০৪:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৮ এপ্রিল ২০২৫, ২৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সুমন দত্ত :

সংসদ নির্বাচন দিয়ে ইউনুস সরকার বিদায় নিক, চলমান থাকুক বিচার ও সংস্কার বিভাগ

  • প্রকাশিত ০১:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫
  • ৩৫ বার দেখা হয়েছে

এদিকে নির্বাচনের দাবিতে প্রতিদিনই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে। সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ ও চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে। এজন্য সরকার কে দায়ী করে বক্তব্য রাখছে বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, রিজভী বলেছেন সরকার দেশ চালাতে না পারলে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিক।

নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিএনপির মত রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে দ্রুত নির্বাচন। অন্যদিকে জামাত ও ছাত্রদের নতুন পার্টি এনসিপি চাইছে নির্বাচন এখনই না। তাদের ইচ্ছা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন।

তাদের মতে নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে এসব হচ্ছে। অথচ সবাই জানে চুরি ডাকাতি ধর্ষণের মত অপরাধ কোনো আমলেই বন্ধ হয়নি। এ সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, পুলিশ কে সক্রিয় করতে না পারা। যে কারণে ডিএমপি এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষীদের পুলিশের কিছু ক্ষমতা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এমন দৃশ্য ৯০ এর এরশাদ সরকার পতনের পরও দেখা যায়নি।

তথাকথিত বিপ্লবে পুলিশের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার বিচার অন্যসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে না হলে পুলিশকে সক্রিয় করা যাবে না। এটা পুলিশ বাহিনীর অনেকের মত। যা আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। আর জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ঘিরে যেসব মামলা হয়েছে সেখানে রাজনীতি ঢুকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আর এতে ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় বিএনপি জামাতের নেতারা। মিথ্যা মামলার আসামিরা এখন সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘটনা জানান দিচ্ছে। মালিটোলার পাপিয়ার ছোট ভাই ও মিরপুরে পল্লবী থানার প্রকৌশলী মুর্তজা এমন দুই ব্যক্তি যারা জুলাই আগস্টের মামলার আসামি হয়েছে কোনো কিছু না করেই।

ইউনুস ক্ষমতায় এসে নিজের মামলাগুলো সবার আগে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৬০০ কোটি টাকা ট্যাক্স মাফ করে নিয়েছেন। অথচ শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে করা লক্ষাধিক মামলা তিনি আট মাসেও তুলেননি। অথচ এটা করতে তার সময় লাগতো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটা অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে রাজনৈতিক সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন তিনি। কিংবা বিচার বিভাগের একটি রায় ঘোষণার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার হয়ে যেত। কেন তিনি সেটা করছেন না, তার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারেন। অথবা তার আইন উপদেষ্টা।

বাংলাদেশে নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের পারফরমেন্সের মধ্যে খুব বড় পার্থক্য নেই। অতীতে মইনুদ্দিন ফকরুদ্দিন সরকার দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকার দুটো বাজেটও দিয়েছিল। তাতে তার আগে চলে যাওয়া বিএনপি সরকার কিংবা তার পরে আসা আওয়ামী লীগ সরকারের পারফরমেন্স একটু মিলিয়ে নিয়েন। খুব বেশি পার্থক্য পাবেন না।

সত্যিকার অর্থে এদেশের মানুষ একটি সিস্টেমকে অ্যাডপ্ট করে নিয়েছে। সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। এদেশে আদালতের চেয়ার টেবিলও টাকা খায়। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের শুরুর সময় সিপিডি রিপোর্ট করে। তৎকালীন সরকারের গায়ে কাঁটা লাগে এই রিপোর্ট। তাদের হুকুমের দাস বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কে দিয়ে সুয়োমোটো জারি করে সিপিডিকে আদালতে ডেকে আনা হয়। তারা প্রমাণের চেষ্টা করে সিপিডি ভুল। সিপিডিও তাদের সকল নথি সিডি আকারে আদালতে জমা দেয়। সেই বিচারের কাহিনী সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

বাংলাদেশে আজ ক্ষমতাসীন একটি অসাংবিধানিক সরকার। এই সরকারের কোনো ক্ষমতা নেই ভালো কিছু করার। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নামে কোনো সরকার নেই। তারপরও সুপ্রিমকোর্টের রেফারেন্সে চলছে এই সরকার। এটা আইনজীবীদের একাংশের অভিমত। আমরা শিখলাম ও জানলাম আদালতের রেফারেন্সে সরকার গড়া যায়। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ আছে কিনা এভাবে সরকার গড়ার তা আমার জানা নেই। আজ প্রথম আলো পত্রিকার সেই বড় ভাইটি বেঁচে থাকলে হয়ত তিনি এর উত্তর দিতেন। যার নাম মিজানুর রহমান খান।

সম্প্রতি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্রিটিশ গণমাধ্যম কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকার পুরোটা শোনার আমার সময় হয়নি। তারপরও মিডিয়া মারফত জানতে পারলাম সেখানে তিনি বলেছেন বিগত সরকার বাংলাদেশকে গাজার মতো পরিস্থিতি করে গেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গাজার মতো বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে হয়নি সত্য এখানে ভেঙে ফেলা হয়েছে নিয়ম নীতি। স্বৈরাচার স্টাইলে চলত এদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো।

তার কাছে আমার প্রশ্ন। এখন তিনি কিভাবে দেশ চালাচ্ছেন? তিনি কি গণতান্ত্রিক ভাবে দেশ চালাচ্ছেন? বাংলাদেশের সর্বত্র তিনি বিগত সরকারের দোসর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাদের কে হাতের কাছেই পেলেই জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। গণহারে তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছেন। এতে সহায়তা করছে বিএনপি-জামাত। তাহলে তিনিও তো ফ্যাসিস্টে পরিণত হলেন। যে কাজ করে হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছেন সেই একই কাজ তিনি ও তার সমর্থকরা করছে। পার্থক্য রইলো কই?

হাসিনার দোসর বানিয়ে নির্বিচারে তিনি প্রশাসন থেকে সচিব আমলা বহিষ্কার করছেন। তাদের পরিবর্তে বিএনপি জামাতের পছন্দসই লোকজন বসাচ্ছেন। তারপরও তিনি দেশে শান্তি ফেরাতে পারছেন না। আবার অশান্তির জন্য তিনি পলাতক শেখ হাসিনার দলের অর্থ ঢালার কথা বলছেন।

সেনাবাহিনী এখনো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে বসে আছে। তারপরও চুরি ডাকাতি ছিনতাই কোপাকুপি দখল পাল্টা দখল এসব ব্যাপকহারে হচ্ছে। ওদিকে নিত্য পণ্যের দাম যেভাবে বিগত সরকার রেখে গিয়েছিল সেভাবেই আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চাইতে আরো বেশি বেড়েছে।

বিগত সরকারের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিএনপি। তারাই এখন অর্থের বিনিময়ে পাহারা দিচ্ছে হাসিনার দোসরদের সম্পদ। কেউ কেউ মামলা বাণিজ্য করছে। টাকার বিনিময়ে একে ধরছে ওকে ছাড়ছে। এসব এখন ইউনুসের নাকের ডগায় ঘটছে। এভাবে দেশ কতদিন চলবে? এটাই এখন আম জনতার বড় জিজ্ঞাসা।

যাদেরকে নিয়ে ইউনুস সরকার এখন দেশ চালাচ্ছেন তারা ছিল জেলের ভিতর। জেল থেকে বেরিয়ে এখন তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। দেখা গেছে একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমের সামনে গরু জবাই, বইমেলায় স্টল বন্ধ, ৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগ। এগুলোতে সেই জেলবন্দি আসামিরা ঘটিয়েছে। এতদিন এরা একাধিক জঙ্গি অভিযোগে বন্দি ছিল।

ইউনুসের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার আমল যদি গাজা হয় তা হলে তার আমলটি এখন কি? তিনি কি কম দামে চাল খাওয়াতে পারছেন? তিনি কি প্রশাসন থেকে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে পেরেছেন? তিনি কি বাসস্টান্ড, নদীর ঘাট, কাঁচা বাজারের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পেরেছেন? তিনি কি জ্বালানির দাম কম করাতে পেরেছেন? উল্টো দেখা যাচ্ছে তিনি বিভিন্ন সেবায় উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন। যার প্রতিবাদ করছে দেশের ব্যবসায়ীরা।

বিগত সরকার যেখানে ৫ পারসেন্ট শুল্ক আরোপ করেছিল সেখানে তিনি ১৫ পারসেন্ট শুল্ক আরোপ করেছেন। পরে আন্দোলনের মুখে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক আরোপ প্রত্যাহার করে নেন।

সম্প্রতি নবাবপুরের ব্যবসায়ীরা কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারে দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে। তারা একদিন অর্ধ-বেলা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। বিগত সরকার কৃষির জন্য ভর্তুকি দিত। এখন তিনি সেখানে ভ্যাট লাগাচ্ছেন। তাহলে তিনি কোন মুখে গাজা বলেন। তিনি তো গাজার চাইতে আরো ভয়ঙ্কর জায়গায় দেশ কে নিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচন সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। এই সরকার নির্বাচন কবে করতে চায়, কাদের নিয়ে করতে চায়, সেটি জানার চেষ্টা করছেন তারা। ইউনুস সরকার বলছেন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে তারা। এখানে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন কাদের নিয়ে করা হবে সেটা জাতির কাছে পরিষ্কার করছে না ইউনুস সরকার। তবে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিকে মাইনাস করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে এই সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকজন দিয়ে বন্ধ রাখার কৌশল সেই রাজনৈতিক পরিকল্পনারই অংশ মাত্র। তবে এমনটা হলে সেই আগের অবস্থাই ফিরে আসবে। যেটা আওয়ামী লীগের আমলে পর পর তিনবার হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের মার্কেটিং করে আওয়ামী লীগ টিকতে পারে নাই। তেমনি জুলাই আগস্টের আন্দোলনকে মার্কেটিংয়ের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। সব জায়গায় জুলাই আগস্টকে টেনে আনা হচ্ছে।

আর যারা জুলাই আগস্টে হত্যা কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিচার। যারা দোষী তাদের সাজা নিশ্চিত করা। সেটা আওয়ামী লীগের নেতা হোক কিংবা শেখ হাসিনার দলদাস পুলিশ। যদি সৎ ইচ্ছা থাকে তবে কোনো কাজই বাধা হিসেবে দাঁড়াবে না। এখন দেখার বিষয় ড. ইউনুসের সেই সৎ সাহস আছে কিনা।

জুলাই আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে সেদিন। যেদিন আমরা দেশকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো। দেশের মানুষ সরকারি সেবাগুলো বিনামূল্যে পাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে আইন অনুসারে। ঘুষ ছাড়া কাজ হবে। ভেজাল মুক্ত খাবার হবে। চাঁদাবাজি মুক্ত ব্যবসা হবে। শিক্ষার্থীরা সময়মত বই পাবে। বিচার বিভাগ হবে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ। সড়ক থাকবে নিরাপদ। সাধারণের সহায় সম্পত্তি থাকবে সুরক্ষিত।

ইউনুস সরকারের একটি প্রশংসা আমি করতে চাই। সনাতন উৎসবগুলি নির্বিঘ্নে করতে পারা। যা আশা করা যাচ্ছিলো না। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কোনো ঘাটতি দেখা দেয়নি। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম উসকানি দিলেও এদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থেকেছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এখানে বিএনপি জামাত একযোগে কাজ করেছে। ভূমিকা রেখেছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরাও।

এছাড়া চিন্ময় মহাপ্রভুর শুনানির সময় একজন আইনজীবীর মৃত্যু সাম্প্রদায়িক রুপ নেয়নি। এটাও একটা বড় প্রাপ্তি। যা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তবে এসব ঘটনা কেন ঘটছে তার সঠিক বিচার হওয়া জরুরি। চিন্ময় মহাপ্রভুর মুক্তি দেওয়াটা জরুরি। ইসকনের নামে কোনো মামলা নেই। তারপরও একটি গোষ্ঠী ইসকনের নামে কেন অপপ্রচার করছে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।

দেশে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ইউনুস সরকার বিদায় নিক এটি একমাত্র চাওয়া। জনগণই ঠিক করুক কে ক্ষমতায় যাবে। সেখানে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়েতে ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক, স্বতন্ত্র সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যেটা সবার চাওয়া। সংস্কার ও বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। একটির জন্য আরেকটি বন্ধ থাকুক এটি কেউ চায় না।

জুলাই আগস্টের হত্যাকাণ্ডে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিযুক্ত তারা অবশ্যই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবে। সেটা নির্বাচনী আইনেই বলা আছে। সুতরাং কে ভোট করতে পারবে, কে পারবে না তা সেখানেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। দেশের জনগণই ঠিক করবে কারা রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে।

Tag :
জনপ্রিয়

ফেসবুক প্রোফাইল হ্যাক হলে করণীয়

সুমন দত্ত :

সংসদ নির্বাচন দিয়ে ইউনুস সরকার বিদায় নিক, চলমান থাকুক বিচার ও সংস্কার বিভাগ

প্রকাশিত ০১:২৯:৩৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ মার্চ ২০২৫

এদিকে নির্বাচনের দাবিতে প্রতিদিনই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করছে। সম্প্রতি দেশে ধর্ষণ ও চুরি ডাকাতি বেড়ে গেছে। এজন্য সরকার কে দায়ী করে বক্তব্য রাখছে বিএনপি নেতারা। বিএনপি নেতা শামসুজ্জামান দুদু, রিজভী বলেছেন সরকার দেশ চালাতে না পারলে নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিক।

নির্বাচন নিয়ে দেশের রাজনীতিতে উত্তপ্ত হাওয়া বইতে শুরু করেছে। বিএনপির মত রাজনৈতিক দলগুলো চাইছে দ্রুত নির্বাচন। অন্যদিকে জামাত ও ছাত্রদের নতুন পার্টি এনসিপি চাইছে নির্বাচন এখনই না। তাদের ইচ্ছা প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচন।

তাদের মতে নির্বাচিত সরকার না থাকার কারণে এসব হচ্ছে। অথচ সবাই জানে চুরি ডাকাতি ধর্ষণের মত অপরাধ কোনো আমলেই বন্ধ হয়নি। এ সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, পুলিশ কে সক্রিয় করতে না পারা। যে কারণে ডিএমপি এখন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তারক্ষীদের পুলিশের কিছু ক্ষমতা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এমন দৃশ্য ৯০ এর এরশাদ সরকার পতনের পরও দেখা যায়নি।

তথাকথিত বিপ্লবে পুলিশের ওপর হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে, তার বিচার অন্যসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে না হলে পুলিশকে সক্রিয় করা যাবে না। এটা পুলিশ বাহিনীর অনেকের মত। যা আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি। আর জুলাই আগস্ট গণঅভ্যুত্থান ঘিরে যেসব মামলা হয়েছে সেখানে রাজনীতি ঢুকে এই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। আর এতে ভূমিকা রেখেছে স্থানীয় বিএনপি জামাতের নেতারা। মিথ্যা মামলার আসামিরা এখন সংবাদ সম্মেলন করে এসব ঘটনা জানান দিচ্ছে। মালিটোলার পাপিয়ার ছোট ভাই ও মিরপুরে পল্লবী থানার প্রকৌশলী মুর্তজা এমন দুই ব্যক্তি যারা জুলাই আগস্টের মামলার আসামি হয়েছে কোনো কিছু না করেই।

ইউনুস ক্ষমতায় এসে নিজের মামলাগুলো সবার আগে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। ৬০০ কোটি টাকা ট্যাক্স মাফ করে নিয়েছেন। অথচ শেখ হাসিনার আমলে বিএনপির কর্মীদের বিরুদ্ধে করা লক্ষাধিক মামলা তিনি আট মাসেও তুলেননি। অথচ এটা করতে তার সময় লাগতো মাত্র কয়েক ঘণ্টা। রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে একটা অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে রাজনৈতিক সব মামলা প্রত্যাহার করে নিতে পারতেন তিনি। কিংবা বিচার বিভাগের একটি রায় ঘোষণার মাধ্যমে সকল রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার হয়ে যেত। কেন তিনি সেটা করছেন না, তার ব্যাখ্যা তিনিই দিতে পারেন। অথবা তার আইন উপদেষ্টা।

বাংলাদেশে নির্বাচিত ও অনির্বাচিত সরকারের পারফরমেন্সের মধ্যে খুব বড় পার্থক্য নেই। অতীতে মইনুদ্দিন ফকরুদ্দিন সরকার দুই বছর ক্ষমতায় ছিল। সেই সরকার দুটো বাজেটও দিয়েছিল। তাতে তার আগে চলে যাওয়া বিএনপি সরকার কিংবা তার পরে আসা আওয়ামী লীগ সরকারের পারফরমেন্স একটু মিলিয়ে নিয়েন। খুব বেশি পার্থক্য পাবেন না।

সত্যিকার অর্থে এদেশের মানুষ একটি সিস্টেমকে অ্যাডপ্ট করে নিয়েছে। সেটা হচ্ছে দুর্নীতি। এদেশে আদালতের চেয়ার টেবিলও টাকা খায়। এ নিয়ে আওয়ামীলীগের শুরুর সময় সিপিডি রিপোর্ট করে। তৎকালীন সরকারের গায়ে কাঁটা লাগে এই রিপোর্ট। তাদের হুকুমের দাস বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক কে দিয়ে সুয়োমোটো জারি করে সিপিডিকে আদালতে ডেকে আনা হয়। তারা প্রমাণের চেষ্টা করে সিপিডি ভুল। সিপিডিও তাদের সকল নথি সিডি আকারে আদালতে জমা দেয়। সেই বিচারের কাহিনী সেখানেই শেষ হয়ে যায়। এ নিয়ে আর উচ্চবাচ্য করেনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

বাংলাদেশে আজ ক্ষমতাসীন একটি অসাংবিধানিক সরকার। এই সরকারের কোনো ক্ষমতা নেই ভালো কিছু করার। বাংলাদেশের সংবিধানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার নামে কোনো সরকার নেই। তারপরও সুপ্রিমকোর্টের রেফারেন্সে চলছে এই সরকার। এটা আইনজীবীদের একাংশের অভিমত। আমরা শিখলাম ও জানলাম আদালতের রেফারেন্সে সরকার গড়া যায়। পৃথিবীতে এমন কোনো দেশ আছে কিনা এভাবে সরকার গড়ার তা আমার জানা নেই। আজ প্রথম আলো পত্রিকার সেই বড় ভাইটি বেঁচে থাকলে হয়ত তিনি এর উত্তর দিতেন। যার নাম মিজানুর রহমান খান।

সম্প্রতি আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ব্রিটিশ গণমাধ্যম কে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেই সাক্ষাৎকার পুরোটা শোনার আমার সময় হয়নি। তারপরও মিডিয়া মারফত জানতে পারলাম সেখানে তিনি বলেছেন বিগত সরকার বাংলাদেশকে গাজার মতো পরিস্থিতি করে গেছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে গাজার মতো বাড়িঘর ভেঙ্গে ফেলে হয়নি সত্য এখানে ভেঙে ফেলা হয়েছে নিয়ম নীতি। স্বৈরাচার স্টাইলে চলত এদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো।

তার কাছে আমার প্রশ্ন। এখন তিনি কিভাবে দেশ চালাচ্ছেন? তিনি কি গণতান্ত্রিক ভাবে দেশ চালাচ্ছেন? বাংলাদেশের সর্বত্র তিনি বিগত সরকারের দোসর খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাদের কে হাতের কাছেই পেলেই জেলে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন। গণহারে তাদের নেতাকর্মীদের নামে মামলা দিচ্ছেন। এতে সহায়তা করছে বিএনপি-জামাত। তাহলে তিনিও তো ফ্যাসিস্টে পরিণত হলেন। যে কাজ করে হাসিনা ফ্যাসিস্ট হয়েছেন সেই একই কাজ তিনি ও তার সমর্থকরা করছে। পার্থক্য রইলো কই?

হাসিনার দোসর বানিয়ে নির্বিচারে তিনি প্রশাসন থেকে সচিব আমলা বহিষ্কার করছেন। তাদের পরিবর্তে বিএনপি জামাতের পছন্দসই লোকজন বসাচ্ছেন। তারপরও তিনি দেশে শান্তি ফেরাতে পারছেন না। আবার অশান্তির জন্য তিনি পলাতক শেখ হাসিনার দলের অর্থ ঢালার কথা বলছেন।

সেনাবাহিনী এখনো ম্যাজিস্ট্রেসি পাওয়ার নিয়ে বসে আছে। তারপরও চুরি ডাকাতি ছিনতাই কোপাকুপি দখল পাল্টা দখল এসব ব্যাপকহারে হচ্ছে। ওদিকে নিত্য পণ্যের দাম যেভাবে বিগত সরকার রেখে গিয়েছিল সেভাবেই আছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আগের চাইতে আরো বেশি বেড়েছে।

বিগত সরকারের অপরাধ জগত নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে বিএনপি। তারাই এখন অর্থের বিনিময়ে পাহারা দিচ্ছে হাসিনার দোসরদের সম্পদ। কেউ কেউ মামলা বাণিজ্য করছে। টাকার বিনিময়ে একে ধরছে ওকে ছাড়ছে। এসব এখন ইউনুসের নাকের ডগায় ঘটছে। এভাবে দেশ কতদিন চলবে? এটাই এখন আম জনতার বড় জিজ্ঞাসা।

যাদেরকে নিয়ে ইউনুস সরকার এখন দেশ চালাচ্ছেন তারা ছিল জেলের ভিতর। জেল থেকে বেরিয়ে এখন তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। সম্প্রতি এমন কিছু ঘটনা দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। দেখা গেছে একটি প্রথম সারির গণমাধ্যমের সামনে গরু জবাই, বইমেলায় স্টল বন্ধ, ৩২ নম্বরে অগ্নিসংযোগ। এগুলোতে সেই জেলবন্দি আসামিরা ঘটিয়েছে। এতদিন এরা একাধিক জঙ্গি অভিযোগে বন্দি ছিল।

ইউনুসের দৃষ্টিতে শেখ হাসিনার আমল যদি গাজা হয় তা হলে তার আমলটি এখন কি? তিনি কি কম দামে চাল খাওয়াতে পারছেন? তিনি কি প্রশাসন থেকে ঘুষ বাণিজ্য বন্ধ করতে পেরেছেন? তিনি কি বাসস্টান্ড, নদীর ঘাট, কাঁচা বাজারের চাঁদাবাজি বন্ধ করতে পেরেছেন? তিনি কি জ্বালানির দাম কম করাতে পেরেছেন? উল্টো দেখা যাচ্ছে তিনি বিভিন্ন সেবায় উচ্চ শুল্ক আরোপ করেছেন। যার প্রতিবাদ করছে দেশের ব্যবসায়ীরা।

বিগত সরকার যেখানে ৫ পারসেন্ট শুল্ক আরোপ করেছিল সেখানে তিনি ১৫ পারসেন্ট শুল্ক আরোপ করেছেন। পরে আন্দোলনের মুখে কয়েকটি পণ্যের শুল্ক আরোপ প্রত্যাহার করে নেন।

সম্প্রতি নবাবপুরের ব্যবসায়ীরা কৃষি যন্ত্রপাতির ওপর বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারে দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করে। তারা একদিন অর্ধ-বেলা দোকানপাট বন্ধ রাখেন। বিগত সরকার কৃষির জন্য ভর্তুকি দিত। এখন তিনি সেখানে ভ্যাট লাগাচ্ছেন। তাহলে তিনি কোন মুখে গাজা বলেন। তিনি তো গাজার চাইতে আরো ভয়ঙ্কর জায়গায় দেশ কে নিয়ে যাচ্ছেন।
নির্বাচন সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি একটি ব্রিটিশ প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করছে। এই সরকার নির্বাচন কবে করতে চায়, কাদের নিয়ে করতে চায়, সেটি জানার চেষ্টা করছেন তারা। ইউনুস সরকার বলছেন সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করবে তারা। এখানে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমুলক নির্বাচন কাদের নিয়ে করা হবে সেটা জাতির কাছে পরিষ্কার করছে না ইউনুস সরকার। তবে তাদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিকে মাইনাস করে নির্বাচন করতে চাচ্ছে এই সরকার।

সম্প্রতি জাতীয় পার্টির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লোকজন দিয়ে বন্ধ রাখার কৌশল সেই রাজনৈতিক পরিকল্পনারই অংশ মাত্র। তবে এমনটা হলে সেই আগের অবস্থাই ফিরে আসবে। যেটা আওয়ামী লীগের আমলে পর পর তিনবার হয়েছিল।

মুক্তিযুদ্ধের মার্কেটিং করে আওয়ামী লীগ টিকতে পারে নাই। তেমনি জুলাই আগস্টের আন্দোলনকে মার্কেটিংয়ের পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে এই সরকার। সব জায়গায় জুলাই আগস্টকে টেনে আনা হচ্ছে।

আর যারা জুলাই আগস্টে হত্যা কাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের বিচার। যারা দোষী তাদের সাজা নিশ্চিত করা। সেটা আওয়ামী লীগের নেতা হোক কিংবা শেখ হাসিনার দলদাস পুলিশ। যদি সৎ ইচ্ছা থাকে তবে কোনো কাজই বাধা হিসেবে দাঁড়াবে না। এখন দেখার বিষয় ড. ইউনুসের সেই সৎ সাহস আছে কিনা।

জুলাই আগস্টে যারা শহীদ হয়েছেন তাদের আত্মা শান্তি পাবে সেদিন। যেদিন আমরা দেশকে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক সহবস্থানে নিয়ে যেতে পারবো। দেশের মানুষ সরকারি সেবাগুলো বিনামূল্যে পাবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে আইন অনুসারে। ঘুষ ছাড়া কাজ হবে। ভেজাল মুক্ত খাবার হবে। চাঁদাবাজি মুক্ত ব্যবসা হবে। শিক্ষার্থীরা সময়মত বই পাবে। বিচার বিভাগ হবে সত্যিকার অর্থে নিরপেক্ষ। সড়ক থাকবে নিরাপদ। সাধারণের সহায় সম্পত্তি থাকবে সুরক্ষিত।

ইউনুস সরকারের একটি প্রশংসা আমি করতে চাই। সনাতন উৎসবগুলি নির্বিঘ্নে করতে পারা। যা আশা করা যাচ্ছিলো না। দেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে কোনো ঘাটতি দেখা দেয়নি। প্রতিবেশী দেশের গণমাধ্যম উসকানি দিলেও এদেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থেকেছে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এখানে বিএনপি জামাত একযোগে কাজ করেছে। ভূমিকা রেখেছে বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরাও।

এছাড়া চিন্ময় মহাপ্রভুর শুনানির সময় একজন আইনজীবীর মৃত্যু সাম্প্রদায়িক রুপ নেয়নি। এটাও একটা বড় প্রাপ্তি। যা সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তবে এসব ঘটনা কেন ঘটছে তার সঠিক বিচার হওয়া জরুরি। চিন্ময় মহাপ্রভুর মুক্তি দেওয়াটা জরুরি। ইসকনের নামে কোনো মামলা নেই। তারপরও একটি গোষ্ঠী ইসকনের নামে কেন অপপ্রচার করছে সেটি খতিয়ে দেখতে হবে।

দেশে একটি সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দিয়ে ইউনুস সরকার বিদায় নিক এটি একমাত্র চাওয়া। জনগণই ঠিক করুক কে ক্ষমতায় যাবে। সেখানে আওয়ামীলীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়েতে ইসলাম, সমাজতান্ত্রিক, স্বতন্ত্র সবাই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। যেটা সবার চাওয়া। সংস্কার ও বিচার একটি চলমান প্রক্রিয়া। এটি চলতে থাকবে। একটির জন্য আরেকটি বন্ধ থাকুক এটি কেউ চায় না।

জুলাই আগস্টের হত্যাকাণ্ডে যেসব রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব অভিযুক্ত তারা অবশ্যই নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষিত হবে। সেটা নির্বাচনী আইনেই বলা আছে। সুতরাং কে ভোট করতে পারবে, কে পারবে না তা সেখানেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এ নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই। দেশের জনগণই ঠিক করবে কারা রাজনীতির ময়দানে টিকে থাকবে, কারা হারিয়ে যাবে।