স্বৈরাচরী আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে নিয়োগ প্রাপ্ত মহা ক্ষমতাধর সাব-রেজিষ্ট্রার মিনতি দাস স্বৈরাচারের দোষরা রয়ে গেছেন এখনো বহাল তরিয়াতে। অবৈধ পন্থায় চাকুরি নেয়ার অপরাধে দুদক কর্তৃক ২০১৭ সালে স্বামী-স্ত্রীর গ্রহনকৃত বেতন-ভাতা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশ থাকলেও বেতন-ভাতা জমা না দিয়ে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদে চাকুরি করে যাচ্ছেন। বর্তমানে তার স্বামী পরিতোষ কুমার দাষ চাকুরী হতে অবসরে আছেন। সূত্রে জানা যায়, মুজিবনগর সাব-রেজিষ্ট্রার মিনতি দাসের ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদে সাব-রেজিষ্ট্রার পদে চাকুরী হাতিয়ে নেন।
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চাকুরী পাওয়ার সুবাদে বনে যান যাদুর কাঠির মতো রাতারাতি কোটি কোটি টাকার মালিক। রাজধানী ঢাকায় ফ্ল্যাট, প্লট নামে বেনামে কোটিকোটি টাকার সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। মাসে বেতন লাখ টাকার কম হলেও চলাচল সামন্ত আমলের রাজা বাদশাদের মতো।
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ ও শিক্ষা সনদের চাকুরী পাওয়ার সুবাদে ক্ষমতার অপব্যবহার করে জমির শ্রেণি পরিবর্তন করে বানিয়েছেন উত্তরায় বহুতল বাড়ি, একাধিক গাড়ী, অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি। পল্লবী সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে কর্মরর্ত থেকে সেখানেও তার গঠিত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ছিলো। বিগত সময়ে আইজিআর মান্নান এর নিকট তার বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত অভিযোগ দিলেও তার অবৈধ্য টাকার প্রভাবে সেই সকল অভিযোগ ধামা চাপা পড়ে যায়।
পল্লবী সাব রেজিষ্ট্রার অফিস থেকে তিনি লোভনীয় জায়গা গাজীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে বদলী হয়ে যান অবৈধ টাকা দিয়ে। সেখানেও তিনি দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্য পরিণত করেছিলেন। গাজীপুর সদর থেকে তাকে অন্যত্র বদলী করা হলে লীগ সরকারের মন্ত্রীদের ক্ষমতা দাপট দেখিয়ে পুনরায় সে আদেশ বাতিল করে গাজীপুর সদর সাব রেজিষ্ট্রার অফিসে রয়ে যান বহাল তরিয়াতে।
সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে জাল সনদে চাকরি নেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় দুই সাব রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন- দুদক ২০১৭ সালে। দুদক সূত্রে জানা যায়, মহা ঘুষখোর সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাস ও পরিতোষ কুমার দাসের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র অনুমোদন দেওয়া হয় এবং যাচাই বাছাই জন্য তাদের শিক্ষা সনদ, মুক্তিযোদ্ধা সনদ নিয়ে দুদকে হাজির হওয়ার জন্য বলা হলে লীগ সরকারের প্রভাবে মন্ত্রি, আমলাদের দিয়ে সেই অভিযোগ দামা চাপা পড়ে যায়। যা আজও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি।
সূত্রে জানা যায়, সাব রেজিস্ট্রার মিনতি দাস ২০০৯ সালের ৯ ডিসেম্বর নিবন্ধন পরিদপ্তরে যোগ দান করেন সাব রেজিস্ট্রার পদে। মিনতি ১৯৮৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির আগে পাস না করা সত্ত্বেও এইচএসসি এবং বিএ (সম্মান) এর জাল সনদ দাখিল করে চাকরিতে যোগ দান করেন। “তিনি পাবলিক সার্ভেন্ট হিসাবে ভুয়া ও জাল সার্টিফিকেটের মাধ্যমে চাকরি নিয়ে ২০১৫ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত অবৈধভাবে বেতন-ভাতাদি বাবদ সরকারের ১০ লাখ ৯২ হাজার ৭৬৮ টাকা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করেছেন মর্মে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।”সেই অভিযোগের পরিপেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে ২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর শাহবাগ থানায় মামলা করে দুদক মিনতি দাস ও পরিতোষ কুমার দাসের বিরুদ্ধে।
অন্যদিকে পরিতোষ কুমার দাস ১৯৮৫ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারির আগে পাস না করা সত্ত্বেও বিএসসি (সম্মান) পাসের জাল সনদ দাখিল করে সাব রেজিস্ট্রার হিসাবে ২০০৯ সালের ৯ সেপ্টেম্বর যোগ দেন। তিনি রাজধানীর বাড্ডা সাব রেজিস্ট্রার অফিস সহ গুরুত্বপূর্ণ সাব রেজিষ্টার অফিসে দায়িত্ব থাকা অবস্থায় কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ ছিলো। এই দুই মুজিব নগর সাব রেজিষ্টারের ঘুষ, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণে সরকার হারিয়েছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। শুধুমাত্র তাদের আর্থিক সুবিধার কারনে ।
সূত্রে আরও জানা যায়, সাব রেজিষ্টার পরিতোষও অবৈধভাবে বেতন-ভাতাদি বাবদ সরকারের ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৩৬ টাকা আর্থিক সুবিধা গ্রহণ করে অপরাধ করেছিলেন বলে দুদক সূত্রে জানা যায়। সম্প্রতি মুজিবনগর কর্মচার্রী মহা ঘুষখোর সাব রেজিষ্টার মিনতি দাস কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরর্ত আছেন। কিশোরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে ঘুষ, দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। লীগ সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া অনেক কর্মকর্তাকে অপসারণ হলেও মিনতি দাস রয়ে গেছেন, সকল ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
অভিযোগ ছিল কিশোরগঞ্জ সাব রেজিস্ট্রার অফিসে যোগদানের পর থেকে অর্থের বিনিময়ে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে দলিল রেজিস্ট্রি করে আসছেন।এমন অভিযোগ থাকার পরও নীরব ভূমিকায় দলিল দাতা ও গ্রহীতারা। দাতা, গ্রহিতাদেরকে জিম্মি করে বিভিন্ন অযুহাতে পাঁচ হাজার থেকে শুরু করে লক্ষ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয় তাকে। তার চাহিদা মাফিক ঘুষ না দিলে হতে হয় বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল।
সম্প্রতি কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মারিয়া ইউনিয়নে বিজ্ঞ আদালতের নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে দলিল রেজিস্ট্রি করেছেন সাব রেজিস্ট্রার মিনতি । সূত্র মতে, মারিয়া মৌজাস্থ আরএস ৮৫৩ খতিয়ানের মালিক জুবেদা খাতুন আরএস ৩৯০৫ দাগে ২০১০ সালের ১৯ জুলাই ৮১৮২ নং দলিলে আরএস ৩৭৬৪ দাগে ২৫ শতাংশ ভূমি ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র কাছে সম্পাদন দলিলের মাধ্যমে হস্তান্তর করেন। পরবর্তীতে একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর রেজিস্ট্রিকৃত করে দেন।
মোমতাজ উদ্দিন মন্তু’র রেজিষ্ট্রিকৃত দলিলের সেই জায়গায় জুবেদা খাতুনের অপর ছেলে আবু হানিফ ২০১০ সালের ১৬ আগষ্ট রেজিষ্ট্রিকৃত দলিল নং ৬৮৯৭ হেবা ঘোষণা করে নিজে জমির মালিক দাবি করেন। বিষয়টি জানতে পেরে মোমতাজ উদ্দিন কিশোরগঞ্জ বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন। আদালত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে উল্লেখিত জমিতে দু’পক্ষের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রতিপক্ষ হইতে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে জমিটি রেজিষ্ট্রি করে দেন। বিবাদমান জমির মোট পরিমান ৪১ শতাংশ। সেখান থেকে ৮ শতাংশ জমি ১৯৯০ সালে মা জুবেদা খাতুন ছেলে মোমতাজ উদ্দিন মন্তুকে দিয়ে দেন। পরে ওই জমি ফাতেমা খাতুনের কাছে হস্তান্তর করেন। বাকি জমি মোমতাজ উদ্দিনের কাছে থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে আবারও ২৫ শতাংশ জমি মোমতাজ উদ্দিনকে লিখে দেন জুবেদা খাতুন। শুরু থেকেই জমির দখলে ও খাজনা দিয়ে আসছিলেন মোমতাজ উদ্দিন। সবকিছু ঠিক থাকলেও কৌশলে দলিল করে নিজের বলে দাবি করেন মোমতাজ উদ্দিনের সহোদর ভাই আবু হানিফ। এমতাবস্থায় ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর আবু হানিফকে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তফসিল বর্ণিত জমিতে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার সেই নোটিশ আবু হানিফের পাশাপাশি পাঠানো হয় সংশ্লিষ্ট সাব রেজিষ্ট্রি অফিসে। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও ৩৮ লাখ টাকা মূল্যে ১৯ শতাংশ জমি বিক্রি করে দেন আবু হানিফ এবং চলতি বছরের ২৭ নভেম্বর কিশোরগঞ্জ সদর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সাব কাবলা দলিল রেজিস্ট্রি করা হয় সাব-রেজিস্ট্রার মিনতি দাসের যোগ সাজসে। এভাবেই ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরী নিয়ে দেদারছে কামিয়ে যাচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। পূর্বের দুদককের অভিযোগের অভিযুক্ত সাব রেজিষ্ট্রার মিনতি দাস মোটা অংকের ঘুষ দিয়ে দুদকের সেই কর্মকতা কে ম্যানেজ করেছিলেন বলে প্রকাশ্যে তিনি তার সহকর্মীদেরকে জানিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা জানার জন্য তার মোবাইলে ফোন দিলে ফোন রিসিভ না করায় তার কোন মতামত পাওয়া যায়নি।