০৭:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
তারেক আহামেদ বোখারী বান্দরবান প্রতিনিধি:

পেতিন্নাছড়ায় বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য কৃষিজমি ধ্বংস, সড়কের বেহাল দশা, প্রশাসনের নীরবতা

  • প্রকাশিত ০৮:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ৩০ বার দেখা হয়েছে

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পেতিন্নাছড়া এলাকা আজ ভয়াবহ পরিবেশ সংকটের মুখে।
বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
এর ফলে একদিকে কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

কৃষকদের মাথায় হাত স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেশিনের শব্দে তটস্থ হয়ে থাকে পেতিন্নাছড়া।
অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, জমির উর্বর মাটি ধুয়ে গিয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে তারা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান,
“যদি এভাবে বালু তোলা চলতে থাকে তবে আমাদের আর কৃষি জমি থাকবে না।

আমরা জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাব।”
রাস্তাঘাটে ভোগান্তি
এলাকাবাসী বলছে,

বালু বোঝাই ট্রাক ও ট্রলি প্রতিনিয়ত চলাচল করায় স্থানীয় সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

প্রশাসনের নীরবতা ও উৎকোচের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জার সাদেকুর রহমান একটি সেলো মেশিন জব্দ করেছিলেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, উৎকোচের বিনিময়ে পরবর্তীতে সেই মেশিন ফেরত দেওয়া হয়।

এর পর থেকেই বালু উত্তোলনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানকে বিষয়টি বারবার অবহিত করা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের দৌরাত্ম্যের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে।

পরিবেশ ও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলেছেন,
এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে এলাকায় ভাঙন, ভূমি ধস, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এছাড়া কৃষিজমি নষ্ট হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশ কর্মী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন,
“এখনই ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পেতিন্নাছড়া অঞ্চল কৃষি ও পরিবেশ উভয় দিক থেকেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এলাকাবাসীর দাবি
এলাকাবাসী একত্র হয়ে দাবি তুলেছেন—
অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে
জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন করতে হবে
সড়ক সংস্কার করে যাতায়াত সহজ করতে হবে
উপসংহার
পেতিন্নাছড়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন এখন আর কেবল পরিবেশ নয়, জনজীবন ও কৃষির জন্যও ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই।

Tag :
জনপ্রিয়

পেতিন্নাছড়ায় বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য কৃষিজমি ধ্বংস, সড়কের বেহাল দশা, প্রশাসনের নীরবতা

তারেক আহামেদ বোখারী বান্দরবান প্রতিনিধি:

পেতিন্নাছড়ায় বালু খেকোদের দৌরাত্ম্য কৃষিজমি ধ্বংস, সড়কের বেহাল দশা, প্রশাসনের নীরবতা

প্রকাশিত ০৮:০৪:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পেতিন্নাছড়া এলাকা আজ ভয়াবহ পরিবেশ সংকটের মুখে।
বছরের পর বছর ধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলছে একটি প্রভাবশালী চক্র।
এর ফলে একদিকে কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় জনজীবনে নেমে এসেছে দুর্ভোগ।

কৃষকদের মাথায় হাত স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত মেশিনের শব্দে তটস্থ হয়ে থাকে পেতিন্নাছড়া।
অতিরিক্ত বালু উত্তোলনের কারণে আবাদি জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেক কৃষক জানিয়েছেন, জমির উর্বর মাটি ধুয়ে গিয়ে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এর ফলে তারা চরম আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন।
কৃষক আমিনুল ইসলাম জানান,
“যদি এভাবে বালু তোলা চলতে থাকে তবে আমাদের আর কৃষি জমি থাকবে না।

আমরা জমি হারিয়ে উদ্বাস্তু হয়ে যাব।”
রাস্তাঘাটে ভোগান্তি
এলাকাবাসী বলছে,

বালু বোঝাই ট্রাক ও ট্রলি প্রতিনিয়ত চলাচল করায় স্থানীয় সড়কগুলো বেহাল অবস্থায় পরিণত হয়েছে। ভাঙাচোরা রাস্তায় সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

প্রশাসনের নীরবতা ও উৎকোচের অভিযোগ
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি ফাঁসিয়াখালী রেঞ্জার সাদেকুর রহমান একটি সেলো মেশিন জব্দ করেছিলেন।
তবে অভিযোগ উঠেছে, উৎকোচের বিনিময়ে পরবর্তীতে সেই মেশিন ফেরত দেওয়া হয়।

এর পর থেকেই বালু উত্তোলনকারীরা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর বান্দরবানকে বিষয়টি বারবার অবহিত করা হলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাদের দাবি, প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিনের দৌরাত্ম্যের কারণে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নীরব ভূমিকা পালন করছে।

পরিবেশ ও বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ
পরিবেশবাদীরা সতর্ক করে বলেছেন,
এভাবে বালু উত্তোলন চলতে থাকলে এলাকায় ভাঙন, ভূমি ধস, জীববৈচিত্র্য ধ্বংসসহ ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে পারে।
এছাড়া কৃষিজমি নষ্ট হয়ে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে।
পরিবেশ কর্মী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন,
“এখনই ব্যবস্থা না নিলে অচিরেই পেতিন্নাছড়া অঞ্চল কৃষি ও পরিবেশ উভয় দিক থেকেই ধ্বংস হয়ে যাবে।”
এলাকাবাসীর দাবি
এলাকাবাসী একত্র হয়ে দাবি তুলেছেন—
অবিলম্বে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে
জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন করতে হবে
সড়ক সংস্কার করে যাতায়াত সহজ করতে হবে
উপসংহার
পেতিন্নাছড়ায় অবৈধ বালু উত্তোলন এখন আর কেবল পরিবেশ নয়, জনজীবন ও কৃষির জন্যও ভয়াবহ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্থানীয়দের মতে, প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণের আর কোনো পথ নেই।