হৈ হৈ করে গত ৪টা দিন কেটে গেল রবি ঠাকুরের জয়গানে, বাংলা গানের জয়গানে, বাংগালীর জয়গানে। কী অদ্ভুত সুন্দর একটা সময় কাটালাম সবাই মিলে। অধিকাংশ মানুষের সাথেই প্রথমবারের মত পরিচয়, অথচ মনে হলো কত কালের চেনা। কত কালের বন্ধু আমরা। দেখা হলো অনেক পুরানো বন্ধুদের সাথে। যাদের সাথে অনেকদিন যোগাযোগ ছিল না।
১৯১২ সালে কবি তাঁর পুত্র রথীন্দ্রনাথকে এই শহরে পাঠিয়েছিলেন কৃষিবিদ্যা পাঠ করতে। সেই সময় আরবানা শ্যাম্পেনের ৫০৮ ওয়েস্ট হাই স্ট্রীটে রবীন্দ্রনাথ ৫ মাস কাটিয়েছিলেন। এটাই ছিল কবির বাসস্থান।
এক বাংগালী দম্পতি সেই বাড়িটি কিনেছেন। এবং রক্ষণাবেক্ষণ করছেন। অত্যন্ত বিনয়ী দম্পতি। নাহ, একটিবারের জন্য তাঁদেরকে মঞ্চে উঠতে দেখি নি। কখনো গলা উঁচু করে কথা বলতে শুনি নি। ‘আমার মাথা নত করে দাও হে তোমার চরণধুলার তলে। সকল অহংকার হে আমার ডুবাও চোখের জলে॥’ রবীন্দ্রনাথের এই গান যেন ওদের দুজনের জীবনের মূলমন্ত্র! আহা, শ্রদ্ধা জানাই নতুন এই বন্ধুদ্বয়কে। ইচ্ছা করেই ওদের নাম লিখলাম না, পাছে ওদের মন খারাপ হয়!
শিকাগো শহর থেকে ঘণ্টা তিনেকের ড্রাইভ৷ চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ। ভুট্টা আর বাদাম ক্ষেত দেখতে দেখতে চলে এলাম। এত সবুজ অনেকদিন দেখিনি।
বাংলাদেশ, ভারত, কানাডা, এবং আমেরিকার বিভিন্ন অংগরাজ্য থেকে রবীন্দ্র প্রেমীরা মিলিত হয়েছিলাম ইলিনয়ের আরবানা শ্যাম্পেন শহরে। পাশাপাশি ৩টি হোটেলে সবাই মিলে থেকেছি। একসাথে সকালের জলখাবার, দুপুরের খাবার, রাতের খাবার। বাকি সময়টুকু অডিটোরিয়ামে বা মঞ্চে।
গান, কবিতা, নৃত্য, সেমিনার সব কিছুতেই রবীন্দ্রনাথ। অনুষ্ঠান শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কেউ বাড়ি ফিরে যেতে চায় না। একজন অপরজনকে বুকে জড়িয়ে ধরে। শিল্পীদের চোখ ঝাপসা। একসময় সবাই মিলে গেয়ে উঠি- “হায়, মাঝে হল ছাড়াছাড়ি গেলেম কে কোথায়, আবার দেখা যদি হল সখা, প্রাণের মাঝে আয়।”
এ মুহুর্তের এই প্রচন্ড বৈরী সময়ে খুব দরকার ছিল এই মিলনমেলার। হাতেগোণা কয়েকজন মানুষ গত ৬ মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন। তাঁদের পরিশ্রমের ফসল এই সফল আয়োজন।
আমি নিশ্চিত ভবিষ্যতেও আয়োজকেরা এই আনন্দ আয়োজন অব্যাহত রাখবেন। বিভিন্ন দেশের রবীন্দ্রপ্রেমীরা আবারও সমবেতকণ্ঠে যেন গাইতে পারে “ও আমার দেশের মাটি, তোমার ‘পরে ঠেকাই মাথা।”
রবি ঠাকুরের জয় হোক। বাংলা গানের জয় হোক। বাংগালীর জয় হোক। সুন্দরের জয় হোক। মানুষের জয় হোক। মানবতার জয় হোক। জীবন সুন্দর, আনন্দম।