সোনার বাংলা পার্টি’র সভাপতি সৈয়দ হারুন-অর-রশীদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এইউজেড প্রিন্স এক যুক্ত বিবৃতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এই প্রথম ডাকসু নির্বাচনে ছাত্র – শিবির নামক ছাত্র সংগঠন, স্বাধীনতা বিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গ ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির সমর্থিত প্যানেল ডাকসুতে জয় – জয়কার! এই জয়লাভের জন্য মূলত দায়ী দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস সরকার।
প্রথমত দায়ী, আওয়ামী লীগ। এর প্রধান কারণ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এককভাবে ক্ষমতা দখলে রাখার জন্য অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি বা দলকে রাজনীতি করতে বাঁধা প্রদান করেছেন। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরই যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী, নেজামী ইসলামী,মুসলিম লীগ ও পিডিপি, এই ৪ টি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করেছিলো। তারপর জাসদের রাজনীতিতে বাধা, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যা। এটাই ছিল আওয়ামী লীগের রাজনীতির কবর রচনা করার প্রথম ধাপ।
দ্বিতীয় পর্ব বা ধাপ : স্বৈরাচার এরশাদের শাসন আমলে আপোষ করে নির্বাচন করা।
তৃতীয় পর্ব বা ধাপ : ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য জামাতের সঙ্গে জোট বেধে আন্দোলন গড়ে তোলে। এবং তত্বাবধায়ক সরকারের দাবীতে হাসিনার আওয়ামী লীগ জামাতকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন গড়ে তোলে।
চতুর্থ পর্ব বা ধাপ : চিরতরে ক্ষমতায় থাকার জন্য ভোটারবিহীন নির্বাচন করে দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে সিরিজ জয়ের নজিরবিহীন পরিকল্পনা। একদিকে রাজনীতি ও গণতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন আইনের নামে কালো আইন প্রণয়ন করে। অপরদিকে সকল রাজনৈতিক দলকে গলাটিপে মেরে ফেলার জন্য রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বাধা প্রদান করে , শুধু তাই নয় মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারে বাধা দিয়েছে। মানুষ হত্যা, ঘুম – খুন, চুরি ডাকাতি, লুটপাট, দুর্নীতি, টাকা পাচার, চাঁদাবাজী, দলবাজি ধর্ষণ এমন কোনো অপকর্ম নাই, আওয়ামী লীগ হাসিনা ক্ষমতায় থেকে না করেছে।
অপরদিকে হাসিনা চিরকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য ছাত্র লীগের রাজনীতি দ্বারা ছাত্র শিবিরের কর্মীদের জোর করে ছাত্র লীগের রাজনীতি করিয়েছে। এতে করে ছাত্র শিবির, ছাত্র লীগের রাজনীতির ভিতরে ঘাপটি মেরে ছাত্র শিবিরের রাজনীতি শক্তিশালী করেছে। এক পর্যায়ে যখন নিরাপদ সড়ক আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্র শিবির আরও শক্তি বৃদ্ধি করে। আবার যখন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন গড়ে উঠে, তখন ছাত্র শিবির সুযোগ বুঝে শেখ হাসিনাকে ছোবল মারে। উক্ত ছোবলেই হাসিনার পতন এবং মৃত্যু, অবশেষে মৃত লাশ হয়ে ভারতে পলায়ন। এই পতন ও পলায়ন হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে জগন্যতম ও ঘৃনিত।
৫ম পর্ব বা ধাপ : আবার অন্যভাবে বলা যায়, ফ্যাসিষ্ট হাসিনার কারণেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অপমানিত হতে হলো, হাসিনা নিজেই তার পিতা বঙ্গবন্ধুকে কবর থেকে উঠিয়ে শ্মশানে নিয়ে পোড়া দিয়েছে। এই কারণেই নুরু পাগলার মাজারে নুরাল পাগলাকে কবর থেকে লাশ উঠিয়ে তওহীদি জনতা লাশ পুড়া দিয়েছে।
আমাদের দলের অর্থাৎ সোনার বাংলা পার্টি ‘ র আদর্শিক নেতা হলেন যথাক্রমে শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাসিনার কারণেই বঙ্গবন্ধুর ছবি ও নাম নিতে পারি না। সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন এই ৩ জাতীয় নেতা ও জাতীয় বীর। উক্ত স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা একটি স্বাধীন ছাত্র সংগঠন থেকে সোনার বাংলা পার্টি নামে রাজনৈতিক দল গঠন করেছিলাম ‘৮০ ও ‘৯০ দশকের ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
৬ষ্ট পর্ব বা ধাপ : অপরপক্ষে, হাসিনার ভারতপ্রীতি, লাগামহীন ছাত্রলীগের কর্মকাণ্ড, রাজনীতিকে রাজতন্ত্র ও পরিবারতন্ত্রে পরিনত করা, বানিজ্যিক হিসেবে উপস্থিত করা, এই সকল কর্মকাণ্ড ই হাসিনার পতন হয়েছে। এছাড়াও হাসিনার দাম্ভিকতা ও হিংসাত্মক চরিত্রের কারণেই আজকের জামাত-শিবিরের উত্থান। জামাত শিবিরের শক্তি অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে একমাত্র হাসিনার কারণেই।
৭ম পর্ব বা ধাপ : ২০০৯ সালে হাসিনা ক্ষমতায় এসে যুদ্ধাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ না করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে তার মনের জ্বালা নিভাতে থাকে। শুধু মাত্র বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে দেয়। এতে করে ধর্ম ব্যবসায়ী রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যায় এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে তারা ট্রেনিং প্রাপ্ত হয়ে বাংলাদেশ ছাত্র শিবির আরও শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে।
দ্বিতীয়তঃ দায়ী বিএনপি, কারণঃ
১) জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসেই বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল ” জামায়াতে ইসলামী ” র রাজনীতি করার সুযোগ করে দেয়। এরশাদ স্বৈরাচার বন্দুকের নলে ক্ষমতায় এসেই ইসলামকে রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে ঘোষণা করে। এতে করে ধর্ম ব্যবসায়ি রাজনৈতিক দলগুলি শক্তি বৃদ্ধি করতে থাকে। স্বৈরশাসক এরশাদ প্রকারান্তরে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতিকে উন্মুক্ত ও জায়েজ করে দেয়। নির্বাচনে অংশ গ্রহণের মাধ্যমে এরশাদ ও খালেদা জিয়ার কারণেই জামায়াতে ইসলামী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে।২০০১ সালে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীর ২ জনকে মন্ত্রীত্ব দিয়ে জাতীয় পতাকার অবমাননা করে। সেই সময় থেকেই রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী সাংগঠনিকভাবে অনেক বেশি শক্তি অর্জন করতে থাকে।
কারণ : ২) ফ্যাসিষ্ট হাসিনার পতনের পর বিএনপি পাগল হয়ে আওয়ামী লীগের দখলকৃত জায়গা বিএনপি দখল করতে থাকে। কিন্তু জামাত, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সহযোগিতা নিয়ে রাষ্ট্রের বিচার বিভাগ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তরে জায়গা করে নেয়। অন্যদিকে বিএনপির মার্কেট দখল, মানুষের জায়গা দখল, ডাষ্টবিন থেকে শুরু করে রাস্তা -ঘাট ও ফুটপাত দখল করে নেয়। বিএনপির এই কর্মকাণ্ড জনগণের নজরে আসে এবং ক্রমে ক্রমে বিএনপির জনপ্রিয়তা কমতে থাকে।
অপরদিকে জামাত -শিবির নিরবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রশাসনের সকল স্তর দখল করে নেয়। এইভাবেই জামাত – শিবিরের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে।
তৃতীয়ত দায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার : অন্যভাবে বললে দেখা যায়, হাসিনার পতনের পর, সেনাবাহিনীর প্রধান ওয়াকারুজ্জামান প্রথম সেনানিবাসে আহ্বান করে জামায়াতে ইসলামীর আমীরকে। এবং সেনাবাহিনীর প্রধান – এর গাড়িতে উঠিয়ে বঙ্গবভনে যান জামায়াতের আমীরকে নিয়ে। এতে করে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি আরও শক্তি বৃদ্ধি করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠে জামায়াতে ইসলামী। অন্যদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান ড. মোহাম্মদ ইউনুস জামায়াতের ইসলামকে অনেক বেশি গুরুত্ব দিতে থাকে। এইভাবেই রাষ্ট্রের সকল কাজে জামায়াতে ইসলামীকে অংশ গ্রহণ করাতে থাকে। প্রশাসনের সকল জায়গায় জামায়াতের নেতা- কর্মী পুনর্বাসন হতে থাকে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে আশ্রয় – প্রশ্রয় দিয়েই সহযোগিতা করে, ফলে জামাত তাদের রাজনৈতিক শক্তির সাহস দেখাতে থাকে। ফলে ড. মোহাম্মদ ইউনুস সরকার জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি পূনর্বাসনের ব্যবস্হা করে দেয়। এর জন্ম দায়ী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও ড. মোহাম্মদ ইউনুস। ড. মোহাম্মদ ইউনুস গংরা ১৯৮০ ‘র দশক থেকে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করে ২০২৪ সালে সফল হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় জুলাই গণঅভ্যুত্থান।
যুক্ত বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় বলেন, নোবেল জয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুস রাজনীতির উন্নতির জায়গায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে তাঁর ক্ষমতাকালে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। জনগণের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। এবং শুধু তাই নয় বিদেশি আগ্রাসনের সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই ড. ইউনুস সরকার বিদেশে টাকা পাচার রোধে কোনো ব্যবস্হা নিতে পারে নাই বরং অর্থ পাচার আরও বেশি হয়েছে। সর্বক্ষেত্রে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বরং পক্ষপাতিত্ব করছেন।
নেতৃদ্বয় আরও বলেন, ড. মোহাম্মদ ইউনুস সরকার, বাংলাদেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন করার যোগ্যতা যোগ্যতাও রাখে না। সর্বশেষ ফ্যাসষ্ট হাসিনার একটি উক্তি দিয়ে শেষ করতে চাই — আমি চলে গেলে বা আওয়ামী লীগ না থাকলে ” জামাত – শিবিরের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা পাবে “। দেখা যায় ফ্যাসিষ্ট হাসিনার কথা সত্যি হিসেবে পর্যবসিত হলো।












