৫ ই আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পর জনগণ আশা করেছিল বাংলাদেশ দ্বিতীয়বার স্বাধীনতা অর্জন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ আসলে কতটা স্বাধীনতা পেয়েছে। স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকার দেশের প্রতিটা সেক্টরের দলীয় সিন্ডিকেট তৈরি করেছিল। বিশেষ করে পুলিশ বাহিনীকে এক চেটিয়া আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবহার করেছে। বিগত ১৬ বছরে দেশের সাধারণ জনগণ ব্যাপক হামলা মামলার শিকার হয়েছে। সাধারণ জনগণ পুলিশের কাছে সহযোগিতা চাওয়ায় উল্টো তাদেরকে মিথ্যা মামলা শিকার হতে হয়েছে। আর পুলিশ প্রশাসনের নাকের ডগায় বসে দলীয় সন্ত্রাসীরা গাজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, হেরোইন, ও অন্যান্য মাদকসহ জায়গা জমি, বাড়ি বেআইনিভাবে দখল করেছে। ঢাকার সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিবের ঘনিষ্ঠ সহচর আব্দুল মোন্নাফ এখন বিএনপি নেতা পরিচয় এখনো তার বিভিন্ন মাদক ব্যবসা সহ জমি ও বাড়ি দখল অব্যাহত রেখেছে। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি টাঙ্গিয়ে সাভারের সিআরপি গেট সংলগ্ন মোঃ কায়কোবাদ, পিতা মৃত- গঞ্জের আলী, সাং ১৬৭ গাজিরচট ভূঁইয়াপাড়া, পোস্ট আলিয়া মাদ্রাসা, থানা আশুলিয়া, জেলা ঢাকা। এই ব্যক্তির মার্কেট সহ ১৬.৫ শতাংশ জমি দখল করেন। এই মোন্নাফ বাহিনীর অত্যাচারে এখনো অনেক মানুষ নিজের বাপ দাদার সম্পত্তি রেখে অন্যত্র জীবন যাপন করছে। এই আব্দুল মোন্নাফ কে ব্যবহার করেই সাভারে একক আধিপত্য বিস্তার করেন উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব। ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানার ছয়ঘড়িয়া গ্রামের মৃত চান মিয়ার পুত্র ভয়ংকর সন্ত্রাসী মোন্নাফের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে এলাকাবাসী প্রতিরোধ করে তোলে। কেরানীগঞ্জবাসী তাড়া খেয়ে বিতাড়িত মোন্নাফ সাভারে আস্তানা গাড়ে। সাবেক সাভার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব ও তার ছোট ভাই তেতুলঝোরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সমর এর আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে গড়ে তোলেন একটি শক্তিশালী মোন্নাফ বাহিনী। ২০১০ সালে ৬ জানুয়ারি সাভারে ৬৫/৩ ডগার মোড়ের মজিবুর রহমানের ভাই মিলনকে মোন্নাফ বাহিনী গুলি করে এবং পরে জবাই করে হত্যা করে। মজিবর রহমান বাদী হয়ে সাভার থানায় মোন্নাফ, সম্রাট, কামরুল, নয়ন কসাই, কবির হোসেন, রাজিব, কানা বাবুল, রনি এবং ব্যারিস্টার তুষারকে আসামি করে ৭ জানুয়ারি ২০১০ তারিখে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। যার নং ১৫/২০১০। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভয়ংকর সন্ত্রাসী খুনিদের আজ পর্যন্ত আইনের আওতায় আনা হয়নি। ঢাকার আশুলিয়ায় নজরুল ইসলামের অভিযোগ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে আইছা মদ্দার মৌজায় ১২ শতাংশ ক্রয় কৃত জমি সন্ত্রাসী মোন্নাফ বাহিনী আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দখলের চেষ্টা করে। মোন্নাফ বাহিনীকে বাধা প্রদান করলে নজরুলকে হত্যার উদ্দেশ্যে মোন্নাফ পিস্তল দিয়ে গুলি চালায়। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ তারিখে মোন্নাফ, মশিউর, তুহিন, ও আবুলকে আসামি করে সাভার থানায় ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩০৭/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ৯৭/০৯। সাভারে জামশিং পূর্বপাড়ার বাসিন্দা আবুল মজিদের পুত্র মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, আইসানোয়াদ্দা মজার সিআরপি রোড পঙ্গু হাসপাতাল সংলগ্ন ১২ শতাংশ জমি ক্রয় করেন। সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রধান মোন্নাফ মিজানুর রহমানের নিকট মোটা অংকের চাদা দাবি করে। মিজানুর রহমান টাকা দিতে অস্বীকার করলে মোন্নাফ বাহিনী ১২/১৩ ব-ক-এফ জয়েন্ট কোয়ার্টারে ভাড়া বাসায় হামলা চালায় এবং বাসা থেকে বের করে দেয়, এবং প্রাণনাশের হুমকি দেয়। দীর্ঘদিন মোন্নাফের ভয়ে আত্মগোপন থেকে মিজানুর রহমান ৩০/০৩/২০০৯ সালে সাভার থানায় মোন্নাফ, সৈয়দ আহমদ, শাহাবুদ্দিন আলী খান, রাজ্জাক শিকদার, তৈয়ব আলী সহ ৯ জনের বিরুদ্ধে ১৪৩/৪৪৭/৩২৩/৩৮৫/৪২৭/৫০৬ ধারায় মামলা দায়ের করেন। যার নং ৯১/০৯। ফ্যাসিবাদ সরকারের বিগত ১৬ বছরে এই ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসীদের কোন সাজা হয়নি। উল্টো বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের ক্ষমতায় আসার পর রাতারাতি এদের চেহারা বদলে হয়ে যান বিএনপি’র নামধারী নেতা। ভুক্তভোগী মোঃ কায়কোবাদ তার ক্রয় কৃত ১৬.৫ শতাংশ জমি ফেরত পেতে প্রশাসনের নিকট একাধিকবার আবেদন করেন। কিন্তু দলীয় ক্ষমতা ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় তিনি ন্যায় বিচার না পেয়ে পুনরায় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে ০৯/১০/২০২৩ ইং আবার একটি অভিযোগ করেন। আবারো প্রশাসনের নীরব ভূমিকায় ভুক্তভোগী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিবের নিকট অভিযোগ করেন। এবার উপজেলা চেয়ারম্যান রাজিব একটি সুষ্ঠ সমাধানের আশ্বাস দেন এবং বিভিন্ন অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। পরে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ভুক্তভোগী মোঃ কায়কোবাদ সাভার থানায় ২০/০৮/২০২৪ ইং তারিখে মোন্নাফসহ ৫ জনের নামে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করে যে মোন্নাফ সহ ৫ জন গত ০৬/০৮/২০২৪ ইং সকাল ৯ ঘটিকায় মার্কেটে ভাঙচুর করে এবং দোকানদারদেরকে জোর করে বের করে দেয়। এবং মার্কেটের দোতলায় পরিচালনা অফিসে ভাঙচুর করে এবং গুরুত্বপূর্ণ মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায়। মার্কেটসহ এই ১৬.৫ শতাংশ জমি পুরোটাই দখল করে নেয়। এই অভিযোগের ভিত্তিতেও পুলিশ প্রশাসন কোন ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভুক্তভোগী মোঃ কায়কোবাদ আবারও ২১/১১/২০২৪ ইং তারিখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাভার সার্কেল বরাবর মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য কারীর বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। উপযুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগ অনুসন্ধানের স্বার্থে উভয়পক্ষকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১৯/১২/২০২৪ ঢাকা পুলিশ সুপার কার্যালয় হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। ঐদিন সন্ত্রাসী আব্দুল মোন্নাফ দখলকৃত জমির কোন উপযুক্ত কাগজপত্র বা দলিলাদি দেখাতে পারেনি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তার অফিস সহকারীকে মোন্নাফ এর কথা জিজ্ঞেস করাতেই প্রথমেই বলেন স্যার উনি বিএনপি করেন। আব্দুল মোন্নাফ কাগজপত্র দাখিল করার জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে ১৫ দিন সময় চান। অভিযোগকারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম আলী (বিপি- ৮৪১২১৪৭৭৭৩) বলেন স্যার মোন্নাফের কাছে কোন দলিল বা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নেই এবং মহামান্য হাইকোর্ট আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। তাহলে আপনি তাকে কেন সময় দিচ্ছেন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অভিযোগকারীকে বুঝিয়ে আব্দুল মোন্নাফকে ১৫ দিন সময় দেয়া হয়। ০৬/০১/২০২৫ ইং তারিখে ১১ ঘটিকায় পুলিশ সুপার কার্যালয় অফিস কক্ষে হাজির হওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়। কিন্তু সন্ত্রাসী আব্দুল মোন্নাফ আর ঐদিন পুলিশ সুপার কার্যালয়ে হাজির হয়নি। বর্তমান অন্তবর্তী কালীন সরকারের নিকট সাভার এলাকাবাসীর প্রত্যাশা এই ভয়ংকর সন্ত্রাসী আব্দুল মোন্নাফের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। যাতে সাধারণ মানুষ আবারও পুলিশ সহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর আস্থা ফিরে পায়।
০৭:৪১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৯ এপ্রিল ২০২৫, ২৬ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম