১০:২৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরনীয়

  • প্রকাশিত ০৪:২৯:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫
  • ৩৪ বার দেখা হয়েছে

রাজু আলীম

আগস্ট ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনী সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার। ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন। শিল্পাঞ্চলে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা। কুষ্টিয়া থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদ গ্রেফতার।
তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি গ্রেফতার। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান।
পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দেশকে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে ভুমিকা রেখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ের সেনাবাহিনীর এই অভিযানগুলো তার ছোট একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।
৫আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্ব দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান, সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জাতির কল্যাণে অবদান এই সংকটময় সময়ে দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আশা ও আস্থা জাগিয়েছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই জেনারেল জামান দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সংহতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন। ২০২৪ সালের অগাস্টের পর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা। তার নির্দেশনায় সেনাবাহিনী সবসময়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় কাজ করেছে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ ও পেশাদার’ ভূমিকা পালন করেছে।
২৩ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ অবস্থান। তিনি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তা করে রক্তপাতহীন একটি পরিবর্তনের পথ সুগম করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হন, যা দেশের চরম অস্থিরতা নিরসনে অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
জেনারেল জামানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর সচেতনতা নিয়ে প্রান্তিক জনগণের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। “আমাদের কাজ শুধু সীমান্ত রক্ষা করা নয়, দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন নিরাপদে জীবন কাটাতে পারে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য” — ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে এক আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি তার নেতৃত্বের নীতিতে পরিস্ফুটিত হয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছেন এবং সাংবিধানিক নীতিগুলির প্রতি অবিচল থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। সম্প্রতি, ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেছেন, যা জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসনীয়। একাধিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ওয়াকার উজ জামানের নির্দেশনায় গ্রামগঞ্জে বেআইনি সহিংসতা কমাতে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মব জাস্টিস বন্ধ করার মাধ্যমে আমরা সামাজিক অবিচারের চক্র ভাঙতে পেরেছি, যা জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে এনেছে। এটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়েছে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে জেনারেল জামানের মতামত ছিল স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, “দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেনাবাহিনী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে না, বরং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।” এই অবস্থান দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তার এমন প্রজ্ঞাময় ও সংবেদনশীল নেতৃত্ব রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবদান অতুলনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গিয়েছিল। সেখানে সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কার্যকর অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড দমন করতে সক্ষম হয়েছে। এই অঞ্চলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে পার্বত্য এলাকায় একটি বড় মাপের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়। ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিচালিত ‘অপারেশন শান্তি’ নামে এক অভিযানে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম যথাযথ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এই অভিযানের সময় জেনারেল জামান তার সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র অস্ত্র গ্রহণ নয়, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও। আমরা মানুষের হৃদয় জয় করেই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করব।” এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়িয়েছে।
জেনারেল জামানের নেতৃত্ব কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বস্ত ও পেশাদার হিসেবে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব এবং মানবিকতা দিয়ে বিশ্বের নানা সংকটপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছে।” এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের কূটনীতিক ও সামরিক কৌশলকে শক্তিশালী করেছে।
অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ জেনারেল জামানের নেতৃত্বে আরও দৃঢ় হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে সেনাবাহিনী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে নেই, দেশের উন্নয়নে আমাদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন উন্নয়নের সুফল পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।” এই নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে।
বিগত কয়েক বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হলেও সেনাবাহিনী জেনারেল জামানের নেতৃত্বে নানা অভিযানে সফল হয়েছে। মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান, সন্ত্রাস দমন এবং সাধারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজর রেখে তারা দেশকে অপরাধ প্রবাহ থেকে রক্ষা করছে।
জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য এক নতুন আশা এবং নিরাপত্তার প্রতীক। তিনি যে দৃঢ় নীতি ও মানবিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করছেন, তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমিয়ে এনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আজকের বাংলাদেশের এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে।
অতএব, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরবর্তী সময়ে তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং জাতির ঐক্যবদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী শুধু দেশের সীমান্ত রক্ষা করছে না, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই নেতৃত্বের প্রতি ভরসা রেখে আগামী দিনে শান্তি ও উন্নয়নের প্রত্যাশায় আছে।

Tag :
জনপ্রিয়

বিরামপুর গ্রামে কৃতি সন্তান ইটালি প্রবাসী দিদার মিয়ার আম্মাজান ইন্তেকাল করেন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেনাবাহিনীর ভূমিকা অবিস্মরনীয়

প্রকাশিত ০৪:২৯:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫

রাজু আলীম

আগস্ট ২০২৪ থেকে এপ্রিল ২০২৫ পর্যন্ত সেনাবাহিনী ও যৌথ বাহিনী সারাদেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার। ৬২টি জেলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন। শিল্পাঞ্চলে শান্তি ও শৃঙ্খলা রক্ষা। কুষ্টিয়া থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মোল্লা মাসুদ ওরফে আবু রাসেল মাসুদ গ্রেফতার।
তালিকাভুক্ত মাদক কারবারি গ্রেফতার। চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় অভিযান।
পাঁচ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের আইন শৃঙ্খলা ফিরিয়ে দেশকে একটি স্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে যে ভুমিকা রেখেছেন, সাম্প্রতিক সময়ের সেনাবাহিনীর এই অভিযানগুলো তার ছোট একটি খণ্ডচিত্র মাত্র।
৫আগষ্ট পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বিশেষত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের পর থেকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্ব দেশের সামগ্রিক স্থিতিশীলতা এবং নিরাপত্তা রক্ষায় এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তাঁর দৃঢ় অবস্থান, সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং জাতির কল্যাণে অবদান এই সংকটময় সময়ে দেশের জনগণের মধ্যে নতুন আশা ও আস্থা জাগিয়েছে।
সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই জেনারেল জামান দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং রাজনৈতিক সংহতি রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালন করছেন। ২০২৪ সালের অগাস্টের পর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তার নেতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো বিভিন্ন রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা। তার নির্দেশনায় সেনাবাহিনী সবসময়ই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতায় কাজ করেছে এবং রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার বিরুদ্ধে ‘নিরপেক্ষ ও পেশাদার’ ভূমিকা পালন করেছে।
২৩ জুন ২০২৪ তারিখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৮তম সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করা সেনা প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের নেতৃত্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ২০২৪ সালের ৫ই আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে তার দূরদর্শী ও বিচক্ষণ অবস্থান। তিনি শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরে সহায়তা করে রক্তপাতহীন একটি পরিবর্তনের পথ সুগম করেন এবং অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভূত হন, যা দেশের চরম অস্থিরতা নিরসনে অত্যন্ত সহায়ক ছিল।
জেনারেল জামানের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতি গভীর সচেতনতা নিয়ে প্রান্তিক জনগণের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন। “আমাদের কাজ শুধু সীমান্ত রক্ষা করা নয়, দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন নিরাপদে জীবন কাটাতে পারে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য” — ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে এক আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন। এই দৃষ্টিভঙ্গি তার নেতৃত্বের নীতিতে পরিস্ফুটিত হয়েছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও স্থিতিশীলতায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে সেনাপ্রধান হিসেবে তিনি সেনাবাহিনীর নিরপেক্ষতার উপর জোর দিয়েছেন এবং সাংবিধানিক নীতিগুলির প্রতি অবিচল থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পক্ষে মত দিয়ে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করার আহ্বান জানান তিনি। সম্প্রতি, ‘মব ভায়োলেন্স’ বা উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে কঠোর বার্তা দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর দৃঢ় সংকল্প প্রকাশ করেছেন, যা জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করছে। মব ভায়োলেন্সের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম বন্ধ করার ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা প্রশংসনীয়। একাধিক ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী ওয়াকার উজ জামানের নির্দেশনায় গ্রামগঞ্জে বেআইনি সহিংসতা কমাতে ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে। সেনাবাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে জানান, “মব জাস্টিস বন্ধ করার মাধ্যমে আমরা সামাজিক অবিচারের চক্র ভাঙতে পেরেছি, যা জনগণের বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে এনেছে। এটি দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ বাড়িয়েছে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে জেনারেল জামানের মতামত ছিল স্পষ্ট ও দায়িত্বশীল। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেছেন, “দেশের স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের ভিত্তি হলো সুষ্ঠু, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সেনাবাহিনী নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করবে না, বরং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করবে।” এই অবস্থান দেশের রাজনৈতিক দলগুলো এবং সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে তার এমন প্রজ্ঞাময় ও সংবেদনশীল নেতৃত্ব রাজনৈতিক উত্তেজনা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
অন্যদিকে, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং সীমান্ত এলাকায় নিরাপত্তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর অবদান অতুলনীয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর কার্যক্রম সাম্প্রতিক সময়ে বেড়ে গিয়েছিল। সেখানে সেনাবাহিনী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা এবং কার্যকর অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর কর্মকাণ্ড দমন করতে সক্ষম হয়েছে। এই অঞ্চলে সাধারণ মানুষ দীর্ঘদিন ধরে সশস্ত্র বিদ্রোহের কারণে ভীতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছিল। সেনাবাহিনীর কার্যক্রম তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সাহায্য করেছে। ২০২৫ সালের এপ্রিলে পার্বত্য এলাকায় একটি বড় মাপের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান পরিচালিত হয়, যা সন্ত্রাসী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত কার্যকর প্রমাণিত হয়। ২০২৫ সালের এপ্রিল-মে মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামে পরিচালিত ‘অপারেশন শান্তি’ নামে এক অভিযানে সেনাবাহিনী সন্ত্রাসবাদ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীর কার্যক্রম যথাযথ নিয়ন্ত্রণে এনেছে। এই অভিযানের সময় জেনারেল জামান তার সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, “আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র অস্ত্র গ্রহণ নয়, জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও। আমরা মানুষের হৃদয় জয় করেই স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করব।” এই মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থা বাড়িয়েছে।
জেনারেল জামানের নেতৃত্ব কেবল দেশের অভ্যন্তরীণ সীমাবদ্ধতায় সীমাবদ্ধ থাকেনি, তিনি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ বিশ্বস্ত ও পেশাদার হিসেবে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। ২০২৫ সালের মার্চ মাসে জাতিসংঘের একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে তার দেওয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী সদস্যরা তাদের পেশাদারিত্ব এবং মানবিকতা দিয়ে বিশ্বের নানা সংকটপূর্ণ এলাকায় শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনছে।” এই কৃতিত্ব বাংলাদেশের কূটনীতিক ও সামরিক কৌশলকে শক্তিশালী করেছে।
অর্থনৈতিক এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণ জেনারেল জামানের নেতৃত্বে আরও দৃঢ় হয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পের নেতৃত্ব দিয়ে সেনাবাহিনী দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা শুধু নিরাপত্তার দায়িত্বে নেই, দেশের উন্নয়নে আমাদের অবদান অনস্বীকার্য। দেশের প্রতিটি নাগরিক যেন উন্নয়নের সুফল পায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।” এই নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেনাবাহিনী দেশের অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখছে।
বিগত কয়েক বছরে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি জটিল হলেও সেনাবাহিনী জেনারেল জামানের নেতৃত্বে নানা অভিযানে সফল হয়েছে। মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযান, সন্ত্রাস দমন এবং সাধারণ অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। সীমান্ত এলাকায় বিশেষ নজর রেখে তারা দেশকে অপরাধ প্রবাহ থেকে রক্ষা করছে।
জেনারেল ওয়াকার উজ জামানের নেতৃত্ব বাংলাদেশের জন্য এক নতুন আশা এবং নিরাপত্তার প্রতীক। তিনি যে দৃঢ় নীতি ও মানবিক নেতৃত্ব প্রদর্শন করছেন, তা দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা কমিয়ে এনে সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা আজকের বাংলাদেশের এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে।
অতএব, ৫ আগস্ট ২০২৪-এর পরবর্তী সময়ে তার নেতৃত্ব বাংলাদেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা, নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠা এবং জাতির ঐক্যবদ্ধ ভবিষ্যত নির্মাণে একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত। তার নেতৃত্বে সেনাবাহিনী শুধু দেশের সীমান্ত রক্ষা করছে না, বরং দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি ও সমৃদ্ধি রক্ষায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের মানুষ আজ এই নেতৃত্বের প্রতি ভরসা রেখে আগামী দিনে শান্তি ও উন্নয়নের প্রত্যাশায় আছে।