০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মোঃ সাব্বির (শাহীন), স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা।

মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুকে অপহরণের পরে হত্যা, রায়ে আসামীর ফাঁসি:

  • প্রকাশিত ১০:৩১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫
  • ৪৭ বার দেখা হয়েছে

দশ বছর বয়সী শিশু পুত্র মোঃ তাওহীদ ইসলাম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আব্দুল্লাহপুর নিবাসী রসূলপুর জামিআ ইসলামিয়া (মাদ্রাসা) ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করত।
‎মাদ্রাসায় পড়ুয়া এই শিশুটিকে অপহরণ এর পরে আসামীকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরও শিশুটিকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মকবুল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার লাখিরচর এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় মকবুলের ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান গত বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।

‎অভিযোগে জানা যায়, বিগত ১০/০২/২০২৪ খ্রি. তারিখ বিকাল ০৫.৩০ টায় ভিকটিম মোঃ তাওহীদ ইসলাম মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাত অনুমান ০৮.৩০ টায় ক্লাস শেষে তার মামা মোঃ মহসিন এর মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকানে যায় এবং সেখানে তার মামাকে না পেয়ে একাই বাড়ির পথে রওয়ানা হন। আসামী মোঃ মকবুল হোসেন তাকে অপহরণ পূর্বক হত্যা করে লাশ শাহাদত হোসেন এর সেফটিক ট্যাংকের ভিতর রেখে যায়। আসামী একটি বাটন মোবাইল ফোন এজাহারকারীর/ভিকটিমের মা মোসা: তাসলিমা আক্তার এর বাড়ির গেটে রেখে আসেন, এজাহারকারী নিজে ভিকটিমকে খুঁজতে থাকেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েও খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত অনুমান ০৯.২০ ঘটিকার সময় কারো অজান্তে ভিকটিমের বাসায় আসামীর রেখে যাওয়া একটি মোবাইলের নম্বরে আসামীর নম্বর থেকে ফোন করে আসামী ভিকটিমের মুক্তিপণ বাবদ ০৩ লক্ষ টাকা দাবী করেন। পুলিশকে ঘটনা জানালে মোঃ তাওহীদ ইসলামকে হত্যা করবেন বলে আসামী হুমকি দেন। পরের দিন সকাল অনুমান ১০.৩০ টায় মোঃ তাওহীদ ইসলাম এর মামা মোঃ মহসিন আসামীর কথামত ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ঢাকা মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রীজের নিচে পীলারের গোড়ায় ৩ লক্ষ টাকা রেখে আসেন। কিন্তু আসামী টাকা নিয়েও তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে মোঃ তাওহীদ ইসলামকে ফেরত দেয় নাই।

‎পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে এজাহারকারী/মোঃ তাওহীদ ইসলামের মা কম্পিউটার কম্পোজকৃত এজাহার দায়ের করেন। ভিকটিমকে ফেরত না পেয়ে এজাহারকারী ও তার আত্মীয় স্বজনেরা এবং র‍্যাব ১০ এর সহায়তায় এবং র‍্যাব সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে আসামী মোঃ মকবুল হোসেনকে ডিএমপি ঢাকা শ্যামপুর মডেল থানাধীন পোস্তাগোলা সাকিনস্থ আর্মি ক্যাম্পের পার্শ্বে ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে হোটেল দক্ষিণ বাংলা আবাসিক এর ৪র্থ তলার ৪০৮ নম্বর রুম থেকে গ্রেফতার করেন। তার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এবং ২টি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করেন। অতঃপর আসামীর দেখানোমতে সাক্ষী শাহাদাত হোসেন এর সেফটিক ট্যাংক হতে ভিকটিম মোঃ তাওহীদ ইসলাম এর লাশ উদ্ধার করেন।

‎মামলা দায়ের ও তদন্ত : দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়মিত মামলা এন্ট্রি করেন এবং এস আই জনাব এ কে এম সাইদুজ্জামান এর উপর তদন্তভার অর্পণ করেন। এস আই জনাব এ কে এম সাইদুজ্জামান মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্র অংকন করেন এবং আসামীকে গ্রেফতার করে নিজ হেফাজতে নেন। পরে আদালতে আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে সি,আর,পি,সি এর ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্তে আসামী মোঃ মকবুল হোসেন এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৭/৮ তৎসহ দঃ বিঃ ৩০২/২০১ ধারার অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিনি বিগত ৩১/০৭/২০২৪ খ্রি. তারিখ ৫১৫ নম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
‎মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মকবুল এর বিরুদ্ধে ১৮ জন স্বাক্ষীগণ স্বাক্ষ্য দেন।

‎মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুকে অপহরণ এর পরে হত্যা করায়, পরে রায়ে আসামীর ফাঁসির রায় হওয়ায় ভিকটিমের মায়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান,
‎এই রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি চাচ্ছেন এই রায় যেনো খুব শীঘ্রই কার্যকর হয় তাহলে তার মনে শান্তি আসবে। কারণ মা হিসেবে এখন আর কিছু চাওয়ার নেই শুধু সঠিক ন্যায় বিচার চাওয়া হিসেবে আসামীর ফাঁসি চাই।

Tag :

মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুকে অপহরণের পরে হত্যা, রায়ে আসামীর ফাঁসি:

মোঃ সাব্বির (শাহীন), স্টাফ রিপোর্টার, ঢাকা।

মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুকে অপহরণের পরে হত্যা, রায়ে আসামীর ফাঁসি:

প্রকাশিত ১০:৩১:৪৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

দশ বছর বয়সী শিশু পুত্র মোঃ তাওহীদ ইসলাম দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আব্দুল্লাহপুর নিবাসী রসূলপুর জামিআ ইসলামিয়া (মাদ্রাসা) ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশুনা করত।
‎মাদ্রাসায় পড়ুয়া এই শিশুটিকে অপহরণ এর পরে আসামীকে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দেওয়ার পরও শিশুটিকে হত্যা করা হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মকবুল ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার লাখিরচর এলাকার বাসিন্দা। এ ঘটনায় মকবুলের ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত। ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪–এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান গত বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।

‎অভিযোগে জানা যায়, বিগত ১০/০২/২০২৪ খ্রি. তারিখ বিকাল ০৫.৩০ টায় ভিকটিম মোঃ তাওহীদ ইসলাম মাদ্রাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে রাত অনুমান ০৮.৩০ টায় ক্লাস শেষে তার মামা মোঃ মহসিন এর মোবাইল সার্ভিসিং এর দোকানে যায় এবং সেখানে তার মামাকে না পেয়ে একাই বাড়ির পথে রওয়ানা হন। আসামী মোঃ মকবুল হোসেন তাকে অপহরণ পূর্বক হত্যা করে লাশ শাহাদত হোসেন এর সেফটিক ট্যাংকের ভিতর রেখে যায়। আসামী একটি বাটন মোবাইল ফোন এজাহারকারীর/ভিকটিমের মা মোসা: তাসলিমা আক্তার এর বাড়ির গেটে রেখে আসেন, এজাহারকারী নিজে ভিকটিমকে খুঁজতে থাকেন এবং তার আত্মীয়-স্বজনদের দিয়েও খুঁজতে থাকেন। খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে রাত অনুমান ০৯.২০ ঘটিকার সময় কারো অজান্তে ভিকটিমের বাসায় আসামীর রেখে যাওয়া একটি মোবাইলের নম্বরে আসামীর নম্বর থেকে ফোন করে আসামী ভিকটিমের মুক্তিপণ বাবদ ০৩ লক্ষ টাকা দাবী করেন। পুলিশকে ঘটনা জানালে মোঃ তাওহীদ ইসলামকে হত্যা করবেন বলে আসামী হুমকি দেন। পরের দিন সকাল অনুমান ১০.৩০ টায় মোঃ তাওহীদ ইসলাম এর মামা মোঃ মহসিন আসামীর কথামত ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে ঢাকা মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রীজের নিচে পীলারের গোড়ায় ৩ লক্ষ টাকা রেখে আসেন। কিন্তু আসামী টাকা নিয়েও তার প্রতিশ্রুতি অনুসারে মোঃ তাওহীদ ইসলামকে ফেরত দেয় নাই।

‎পরে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় হাজির হয়ে এজাহারকারী/মোঃ তাওহীদ ইসলামের মা কম্পিউটার কম্পোজকৃত এজাহার দায়ের করেন। ভিকটিমকে ফেরত না পেয়ে এজাহারকারী ও তার আত্মীয় স্বজনেরা এবং র‍্যাব ১০ এর সহায়তায় এবং র‍্যাব সদস্যরা তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে আসামী মোঃ মকবুল হোসেনকে ডিএমপি ঢাকা শ্যামপুর মডেল থানাধীন পোস্তাগোলা সাকিনস্থ আর্মি ক্যাম্পের পার্শ্বে ফায়ার সার্ভিসের বিপরীতে হোটেল দক্ষিণ বাংলা আবাসিক এর ৪র্থ তলার ৪০৮ নম্বর রুম থেকে গ্রেফতার করেন। তার কাছ থেকে ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকা এবং ২টি বাটন মোবাইল ফোন জব্দ করেন। অতঃপর আসামীর দেখানোমতে সাক্ষী শাহাদাত হোসেন এর সেফটিক ট্যাংক হতে ভিকটিম মোঃ তাওহীদ ইসলাম এর লাশ উদ্ধার করেন।

‎মামলা দায়ের ও তদন্ত : দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নিয়মিত মামলা এন্ট্রি করেন এবং এস আই জনাব এ কে এম সাইদুজ্জামান এর উপর তদন্তভার অর্পণ করেন। এস আই জনাব এ কে এম সাইদুজ্জামান মামলার তদন্তভার গ্রহণ করে সরেজমিনে ঘটনাস্থল পরিদর্শন পূর্বক ঘটনাস্থলের খসড়া মানচিত্র ও সূচীপত্র অংকন করেন এবং আসামীকে গ্রেফতার করে নিজ হেফাজতে নেন। পরে আদালতে আসামী স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট এর কাছে সি,আর,পি,সি এর ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্তে আসামী মোঃ মকবুল হোসেন এর বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ এর ৭/৮ তৎসহ দঃ বিঃ ৩০২/২০১ ধারার অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তিনি বিগত ৩১/০৭/২০২৪ খ্রি. তারিখ ৫১৫ নম্বর অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
‎মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মকবুল এর বিরুদ্ধে ১৮ জন স্বাক্ষীগণ স্বাক্ষ্য দেন।

‎মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিশুকে অপহরণ এর পরে হত্যা করায়, পরে রায়ে আসামীর ফাঁসির রায় হওয়ায় ভিকটিমের মায়ের সাথে কথা বললে তিনি জানান,
‎এই রায় ঘোষণার পর থেকে তিনি চাচ্ছেন এই রায় যেনো খুব শীঘ্রই কার্যকর হয় তাহলে তার মনে শান্তি আসবে। কারণ মা হিসেবে এখন আর কিছু চাওয়ার নেই শুধু সঠিক ন্যায় বিচার চাওয়া হিসেবে আসামীর ফাঁসি চাই।