লামায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ মঈন উদ্দিন নেতৃত্বে যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে গভীর রাতে দুই বালু চোরকে আটক করে ২ ও ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
দণ্ডিতরা হলেন উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন বগাইছড়ির বাসিন্দা আব্দু শুক্কুরক ২ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ও আলতাজ মিয়াক ৪ মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দিবাগত রাত ২টা থেকে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় ফাঁসিয়াখালীতে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। এ সময় ২ জন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত আসাদিদ্বয়কে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ১৫ ধারায়, আব্দু শুক্কুরকে ২মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড এবং আলতাজ মিয়াকে ৪ মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, লামা উপজেলা ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে শুধু ১৫টি পয়েন্টে খাল ও ছড়া থেকে ড্রেজার মেশিন লাগিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে সিন্ডিকেট দল। এর ফলে সেখানে বিগত কয়েক বছরে ব্রিজ কালভার্ট, গ্রামীণ রাস্তাঘাটের ক্ষতি সাধনসহ ফসলী জমি ভাঙনের কবলে পড়ে। এর মধ্যে রয়েছে, কুমারী ছড়ায় ৪টি পয়েন্ট, খালকুইল্যাপাড়া পাড়া, তিনটি, বগাইছড়ি ৫টি ও হায়দারনাশী, হারগাজাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পরিবেশ ধ্বংস করে অবৈধভাবে উত্তোলন করে চলছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররাসহ স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত দিনে এই হরিলুট কাজে আওয়ামীলীগের নেতাদের কর্তৃত্ব ছিল। জুলাই/২৪’র পর আরো বেপরোয়া হয়ে পড়েছে বিএনপির রাজনীতির নাম ভাঙিয়ে বেশ কয়েকটি গ্রুপ। এই গ্রুপটি উপজেলার অন্য ইউনিয়নেও বালু হরিলুটে একই কর্তৃত্ব দেখিয়ে চলছে। পরিবেশ বিদ্বেষী এই আগ্রাসীরা বরাবরই অপ্রতিরোধ্য।
স্থানীয় ভুক্তভোগী বাসিন্দারা জানায়, প্রশাসন অভিযান করে চলে যাওয়ার ঘন্টা খানেক পরই দ্বিগুণ গতিতে শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন। ২৪’র জুলাইয়ে ছাত্রজনতার আন্দোলনে পরিবর্তিত পরিস্থিতেত, লামায় অবৈধ বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ছাত্ররা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েও কোনো মহলের সহযোগিতা পান নাই বলে বৈষম্য বিরোধী এক ছাত্র নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই ছাত্রনেতা ক্ষোভের সাথে আরো বলেন, ‘বর্তমানে দেশে রাজনৈতিক সরকার নেই, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ চালাচ্ছেন। মাঠের অবস্থা আর প্রশাসনের তোষামোদি দেখে মনে হচ্ছে; প্রশাসনকে নিয়ন্ত্রন করছেন একটি রাজনৈতক দল। যে কোনো বিষয়ে ওই রাজনৈতিক দলের কিছু সুবিধাবাদী কতক নেতার হস্তক্ষেপ রীতিমত প্রশাসন ও সুশীল সমাজ হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।’
এ বিষয়ে লামা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদু রব এর কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘আমাদের জেলা নেতৃবৃন্দসহ আমরা বিষয়টি মনিটরিংয়ে রেখেছি। তিনি আরো বলেন, বিএনপি’র জেলা নেতৃবৃন্দের কড়া নির্দেশনা রয়েছে যে দলের প্রভাব খাটিয়ে অন্যায় অনিয়ম করা হলে, প্রমানে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ মঈন উদ্দিন জানান, ‘বালু উত্তোলণ, পাহাড় কর্তন রোধে পরিবেশ রক্ষায় উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় ভ্রাম্যমান আদালত কার্যক্রম চলমান রেখেছেন। সময়ে সময়ে যৌথবাহিনীর সহায়তা নেয়া হচ্ছে।’ তিনি আরো জানান, বান্দরবান জেলা প্রশাসক এর নির্দেশনায় পরিবেশ রক্ষায় পরিবেশ অধিদপ্তরসহ অভিযান চলমান আছে এবং জনস্বার্থে প্রশাসনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ইউএনও মো. মঈন উদ্দিন আরো বলেন, আমি এই উপজেলায় ৫ মাস হয় যোগদান করেছি; এরই মধ্যে অবৈধ বালু উত্তোলন, পাহাড় কাটা, ইটভাটায় মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে বিভিন্ন জনকে সাজা প্রদানসহ ৯০ লাখ ৯০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় পূর্বক রাজস্ব তহবিলে জমা করেছি। বর্তমানে ৫টি ড্রেজার মেশিন ও সোয়া তিন লাখ ঘনফুট বালুসহ অন্যান্য সরঞ্জাম জব্দ আছে।
কোনো রাজনৈতিক দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ প্রভাব বিস্তার করছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে ইউএনও বলেন, ‘আমি কারো দ্বারা প্রভাবিত নই।