এম.এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা : অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডা. মুহাম্মদ ইউনুসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার জাতীয় বাজেট চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে। এটি স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের ৫৪তম বাজেট, যা আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। দেশের চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবারের বাজেটকে “সংস্কারমুখী ও জনকল্যাণভিত্তিক” হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বাজেটে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে সামাজিক নিরাপত্তা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি, অবকাঠামো উন্নয়ন ও প্রযুক্তি খাতে। সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এবারের বাজেটের লক্ষ্য শুধু খাতভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ নয়, বরং প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে জনগণের প্রতি জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তোলা।বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৩.৬২ শতাংশের সমান। এ ঘাটতি মেটাতে দেশীয় উৎস থেকে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা এবং বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান হিসেবে আরও ১ লাখ ১ হাজার কোটি টাকা সংগ্রহের পরিকল্পনা রয়েছে। উন্নয়ন ব্যয়ের অংশ হিসেবে অবকাঠামো খাতে ১ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা, শিক্ষা ও মানবসম্পদ উন্নয়নে ৯৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, স্বাস্থ্য খাতে ৫৮ হাজার কোটি টাকা এবং কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৪৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই বাজেটের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের প্রতিশ্রুত সংস্কার প্রক্রিয়াকে গতিশীল ও বাস্তবসম্মত রূপ দিতে চায়।প্রধান উপদেষ্টা ডা. ইউনুস বৈঠকে বলেন, দেশের চলমান নৈরাজ্য, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে একটি স্থিতিশীল গণতান্ত্রিক পরিবেশ তৈরি করাই এই বাজেটের অন্যতম উদ্দেশ্য। তিনি আরও জানান, এই বাজেটের প্রতিটি টাকা কিভাবে ব্যয় হবে, কীভাবে আয় হবে, কোন খাতে কী ধরনের উন্নয়ন হবে—তা জনসাধারণের সামনে স্বচ্ছভাবে প্রকাশ করা হবে।
অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে আয়-ব্যয়, ঋণ ও অবশিষ্ট তহবিলের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে, যাতে জনগণ সরাসরি বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি সম্পর্কে অবগত থাকতে পারে। বিশেষ করে ৬৪টি জেলায় যে সকল উন্নয়ন প্রকল্প বাজেটের আওতায় বাস্তবায়িত হবে, সেগুলোর অগ্রগতি অনলাইনে প্রকাশযোগ্য একটি পোর্টালের মাধ্যমে জনসাধারণ দেখতে পারবে বলে জানানো হয়।গত বছরের ৫ আগস্ট ২০২৪-এ বিপ্লবী ছাত্র আন্দোলনের পর ডা. ইউনুস সর্বদলীয় ঐকমত্যে দেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর থেকে অন্তর্বর্তী সরকার ‘সংস্কার করে সুষ্ঠু নির্বাচন’ দেওয়ার ঘোষণা দেয় এবং সেই উদ্দেশ্যেই এই বাজেটকে গণমুখী রূপে তৈরি করা হয়েছে। দেশের জনগণ যুগের পর যুগ বাজেট ঘোষণা শুনে এলেও বাস্তবায়ন ও ব্যয়ের বিষয়ে খুব কমই জানতে পেরেছে। এবার সেই ধারা ভেঙে জনগণকে বাজেটের প্রতিটি খুঁটিনাটি জানাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকার। একে দেশের অর্থনৈতিক ইতিহাসে একটি “রূপান্তরমূলক ও দায়িত্বশীল বাজেট” হিসেবে ধরা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের গণতান্ত্রিক পথচলায় একটি নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।