হুমায়ূন মুজিবঃ
গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলন আজ বৃহস্পতিবার ২৪ জুলাই ২০২৫ সকাল ১১ টায় জোটের অস্থায়ী কার্যলয়ে অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল)’র সভপতি কমরেড হারুন চৌধুরী, কি-নট পাঠ করেন প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি)’র মহাসচিব হারুন আল রশিদ খান, উপস্থিত ছিলেন যুগ্ম মহাসচিব মোঃ আমানতউল্লা আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক রেজা খান, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টির সাধারণ সম্পাদক কমরেড ডাঃ সামছুল আলম, কেন্দ্রীয় নেতা কমরেড আমরুল হক প্রামানিক, আনিসুর রহমান আকাশ, সোহেল রানা, সোস্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টির আহবায়ক আবুল কালাম আজাদ, হাজারীবাগ থানা সদস্য রুবেল সহ জাতীয় নেতৃবৃন্দ।
রক্তাক্ত গণ-অভ্যুত্থান ২৪ এর জন-আকাঙ্ক্ষা ছিলো সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য বিলোপ করে সমতা শান্তি শৃঙ্খলা সম্প্রীতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সহবস্থান। এর একটিও বাস্তবায়ন করতে পারে নাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বরঞ্চ সকল ক্ষেত্রে বৈষম্য ব্যপক বৃদ্ধি পেয়েছে। বিগত স্বৈরাচার আমলে আইন ও বিচার ব্যবস্থায় দ্বৈত নীতি ক্ষমতাসীনদের সকল অন্যায় এর পক্ষে রাষ্ট্রযন্ত্র কে লেলিয়ে দেওয়া, ন্যায্য হলেও বিরোধী মত কে দমন করা প্রয়োজনে গুম খুনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কে ব্যবহার করা। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী জন আকাঙ্ক্ষা ছিলো এর অবসান ঘটিয়ে আইন হবে সবার জন্য সমান। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বিগত স্বৈরাচার আমলের মতোই আইন কে ভিন্নমত দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনবান্ধব হয়ে কাজ করবে। নতুন করে কোন ধরনের বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হতে হবে না কাউকে। দুঃখজনক হলেও সত্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এগারো মাস পরেও পুলিশবাহিনী কে কার্যকর করতে ব্যর্থ হয়েছে। সাধারণ নাগরিক কে হত্যায় সেনাবাহিনী কে ব্যবহার করে সার্বভৌমত্বের প্রতীক সশস্ত্র বাহিনীর আত্মমর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে। সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি জনগণের আস্থার জায়গা বিনষ্ট করেছে। গণমাধ্যম বস্তুনিষ্ঠ সত্য সংবাদ প্রচার করবে। স্বৈরশাসকের সময়েও বিটিভি থেকে অন্যান্য চ্যানেল গুলো কিছুটা পার্থক্য বুঝা যেতো এখন সব চ্যানেল কে বিটিভি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। আগে টকশো গুলোতে দুইটা পক্ষ থাকতো, এখন সবাই মিলে একটা পক্ষ শুধু ইউনুস বন্দনা ছাড়া আর কোন কথাই বলা অলিখিত ভাবে নিষেধ।
প্রায় একবছর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরো অবনতি চাঁদাবাজি ছিনতাই ধর্ষণ সাথে যুক্ত হয়েছে মব সন্ত্রাস। দেশ কে মবের রাজ্য বানিয়ে ফেলেছে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা ও সুশাসন অনিশ্চিত। টাকা ছাপাবে না বলে দফায় দফায় টাকা ছাপিয়ে দুর্বল ব্যাংক গুলো কোনমতে চালু রাখাা হচ্ছে যা অদুর ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতির উপর সুদুর প্রসারি প্রভাব পরবে। স্বৈরশাসকের মতোই এখনো ঋণ করে ঘী খাওয়া হচ্ছে। শিল্পে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ হচ্ছে না, নতুন কর্মসংস্থান হচ্ছে না পুরনো প্রতিষ্ঠিত শিল্প কল কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে হুহু করে বেকার বাড়ছে। যার প্রভাব সমাজে বহুমাত্রিক অপরাধ ভয়াবহ ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
কুটনৈতিক ব্যর্থতা সীমাহীন, একদিকে রোহিঙ্গা সংকটের কোন সুরাহা করতে পারে নাই নতুন করে রোহিঙ্গা শরনার্থীর ঢল আসা শুরু হয়েছে। অন্যদিকে মানবিক করিডরের নামে দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। বিদেশিদের কাছে বন্দর ইজারা দেওয়ার একতরফা সিদ্ধান্ত জনমনে সন্দেহ সৃষ্টি করে। মরার উপর খাঁড়ার ঘা ট্রাম্পের নয়া শুল্ক নীতি রফতানি পণ্যের ওপর ৩৫% করারোপ যা তৈরী পোশাক শিল্প কে ধ্বংস করবে। নন ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট সহ নানা অসম গোপনীয় চুক্তি করছে। এই পরিনতির জন্য আলোচনার টেবিলে অযোগ্য উপদেষ্টাদের চরম ব্যর্থতা দায়ী। প্রতিষ্ঠিতত রাজনীতি, রাজনৈতিক দল নেতৃত্বের বিষয়ে এনজিও মার্কা উপদেষ্টােেদর নাক সিটকানো উন্নাসিক ভাব বহু পুরনো। ক্ষমতা পেয়ে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের নামে বিরাজনীতিকরনে ষড়যন্ত্র চলছে। সকল রাজনৈতিক দলের উচিত জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন বয়কট করা বাতিল চাওয়া।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উপদেষ্টা এক বছরে তাদের সম্পদের হিসাব না দিয়ে অনৈতিক কাজ করেছে, এখন আর তাদের ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার কোন অধিকার নাই। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠন করে করে ড. ইউনুস নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। ড. ইউনুসের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন করা অসম্ভব। দেশ ও জনগণ আজ ভয়াবহ সংকটে নিমজ্জিত। যতোই দিন যাচ্ছে ততোই সংকট ঘনীভুত হচ্ছে। কোথাও কোন আশার আলো দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। এই ভয়াবহ সংকট থেকে দেশ ও জাতি কে রক্ষা পেতে হলে ড. ইউনুস গংদের পদত্যাগের বিকল্প নাই।
রাষ্ট্র পরিচালনায় সকল পরিক্ষায় ফেল করে এখন অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকার জন্য মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত বিষয় কে বিতর্কিত করছে। সাম্প্রদায়িক জঙ্গি অপশক্তি কে আশকারা দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ কে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার ভয়ংকর ষড়যন্ত্র চলছে।
দ্রুত নির্বাচন কালীন জাতীয় সরকার গঠন সাপেক্ষে, সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থ ড. ইউনুস গংদের জাতীয় সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগের অন্য কোন বিকল্প নাই।