হবিগঞ্জের সাতছড়ি জাতীয় উদ্যানে প্রায় কোটি টাকা সমমূল্যের সেগুন গাছ পাচারের তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে বন কর্মকর্তাদের হামলার শিকার হওয়া সেই সাংবাদিক মুজাহিদ মসির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ মামলা দায়ের করেছেন বন বিভাগ।বন বিভাগের পক্ষে হবিগঞ্জের সাতছড়ি রেঞ্জের ভারপ্রাপ্ত রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বাদী হয়ে স্থানীয় চুনারুঘাট থানায় ওই মামলা রেকর্ডভুক্ত করেন।
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বিতর্কিত এই মামলার খবর বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হলে এলাকার সাংবাদিক ও সচেতন মহলে সমালোচনার ঝড় বইছে।
জানা যায়,গত শনিবার দৈনিক কালবেলার সাংবাদিক ও ওয়াইল্ডলাইফ এক্টিভিস্ট মুজাহিদ মসি ও বাংলা টাইমস পত্রিকার হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি ত্রিপুরারী দেবনাথ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সাতছড়ি উদ্যানে সেগুন পাচারের আলামতের ভিডিও করতে যান।তখন রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ ও জুনিয়র ওয়ার্ল্ডলাইভ স্কাউট নূর মোহাম্মদসহ কয়েকজন তাদের উপর অতর্কিত হামলা করে।এই ঘটনায় তখন ওই সাংবাদিকরা বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করে।পরবর্তীতে বন মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ও হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক বনের গাছ কাটার সত্যতা পান।হামলার শিকার ২ সাংবাদিককে সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি অভিনন্দনও দেন তারা।সিলেটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা উদ্যোগে অভিযুক্ত ওই ২ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করা হয়।কিন্তু এরপরেও নিজেদের গাছ চুরি আড়াল করতে গত বুধবার সাংবাদিক মুজাহিদ মসির বিরুদ্ধে ৫০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি অভিযোগে রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবুল কালামের নির্দেশনায় থানায় মামলা রেকর্ড করান।
এভাবে সাহসিকের বনের গাছ পাচারের খবর জাতির সামনে তুলে ধরায় সাংবাদিককে পুরস্কৃত না করে উল্টো চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করায় হবিগঞ্জের বিভিন্ন প্রেসক্লাব নেতাসহ গণমাধ্যমকর্মীরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
সাংবাদিক মুজাহিদ মসি বলেন,সেগুন গাছ পাচরের বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারাই বিভিন্ন ধরনের লোভ লালসা দেখাচ্ছেন।বনের লোকদের নানা অপকর্মের আরো চাঞ্চল্যকর প্রমাণও রয়েছে আমার কাছে।আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছে।
সাংবাদিকের কলমের কাছে এই ধরনের মিথ্যে অভিযোগের মৃত্যু ঘটবে ইনশাল্লাহ।এই ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছেন সাংবাদিক মুজাহিদ মসি।
হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতা ও আইনজীবী শাহ ফখরুজ্জামান বলেন,মুজাহিদ মসি সাংবাদিকতার পাশাপাশি বন্যপ্রাণী নিয়ে কাজ করেন।সে স্বেচ্ছাসেবী বন্যপ্রাণী সংগঠন পাখি প্রেমিক সোসাইটির আহ্বায়ক।সে সেগুন গাছ পাচারের চাঞ্চল্যকর তথ্য জাতির সামনে তুলে ধরেছে। কিন্তু তাকে উল্টো বিনাতদন্তে হয়রানি মামলা দায়ের করায় পুলিশ ও বন বিভাগের উপরে সাধারণ মানুষের আস্থা কমে যাবে।
আইনজীবী ফখরুজ্জামান আরো বলেন,এই ধরনের বিতর্কিত মামলার দায়েরকারীদের বিরুদ্ধেও তদন্ত কমিটি গঠন করা উচিত।
সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ বলেন,আমি আমার ডিএফও মহোদয়ের নির্দেশনা ক্রমে মামলা দায়ের করেছি।ঊর্ধ্বতনে স্যারের পরামর্শ ছাড়া আমাদের কিছু করার নিয়ম নেই। আমাদের সীমিত লোকবল দিয়ে বিশাল বন পাহারা দেওয়া অত্যন্ত কষ্টকর। সেজন্য কিছু সেগুন গাছ চুরি বা পাচার হলেও হতে পারে।
এই ব্যাপারে সিলেটের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা(ডিএফও) আবুল কালাম বলেন,রেঞ্জ কর্মকর্তা আমার সাথে আলোচনা করে মামলা দেয়নি।সাংবাদিকের উপর তাদের হামলার বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক ছিল।সেটির আইনগত ব্যবস্থা নেয়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ফোনে যোগাযোগ করা হলে চুনারুঘাট থানার ওসি নুর আলম বলেন,সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে।একজন এসআই সেটি তদন্ত করছে।বিষয়টি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডিআইজি স্যার পর্যন্ত অবগত।
বিনাতদন্তে সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা গ্রহণ ও মামলার বাদী মামুনুর রশিদ নিজেও সাংবাদিক হামলা মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী।সে গ্রেপ্তার না হয়ে কিভাবে স্বাক্ষর দিয়ে মামলা দায়ের করলো সেই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ওসি তখন ফোন কেটে দেন।
প্রসঙ্গত, রেঞ্জ কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ সাংবাদিকের উপর হামলা মামলার প্রধান আসামী।এছাড়া সাতছড়ির সেগুন গাছ পাচারের মূল হিসেবে বন বিভাগ তার বিরুদ্ধে তদন্তও করছে।এছাড়া সাতছড়ি উদ্যানের বন্যপ্রাণী পাচার ও পেশাগত অসদাচরণের একাধিক অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।এসব নিয়ে গণমাধ্যমে একাধিক প্রতিবেদনও প্রচারিত হয়েছে।