১০:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫, ১৬ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল ( পর্ব-১)

  • প্রকাশিত ০৫:১৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫
  • ৮৩ বার দেখা হয়েছে

এলজিইডির কনসালটেন্ট আবু ফাত্তাহ নকল সার্টিফিকেটে চাকরি

* আয়ের সাথে সম্পদের হিসাবে সঙ্গতি নেই নিয়োগ বদলি বানিজ্য ও ভুয়া সাংবাদিক দিয়ে কর্মকর্তাদের হুমকি দেখার কেউ নেই। #ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট #সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিলাসবহুল চারতলা ভবন ও বহু একর জমি #সাংবাদিকদের ম্যানেজের নামে ঘুষ বানিজ্য #আউটসোর্সিং নিয়োগ,বদলি সব কিছুতেই আছেন আবু ফাত্তাহ! # নকল সার্টিফিকেটে চাকরি # দুদকের এক কর্মকর্তার ভয় দেখিয়ে স্বার্থ হাসিল

বিশেষ প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর কনসালটেন্ট আবু ফাত্তাহ আজকের রিপোর্টের একজন বিতর্কিত চরিত্র, যার জীবনযাত্রা এবং অবৈধ কার্যকলাপের গল্প শুনলে সবারই আঁতকে ওঠার মত। নিজেকে মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও তার চাকরি নকল সার্টিফিকেটে। আয়ের সাথে তার সম্পদের হিসাব বড়ই অমিল। ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আধুনিক মডেলের চারতলা বাড়ি ও বহু একর জমি এগুলো সবই হয়েছে তার অবৈধ অর্থ উপার্জনের ফলস্বরূপ। একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নকল সার্টিফিকেটের বলে এলজিইডির দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও,বেতনের পরিমাণের সাথে তার অবস্থান এত দ্রুত পাল্টানো- এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে তার দুর্নীতির ক্ষেত্র বিশাল। বর্তমান এলজিইডিতে সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল এর রাজত্ব চলছে এর একফলার ভুমিকায়এই ফাত্তাহ অন্য ফলা প্রশাসনিক শাখায় কর্মরত উচ্চমান সহকারী অপর বলার ভুমিকিয় সিরাজগঞ্জের, পোস্টিং সিরাজগঞ্জ ডিউটি করেন এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতাধর এক কর্মকর্তার বিশেষ ক্যাশিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।এই পর্বে ত্রিশূল এর এক ফলা আবু ফাত্তাহর ঘুষ বিনিজ্য ও সম্পদের হিসাবের কিয়দংশ পাঠক সম্মুখে তুলে ধরা হল অপর দুজনের ফিরিস্তি পরের পর্বে প্রকাশ করা হবে।

যেভাবে শুরু হয় তার ক্যারিয়ার:
আবু ফাত্তাহ শুরু থেকে বর্তমান অবদি এলজিইডির কনসালটেন্ট পার্টের দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন।ওই পদে চাকরি করতে যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন সেটা তার ছিলনা সূত্র জানায় তিনি বি এ পাশের নকল সার্টিফিকেট আগেই তৈরি করে রেখে ছিলেন সেই সুবাদে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং কিছুদিন পর তাকে ছাঁটাই করে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের সময় তার বিশেষ আস্তা ভাজন পিডি সিরাজগঞ্জের আর এক দুর্নীতি বাজ কাজি খুরশিদ হাসানের সহায়তায় আবু ফাত্তাহ ওই চাকরিতে ঢোকেন এবং তিনি নিজেকে “মিডিয়া কনসালটেন্ট” হিসেবে পরিচয় দেন, আদতে মিডিয়া কনসালটেন্ট এলজিইডির জনবল কাঠামোতে কোনো পদ নেই দু’একটি প্রকল্পে ওই পদ থাকলেও ফাত্তাহ সেই সব প্রকল্পের অধীনে চাকরি করেনি। এই পদবি প্রাতিষ্ঠানিক মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, তার কাজের ছলে তিনি সঠিক নিয়ম-কানুন না মেনে এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং মিডিয়া কনসালটেন্ট ডেজিগনেশনটি হাতিয়ার করে অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা।

নিয়োগ ও বদলি বানিজ্যের মাধ্যমে আয়ের বিস্তৃতি :
আবু ফাত্তাহ’র অবৈধ উপার্জনের আসল পথ হলো নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য এবং অনিয়মের মেশিন হিসেবে তার ভূমিকা অনন্য। ওয়াহিদুর রহমান এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালীন সময় কোর্ট প্রায় ছয় হাজার কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার আদেশ দেয় এবং শুরু হয় চাকরি স্থায়ী করার নামে ঘুষ বানিজ্য। সূত্র জানায় ওই সময় পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে ৩১০০ জনের নিকট থেকে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়। ওয়াহিদুর রহমানের দুর্নীতির বিষয় দুদক তদন্ত করছে।সূত্র জানায় ওই সময় নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসাশন আব্দুস সাত্তার সহকারী প্রকৌশলী প্রসাশন জহুরুল ইসলাম মন্ডল ও আবু ফাত্তাহ মিলে চাকরি স্থায়ী করার নামে ঘুষ বানিজ্য শুরু করেন। এখান থেকে মোটা অংকের টাকা ভাগ পায় ফাত্তাহ। সেই টাকা দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সদরে কয়েক একর জমি কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন।পরবর্তীতে আবদুর রশিদ খান এর সময়েও তিনি ঘুষের মাধ্যমে আউটসোর্সিংএ শতাধিক কর্মচারীর চাকরি দেন। সেই সময়ের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন মাহবুব মোর্শেদের শাহিন। শাহিনের মাধ্যমে আউটসোর্সিং এর চাকরি গুলো নিশ্চিত করেন। সহকারী প্রকৌশলী চার লাখ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কার্য সহকারী আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে শাহিনেকে সহকারী প্রকৌশলী দেড় লাখ ও অন্য পদে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দিতেন বাকি টাকা ফাত্তাহ নিতেন। সেই টাকা দিয়ে উল্লাপাড়ার চার তলা বাড়ির কাজ সমাপ্ত করেন ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে দেড় হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বুকিং দেন এবং কিছু দিন পর দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের পুরো দাম এক কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বর্তমান তিনি সেখানে বসবাস করছেন। সূত্র জানায় তিনি আরো বিশ লাখ টাকা খরচ করে ইন্টেরিয়র ডিজাইন সমাপ্ত করেন। এসব সম্ভব হয়েছে ঘুষের টাকার জোরে।

এলজিইডির অভ্যন্তরীণ চক্র:
এলজিইডির তৎকালীন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম মোন্ডল, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুর মোর্শেদ শাহিন সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে আবু ফাত্তাহ’র। এই কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করতেন এবং তার মাধ্যমে ঘুষের আদান-প্রদান নিশ্চিত করতেন এবং টাকা ভাগাভাগি করতেন। সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদ শাহিন এর সহযোগীতায় ফাত্তাহ আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য চালিয়েছেন দীর্ঘ দিন এবং সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য জানিয়েছে।

দুদকের ভয় দেখানো:
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের মতে, দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলামের সাথে রয়েছে তার দহরম মহরম সম্পর্ক বলতে গেলে সেই তার অভিভাবক। জানান যায় যে পিডি বা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তার কথা না শুনে তার নামে দুদকে বেনামি অভিযোগ দিয়ে আক্তারুল ইসলামের মাধ্যমে তদন্তের ভুয়া চিঠি পাঠায়।পরে ফাত্তাহ ওই পিডি বা নির্বাহী পরিচালকে বলে তার সাথে দুদকের ভাল সম্পর্ক আছে। ওই পিডি ভয়ে ফাত্তাহ’র স্মরনাপন্ন হয়। ফাত্তাহ জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলামেকে নিয়ে পিডির দফতরে যায় এবং অভিযোগের ফায়সালা করতে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে দফারফা করে। সূত্র জানায় ফাত্তাহ প্রায়ই সেগুনবাগিচা দুদকের অফিসে আক্তারুল ইসলামের দফতরে যান আবার আক্তারুল ইসলামকে মাঝে মাঝে এলজিইডি ভবনে ফাত্তাহ’র রুমে দেখা যায় এবং ফাত্তাহ তার মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীর নিকট জটিল ধরনের বদলি ও নিয়োগের জন্য সিভি ধরিয়ে দেন। সূত্র জানায় ওই বদলি ও নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন হয়। এখানে থেকে ঘুষের যে টাকা আয় হয় তা দুজনে ভাগাভাগি করেন।

সাংবাদিকদের ম্যানেজ এবং ভয়ভীতি:
আবু ফাত্তাহ একজন দক্ষ “ম্যানেজার”। তার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো “সত্য সমাচার”
নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তিনি এই পত্রিকার নাম ব্যবহার করে তার অধিন কয়েকজন ভুয়া সাংবাদিকে দিয়ে বড় বড় প্রকল্পের তথ্য দিয়ে পিডির কাছে পাঠায় এবং সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে চাপে রাখেন। তার এই পত্রিকাটি হলো একধরনের “ঘুষের অংশীদার”। তার খয়েরখা কয়েকজন সো-কল সাংবাদিক আছে তাদের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খবর তৈরি করে,ওই পিডি বা কর্মকর্তার নিকট পাঠান। সূত্র জানায় ফাত্তাহ ওই সব চামচাদের বিভিন্ন বড়বড় প্রকল্পের পিডি, প্রশাসন শাখার কর্মকর্তাদের সম্পর্কে ভিতরের তথ্য দিয়ে তাদের কাছে পাঠায়। ওই সাংবাদিক কথা বলে আসার পর ফাত্তাহ তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং জানান উমুক সাংবাদিক আপনার বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য দেখা করতে চান। আপনি চাইলে আমি তাদের ম্যানেজ করতে পারব। এভাবে সাংবাদিক ম্যানেজের নামে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করেন।

নকল সার্টিফিকেটে বড় পদে চাকরি:
আবু ফাত্তাহ এইচএসসি পাশ । তার ভাই বোনদের মধ্যে সেই সবচেয়ে শিক্ষিত। তার এক ভাইকে এস এস সি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে আউটসোর্সিংয়ে অফিস পিয়ন পদে চাকরি দেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় অতি ধুরন্ধর আবু ফাত্তাহ বি এ পাশের নকল সার্টিফিকেট দিয়ে ইত্তেফাকের প্রুফ রিডারের চাকরি নেন। ভাল কাজ না জানায় কিছু দিন পর ইত্তেফাক থেকে তাকে ছাঁটাই করে। সেই সময় ওয়াহিদুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নিলে ফাত্তাহ সিরাজগঞ্জের মানুষ তৎকালীন পিডি কাজী খুরশিদ হাসানের সহায়তায় কনসালটেন্ট পার্টের দ্বিতীয় শ্রেণীর কমিউনিটি অর্গানাইজার পদে চাকরি নেন। ওয়াহিদুর রহমান সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল হাসানের কাছের কর্মকর্তাদের উপর অফিশিয়াল নির্যাত শুরু করেন তারই ধারাবাহিকতায় সেই সময়ে সাহাদাত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করে সেই পদে ফাত্তাহ কে দায়িত্ব দেন।নকল সার্টিফিকেটে বড় পদে চাকরি করার বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছেনা এলজিইডির কর্মকর্তারা।দাবি উঠেছে তার সার্টিফিকেট যাচাই করে‌ নকল হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং বেতনের টাকা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে।আবু ফাত্তাহ’র নিয়োগ ,বদলি বানিজ্য সহ বর্তমান সময় ফাত্তাহ’র বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য ও সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল এর অপর দুজনের ব্বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশ করে হবে।

Tag :
জনপ্রিয়

গৌরীপুর সরকারি মার্কেটের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে

সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল ( পর্ব-১)

প্রকাশিত ০৫:১৬:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫

এলজিইডির কনসালটেন্ট আবু ফাত্তাহ নকল সার্টিফিকেটে চাকরি

* আয়ের সাথে সম্পদের হিসাবে সঙ্গতি নেই নিয়োগ বদলি বানিজ্য ও ভুয়া সাংবাদিক দিয়ে কর্মকর্তাদের হুমকি দেখার কেউ নেই। #ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট #সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় বিলাসবহুল চারতলা ভবন ও বহু একর জমি #সাংবাদিকদের ম্যানেজের নামে ঘুষ বানিজ্য #আউটসোর্সিং নিয়োগ,বদলি সব কিছুতেই আছেন আবু ফাত্তাহ! # নকল সার্টিফিকেটে চাকরি # দুদকের এক কর্মকর্তার ভয় দেখিয়ে স্বার্থ হাসিল

বিশেষ প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-এর কনসালটেন্ট আবু ফাত্তাহ আজকের রিপোর্টের একজন বিতর্কিত চরিত্র, যার জীবনযাত্রা এবং অবৈধ কার্যকলাপের গল্প শুনলে সবারই আঁতকে ওঠার মত। নিজেকে মিডিয়া কনসালটেন্ট হিসেবে পরিচয় দিলেও তার চাকরি নকল সার্টিফিকেটে। আয়ের সাথে তার সম্পদের হিসাব বড়ই অমিল। ঢাকার মোহাম্মদপুরে কোটি টাকার ফ্ল্যাট থেকে শুরু করে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় আধুনিক মডেলের চারতলা বাড়ি ও বহু একর জমি এগুলো সবই হয়েছে তার অবৈধ অর্থ উপার্জনের ফলস্বরূপ। একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তিনি নকল সার্টিফিকেটের বলে এলজিইডির দ্বিতীয় শ্রেণীর পদের কনসালটেন্ট হিসেবে কর্মজীবন শুরু করলেও,বেতনের পরিমাণের সাথে তার অবস্থান এত দ্রুত পাল্টানো- এটি সহজেই অনুমান করা যায় যে তার দুর্নীতির ক্ষেত্র বিশাল। বর্তমান এলজিইডিতে সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল এর রাজত্ব চলছে এর একফলার ভুমিকায়এই ফাত্তাহ অন্য ফলা প্রশাসনিক শাখায় কর্মরত উচ্চমান সহকারী অপর বলার ভুমিকিয় সিরাজগঞ্জের, পোস্টিং সিরাজগঞ্জ ডিউটি করেন এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে ক্ষমতাধর এক কর্মকর্তার বিশেষ ক্যাশিয়ার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।এই পর্বে ত্রিশূল এর এক ফলা আবু ফাত্তাহর ঘুষ বিনিজ্য ও সম্পদের হিসাবের কিয়দংশ পাঠক সম্মুখে তুলে ধরা হল অপর দুজনের ফিরিস্তি পরের পর্বে প্রকাশ করা হবে।

যেভাবে শুরু হয় তার ক্যারিয়ার:
আবু ফাত্তাহ শুরু থেকে বর্তমান অবদি এলজিইডির কনসালটেন্ট পার্টের দ্বিতীয় শ্রেণীর একজন কর্মচারী হিসেবে কাজ করছেন।ওই পদে চাকরি করতে যে শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন সেটা তার ছিলনা সূত্র জানায় তিনি বি এ পাশের নকল সার্টিফিকেট আগেই তৈরি করে রেখে ছিলেন সেই সুবাদে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রুফ রিডার হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং কিছুদিন পর তাকে ছাঁটাই করে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমানের সময় তার বিশেষ আস্তা ভাজন পিডি সিরাজগঞ্জের আর এক দুর্নীতি বাজ কাজি খুরশিদ হাসানের সহায়তায় আবু ফাত্তাহ ওই চাকরিতে ঢোকেন এবং তিনি নিজেকে “মিডিয়া কনসালটেন্ট” হিসেবে পরিচয় দেন, আদতে মিডিয়া কনসালটেন্ট এলজিইডির জনবল কাঠামোতে কোনো পদ নেই দু’একটি প্রকল্পে ওই পদ থাকলেও ফাত্তাহ সেই সব প্রকল্পের অধীনে চাকরি করেনি। এই পদবি প্রাতিষ্ঠানিক মানদণ্ডে অন্তর্ভুক্ত নয়। তবে, তার কাজের ছলে তিনি সঠিক নিয়ম-কানুন না মেনে এক এক সময় ভিন্ন ভিন্ন প্রকল্পে কাজ করেছেন এবং মিডিয়া কনসালটেন্ট ডেজিগনেশনটি হাতিয়ার করে অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন কোটি কোটি টাকা।

নিয়োগ ও বদলি বানিজ্যের মাধ্যমে আয়ের বিস্তৃতি :
আবু ফাত্তাহ’র অবৈধ উপার্জনের আসল পথ হলো নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য এবং অনিয়মের মেশিন হিসেবে তার ভূমিকা অনন্য। ওয়াহিদুর রহমান এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী থাকাকালীন সময় কোর্ট প্রায় ছয় হাজার কর্মচারীর চাকরি স্থায়ী করার আদেশ দেয় এবং শুরু হয় চাকরি স্থায়ী করার নামে ঘুষ বানিজ্য। সূত্র জানায় ওই সময় পাঁচ থেকে আট লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে ৩১০০ জনের নিকট থেকে প্রায় তিনশ কোটি টাকা ঘুষ আদায় করে তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়। ওয়াহিদুর রহমানের দুর্নীতির বিষয় দুদক তদন্ত করছে।সূত্র জানায় ওই সময় নির্বাহী প্রকৌশলী প্রসাশন আব্দুস সাত্তার সহকারী প্রকৌশলী প্রসাশন জহুরুল ইসলাম মন্ডল ও আবু ফাত্তাহ মিলে চাকরি স্থায়ী করার নামে ঘুষ বানিজ্য শুরু করেন। এখান থেকে মোটা অংকের টাকা ভাগ পায় ফাত্তাহ। সেই টাকা দিয়ে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া সদরে কয়েক একর জমি কিনেছেন এবং বাড়ি নির্মাণ কাজ শুরু করেন।পরবর্তীতে আবদুর রশিদ খান এর সময়েও তিনি ঘুষের মাধ্যমে আউটসোর্সিংএ শতাধিক কর্মচারীর চাকরি দেন। সেই সময়ের সহকারী প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন মাহবুব মোর্শেদের শাহিন। শাহিনের মাধ্যমে আউটসোর্সিং এর চাকরি গুলো নিশ্চিত করেন। সহকারী প্রকৌশলী চার লাখ, উপ-সহকারী প্রকৌশলী ও কার্য সহকারী আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা হারে ঘুষ নিয়ে শাহিনেকে সহকারী প্রকৌশলী দেড় লাখ ও অন্য পদে পঞ্চাশ হাজার থেকে এক লাখ টাকা দিতেন বাকি টাকা ফাত্তাহ নিতেন। সেই টাকা দিয়ে উল্লাপাড়ার চার তলা বাড়ির কাজ সমাপ্ত করেন ও ঢাকার মোহাম্মদপুরে দেড় হাজার বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট বুকিং দেন এবং কিছু দিন পর দেড় হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাটের পুরো দাম এক কোটি টাকা পরিশোধ করেন। বর্তমান তিনি সেখানে বসবাস করছেন। সূত্র জানায় তিনি আরো বিশ লাখ টাকা খরচ করে ইন্টেরিয়র ডিজাইন সমাপ্ত করেন। এসব সম্ভব হয়েছে ঘুষের টাকার জোরে।

এলজিইডির অভ্যন্তরীণ চক্র:
এলজিইডির তৎকালীন উপ-সহকারী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলাম মোন্ডল, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুস সাত্তার সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুবুর মোর্শেদ শাহিন সহ অন্যান্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে উঠে আবু ফাত্তাহ’র। এই কর্মকর্তারা তাকে সহযোগিতা করতেন এবং তার মাধ্যমে ঘুষের আদান-প্রদান নিশ্চিত করতেন এবং টাকা ভাগাভাগি করতেন। সহকারী প্রধান প্রকৌশলী মাহবুব মোর্শেদ শাহিন এর সহযোগীতায় ফাত্তাহ আউটসোর্সিংয়ে নিয়োগ ও বদলি বানিজ্য চালিয়েছেন দীর্ঘ দিন এবং সেখান থেকে লাখ লাখ টাকা ঘুষ আদায় করেছেন বলে নির্ভরযোগ্য জানিয়েছে।

দুদকের ভয় দেখানো:
বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের মতে, দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলামের সাথে রয়েছে তার দহরম মহরম সম্পর্ক বলতে গেলে সেই তার অভিভাবক। জানান যায় যে পিডি বা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী তার কথা না শুনে তার নামে দুদকে বেনামি অভিযোগ দিয়ে আক্তারুল ইসলামের মাধ্যমে তদন্তের ভুয়া চিঠি পাঠায়।পরে ফাত্তাহ ওই পিডি বা নির্বাহী পরিচালকে বলে তার সাথে দুদকের ভাল সম্পর্ক আছে। ওই পিডি ভয়ে ফাত্তাহ’র স্মরনাপন্ন হয়। ফাত্তাহ জনসংযোগ কর্মকর্তা আক্তারুল ইসলামেকে নিয়ে পিডির দফতরে যায় এবং অভিযোগের ফায়সালা করতে মোটা অংকের ঘুষ নিয়ে দফারফা করে। সূত্র জানায় ফাত্তাহ প্রায়ই সেগুনবাগিচা দুদকের অফিসে আক্তারুল ইসলামের দফতরে যান আবার আক্তারুল ইসলামকে মাঝে মাঝে এলজিইডি ভবনে ফাত্তাহ’র রুমে দেখা যায় এবং ফাত্তাহ তার মাধ্যমে প্রধান প্রকৌশলীর নিকট জটিল ধরনের বদলি ও নিয়োগের জন্য সিভি ধরিয়ে দেন। সূত্র জানায় ওই বদলি ও নিয়োগ দ্রুত সম্পন্ন হয়। এখানে থেকে ঘুষের যে টাকা আয় হয় তা দুজনে ভাগাভাগি করেন।

সাংবাদিকদের ম্যানেজ এবং ভয়ভীতি:
আবু ফাত্তাহ একজন দক্ষ “ম্যানেজার”। তার সবচেয়ে শক্তিশালী হাতিয়ার হলো “সত্য সমাচার”
নামের একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা। তিনি এই পত্রিকার নাম ব্যবহার করে তার অধিন কয়েকজন ভুয়া সাংবাদিকে দিয়ে বড় বড় প্রকল্পের তথ্য দিয়ে পিডির কাছে পাঠায় এবং সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বিভিন্ন কর্মকর্তাকে চাপে রাখেন। তার এই পত্রিকাটি হলো একধরনের “ঘুষের অংশীদার”। তার খয়েরখা কয়েকজন সো-কল সাংবাদিক আছে তাদের মাধ্যমে কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে খবর তৈরি করে,ওই পিডি বা কর্মকর্তার নিকট পাঠান। সূত্র জানায় ফাত্তাহ ওই সব চামচাদের বিভিন্ন বড়বড় প্রকল্পের পিডি, প্রশাসন শাখার কর্মকর্তাদের সম্পর্কে ভিতরের তথ্য দিয়ে তাদের কাছে পাঠায়। ওই সাংবাদিক কথা বলে আসার পর ফাত্তাহ তার সাথে যোগাযোগ করেন এবং জানান উমুক সাংবাদিক আপনার বিরুদ্ধে নিউজ করার জন্য প্রধান প্রকৌশলীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য দেখা করতে চান। আপনি চাইলে আমি তাদের ম্যানেজ করতে পারব। এভাবে সাংবাদিক ম্যানেজের নামে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করেন।

নকল সার্টিফিকেটে বড় পদে চাকরি:
আবু ফাত্তাহ এইচএসসি পাশ । তার ভাই বোনদের মধ্যে সেই সবচেয়ে শিক্ষিত। তার এক ভাইকে এস এস সি পাশের সার্টিফিকেট দিয়ে আউটসোর্সিংয়ে অফিস পিয়ন পদে চাকরি দেয়। নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায় অতি ধুরন্ধর আবু ফাত্তাহ বি এ পাশের নকল সার্টিফিকেট দিয়ে ইত্তেফাকের প্রুফ রিডারের চাকরি নেন। ভাল কাজ না জানায় কিছু দিন পর ইত্তেফাক থেকে তাকে ছাঁটাই করে। সেই সময় ওয়াহিদুর রহমান প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব নিলে ফাত্তাহ সিরাজগঞ্জের মানুষ তৎকালীন পিডি কাজী খুরশিদ হাসানের সহায়তায় কনসালটেন্ট পার্টের দ্বিতীয় শ্রেণীর কমিউনিটি অর্গানাইজার পদে চাকরি নেন। ওয়াহিদুর রহমান সাবেক প্রধান প্রকৌশলী শহিদুল হাসানের কাছের কর্মকর্তাদের উপর অফিশিয়াল নির্যাত শুরু করেন তারই ধারাবাহিকতায় সেই সময়ে সাহাদাত হোসেনকে চাকরিচ্যুত করে সেই পদে ফাত্তাহ কে দায়িত্ব দেন।নকল সার্টিফিকেটে বড় পদে চাকরি করার বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছেনা এলজিইডির কর্মকর্তারা।দাবি উঠেছে তার সার্টিফিকেট যাচাই করে‌ নকল হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং বেতনের টাকা ফেরত এনে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে।আবু ফাত্তাহ’র নিয়োগ ,বদলি বানিজ্য সহ বর্তমান সময় ফাত্তাহ’র বেপরোয়া ঘুষ বানিজ্য ও সিরাজগঞ্জের ত্রিশুল এর অপর দুজনের ব্বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে প্রকাশ করে হবে।