০৯:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ের আলো ছড়ানো মানবতার দূত গুণীজন ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের।

  • প্রকাশিত ০১:১৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫
  • ১২ বার দেখা হয়েছে


তারেক আহামেদ বোখারী, বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে উঠে এসেছে অসংখ্য প্রেরণার গল্প। তবে তার মধ্যেই উজ্জ্বল হয়ে আছে এক নাম—ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের। তিনি শুধু একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নন, তিনি যেন পাহাড়ি সমাজে শিক্ষা ও মানবতার প্রতীক, এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
শৈশবের অভাব, জীবনের নতুন লক্ষ্য
১৯৬৫ সালে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজার ত্রিশডেবা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন উঃ-নন্দমালা থের। খুমি নৃগোষ্ঠীর জুমচাষি পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মানুষটির শৈশব কেটেছে সীমাহীন দারিদ্র্য আর সংগ্রামের ভেতরে।
কিন্তু সেই কষ্টই যেন তাকে তৈরি করে দেয় নতুন স্বপ্ন দেখার শক্তি।
১৯৮৫ সালে সংসার জীবন ত্যাগ করে তিনি বেছে নেন বুদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন। তখন থেকেই শুরু হয় পাহাড়ি জনপদের জন্য এক আত্মনিবেদিত যাত্রা।
শিক্ষার অগ্রদূত
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও তিনি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন—শিক্ষাই পারে সমাজকে বদলে দিতে। তাই তিনি স্থির করেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষার আলো জ্বালাবেন।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জীনা মেজু অনাথ আশ্রম। এরপর একে একে গড়ে তোলেন—
জীনা মেজু উচ্চ বিদ্যালয়
জীনা মেজু টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট
জীনা মেজু সানজেট উপজাতি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
আলীকদম মেরিংচ সাঙ্গু মৈত্রী ম্রো আশ্রম
জীনা মেজু কল্যাণ ট্রাস্ট
এবং আরও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানে আজ পড়াশোনা করছে পাহাড়ি জনপদের শত শত শিশু-কিশোর। তারা নতুন স্বপ্ন দেখছে, তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
মানবতার আশ্রয়
স্থানীয়রা তাঁকে শুধুই সন্ন্যাসী হিসেবে দেখেন না, বরং একজন অভিভাবক মনে করেন।
এক স্থানীয় অভিভাবক জানান—
“অভিভাবকহীন এতিম, অসহায় শিশুদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের। তিনি না থাকলে আমাদের সন্তানরা শিক্ষার আলো দেখতে পারত না।”
পাহাড়ের গর্ব
বিলুপ্তির পথে থাকা খুমি সম্প্রদায়ের সন্তান উঃ-নন্দমালা থের আজ হয়ে উঠেছেন পাহাড়ি সমাজের আশার বাতিঘর। তিনি যেন অন্ধকারে জ্বলে ওঠা এক প্রদীপ, যিনি নিজের আলোয় আলোকিত করছেন পুরো জনপদ।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন—
“ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা শুধু একজন ভিক্ষু নন, তিনি পাহাড়ি সমাজের সত্যিকারের অগ্রদূত। তাঁর কাজ প্রমাণ করে দিয়েছে, একজন মানুষও বদলে দিতে পারে পুরো প্রজন্মের ভাগ্য।”
সমাপ্তি
পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি আজ হয়ে উঠেছেন গর্ব, প্রেরণা এবং মানবতার প্রতীক।
তিনি শুধু পাহাড়ের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্যই এক অনন্য আলোকবর্তিকা।
ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের—
একজন সন্ন্যাসী, একজন শিক্ষাগুরু, একজন মানবতার দূত।
এক জীবন্ত কিংবদন্তি।

Tag :
জনপ্রিয়

সাংবাদিক সংগঠন গুলির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন- সিআরএ

পাহাড়ের আলো ছড়ানো মানবতার দূত গুণীজন ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের।

প্রকাশিত ০১:১৩:৩২ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫


তারেক আহামেদ বোখারী, বান্দরবান প্রতিনিধি
বান্দরবানের সবুজ পাহাড়ের বুক চিরে উঠে এসেছে অসংখ্য প্রেরণার গল্প। তবে তার মধ্যেই উজ্জ্বল হয়ে আছে এক নাম—ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের। তিনি শুধু একজন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী নন, তিনি যেন পাহাড়ি সমাজে শিক্ষা ও মানবতার প্রতীক, এক জীবন্ত কিংবদন্তি।
শৈশবের অভাব, জীবনের নতুন লক্ষ্য
১৯৬৫ সালে বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের সাঙ্গু মৌজার ত্রিশডেবা পাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন উঃ-নন্দমালা থের। খুমি নৃগোষ্ঠীর জুমচাষি পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মানুষটির শৈশব কেটেছে সীমাহীন দারিদ্র্য আর সংগ্রামের ভেতরে।
কিন্তু সেই কষ্টই যেন তাকে তৈরি করে দেয় নতুন স্বপ্ন দেখার শক্তি।
১৯৮৫ সালে সংসার জীবন ত্যাগ করে তিনি বেছে নেন বুদ্ধ সন্ন্যাসীর জীবন। তখন থেকেই শুরু হয় পাহাড়ি জনপদের জন্য এক আত্মনিবেদিত যাত্রা।
শিক্ষার অগ্রদূত
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে না পারলেও তিনি খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন—শিক্ষাই পারে সমাজকে বদলে দিতে। তাই তিনি স্থির করেন পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর শিশু-কিশোরদের জন্য শিক্ষার আলো জ্বালাবেন।
১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠা করেন জীনা মেজু অনাথ আশ্রম। এরপর একে একে গড়ে তোলেন—
জীনা মেজু উচ্চ বিদ্যালয়
জীনা মেজু টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট
জীনা মেজু সানজেট উপজাতি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র
আলীকদম মেরিংচ সাঙ্গু মৈত্রী ম্রো আশ্রম
জীনা মেজু কল্যাণ ট্রাস্ট
এবং আরও অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
এসব প্রতিষ্ঠানে আজ পড়াশোনা করছে পাহাড়ি জনপদের শত শত শিশু-কিশোর। তারা নতুন স্বপ্ন দেখছে, তৈরি হচ্ছে নতুন প্রজন্ম।
মানবতার আশ্রয়
স্থানীয়রা তাঁকে শুধুই সন্ন্যাসী হিসেবে দেখেন না, বরং একজন অভিভাবক মনে করেন।
এক স্থানীয় অভিভাবক জানান—
“অভিভাবকহীন এতিম, অসহায় শিশুদের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের। তিনি না থাকলে আমাদের সন্তানরা শিক্ষার আলো দেখতে পারত না।”
পাহাড়ের গর্ব
বিলুপ্তির পথে থাকা খুমি সম্প্রদায়ের সন্তান উঃ-নন্দমালা থের আজ হয়ে উঠেছেন পাহাড়ি সমাজের আশার বাতিঘর। তিনি যেন অন্ধকারে জ্বলে ওঠা এক প্রদীপ, যিনি নিজের আলোয় আলোকিত করছেন পুরো জনপদ।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন—
“ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা শুধু একজন ভিক্ষু নন, তিনি পাহাড়ি সমাজের সত্যিকারের অগ্রদূত। তাঁর কাজ প্রমাণ করে দিয়েছে, একজন মানুষও বদলে দিতে পারে পুরো প্রজন্মের ভাগ্য।”
সমাপ্তি
পাহাড়ের প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি আজ হয়ে উঠেছেন গর্ব, প্রেরণা এবং মানবতার প্রতীক।
তিনি শুধু পাহাড়ের নয়, পুরো বাংলাদেশের জন্যই এক অনন্য আলোকবর্তিকা।
ভিক্ষু উঃ-নন্দমালা থের—
একজন সন্ন্যাসী, একজন শিক্ষাগুরু, একজন মানবতার দূত।
এক জীবন্ত কিংবদন্তি।