বিশেষ প্রতিনিধি : রাজধানীর মহাখালীতে অবস্থিত প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে চরম অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান পরিচালক মো. মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে নানামুখী অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে সংস্থার অভ্যন্তরে অসন্তোষ বিরাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের একটি অংশ অভিযোগ করেছেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই পরিচালক মোস্তফা কামাল প্রশাসনিক স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যত একক কর্তৃত্বে চালাচ্ছেন।
একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মোট ৯টি গুরুতর অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে, যার সারমর্ম নিচে তুলে ধরা হলো:
১. টেন্ডার প্রক্রিয়ায় স্বজনপ্রীতি ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা অভিযোগ অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৭টি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫৪টি টেন্ডার প্যাকেজ ক্ষুদ্র আকারে বিভক্ত করে নিজের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ পাইয়ে দিয়েছেন। এতে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নষ্ট হয়েছে এবং নিরপেক্ষ মূল্যায়ন ব্যাহত হয়েছে। ২. দরপত্রে শ্রেণি বিভ্রান্তি ও পক্ষপাতদুষ্ট পদ্ধতি একই দরপত্রে বিভিন্ন শ্রেণির সামগ্রী যেমন: ইকুইপমেন্ট, ইলেকট্রিক আইটেম, রং, ব্লক, টাইলস ইত্যাদি একত্র করে আহ্বান করা হয়। এতে করে যোগ্য ঠিকাদারদের অংশগ্রহণ কঠিন হয়ে পড়ে এবং নির্দিষ্ট ঠিকাদারদের সুবিধা হয়। ৩. বাজেট কোডের অপব্যবহার ও অর্থ জালিয়াতি‘ঔষধ ও প্রতিষেধক’ কোডের অধীনে অর্থ বরাদ্দ থাকার পরও ওই কোড ব্যবহার করে ইকুইপমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী কেনা হয়েছে, যা সরকারি বিধিবিধানের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। ২০২৩-২৪ ও ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যথাক্রমে প্রায় ১০ ও ১৩ কোটি টাকার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে। ৪. অনুমোদনহীন ও অতিমূল্যে পণ্য ক্রয় সরবরাহকারী নির্বাচন, বাজার দর যাচাই বা নিরীক্ষা ছাড়াই অতিমূল্যে বা নিম্নমানের পণ্য ক্রয় করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ক্রয়ের জন্য নির্ধারিত অনুমোদন বা কমিটির সম্মতি নেওয়া হয়নি। ৫. দ্বৈত ভূমিকা পালনে বিধি লঙ্ঘন সরকারি ক্রয় বিধিমালার সুস্পষ্ট নিয়ম উপেক্ষা করে পরিচালক একাই প্রস্তাব প্রস্তুত, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করেছেন—যা স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার পরিপন্থী। ৬. অডিট প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অডিট চলাকালীন হিসাব কর্মকর্তাদের প্রভাবিত করে সঠিক তথ্য গোপন রাখা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে প্রকৃত অনিয়ম আড়ালে থেকে যায় এবং জবাবদিহিতার অভাব দেখা দেয়। ৭. ভ্যাকসিন উৎপাদন বন্ধ করে বেসরকারি উৎসে ঝোঁক অভিযোগ রয়েছে, পরিচালক অর্থনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে র্যাবিস ভ্যাকসিন উৎপাদন সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন এবং এফএমডি ভ্যাকসিন উৎপাদন ১০০% থেকে ২৫%-এ নামিয়ে আনেন। ফলে বেসরকারি উৎস থেকে পণ্য কিনে ব্যক্তিগত লাভের পথ সুগম হয়। ৮. বাহ্যিক চাকচিক্যের আড়ালে একনায়কতন্ত্রের অভিযোগ বিভিন্ন সভা-সেমিনারে অংশগ্রহণ ও সদাচরণ দেখালেও অভ্যন্তরীণভাবে প্রতিষ্ঠানটি একক কর্তৃত্বে চালান পরিচালক। তার বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন, স্বজনপ্রীতি এবং ভিন্নমত দমনের অভিযোগ রয়েছে। ৯. রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা অভিযোগ রয়েছে, তিনি ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ পরিচয়ের সুবিধা নিয়ে পদায়ন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করেন। এতে প্রশাসনিক ভারসাম্য ভেঙে পড়ে এবং কেউ তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পান না।
প্রতিষ্ঠানজুড়ে চরম উদ্বেগ, দাবি নিরপেক্ষ তদন্তের:
প্রতিষ্ঠানের বহু কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এসব অনিয়ম বন্ধে একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা প্রয়োজন। তাদের মতে, পরিচালক একদিন অবসরে চলে যাবেন, কিন্তু তার রেখে যাওয়া অনিয়ম ও ব্যর্থতার ধাক্কা ভবিষ্যতে পুরো প্রতিষ্ঠানকে হুমকির মুখে ফেলবে। পরিচালক মো. মোস্তফা কামালের মন্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি। অফিসে গিয়েও তাকে কর্মস্থলে পাওয়া যায়নি।
শেষ কথা:
এতসব অভিযোগের সত্যতা নিরূপণে উচ্চ পর্যায়ের হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি। জনস্বার্থ ও জাতীয় প্রাণিসম্পদ খাতের সুরক্ষায় বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা জরুরি।
এব্যাপারে তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন এর কোন ভিত্তি নেই।