সারা দেশে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে টানা ভারী বর্ষণের ফলে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে দেশের প্রায় সব বিভাগেই বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হয়েছে বন্যা, জলাবদ্ধতা ও ধস। এসব কারণে লাখো মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে, থমকে গেছে কৃষি উৎপাদন, ব্যাহত হয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সারা দেশের বিভিন্ন জেলায় টানা ২০০ থেকে ৪০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেট অঞ্চলে পরিস্থিতি সবচেয়ে বেশি ভয়াবহ। নদীর পানি অনেক জায়গায় বিপদসীমার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে, ফলে নদীভাঙন এবং পাহাড় ধসের আশঙ্কাও বেড়েছে।টানা বৃষ্টির কারণে কৃষিখাতে সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছেন দেশের কৃষকরা। বিশেষ করে আমন ধান, শাকসবজি, বীজতলা ও মাছের খামার পানিতে তলিয়ে গেছে। একাধিক কৃষি বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, শুধু কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।এছাড়া দেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রামাঞ্চলে অসংখ্য বাড়িঘর ও দোকানপাট ভেঙে পড়েছে বা পানিতে নিমজ্জিত হয়ে গেছে। অনেক মানুষ নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। এ পর্যন্ত বসতবাড়ি ও বেসরকারি সম্পত্তিতে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ১,০০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।বৃষ্টিতে শহরাঞ্চলের সড়ক, ব্রিজ, কালভার্টসহ গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ভেঙে পড়ছে। ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে তীব্র জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার মতো হতে পারে বলে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।
টানা বর্ষণে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গার্মেন্টস, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, দোকান ও মার্কেটগুলোতে পানি ঢুকে পড়ায় উৎপাদন ও বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমে এই ক্ষতির প্রভাব দীর্ঘমেয়াদে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা হিসেবে ধরা হচ্ছে।পরিবহন খাতও ব্যাহত হয়েছে। অনেক জায়গায় বাস, ট্রেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে বা সীমিত হয়ে পড়েছে। বহু স্থানে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এ খাতেও প্রায় ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।স্বাস্থ্য খাতেও দেখা দিয়েছে নতুন সংকট। জলাবদ্ধতার কারণে ডায়রিয়া, টাইফয়েড, চর্মরোগ, ডেঙ্গু ও পানিবাহিত নানা রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকায় প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ২০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হয়েছে।দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। সেনাবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন উদ্ধার কাজে যুক্ত আছে। তবে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজন আরও বৃহৎ পরিসরের সহায়তা ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা।বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এমন দুর্যোগ বাড়ছে। খাল-বিল ভরাট, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অবনতি এবং নদী দখলই মূলত জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ।আবহাওয়া অধিদপ্তর আগামী ২ থেকে ৩ দিন আরও ভারী বর্ষণের আশঙ্কা জানিয়েছে। ফলে নদী তীরবর্তী ও পাহাড়ি অঞ্চলের বাসিন্দাদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
০৫:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩১ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শিরোনাম
এম.এইচ আকাশ মাহমুদ মোল্লা :
সপ্তাহব্যাপী টানা বৃষ্টিতে সারা দেশে চরম দুর্ভোগ: কৃষি, ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো খাতে হাজার কোটি টাকার ক্ষতি
Tag :
জনপ্রিয়