স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : উত্তরবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটে ফল হিসেবে সুপারি অন্যতম। তবে এবার ফলন কম হয়েছে। আর ফলন কম হওয়ার কারণে বেশি দামে সুপারি বিক্রি হচ্ছে। সুপারির দাম বেড়ে গেলে স্বাভাবিকভাবেই ব্যবসায়ীরা লাভের মুখ দেখতে পারেন। গতবারের ক্ষতি এ মৌসুমে কাটিয়ে ওঠার সুযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সুপারি বাগান রয়েছে ৫১৪ হেক্টর জমিতে।
সংশ্লিষ্ট কৃষি কর্মকর্তার জানান, সুপারি গাছ অল্প পরিমাণ জমিতে বেড়ে ওঠে। রাস্তার পাশে, বাড়ির আঙ্গিনায়, ঝোপ-ঝাড়ে, ফসলি ক্ষেতের কাছে, পুকুর বা খাল পাড়সহ আনাচে-কানাচে লাগানো হয় সুপারি গাছ । মূলত স্বাভাবিকভাবেই বাড়ির আশপাশে ছড়িয়ে থাকা গাছ থেকেই সুপারির ফলন ভালো হয়। তবে কিছু সচেতন ব্যক্তি রয়েছেন, যারা বছরে একাধিকবার বাগানের আগাছা পরিষ্কার করেন। এছাড়া গাছের আশপাশে গোবর সার ব্যবহার করে নানান ভাবে যত্ন নেন।
জানা যায়, লালমনিরহাটে মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। এ জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই সুপারি গাছ রয়েছে। অনেকেই সুপারি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। সুপারি ব্যবসার সঙ্গে জেলার বহু মানুষ জড়িত। বিভিন্ন জেলায় এখানকার সুপারির চাহিদা রয়েছে। এবার ফলন কম হয়েছে। তবে সুপারির দাম বেশি রয়েছে। গত বছর প্রতি পোন (৮০টি) সুপারি বিক্রি হয়েছে ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত। চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে ২০০- ৫০০ টাকার বেশি। একটু বড় আকারের সুপারির পোন ৩০০-৫০০ টাকায় কিনেছেন ব্যবসায়ীরা। এবার প্রতি কাউন (১৬ পোন) সুপারি ৩৭০০ থেকে ৭৫০০ টাকার বেশি বেচাবিক্রি হয়েছে।
সুপারির ব্যবসায়ী মোস্তফা হোসেন জানান, জেলার প্রতিটি ইউনিয়নে সুপারির ছোট বড়ো বাজার রয়েছে, বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা এখানে এসে সুপারি কিনে নানা প্রান্তে নিয়ে যায়। সাধারণত সুপারি কাঁচা, ভেজা ও শুকিয়ে বিক্রি করা হয়। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক গ্রামের আনাচে-কানাচে এবং রাস্তার মোড়ে খুচরা ব্যাপারীরা গৃহস্থদের থেকে সুপারি ক্রয় করে বাজারগুলোতে এনে পাইকারি দামে বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন।
সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল হাকিম বলেন, সুপারি লাভজনক ফসল হওয়ায় গ্রামের মানুষ এখন পতিত জমিতে সুপারির চারা বা বীজ রোপণ করে। এছাড়া মৌসুমে ভালো মানের সুপারিগুলো বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে। পরে তা মাটিতে পুঁতে রাখে। বর্ষা মৌসুমে খালি জমিতে বা বাড়ির আঙ্গিনায় চারা গাছ রোপণ করে। তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ বড় হতে থাকে। ৫-৭ বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু হয়। একবার ফল দেয়া শুরু করলে প্রতিটি গাছ ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দিতে থাকে। তবে গাছের বয়স যত বেশি হবে, ফলনের পরিমাণ ততই কমতে থাকবে। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গাছে মৌসুমে ২-৫ পৌন সুপারি ধরে।
সুপারি ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক,হায়দার আলী, আশরাফ মিয়া ও ফজলুল রহমান জানান, মৌসুমে পানের সঙ্গে সবাই কাঁচা সুপারি খায়। এছাড়াও কাঁচা সুপারিগুলো তারা বিক্রি করেন বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। আবার অনেক খুচরা ব্যবসায়ী সুপারিগুলো ভিজিয়ে সংরক্ষণ করেন। প্রায় তিন মাস পানিতে ভিজিয়ে রাখার পর তা উঠিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকার বড় ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এছাড়া জেলায় খুচরা ব্যবসায়ীরা শুকিয়ে সারা বছর সুপারি বিক্রি করে থাকেন।
ব্যবসায়ী হায়দার আলী বলেন, গত বছর সুপারি বেশি উৎপাদন হওয়ায় দাম কম ছিলো। এবার সুপারির উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। গৃহস্থরা গত বছর এক কাউন সুপারি বিক্রি করেছেন ২০০০-৪৫০০ টাকা। এবার একই সুপারি বিক্রি করেছেন প্রায় ৩৫০০ থেকে ৮০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে গত বছর ব্যবসায়ীরা তেমন লাভ করতে পারেননি। এবার ভালো লাভের সুযোগ রয়েছে বলে জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইখুল আরিফিন জানান, এ জেলায় মাটির গুণাগুণ ও আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। এবার সুপারির ফলন কম হলেও সুপারির দাম বেশি। তাই বাগানি বা গৃহস্থদের পোষাচ্ছে। তিনি বলেন,বাগানিদের জন্য অর্থের বড় একটা সংস্থান সুপারি । সুপারির ফলন বাড়াতে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত বাগান মালিকদের ভালোমানের চারা রোপণ এবং দূরত্ব বজায় রেখে চারা লাগানোর পরামর্শ দেন।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর