তানজিম ইসলাম বরিশাল থেকে ফিরে:
দেশের শীর্ষ দুর্নীতিবাজ জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়ার ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ ফাঁস হলে গত বুধবার দুদক অভিযান চালায় বরিশাল সদর সাব রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে। দুদকের উপস্থিতি টের পেয়ে মোহছেন মিয়া অফিস ছেড়ে পালিয়ে ঢাকায় চলে যান বলে জানা গেছে।
দুদক কর্মকর্তারা জেলা রেজিস্ট্রারের অফিসে ১ঘন্টা অপেক্ষা করার পর জানতে পারে মোহছেন মিয়া পালিয়ে ঢাকা চলে গেছে। মোহছেন মিয়া পালানোর নাটকীয় তায় অফিসের স্টাফরা ৩ রকমের কথা বলে। প্রথমে বলে স্যার ওয়াশরুমে আছে পরে বলে স্যার ছুটিতে আছে
দুদকের কর্মকর্তারা মোহছেন মিয়াকে ফোন করলে তিনি জানান ঢাকায় যাচ্ছেন। মূলত জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া দুদকের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন উদ্দেশ্য হল তার ঘুষ দুর্নীতির অনিয়ম বিদেশ অর্থপাচার ও সেকেন্ড হোমের তথ্য প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় জানতেন তার অনিয়মের থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে তাই স্বেচ্ছায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন ও গোপনে দুদকের সাথে আলোচনা করার চেষ্টা করছেন বলেও তার অফিস সূত্রে জানা গেছে অতি সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান বরাবর জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়ার বিরুদ্ধে দাখিল করা এক অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে মোহছেন মিয়া সাব রেজিস্ট্রার থাকাকালীন থেকেই জ্বালজালিয়াতি সরকারি রাজস্ব ফাঁকি বদলি বাণিজ্য দুর্নীতির মাধ্যমে পদোন্নতি প্রদান করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে নিজের ও স্ত্রী লাভলী ইয়াসমিনের নামে দেশে বিদেশে গড়ে তুলেছেন জ্ঞাত আয় বহিভূত সম্পদের পাহাড় ।
বরিশাল বিভাগের মধ্যে অন্যতম জেলা অফিস হচ্ছে বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার অফিস। যেখানে প্রতিনিয়ত সাব রেজিস্ট্রার থেকে সাধারণ জনগনের দুর্ভোগ প্রহাতে হচ্ছে যে কোন দলিলের বড় কোন সমস্যা হলে যেতে হয় জেলা রেজিস্ট্রার কাছে সমাধানের জন্য কিন্তু সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বরিশালের জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া সাব রেজিস্ট্রারদের চাপ প্রয়োগ করে হাতিয়ে নেন মোটা অংকের ঘুষ।
বরিশালের জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া বরিশাল জেলায় যোগদান করার পর থেকে শুরু করেন তার ঘুষ দুর্নীতি সাম্রাজ্য বরিশালের মোট ৯টি সাব রেজিস্ট্রি অফিস রয়েছে এই অফিস থেকে নকল প্রতি ২৫০ টাকা ও প্রতি দলিল থেকে ৩৫০ টাকা দিতে হয় জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া প্রতি সপ্তাহে এই মোট ৯ টি অফিস থেকে হাতিয়ে নেন তিনি লক্ষ লক্ষ টাকা যা মাসে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায় শুধু নকল এবং দলিল নয় পদোন্নতি বদলি বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের দুর্নীতি করে থাকেন মোহছেন মিয়া
তিনি শুধু বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে নয় তার পূর্ব অফিস মাগুরা, দিনাজপুর, ময়মনসিংহ জেলায় ও করেছেন এরকম ঘুষ দুর্নীতি ময়মনসিংহ জেলা জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে থাকাকালীন নকল নবীশদের
নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার পূর্বেই যে সমস্ত জ্যৈাষ্ঠ নকল নবীশ পদোন্নতি তালিকায় ছিল তাদের জেলার রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে ডেকে এনে তাদের নিকট এই জেলার রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া ২০ লক্ষ টাকা করে ঘুষ দাবী করে
সেই সময় ময়মনসিংহে জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের প্রধান সহকারি আলহাজ্ব মোঃ মতিউর রহমানকে দিয়ে নকল নবীশদের নিকট হইতে ঘুষের টাকা আদায়ের কথা বলেছেন (বর্তমান বরিশালে) জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া এবং ঘুষের টাকা আদায় করার জন্য ময়মনসিংহের প্রতিটি সাব রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা তার ঘনিষ্ঠ স্টাফদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে ছিলেন এই কমিটি দায়িত্ব প্রাপ্তরা নকল নবীশদের ডেকে নিয়ে বিভিন্নভাবে ভয় ভীতি প্রদর্শন করে এবং এবং তাদেরকে প্রকাশ্যে বলেছেন যে পদোন্নতি পাইতে হইলে টাকা লাগবে কারণ এই টাকা জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া স্যার ও তার অফিসের লোকজন আই, জি,আর অফিসে অনুমোদন করার জন্য এবং নিয়োগ কমিটির সদস্যদের ম্যানেজ করার জন্য দিতে হবে জনপ্রতি ১০,০০,০০০/- (দশ লক্ষ টাকা) টিসি মোহরার পদে পদোন্নতি নিতে হলে ৮,০০,০০০/-( আট লক্ষ টাকা) অফিস সহকারি পদে পদোন্নতি নিতে হইলে ১৫,০০,০০০/- (পনের লক্ষ টাকা) করে ঘুষ দাবী করেন থাকেন জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া
ময়মনসিংহ জেলা রেজিস্ট্রার হিসেবে থাকাকালীন তিনি বদলী বাণিজ্য করে মোট ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
ঠিক একই পন্থায় কাজে লাগিয়ে বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে ও এরকম ঘুষ দুর্নীতি করে যাচ্ছেন জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার অফিসে নাম না বলা এক স্টাফ বলেন এই অফিসে ঘুষ দুর্নীতি করার জন্য আমাদের স্যার প্রত্যেক অফিসের স্টাফদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করে রেখেছেন সেই কমিটির লোকজনের মাধ্যমে তিনি প্রতি সপ্তাহে ৯ টি সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে তার এই ঘুষের টাকা আদায় করে থাকেন
জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়া প্রতি সপ্তাহে বিমানের মাধ্যমে ঢাকা – বরিশালে যাতায়াত করে থাকেন যা সম্পূর্ণ ব্যয়বহুল ভাবে খরচ হয়ে থাকে তার এই ঘুষ দুর্নীতি টাকা দিয়ে ঢাকা উত্তরায় গড়ে তুলেছেন বিলাশ বহুল নামে বেনামে বাড়ি এবং ফ্ল্যাট নরসিংদীতে তার স্ত্রীর বড় ভাইয়ের মাধ্যমে মোহছেন মিয়া তার এই কালো টাকা দিয়ে গড়েছেন বিশাল ব্যবসা বাণিজ্য এবং মালয়েশিয়ায় তার এক আত্মীয়র মাধ্যমে তার এই ঘুষ বাণিজ্য কালো টাকা পাচার করে গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম।
বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), আই,জি,আর ও সচিবালয়ে রয়েছে অভিযোগের পাহাড় কিন্তু আজ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে জমাকৃত অভিযোগের কোনটিও আলোর মুখ দেখেনি।
এ সকল বিষয়ে বরিশাল জেলা রেজিস্ট্রার মোহছেন মিয়াকে একাধিকবার ফোন করা হলে তিনি ফোনটি কেটে দেন।