০২:২০ অপরাহ্ন, সোমবার, ০৫ মে ২০২৫, ২২ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন জোবাইদা রহমান, সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে

  • প্রকাশিত ০৪:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫
  • ৩ বার দেখা হয়েছে

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : ডা. জোবাইদা রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়েছিলেন জোবাইদা রহমান। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি তার। দীর্ঘ বছর স্বামীর সঙ্গে পরবাসেই থাকতে হয়েছে তাকে। তবে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে শাশুড়ি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। কয়েকটি শিরোনাম দিন

জানা গেছে, দেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠবেন জোবাইদা রহমান। ইতোমধ্যে বাসার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন সাংবাদিকদের জানান, জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির চারপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকবেন সিএসএফ সদস্যরা, সঙ্গে থাকবেন পুলিশ সদস্যরাও। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে যেন এলাকাবাসীর কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তার কথায়, নিরাপত্তার নামে মানুষকে বিরক্ত করা যাবে না এটা স্পষ্ট নির্দেশ।

জোবাইদা রহমানের যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য পৃথক যানবাহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার গত ৩০ মে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়ে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সেই চিঠিতে গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় আর্চওয়ে ও পুলিশ পাহারার দাবি জানানো হয়। এর পরপরই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা মাহবুব ভবন পরিদর্শন করে নিরাপত্তাব্যবস্থার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেন।

এখন ওই ভবনে বসবাস করছেন জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, বড় বোন শাহীনা জামান ও তার পরিবার। জানা গেছে, সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

তারেক রহমানের আগে জোবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে অনেকের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। এটি কি নিছক শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গী হওয়া? নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর পাশে থাকা? তবে বহুবছর ধরে তার বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার যে গুঞ্জণ ছিল, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে জোবাইদা রহমানের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতি আসবেন কি না তা আমার জানা নেই। তিনি যদি রাজনীতি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানাবো।

যদি ডা. জোবাইদা রহমান সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন একটি সমীকরণ সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি দীর্ঘদিন একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন এবং রাজনীতির নানা স্তরে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ফলে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য খুব একটা চ্যালেঞ্জ হবে না।

তারা বলছেন, ডা. জোবাইদা রহমানের সক্রিয় রাজনীতিতে আসা বিএনপির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন ধরে দলটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাবে একটি নৈতিক ও সাংগঠনিক শূন্যতায় ভুগছিল। তাঁর উপস্থিতি এই শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করতে পারে। এতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য, নৈতিক ভিত্তি এবং জনসমর্থন পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন জোবাইদা রহমান। জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ হলেও জোবাইদা চিকিৎসা পেশায় ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছেন। রাজনীতিতে না জড়ালেও তারেক রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্নীতি মামলার শিকার হয়েছেন। একপর্যায়ে অসুস্থ স্বামীর পাশে থাকতে লন্ডনে চলে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে কর্মস্হলে না থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে।

২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচারিক আদালতের সেই সাজা স্থগিত হয়েছে।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর

Tag :
জনপ্রিয়

১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন জোবাইদা রহমান, সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে

প্রকাশিত ০৪:৫৭:৩১ অপরাহ্ন, সোমবার, ৫ মে ২০২৫

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : ডা. জোবাইদা রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পুত্রবধূ। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তারেক রহমানের সঙ্গে ঢাকা ছেড়েছিলেন জোবাইদা রহমান। এরপর আর দেশে ফেরা হয়নি তার। দীর্ঘ বছর স্বামীর সঙ্গে পরবাসেই থাকতে হয়েছে তাকে। তবে, দীর্ঘ ১৭ বছর পর দেশে ফিরছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে আগামীকাল মঙ্গলবার সকালে শাশুড়ি ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডন থেকে ঢাকায় পৌঁছাবেন তিনি। কয়েকটি শিরোনাম দিন

জানা গেছে, দেশে ফিরে রাজধানীর ধানমন্ডিতে তার বাবার বাসা ‘মাহবুব ভবনে’ উঠবেন জোবাইদা রহমান। ইতোমধ্যে বাসার পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন থেকে শুরু করে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য আতিকুর রহমান রুমন সাংবাদিকদের জানান, জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। বাড়ির চারপাশে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। দায়িত্বে থাকবেন সিএসএফ সদস্যরা, সঙ্গে থাকবেন পুলিশ সদস্যরাও। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে গিয়ে যেন এলাকাবাসীর কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়, সে বিষয়ে কঠোরভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। তার কথায়, নিরাপত্তার নামে মানুষকে বিরক্ত করা যাবে না এটা স্পষ্ট নির্দেশ।

জোবাইদা রহমানের যাতায়াত ও নিরাপত্তার জন্য পৃথক যানবাহনের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার গত ৩০ মে পুলিশের মহাপরিদর্শকের কাছে চিঠি দিয়ে জোবাইদা রহমানের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন।

সেই চিঠিতে গানম্যান, পুলিশ প্রটেকশন, বাসায় আর্চওয়ে ও পুলিশ পাহারার দাবি জানানো হয়। এর পরপরই পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকজন কর্মকর্তা মাহবুব ভবন পরিদর্শন করে নিরাপত্তাব্যবস্থার খুঁটিনাটি পর্যালোচনা করেন।

এখন ওই ভবনে বসবাস করছেন জোবাইদা রহমানের মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু, বড় বোন শাহীনা জামান ও তার পরিবার। জানা গেছে, সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু বর্তমানে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

তারেক রহমানের আগে জোবাইদা রহমানের আগমন ঘিরে অনেকের মাঝে কৌতুহল দেখা দিয়েছে। এটি কি নিছক শাশুড়ি খালেদা জিয়ার সঙ্গী হওয়া? নাকি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর পাশে থাকা? তবে বহুবছর ধরে তার বিএনপিতে সক্রিয় হওয়ার যে গুঞ্জণ ছিল, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বলেছেন, সিলেট অঞ্চলে জোবাইদা রহমানের অনেক জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে তিনি রাজনীতি আসবেন কি না তা আমার জানা নেই। তিনি যদি রাজনীতি আসতে চান তাহলে স্বাগত জানাবো।

যদি ডা. জোবাইদা রহমান সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত হন, তাহলে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন একটি সমীকরণ সৃষ্টি হতে পারে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তিনি দীর্ঘদিন একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক পরিবারে বেড়ে উঠেছেন এবং রাজনীতির নানা স্তরে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। ফলে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া তাঁর জন্য খুব একটা চ্যালেঞ্জ হবে না।

তারা বলছেন, ডা. জোবাইদা রহমানের সক্রিয় রাজনীতিতে আসা বিএনপির জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দীর্ঘদিন ধরে দলটি কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভাবে একটি নৈতিক ও সাংগঠনিক শূন্যতায় ভুগছিল। তাঁর উপস্থিতি এই শূন্যতা অনেকটাই পূরণ করতে পারে। এতে বিএনপির অভ্যন্তরীণ ঐক্য, নৈতিক ভিত্তি এবং জনসমর্থন পুনরুজ্জীবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে প্রথম হয়েছিলেন জোবাইদা রহমান। জিয়া পরিবারের পুত্রবধূ হলেও জোবাইদা চিকিৎসা পেশায় ব্যস্ত জীবন কাটিয়েছেন। রাজনীতিতে না জড়ালেও তারেক রহমানসহ অন্যদের সঙ্গে দুর্নীতি মামলার শিকার হয়েছেন। একপর্যায়ে অসুস্থ স্বামীর পাশে থাকতে লন্ডনে চলে যান তিনি। এরপর ২০১৪ সালে কর্মস্হলে না থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনার সরকার তাকে চাকরিচ্যুত করে।

২০০৮ সালে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় ডা. জোবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড ও ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিচারিক আদালতের সেই সাজা স্থগিত হয়েছে।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর