স্বদেশ বিচিত্রা প্রতিবেদক : ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার হাতিবেড় গ্রামে অবস্থিত ‘রেপটাইলস ফার্ম’ বর্তমানে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কুমির রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। একসময় লোকসান ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে যাওয়া এই খামার এখন আবারো প্রাণ ফিরে পেয়েছে এবং রপ্তানি আয়েও সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্রও পরিণত হয়েছে।
সরজমিনে ঢুকতেই চোখে পড়ে ইটের প্রাচীর ও নেট দিয়ে ঘেরা পুকুরগুলোতে অলস রোদ পোহানো কুমিরের ঝাঁক। বড় কুমিরগুলো রোদে হা করে শুয়ে থাকে, আর আলাদা জায়গায় রাখা হয়েছে অসংখ্য বাচ্চা কুমির।
ফার্ম ম্যানেজার ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ আরিফ জানান, ২০০৩ সালে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩.৪০ একর জমির ওপর মেজবাহ উল হক ও মোস্তাক আহমেদ খামারটি প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০৪ সালে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও আন্তর্জাতিক সংস্থা সিআইটিআইইএস-এর ছাড়পত্র পেয়ে মালয়েশিয়া থেকে ৭৫টি কুমির আমদানি করে খামারটি। বর্তমানে খামারে প্রায় ৩৮০০ কুমির রয়েছে।
এখানে ৩৫টি পুকুর, ৭টি শেড ও ১০টি হ্যাচারিতে স্ত্রী-পুরুষ আলাদা করে রাখা হয়েছে। বংশবৃদ্ধির সময় স্ত্রী কুমির প্রতিটি গড়ে ৫০-৬০টি ডিম দেয়। ইনকিউবেটরে সংরক্ষণের পর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে আলাদা পুকুরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর আস্তে আস্তে শুরু হয় রপ্তানির যাত্রা।
তিনি আরও জানান, ২০১০ সালে প্রথম দফায় ৬৭টি হিমায়িত কুমির জার্মানিতে রপ্তানি করে খামারটি আয় করে দেড় কোটি টাকা। এরপর ২০১৪ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৫০৭টি কুমিরের চামড়া জাপানে রপ্তানি করে আয় হয় ৭.৫ কোটি টাকা। তবে মাঝখানে অর্থনীতির কারণে খামারটি বিপদের মুখে পড়ে। তবে নতুন ব্যবস্থাপনায় আবারও গতি ফিরে পেয়েছে খামারটি। আগামীতে এই ফার্ম থেকে বছরে ১৫ কোটি টাকা রপ্তানি আয় সম্ভব হবে বলেও তিনি জানান।
একটি নির্ভর যোগ্য সূত্র থেকে জানা যায়, খামারটির যাত্রাপথ ছিলো চ্যালেঞ্জিং। আর্থিক সংকট ও মালিকানা জটিলতায় ২০২০-২১ সালে প্রায় ১ হাজার কুমির মারা যায়। পরে আদালতের নির্দেশে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে এনজিও ‘উদ্দীপণ’ খামারটি কিনে নেয়। এরপর থেকেই নতুন ব্যবস্থাপনায় আবারও গতি ফিরে পেয়েছে রপ্তানিমুখী কার্যক্রম। খামারটি পরিচালনায় ম্যানেজারসহ ১২ জন কর্মচারী দিন-রাত দায়িত্ব পালন করছেন।
রপ্তানির পাশাপাশি বিনোদন কেন্দ্র হিসেবেও খামারটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী পরিবার-পরিজন নিয়ে খামার দেখতে আসছেন। টিকিটের মাধ্যমে আয় বাড়ছে এবং খামারটিকে ঘিরে স্থানীয় পর্যটনেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
রপ্তানিমুখী এই কুমির খামার এখন শুধু ভালুকার নয়, বরং দেশের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে।
স্বদেশ বিচিত্রা/এআর