মানবসভ্যতার দীর্ঘ অভিযাত্রায় রাষ্ট্রচিন্তার ধারায় যখনই শাসনব্যবস্থার ন্যায়, মানবিকতা ও স্থিতির প্রশ্ন এসেছে, তখনই নতুন নতুন দর্শনের উদ্ভব ঘটেছে। প্রাচীন গ্রিক নগররাষ্ট্রের প্লেটো থেকে শুরু করে আধুনিক রাজনৈতিক দর্শনের হাবস, লক, রুসো, মার্ক্স কিংবা ফুকো— প্রত্যেকে তাঁদের সময়ে রাষ্ট্রচিন্তাকে সমৃদ্ধ করেছেন। কিন্তু যেই প্রশ্ন আজও পুরোমাত্রায় উত্তর পায়নি তা হলো — কে শাসন করবে? কীভাবে শাসন করবে?
বাংলাদেশের সমাজবাস্তবতায় দাঁড়িয়ে কবি ও সমাজবিজ্ঞানী মু. নজরুল ইসলাম তামিজী এই চিরায়ত প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে গিয়ে প্রবর্তন করেছেন “হোমোক্রেসি”— এক নৈতিক রাষ্ট্রচিন্তা, এক মানবিক নেতৃত্ব-তত্ত্ব। যেখানে রাষ্ট্র পরিচালনার চাবিকাঠি থাকবে জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নৈতিকতা এবং সর্বোপরি জনগণের কল্যাণবোধের হাতে।
সংজ্ঞা :
হোমোক্রেসি হল বাংলাদেশের কবি ও সমাজবিজ্ঞানী মু. নজরুল ইসলাম তামিজী স্যার প্রবর্তিত এমন একটি রাষ্ট্র ও সমাজব্যবস্থা, যেখানে নেতৃত্ব নির্ধারিত হয় জ্ঞান, প্রজ্ঞা, নৈতিকতা ও জনকল্যাণচিন্তায় গুণান্বিত নাগরিকদের মাধ্যমে। এতে রাজনৈতিক ক্ষমতা নয়, নৈতিক অধিকার ও যোগ্যতা কর্তৃত্বের উৎস; এবং শাসনব্যবস্থা জনগণের অংশগ্রহণ, সুবিচার, মানবিকতা ও পরিবেশগত ভারসাম্য বজায় রেখে পরিচালিত হয়।
নেতৃত্বের নীতিশিক্ষা ও হোমোক্রেসির মৌলিক দর্শন :
হোমোক্রেসির ভাষায় শাসনব্যবস্থা হবে দায়িত্বের, ক্ষমতার নয়; ন্যায়বিচারের, প্রতিহিংসার নয়। এখানে নেতৃত্ব জন্ম নেবে গুণাবলির ভেতর থেকে—
> “যে অধিক জানে, সেই অধিক দেবে।”
তামিজী স্যার হোমোক্রেসি তত্ত্বে যেভাবে প্রজ্ঞা, বিবেক ও কল্যাণচিন্তাকে কেন্দ্র করে নেতৃত্ব নির্মাণের কথা বলেছেন, তা আধুনিক বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় নতুন দিশা দেখায়।
আজ যখন রাজনীতি অর্থ ও পেশিশক্তির দখলে, নেতৃত্ব পারিবারিক উত্তরাধিকার কিংবা দলীয় আনুগত্যের বৃত্তে বন্দী, তখন হোমোক্রেসি আমাদের সামনে রাখে এক জনকল্যাণমুখী রাষ্ট্র-অভিলাষ।
বাংলাদেশের মাটিতে হোমোক্রেসির আবেদন :
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় অভিজ্ঞতা স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে বহুবার নেতৃত্বের দুর্ভিক্ষের সাক্ষী হয়েছে। গণতন্ত্রের যাত্রা বারবার রুদ্ধ হয়েছে কর্তৃত্ববাদ, দুর্নীতি ও স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর কারণে। সেই পটভূমিতে হোমোক্রেসি এমন এক রাষ্ট্র কাঠামোর স্বপ্ন দেখায়, যেখানে—
নৈতিক নেতৃত্ব গড়ে উঠবে জনগণের আস্থায়,
রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত আসবে বিদ্যা ও কল্যাণের নির্যাস থেকে,
রাষ্ট্র ক্ষমতা নয়, সেবার প্রতীক হবে।
তামিজী স্যারের হোমোক্রেসি তাই শুধুই রাষ্ট্রতত্ত্ব নয়, একধরনের নৈতিক বিপ্লব, যা জাগিয়ে তোলে নাগরিক দায়িত্ববোধ, ন্যায় ও মানবিকতার সৌন্দর্য।
একজন কবির চোখে হোমোক্রেসি :
কবির দৃষ্টি সবসময় গভীরতর। রাজনীতির আয়রনির মধ্যেও কবি খোঁজেন সত্য ও সৌন্দর্যের নিগূঢ় অর্থ। হোমোক্রেসি যেন সেই অন্বেষণেরই এক উত্তর। এ রাষ্ট্রচিন্তায় যেন রবীন্দ্রনাথের ‘চিত্ত যেথা ভয়শূন্য’ স্বপ্ন ও নজরুলের ‘মানুষ’ দর্শনের এক যুগলবন্দী সুর।
কবির কণ্ঠে তাই উচ্চারিত হয় :
> “রাজনীতি যখন ক্লান্ত,
নেতৃত্ব যখন দিশেহারা —
তখন হোমোক্রেসি যেন এক ঈষৎ সবুজ আলো।”
উপসংহার :
মু. নজরুল ইসলাম তামিজী স্যার প্রবর্তিত হোমোক্রেসি তাই শুধুমাত্র তাত্ত্বিক রাষ্ট্রকাঠামোর আলোচ্য নয়; বরং এটি সময়ের দাবি, বাংলাদেশের আগামী রাষ্ট্র-স্বপ্নের সম্ভাব্য রূপরেখা। এই তত্ত্ব ভবিষ্যতের রাজনীতি, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, অর্থনীতি, পরিবেশনীতি এমনকি নৈতিক শিক্ষায় নতুন পথ খুলে দিতে সক্ষম।
এটি সেই রাষ্ট্রের স্বপ্ন, যেখানে নেতৃত্ব আসবে গুণের ভিত্তিতে, শাসক হবে জনতার খেদমতগার, আর রাষ্ট্র হবে জনগণের সার্বিক কল্যাণের প্রতিষ্ঠান।