১১:২৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এম এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :

বাংলাদেশের সহিংসতা, গুম, দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবন বিপর্যস্ত — রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতায় প্রশ্নের মুখে সরকার

  • প্রকাশিত ০৫:০২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫
  • ৮৫ বার দেখা হয়েছে

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চিত্র ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতা, গুম-হত্যা, দখলদারিত্ব ও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এখন স্পষ্ট এবং তা সরকারের জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা গত এক বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, জুলাই ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ সময়কালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মিছিল-মিটিং ও দলীয় কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৩২ জন। আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ। এসব ঘটনার অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং বিরোধী দলীয় কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা এখন শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারীও।গুম একটি ভয়াবহ ও লজ্জাজনক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে গুম হয়েছেন কমপক্ষে ২৯ জন, যাদের অনেকের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং পরিবারের সদস্যরা বলছেন অনেক ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হয়েছে লোকজনকে, কিন্তু প্রশাসন দায় নিচ্ছে না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি গুমকে যেন একটি “রাজনৈতিক অস্ত্রে” পরিণত করেছে।জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এমন পর্যায়ে, যেখানে রাজধানীর মতো এলাকাতেও দিনদুপুরে খুন হচ্ছে মানুষ। গত ১২ জুলাই ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদুল হাসান সজীব নামে এক তরুণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ঘটনাটি ঘটে, অথচ হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই মামলায়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ।ভূমি দখল, জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি এখন দেশের গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র বিস্তৃত। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় দখলবাজদের কারণে সাধারণ মানুষ নিজস্ব জমিতে বসবাস করতেও ভয় পাচ্ছে। অভিযোগ করেও সঠিক বিচার মিলছে না। প্রশাসনের একাংশ এসব দখলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, ঘুষ ও দুর্নীতি দেশের প্রতিটি সেবা খাতে ছড়িয়ে পড়েছে। টিআইবি-এর ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পুলিশ, ভূমি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাসপোর্ট অফিস ও আদালত সব জায়গায় ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, হাসপাতালে চিকিৎসা, স্কুলে ভর্তি এমনকি মামলার অগ্রগতি পর্যন্ত সব কিছুতেই ঘুষ দিতে হচ্ছে। ফলে গরিব ও সাধারণ মানুষের বঞ্চনা ক্রমেই বাড়ছে।এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলে বাংলাদেশকে একটি ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত পরিবেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিদিনই লাশ পড়ছে রাজপথে, প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে কারো সন্তান, প্রতিদিনই দুর্নীতি গ্রাস করছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অথচ সরকার বলছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন জোরালো যার দায় কেউ এড়াতে পারবে না।

Tag :
জনপ্রিয়

মোছাফ্ফাহ যুবদলের উদ্যোগে কাতার ও দুবাই ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ চৌধুরীকে সংবর্ধনা

এম এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :

বাংলাদেশের সহিংসতা, গুম, দুর্নীতি ও নিরাপত্তাহীনতায় জনজীবন বিপর্যস্ত — রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতায় প্রশ্নের মুখে সরকার

প্রকাশিত ০৫:০২:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক চিত্র ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত সহিংসতা, গুম-হত্যা, দখলদারিত্ব ও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ মানুষ আজ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, আর রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা এখন স্পষ্ট এবং তা সরকারের জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
রাজনৈতিক সহিংসতা গত এক বছরে ব্যাপক হারে বেড়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর তথ্য মতে, জুলাই ২০২৪ থেকে জুলাই ২০২৫ সময়কালে দেশজুড়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব, মিছিল-মিটিং ও দলীয় কোন্দলে প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৩২ জন। আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ। এসব ঘটনার অধিকাংশই সংঘটিত হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এবং বিরোধী দলীয় কর্মীদের ওপর দমন-পীড়নের অংশ হিসেবে। সাধারণ মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে, কারণ রাজনৈতিক সহিংসতা এখন শুধু দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই এর শিকার হচ্ছে সাধারণ পথচারীও।গুম একটি ভয়াবহ ও লজ্জাজনক বাস্তবতায় পরিণত হয়েছে। ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে গুম হয়েছেন কমপক্ষে ২৯ জন, যাদের অনেকের এখনো কোনো খোঁজ মেলেনি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এবং পরিবারের সদস্যরা বলছেন অনেক ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ব্যবহার করে তুলে নেওয়া হয়েছে লোকজনকে, কিন্তু প্রশাসন দায় নিচ্ছে না। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি গুমকে যেন একটি “রাজনৈতিক অস্ত্রে” পরিণত করেছে।জননিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এমন পর্যায়ে, যেখানে রাজধানীর মতো এলাকাতেও দিনদুপুরে খুন হচ্ছে মানুষ। গত ১২ জুলাই ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদুল হাসান সজীব নামে এক তরুণ। প্রত্যক্ষদর্শীদের সামনে ঘটনাটি ঘটে, অথচ হত্যাকারীরা নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়। এখন পর্যন্ত কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই মামলায়। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণ করে, সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ।ভূমি দখল, জোরপূর্বক উচ্ছেদ ও চাঁদাবাজি এখন দেশের গ্রাম থেকে শহর সর্বত্র বিস্তৃত। প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতা ও স্থানীয় দখলবাজদের কারণে সাধারণ মানুষ নিজস্ব জমিতে বসবাস করতেও ভয় পাচ্ছে। অভিযোগ করেও সঠিক বিচার মিলছে না। প্রশাসনের একাংশ এসব দখলের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে, ঘুষ ও দুর্নীতি দেশের প্রতিটি সেবা খাতে ছড়িয়ে পড়েছে। টিআইবি-এর ২০২৫ সালের রিপোর্ট অনুযায়ী, পুলিশ, ভূমি অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পাসপোর্ট অফিস ও আদালত সব জায়গায় ঘুষ ছাড়া সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগ, হাসপাতালে চিকিৎসা, স্কুলে ভর্তি এমনকি মামলার অগ্রগতি পর্যন্ত সব কিছুতেই ঘুষ দিতে হচ্ছে। ফলে গরিব ও সাধারণ মানুষের বঞ্চনা ক্রমেই বাড়ছে।এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি মিলে বাংলাদেশকে একটি ভয়াবহ নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত পরিবেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্রতিদিনই লাশ পড়ছে রাজপথে, প্রতিদিনই হারিয়ে যাচ্ছে কারো সন্তান, প্রতিদিনই দুর্নীতি গ্রাস করছে রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে অথচ সরকার বলছে, সবকিছু নিয়ন্ত্রণে।
বাংলাদেশের নাগরিকদের সবচেয়ে মৌলিক চাহিদা জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা, ন্যায়বিচার এবং সুশাসন এখন প্রশ্নবিদ্ধ। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে প্রয়োজন জোরালো যার দায় কেউ এড়াতে পারবে না।