০৯:১৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সাবিনা সোমা :

সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় অঙ্গীকার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

  • প্রকাশিত ০৬:০৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫
  • ২৪ বার দেখা হয়েছে

কয়েক দশকের রাজনৈতিক টানাপোড়েন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির পেছনে রেখে দেশ এখন নতুন করে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি অভিযান ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই যাত্রাপথে যে প্রতিষ্ঠানটি পর্দার অন্তরালে থেকে রাষ্ট্রকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেটি হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ ও তার পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃনির্মাণে সেনাবাহিনীর অবদান আজ সর্বমহলে প্রশংসিত ও সম্মানিত।
সামরিক বাহিনী কোনো রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার নয়—এই মৌলিক দর্শনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নিরপেক্ষ এবং পেশাদার রক্ষক। ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে যখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা, প্রশাসন অচল এবং রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন সেনাবাহিনী অত্যন্ত সংযত, সুপরিকল্পিত এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে শুধু অস্ত্রের ভাষায় নয়, বরং নৈতিকতার শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশা বোঝার সক্ষমতা দিয়েও।
সেই সময়টিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রশাসনকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, যা জাতীয় অর্থনীতি, বিচার বিভাগ, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও বিপন্ন করে তোলে। এমন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ শুধুমাত্র একটি “ক্ষমতা গ্রহণ” ছিল না, বরং এটি ছিল একটি “রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ”, যেখানে তারা সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ না করেই একটি অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের সহায়তা করে। এই কাঠামোর নেতৃত্বে এসেছেন সাবেক বিচারপতি এম এম আমজাদ হোসেন, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে একটি নীতিনিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক চর্চার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এই সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ হয়। এ উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করছে—কিন্তু সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়, বরং রাষ্ট্রের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের শক্তিশালীকরণ এবং সুশাসনের পথে প্রশাসনকে চলতে বাধ্য করার এই প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
গত এক বছরে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিরুদ্ধে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত অভিযানগুলো নতুন করে দেশের মানুষকে নিরাপত্তার বোধ দিয়েছে। একইসাথে মানব পাচার, অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সেনাবাহিনী বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরব কিন্তু কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
এর পাশাপাশি, একটি বিশ্বাসযোগ্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সেনা মোতায়েন মানেই ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়া, সহিংসতা কমে আসা এবং অংশগ্রহণমূলক ভোট উৎসবের পরিবেশ তৈরি হওয়া। বিশেষ করে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী যে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল, তা আজও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ স্মরণ করে। আগামী নির্বাচনেও জনগণ সেই একই রকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রত্যাশা করছে, যা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয় সভা, নিরাপত্তা ম্যাপিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ—সবকিছুই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে সেনা মোতায়েন, পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে। এগুলো সবই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ।
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনের সময় কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি নমনীয়তা বা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। এটি কেবল পেশাদারিত্বের বিষয় নয়, বরং এটি একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সেনাবাহিনী বুঝে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে, তাদের দায়িত্ব সেই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তার বাহিনী নয়, বরং একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানও বটে। জাতির সংকটে, দুর্যোগে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে তারা যেমন নিরলস পরিশ্রম করে, তেমনি জাতীয় পরিচিতি রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবদানকারী দেশের মর্যাদা লাভ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের সাক্ষ্য বহন করে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত, তারা একধরনের “টেকনোক্র্যাট-ন্যায়বিচার” মডেলের প্রতিনিধিত্ব করছে। যেখানে রাজনৈতিক বচন নয়, বরং প্রশাসনিক দক্ষতা, নৈতিকতা ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। এই সরকারের পেছনে সেনাবাহিনীর নৈতিক সমর্থন রয়েছে, যা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক স্থান তৈরির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ও কার্যকর উপস্থিতি শুধু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা নয়, বরং রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলা—এই বৃহৎ উদ্দেশ্যকেই তুলে ধরে। এখনো তারা মেধাভিত্তিক অফিসার ও সদস্যদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যা দেশকে কেবল নিরাপত্তার দিক থেকেই নয়, বরং মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা এবং গণতান্ত্রিক চেতনায়ও সমৃদ্ধ করছে।
জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা অবিচল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের সময় সাধারণ মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের প্রতি জনসম্পৃক্ততার প্রতিফলন। সেনাবাহিনী বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্বাসের উপর ভর করে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে—যেখানে আইন, শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকবে একসূত্রে বাঁধা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আর শুধু দেশের স্বার্বভৈৗমত্ব রক্ষার নয়, বরং জাতির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ এবং রাষ্ট্রীয় সম্ভ্রম রক্ষায় এক মেধাসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল অংশীদার। ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের অবস্থান আমাদের জন্য আশাবাদের উৎস হয়ে উঠেছে। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সেনাবাহিনীর এই অবদান শুধু এই মুহূর্তের জন্য নয়, বরং আগামী দিনের জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Tag :

শিক্ষা নগরী ময়মনসিংহে মানসম্পন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা সময়ের দাবি

সাবিনা সোমা :

সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় অঙ্গীকার ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়

প্রকাশিত ০৬:০৫:২৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ জুলাই ২০২৫

কয়েক দশকের রাজনৈতিক টানাপোড়েন, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির পেছনে রেখে দেশ এখন নতুন করে রাষ্ট্রীয় শুদ্ধি অভিযান ও গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের পথে যাত্রা শুরু করেছে। এই যাত্রাপথে যে প্রতিষ্ঠানটি পর্দার অন্তরালে থেকে রাষ্ট্রকে আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনার নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছে, সেটি হলো বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। বিশেষ করে ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহ ও তার পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পুনঃনির্মাণে সেনাবাহিনীর অবদান আজ সর্বমহলে প্রশংসিত ও সম্মানিত।
সামরিক বাহিনী কোনো রাজনৈতিক শক্তির হাতিয়ার নয়—এই মৌলিক দর্শনের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বারবার প্রমাণ করেছে যে তারা দেশের সংবিধান, গণতন্ত্র ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নিরপেক্ষ এবং পেশাদার রক্ষক। ৫ আগস্টের ঘটনাপ্রবাহে যখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা, প্রশাসন অচল এবং রাজনৈতিক কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছিল, তখন সেনাবাহিনী অত্যন্ত সংযত, সুপরিকল্পিত এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। তারা দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করে শুধু অস্ত্রের ভাষায় নয়, বরং নৈতিকতার শক্তি এবং জনগণের প্রত্যাশা বোঝার সক্ষমতা দিয়েও।
সেই সময়টিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছিল। কিছু প্রভাবশালী গোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রশাসনকে পঙ্গু করে দিয়েছিল, যা জাতীয় অর্থনীতি, বিচার বিভাগ, মানবাধিকার এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ককেও বিপন্ন করে তোলে। এমন প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ শুধুমাত্র একটি “ক্ষমতা গ্রহণ” ছিল না, বরং এটি ছিল একটি “রাষ্ট্রীয় ভারসাম্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ”, যেখানে তারা সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণ না করেই একটি অন্তর্বর্তীকালীন রাজনৈতিক কাঠামো গঠনের সহায়তা করে। এই কাঠামোর নেতৃত্বে এসেছেন সাবেক বিচারপতি এম এম আমজাদ হোসেন, যিনি দীর্ঘ সময় ধরে একটি নীতিনিষ্ঠ ও গণতান্ত্রিক চর্চার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
এই সরকারের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন, যেখানে সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং জনগণের ভোটাধিকার নির্বিঘ্নে প্রয়োগ হয়। এ উদ্দেশ্যে সেনাবাহিনী প্রশাসনিক সহায়তা প্রদান করছে—কিন্তু সেটা কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে নয়, বরং রাষ্ট্রের স্বার্থে, গণতন্ত্রের স্বার্থে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ, দুর্নীতি দমন কমিশনের শক্তিশালীকরণ এবং সুশাসনের পথে প্রশাসনকে চলতে বাধ্য করার এই প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর অবদান অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে।
গত এক বছরে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালানের বিরুদ্ধে সেনা গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় পরিচালিত অভিযানগুলো নতুন করে দেশের মানুষকে নিরাপত্তার বোধ দিয়েছে। একইসাথে মানব পাচার, অবৈধ সম্পদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কঠোর নজরদারি এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সেনাবাহিনী বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করে নিরব কিন্তু কার্যকর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা আগামী দিনেও রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে।
এর পাশাপাশি, একটি বিশ্বাসযোগ্য সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রেও সেনাবাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, সেনা মোতায়েন মানেই ভোটারদের মধ্যে আস্থা বাড়া, সহিংসতা কমে আসা এবং অংশগ্রহণমূলক ভোট উৎসবের পরিবেশ তৈরি হওয়া। বিশেষ করে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী যে পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছিল, তা আজও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ মানুষ স্মরণ করে। আগামী নির্বাচনেও জনগণ সেই একই রকম শান্তিপূর্ণ পরিবেশ প্রত্যাশা করছে, যা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর উপস্থিতি ও সহযোগিতা একান্তভাবে প্রয়োজন।
বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সমন্বয় সভা, নিরাপত্তা ম্যাপিং এবং ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিতকরণ—সবকিছুই অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে। নির্বাচনের দিন ভোট কেন্দ্রে সেনা মোতায়েন, পাশাপাশি মোবাইল কোর্ট ও ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে সমন্বয়ে কাজ করার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে আলোচিত হয়েছে। এগুলো সবই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ।
এখানে লক্ষ্যণীয় বিষয় হলো, সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্ব পালনের সময় কোনো রাজনৈতিক পক্ষের প্রতি নমনীয়তা বা পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করেনি এবং ভবিষ্যতেও করবে না। এটি কেবল পেশাদারিত্বের বিষয় নয়, বরং এটি একটি সাংবিধানিক অঙ্গীকার। সেনাবাহিনী বুঝে যে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত জনগণ নেবে, তাদের দায়িত্ব সেই প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নে সহায়তা করা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী শুধু নিরাপত্তার বাহিনী নয়, বরং একটি উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানও বটে। জাতির সংকটে, দুর্যোগে, অবকাঠামোগত উন্নয়নে তারা যেমন নিরলস পরিশ্রম করে, তেমনি জাতীয় পরিচিতি রক্ষা এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অবদানকারী দেশের মর্যাদা লাভ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব ও মানবিক মূল্যবোধের সাক্ষ্য বহন করে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশের যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় নিয়োজিত, তারা একধরনের “টেকনোক্র্যাট-ন্যায়বিচার” মডেলের প্রতিনিধিত্ব করছে। যেখানে রাজনৈতিক বচন নয়, বরং প্রশাসনিক দক্ষতা, নৈতিকতা ও বাস্তবমুখী পরিকল্পনা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে দেশকে। এই সরকারের পেছনে সেনাবাহিনীর নৈতিক সমর্থন রয়েছে, যা স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক স্থান তৈরির একটি অনন্য দৃষ্টান্ত।
এই প্রেক্ষাপটে সেনাবাহিনীর ইতিবাচক ও কার্যকর উপস্থিতি শুধু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা নয়, বরং রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করে তোলা—এই বৃহৎ উদ্দেশ্যকেই তুলে ধরে। এখনো তারা মেধাভিত্তিক অফিসার ও সদস্যদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে, যা দেশকে কেবল নিরাপত্তার দিক থেকেই নয়, বরং মূল্যবোধ, শৃঙ্খলা এবং গণতান্ত্রিক চেতনায়ও সমৃদ্ধ করছে।
জনগণের মধ্যে সেনাবাহিনীর প্রতি আস্থা অবিচল। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সেনা মোতায়েনের সময় সাধারণ মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, যা তাদের প্রতি জনসম্পৃক্ততার প্রতিফলন। সেনাবাহিনী বিশ্বাস ও শ্রদ্ধার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এই বিশ্বাসের উপর ভর করে একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ে উঠতে পারে—যেখানে আইন, শৃঙ্খলা, ন্যায়বিচার এবং রাজনৈতিক ভারসাম্য থাকবে একসূত্রে বাঁধা।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আজ আর শুধু দেশের স্বার্বভৈৗমত্ব রক্ষার নয়, বরং জাতির অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা, গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ এবং রাষ্ট্রীয় সম্ভ্রম রক্ষায় এক মেধাসম্পন্ন ও দায়িত্বশীল অংশীদার। ইতিহাসের এই ক্রান্তিলগ্নে তাদের অবস্থান আমাদের জন্য আশাবাদের উৎস হয়ে উঠেছে। শান্তি, স্থিতিশীলতা ও একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সেনাবাহিনীর এই অবদান শুধু এই মুহূর্তের জন্য নয়, বরং আগামী দিনের জন্যও স্মরণীয় হয়ে থাকবে।