লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে এক সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে জিআই তার মোড়ানো লাঠি দিয়ে পিটিয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে গুরুতর জখম করার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার রামগঞ্জ উপজেলার দল্টা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস চলাকালীন সময়ে এই ঘটনাটি ঘটে।
নির্যাতনের শিকার ছাত্রের নাম হাবিবুর রহমান। সে বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পরিবারের সদস্যদের বরাতে জানা যায়, শিক্ষক মনির হোসেন খাতা দেখার অজুহাতে হাবিবুরকে জিআই তার মোড়ানো লাঠি দিয়ে তার কাঁধ, পিঠসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে বেধড়ক মারধর করেন। এ ঘটনায় ছাত্রটির শরীর ফুলে যায় এবং সে শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
ঘটনার পর অভিভাবক ও স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। পরে শিক্ষক মনির হোসেন নিজে অভিভাবকদের কাছে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “বিদ্যালয় থেকে ছুটি না পাওয়ায় রাগের মাথায় এমন করেছি।”
অভিভাবকদের অভিযোগ, এটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও শিক্ষক মনির হোসেন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেছেন। কিন্তু তিনি স্থানীয় রাজনৈতিক পরিচয় ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার আত্মীয় হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তার বাড়ি বিদ্যালয় সংলগ্ন এলাকায় হওয়ায় তিনি সবসময় স্থানীয়ভাবে প্রভাব খাটিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
ছাত্রের পরিবার ঘটনার বিচার চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম রবিন শীষ এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসে।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক মনির হোসেনকে ফোন করা হলে তিনি অসুস্থতার অজুহাতে ফোন কেটে দেন এবং পরবর্তীতে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া দেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “আমি যা বলার, কর্তৃপক্ষকে বলব।” তিনি সাংবাদিকদের কোনো মন্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান।
রামগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এস এম রবিন শীষ বলেন, “ছাত্র ও তার অভিভাবক সরাসরি এসে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বলেন, “ছাত্রকে মারধরের ছবি ও ভিডিও আমাদের হাতে এসেছে। বিষয়টি তদন্ত করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অনুলিপি পাঠানো হবে।”
এই ঘটনায় বিদ্যালয়পাড়ায় তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ বিরাজ করছে। অভিভাবক মহল দ্রুত শিক্ষক মনিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের জন্য নিরাপদ থাকে।