মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পূর্ব দর্শনা গ্রামের উম্মি বেগম (৬২), আকিতন (৫৫) ও নুননাহার (৩৯)। আর-দশটা শিশুর মত তারাও স্বাভাবিকভাবেই জন্ম গ্রহন করেন। কিন্তু জন্মের কয়েক বছর পরই অজানা এক রোগে আক্রান্ত হয়ে তারা সবাই শারীরিক প্রতিবন্ধীতে পরিনতি হয়। গত একযুগ আগে পিতা সুলতান হাওলাদার ও মাতা জাহেরা বেগমের মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পরে তারা। এলাকাবাসী তাদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হওয়ায় তাদের বেঁচে থাকা দুরূহ হয়ে পরেছে। পরিবারের উপার্জনক্ষম কোন পুরুষ না থাকায় পাড়া প্রতিবেশি সামান্য সাহায্য সহযোগিতার নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। নানা রোগে আক্রান্ত আকিতন নেছা শারীরিকভাবে দুর্বল হওয়া আগের মতো মানুষের কাছে সাহায্যের জন্য যেতেও পারে না। আকিতন নেছা প্রতিবন্ধী ভাতা পেলেও পরিবারের অন্য দুজন সদস্যের ভাগ্যে জোটেনি প্রতিবন্ধী ভাতা সহ সরকারী কোন সহায়তা। ফলে দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির এই সময়ে অর্থকষ্টে অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের।
উম্মি বেগম মুখ জড়তা নিয়ে বলেন, আমাগো কিচ্ছুই নাই আমরা তিনডা বুইন এমুনই, আমাগো সাহায্য করেন। আরেক বোন নূননাহার বলেন, আমাগো কিছু নাই, কেউ কিছু দিলে খাই না দিলে না খাইয়া থাকি। আপনেরা আমাগো কিছু দিয়া যান।
বাড়ীর প্রতিবেশি ইউনুস হাওলাদার জানান, আমার ছোট কাল থেকে দেখতেছি এরা তিনটা প্রতিবন্ধী বোন অসহয়। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় তারা কোন রকম বেঁচে আছে। আমরাও তাদেও যথাসাধ্য সাহায্য সহযোগীতা করি। তারা তিনটা বোনই যদি প্রতিবন্ধী ভাতা পেত তাহলে তাদেও বাঁচার একটা অবলম্বন হতো।
উম্মি বেগমের ছোট চাচা মো. তৌয়ব হাওলাদার বলেন, আমার বড় ভাই মৃত্যুও পর প্রতিবন্ধী তিনটি বোন অনেক অসহয় হয়ে পরেছে। মানুষের সাহায্য সহযোগীতায় তারা মানবেতর জীবনযাপন করছে। প্রতিবন্ধী এই পরিবারটিকে সরকারী সহযোগীতার পাশাপাশি সমাজের বৃত্তবানদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে আহবান জানান তিনি।
ডাসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. রেজাউল করিম সিকদার জানান, আমার ইউনিয়নের প্রতিবন্ধী এই পরিবারটিকে আমি নিয়মিত খোজ খবর নিচ্ছি। ওএমএস এর চাউলের একটা নাম দিয়েছি। সরকারী যত সহযোগীতা দেয়ার পাশাপাশি আমি ব্যাক্তিগত ভাবে তাদের পাশে থাকবো।
এ বিষয়ে ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজা মো. গোলাম মাসুম প্রধান বলেন, আমি দেখলাম প্রতিবন্ধী পরিবারটি আসলেই অসহায়। প্রশাসন অবশ্যই তাদের পাশে দাঁড়াবে। আমি শুনেছি তাদের একজন মাত্র প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। বাকি দুজনকে অল্প সময়ের মধ্যে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনা হবে। সাময়িকভাবে পরিবারের জন্য যথা সম্ভব তাদের সহযোগিতা করা হবে। এছাড়াও তাদের আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হলে তারা যদি সেটা চালিয়ে নিতে পারে তাহলে আমরা সে ব্যবস্থাও করবো।