির ৫০ শতাংশ শেয়ার কিনে নেন। শুরু থেকেই রফিকুল ইসলাম ব্যবসার ব্যাংক হিসাব পরিচালনার একক ক্ষমতা হাতে নিয়ে ফেলেন। কিন্তু দেখা যায়, ব্যবসায় প্রচুর অর্থ অংশীদারদের বিনা অনুমতিতে উত্তোলন করে নেওয়া হচ্ছে। এর প্রতিবাদ করা থেকেই সমস্যার সূত্রপাত ঘটে।

তিনি জানান, অর্থ উত্তোলনে প্রতিবাদ করায় বাদী ও স্বাক্ষীকে নানা সময় নানা হুমকি প্রদান করা হয়। একাধিকবার মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করলেও বিবাদী ব্যবসা থেকে আমাদের বিতাড়িত করার জন্য হত্যার হুমকিসহ নানা অসৎ উপায় অবলম্বন করতে থাকেন। রফিকুল ইসলাম ব্যবসায় আমাদের মূলধন ও মালামাল বিক্রয়ের লভ্যাংশসহ ৪০ লক্ষের অধিক টাকা আত্মসাৎ করেন।

তথ্যসূত্রঃ সিআইডি প্রতিবেদন, সিআর মামলা নং- ৪৫৬/২০২২