০৪:৪২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সংবিধান সংস্কারে যতগুলো প্রস্তাবে বিএনপির দ্বিমত

  • প্রকাশিত ০৩:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
  • ৫ বার দেখা হয়েছে

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত ২৫টি সুপারিশে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া আরও ২৫টি প্রস্তাবে দলটি আংশিকভাবে একমত হয়েছে। তবে বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে রয়েছে তাদের দ্বিমত।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত ২৫টির সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। ২৫টিতে আংশিক মত দিয়েছি এবং বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে যে মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। যেটা যৌক্তিক সেটাই করবো। প্রয়োজন হলে আমরা আবারও বসবো।’

বিচারবিভাগের সংস্কারে ৮৯ দফা নিয়ে মতামত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু সাংবিধানিক হওয়া উচিত। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা চাই। প্রক্রিয়াটা যেন সাংবিধানিক হয়।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশিরভাগই সংশোধনী দিয়েছে। এনআইডি, সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।’

এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়।

এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ করতে চায় কমিশন। স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির ভূমিকা প্রশংসনীয়।’

পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। আমি যখন একা আমার ঘরে থাকি তখন ঘরের যে সেটআপ বিয়ের পর সেটা বদলে যাবেই। আমাদের যখন সন্তান হবে তখন সেটা আবার বদলে যাবে। আরেকটা সন্তান হলে আরও বদলাবে। তাদের বয়স যখন বাড়বে তখন আবার বদলে যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই। অনিবার্য চলমান প্রক্রিয়া বলছি এটাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এত সময় না নেই, যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এ ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমরা গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে।’

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সংস্থাপন সচিব মনিরুজ্জামান খান অংশ নেন।

ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম বৈঠকটি হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সঙ্গে। এ পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে মতামত জমা দেয় বিএনপি।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর

Tag :
জনপ্রিয়

সংবিধান সংস্কারে যতগুলো প্রস্তাবে বিএনপির দ্বিমত

প্রকাশিত ০৩:৪৯:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : সংবিধান সংস্কারের জন্য প্রস্তাবিত ২৫টি সুপারিশে পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে বিএনপি। এছাড়া আরও ২৫টি প্রস্তাবে দলটি আংশিকভাবে একমত হয়েছে। তবে বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে রয়েছে তাদের দ্বিমত।

বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে এসব তথ্য জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, “সংবিধান সংস্কার নিয়ে প্রস্তাবিত ২৫টির সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত। ২৫টিতে আংশিক মত দিয়েছি এবং বাকি প্রস্তাবগুলো নিয়ে আমাদের ভিন্নমত রয়েছে।”

তিনি বলেন, ‘সংবিধানের প্রস্তাবনা থেকে শুরু করে সংবিধান সংশোধনী নিয়ে যে মৌলিক প্রস্তাব দিয়েছে, সেগুলো নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করব। যেটা যৌক্তিক সেটাই করবো। প্রয়োজন হলে আমরা আবারও বসবো।’

বিচারবিভাগের সংস্কারে ৮৯ দফা নিয়ে মতামত জানানো হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘সবকিছু সাংবিধানিক হওয়া উচিত। বিচারবিভাগের স্বাধীনতা চাই। প্রক্রিয়াটা যেন সাংবিধানিক হয়।’

বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারে বেশিরভাগই সংশোধনী দিয়েছে। এনআইডি, সীমানা নির্ধারণ নির্বাচন কমিশনের অধীনেই থাকা উচিত।’

এর আগে সকাল পৌনে ১১টার দিকে বিএনপির ৫ সদস্যের প্রতিনিধি দল এ বৈঠকে অংশ নেয়।

এ সময় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রীয়াজ বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্যের ভিত্তিতে জাতীয় সনদ করতে চায় কমিশন। স্থায়ী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই মূল লক্ষ্য। গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির ভূমিকা প্রশংসনীয়।’

পরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সংস্কার একটা চলমান অনিবার্য প্রক্রিয়া, হতেই হবে। আমি যখন একা আমার ঘরে থাকি তখন ঘরের যে সেটআপ বিয়ের পর সেটা বদলে যাবেই। আমাদের যখন সন্তান হবে তখন সেটা আবার বদলে যাবে। আরেকটা সন্তান হলে আরও বদলাবে। তাদের বয়স যখন বাড়বে তখন আবার বদলে যাবে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেক কিছু বদলায়, বদলাবেই। অনিবার্য চলমান প্রক্রিয়া বলছি এটাকে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা সবাই ভালো চাই। কিন্তু খুব ভালো করার জন্য যেন আমরা এত সময় না নেই, যাতে মানুষের পরিবর্তনের যে আকাঙ্ক্ষা স্তিমিত হয়ে যায়। নিশ্চয় আমরা ভালো করতে চাই এবং এ ভালো করার প্রয়াস অব্যাহত থাকবে, সব সময় থাকবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমরা গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, বিএনপির চাইতে বেশি সংস্কার বাংলাদেশে কোনো রাজনৈতিক দল করেছে? রাজনৈতিকভাবে বলেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা তো বিএনপি করেছেন। বহুদলীয় গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, তত্ত্বাবধায়ক শাসনব্যবস্থা বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছে।’

আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল, সাবেক সংস্থাপন সচিব মনিরুজ্জামান খান অংশ নেন।

ঐকমত্য কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রিয়াজের সভাপতিত্বে বৈঠকে রয়েছেন কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি বেইলি রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বিএনপিসহ সবগুলো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠকে কমিশনের চেয়ারম্যান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন।

সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গত ২০ মার্চ থেকে আনুষ্ঠানিক আলোচনা শুরু করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রথম বৈঠকটি হয়েছে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) সঙ্গে। এ পর্যন্ত তারা ১১টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক শেষ করেছে। গত ২৩ মার্চ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে লিখিতভাবে মতামত জমা দেয় বিএনপি।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর